১৯৯৩ সালের ঘটনা; আমি এক বরফপড়া রাতে নিউইয়র্ক শহরে পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না, এক মেয়ের সাহায্য নিতে হয়েছিল; সে সাহায্য করেছিলা, পরে তাকে নিয়ে কুইনাইনের মতো অবস্হা! এটি সেই কাহিনী:
তখন একটা কাজ পেয়েছিলাম নিউইয়র্ক শহর থেকে ১২০ মাইল উত্তরে; নিউইয়র্ক শহর তেমন চিনতাম না, যাওয়া-আসা কম ছিলো, আমি শুধু একটা এলাকা চিনতাম, বাংগালী এলাকা, ব্রুকলীন। ব্রুকলীনের চিটাগং সমিতির একটা অফিস ছিলো, তারা বিজয় দিবস পালন করবেন, আমাকে নিমত্রণ করলেন; মেজবান হবে রাতে, এক পাবলিক স্কুলে।
রওয়ানা দিয়েলাম বেশ আগে; কিন্তু প্রবল তুষারপাতের কারণে ট্রাফিক ছিলো শ্লো, শহরে প্রবেশ করতেই ৮টা বেজে গেলো। আমি একটি বড় রাস্তাই চিনতাম; দেখি সেই রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে, আমি ব্রংকস'এ প্রবেশ করতে বাধ্য হলাম। বরফের কারণে বেশীর রাস্তার অবস্হা কঠিন, পরিস্কার করেনি, ক্রমাগতভাবে বরফ পড়ছে, রাস্তাঘাটে লোকজন নেই, আধাঘন্টা চালিয়ে আমি কোন এক এলাকায় এলাম কে জানে! ২/১টা গ্যাস ষ্টেশনে জিজ্ঞাসা করে মোটামুটি কোন কুল হলো না। দেখি একটা মেয়ে বাসার সামনের বরফ সরাচ্ছে, নেমে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। সে সব শুনে বললো,
-আমি ডিরেকশান দিলে, উহা তোমার মনে থাকবে না; সর্বোপরি, কোন কোন রাস্তা পরিস্কার আছে বলা কঠিন!
-আমার খুব দরকার ছিলো!
-তুমি যেই স্কুলের কথা বলছ, উহার আধা মাইলের ভেতর আমার নানী থাকে, চল আমি তোমার সাথে যাবো; আমাকে নানীর বাসা অবধি দিয়ে আসিও।
সে কাপড় বদলায়ে এলো, সাথে একটি বড় ব্যাগ; সে ব্যাগটা কোলের উপর রেখে বসলো। আমি বললাম,
-ব্যাগ পেছনের সীটে রাখ!
-না, আমি এভাবে কোলে রাখতে চাই!
-ব্যাগে অনেক টাকা পয়সা?
-খেয়াল রেখে গাড়ী চালাও, কথা কম বল।
সে যেভাবে ব্যাখ্যা করলো, সেই অনুযায়ী আমরা ট্রাইবরো ব্রীজ হয়ে ব্রুকলীনে প্রবেশ করার কথা; আমার পাশের ওয়াইপারটা দুর্বল ছিলো, উইনশীল্ডে বরফ জমে গেছে, আমি তাকে বললাম,
-ভালো যায়গা পেলে আমি থেমে উইনশীল্ডের বরফ পরিস্কার করবো।
-না, কোথায়ও থামতে পারবে না।
-আমি সঠিকভাবে রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না!
-আমি দেখছি, তুমি চালাও!
-গাড়ী রাস্তার বাইরে গেলে আমি টের পাবো না!
-গেলে যাক, গাড়ী থামাতে পারবে না।
দেখি ডানদিকে একটি রাস্তা নেমে গেছে, আমি তার কথা না শুনে সেই রাস্তায় নামলাম, ডেড-এন্ড! আমি গাড়ী থামানোর সাথে সাথেই সে ব্যাগ নিয়ে গাড়ী থেকে আমার আগেই নেমে গেলো; চীৎকার দিয়ে বললো,
-আমি তোমাকে খুন করবো, গাড়ী কেন এখানে এনেছ?
সে ব্যাগ থেকে বেশ বড় একটা ছুরি বের করে, ব্যাগটাকে বরফের উপর ছুড়ে ফেললো; বরফের বিচ্চুরিত সাদা আলোকে চারিদিক অনেকটা পরিস্কার; সে রাগে ফুসছে! ভাবলাম, এই পাগলী মেয়েকে গাড়ীতে আনা বেশ বেকুবী হয়েছে। আমি বরফ পরিকার করতে লাগলাম, তাকে ভেতরে বসতে বললাম; সে ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে; তারপাশ পরিস্কার করার জন্য যাওয়ার চেষ্টা করলে, সে চীৎকার দিয়ে বললো,
-এই পাশে এলে তুমি শেষ!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৯