গত মাসের মাঝামাঝি ১গ্রুপের সাথে ফুটবল খেলার সুযোগ ছিল; প্রেকটিস করার দরকার; কিন্তু স্কুলের ২টি মেয়ে আমার প্রেকটিসের মাঠ দখল করে রাখে প্রতিদিন সকালে, তারা সেখানে টেনিস প্রেকটিস করে, আমি মাত্র ১০/১৫ মিনিট সময় পাচ্ছিলাম মাত্র দৈনিক। অক্টোবরের মাঝামাজি এক সকালে সকাল ৬টা'য় ঘুম থেকে উঠে দেখি ভালোই শীত পড়ে গেছে, বেশ বেগে বাতাস বইছে, আমি তাড়াতাড়ি কাপড় পরে, বলটাকে একটা শপিং ব্যাগে ঢুকায়ে মাঠে গেলাম; যা ভেবেছিলাম সেটাই ঘটেছে, মাঠ খালি, আমি ৪০ মিনিটের মতো প্রেকটিস করলাম। উপরের দিকে তাকিয়ে বললাম, এই রকমই রাখ!
তারপর কয়েকদিন শীতে আরো বেড়েছে, প্রতিদিন আমার দরকারী সময়টুকু পেলাম, উহাদের দেখা নেই। ২ সপ্তাহ পর থেকে আমার পায়ের গোড়ালী 'ফাটার' শুরু করলো, অয়েনমেন্ট দিলাম, কিছুটা কাজ হলো; কিন্তু খেলার সময় চাপ লেগে অবস্হা আগের মতো হয়ে যায়; একদিন খেললে ৩ দিনও হাঁটতে পারি না। গত সপ্তাহে ১ দিন খেলার পর, এই সপ্তাহে খেলা তো দুরের কথা হাঁটতেও বের হতে পারিনি; কি চাইলাম, কি হলো!
আরেকটা ঘটনা, এখানে আমার এক ছাত্রী আছে, সে বলেছে ঘটনাটা; তার গ্রামীন সম্পর্কীয় এক মামা জাহাজে 'সেইলর' ছিলো; অনেকবার আমেরিকা এসেছে, জাহাজ থেকে নেমে বাজার টাজার করে আবার চলে গেছে সব সময়। সন্দ্বীপের অনেক অনেক সেইলর জাহাজ থেকে নেমে এই দেশে থেকে গেছে। একবার এই লোকটা ভাগনেয়ীর বাসায় বেড়াতে এসে জানালো যে, সে আগামী ট্রিপে এলে, কুলে বাজার করতে এলে নিউইয়র্কে থেকে যাবে, জাহাজে ফিরে যাবে না। দেশে গেছে, প্রস্তুতি নিয়েছে আগামী ট্রিপে নিউইয়র্কে নেমে যাবে আর দেশে ফিরবে না। ঠিক ট্রিপে উঠার আগে ফিজিক্যাল টেষ্টে তার লিভারের সমস্যা ধরা পড়লো, তাকে ট্রিপে যেতে দেয়া হলো না, এবং চাকুরীও চলে গেলো। ২ বছর চিকিৎসা করানোর পর, লিভারের সমস্যা দুর হলো, কিন্তু কিছুতেই আমেরিকামুখী জাহাজে চাকুরী পাচ্ছিলো না। বছর দু'য়েক পরে ঠিক মতো চাকুরী পেলো।
স্ত্রীকে সংসার বুঝয়ে দিয়ে, জাহাজে উঠার আগেরদিন আমানত শাহের মাজার ঘুরে দোয়া চেয়ে, কাজে যোগ দিলো। ইউরোপ আসার পর জানলো যে, জাহাজ নিউইয়র্ক যাবে না, যাবে মায়ামী। নিউইয়র্কে বসবাসরত উনার এক বন্ধুকে জানালেন, বন্ধু মায়ামী বীচের সাথে লাগানো এক হোটেলের ঠিকানা দিলেন, জাহাজ থেকে কুলে এসে, সেই হোটেলে উঠার জন্য, উনার বন্ধু গিয়ে নিয়ে আসবেন নিউইয়র্ক। সব ঠিকঠাক, জাহাজ মায়ামী এসেছে; কিন্তু জাহাজের দরকারী কি ডকুমেন্টের অভাবে জাহাজকে ডকে যেতে দেবে না, আউটার থেকে মাল খালাস করতে হবে; জাহাজ নোংগরে আছে, মামা শেষ রাতে জাহাজ থেকে নেমে সাতার দিয়ে বেশ হয়রাণ হয়ে, সাগরের তটে (বীচে ) পৌঁছলেন, তখনো সুর্য উঠেনি, খুশীতে ভেজা কাপড়েই ফজরের নামাজ পড়ার শুরু করলেন; আলাদা আরো ২ রাকাত বেশী নফল নামাজ পড়লেন; সালাম ফেরানোর জন্য ডান দিনে মুখ ফিরাতে দেখেন, ডানপাশে, একটু পেছনে এক পুলিশ দাঁড়ায়ে আছে, বামদিকে সালাম ফেরাতে গিয়ে দেখেন, সেই পাশেও একজন পুলিশ। তিনি মোনাজাত ধরলেন, আল্লাহ, আমি কি চাইলাম, তুমি কি দিলা!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১০