চে গুয়েভারা দেখেছিলেন দক্ষিণ আমােরিকার অবারিত মাঠ, নীল আকাশ, সুউচ্চ-পর্বতমালা, সবুজ কলাবাগান, আবোকাদো বৃক্ষ, পাহাড়ী চন্চল নদী, আমাজানের সীমাহীন জংগলে প্রাণের সমারোহ, আকাশে ১০ ফুট বিস্তৃত পাখার এল কন্দর, এন্ডিজে অভুক্ত রেড-ইন্ডিয়ান শিশু, আর মেক্সিকোর বারে ভুমিহীন চাষীর নৃত্যরতা উলংগ মেয়ে, হাভানায় ইউরোপীয় নাবিকদের যৌনদাসীদের অমানুষিক জীবন।
চে দেখেছিলেন মাঠের পর মাঠ কলাবাগান, আংগুরের বাগান, আবোকাদোর বাগান, আনারসের বাগান, মদ তৈরির কারখানা, টিন ও তামার খনি; সবগুলোর মালিক আমেরিকানরা ও স্পেনিশরা, সবগুলোতে ল্যাটিনরা ক্রীতদাসের মত খাটছে, সারাদিন কাজ করে পরিবার নিয়ে একবেলা খেতে পায় না, তাই মদ-গাঁজা খেয়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকে। এন্ডিজের রেড-ইন্ডিয়ান মহিলা লামার লোম থেকে হাতমোজা, সোয়েটার বানায়ে ১০০ মাইল হেঁটে গিয়ে আমেরিকানদের কাছে বিক্রয় করে; আর নিজের বাচ্চা শীতের মাঝেও থাকে উলংগ।
চে দেখেছিলেন ইয়াংকিরা নিজ বিমানে করে মেক্সিকো থেকে চিলির আকশে ঘুরে পাখীর মতো, মাটিতে নেমে সমুদ্র স্নান করে; কোন মেক্সিকান চাইলেও আমেরিকার ভিসা পায় না; ভিসা অফিসে ঢুকতে দেয় না; ভিসার ফরম পুরণ করতে পারে না ল্যাটিনরা, তাদের কাছে ভিসার ফি'ও নেই, কোনদিন স্কুলে যায়নি; স্কুল নেই, কিন্তু আছে মদের কারখানা; ভিসা দেয়ার আগে জানতে চায়, কত ডলার নগদ আছে।
চে দেখেছিলেন ল্যাটিনরা নিজদেশে ক্রীতদাস, নিজদেশে প্রবাসী; মেক্সিকো থেকে চিলি অবধি যত ইমারত আছে, সবগুলোতে ইয়াংকি কিংবা ইউরোপের কুলীন স্পেনিশরা বাস করে; তাদের ছেলেমেয়ারা কালিফোর্নিয়া কিংবা মাদ্রিদে পড়ালেখা করে; আর ল্যাটিনের বাচ্চারা ইয়াংকিদের কলা বাগানে কাজ করে, কিংবা গরুর রাখাল।
চে জানতেন যে, ল্যাটিন আমেরিকার এই বিশাল সম্পদ এখানকার মানুষের হওয়ার কথা; এখানে স্কুল থাকার কথা, এন্ডিজের মায়ের সন্তান শীতে উলংগ থাকার কথা নয়, সেখানকার লামার লোমে সবার জন্য দরকারী কম্বল বানানো সম্ভব, মেক্সিকোর চাষীর মেয়ের বারে নাচার কথা নয়, চিলির টিনে সবার ঘর হওয়া সম্ভব, কলা বাগানের মালিক হবে ল্যাটিনের সাধারণ মানুষ, কিউবার মেয়েদের নিজের পরিবার থাকার দরকার, হাভানার পোর্ট তাদের শেষ ঠিকানা নয়।
মেনন, মতিয়া, সেলিমরা ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন গাড়ীতে যাবার সময় দেখেন টোকাই ও গার্মেন্টস'এর মেয়েদের ঢল, নিজেরা ঘুমান শহরের এলিট এলাকায়, পান করেন মিনারেল ওয়াটার; তারপর একদিন বংগবন্ধু কনভেনশন হলে সভা করে, ঢাকার বস্তির মানুষের কষ্টের গল্প করেন, বাড়ীতে গিয়ে কিশোরী চাকরাণীর রান্না খেয়ে ভারতীয় সিরিয়াল দেখেন।
**** গতকাল ছিলো চে'র মৃত্যুদিবস।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৪০