somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাঈদীর মামলার বাদীকে যুদ্ধের সময় তথ্য সরবরাহকারীর জন্ম ’৭২ সালে : জেরার প্রশ্ন নিয়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীর বাকবিতণ্ডা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৈনিক আমার দেশ রিপোর্ট :
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগকারী ও সরকারপক্ষের প্রধান সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে যুদ্ধের সময় পিরোজপুরে পাকিস্তানি আর্মি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ অন্যান্য অপকর্মের তথ্য সরবরাহকারী খলিলুর রহমানের জন্ম ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল। বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ সালের ২ জুন খলিলুর রহমান আমাকে সংবাদ দেন, মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে একদল রাজাকার আমার বাড়িতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার এ সংবাদ পাওয়ার পর আমি আমার বাড়িতে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ পালিয়ে যাই। খলিলুর রহমানের জন্ম নিবন্ধন সনদ ও ভোটার আইডি কার্ড প্রদর্শন করে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন, যুদ্ধের পরের বছর জন্ম নেয়া খলিলুর রহমান বাদীকে যুদ্ধ সম্পর্কে সংবাদ দেয়ার ঘটনা কাল্পনিক। এ মিথ্যা তথ্যের মতো সাঈদীর বিরুদ্ধে এই আদালতে বাদীর দেয়া সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। মাওলানা সাঈদী ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের আগ থেকে একই বছরের মধ্য জুলাই পর্যন্ত পিরোজপুরের কোনো এলাকাতেই ছিলেন না। এ তথ্য সত্য কি না—আসামি পক্ষের আইনজীবীদের এ প্রশ্নের জবাবে বাদী মাহবুবুল আলম বলেন, সত্য। এ জবাবের পরপরই সরকার পক্ষের আইনজীবীরা একযোগে চিত্কার দিয়ে বাদীকে উদ্দেশ করে বলেন, সত্য নয়, সত্য নয়। আপনি উত্তর সংশোধন করে দেন। সরকারপক্ষের আইনজীবীদের এ বক্তব্যের পরপরই বাদী তার দেয়া জবাব পরিবর্তন করে বলেন, আমি আগে যে ‘সত্য’ বলেছিলাম তা সঠিক না। আসল জবাব হচ্ছে ‘সত্য নয়’। সাঈদী এলাকাতেই ছিলেন। বাদীকে জেরাকালে সরকারপক্ষের আইনজীবীদের জবাব শিখিয়ে দেয়ার ঘটনায় তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ করেন সাঈদীর আইনজীবীরা। তারা বলেন, বাদী প্রথম যে জবাব দিয়েছেন সেটাই হচ্ছে প্রকৃত জবাব। পরে সরকারপক্ষের আইনজীবীরা তাদের সুবিধামত তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন। এটা স্বচ্ছ বিচারের নমুনা হতে পারে না। সাঈদীর আইনজীবীরা বাদীর দেয়া প্রথম জবাব নথিভুক্ত করার জন্য বারবার প্রার্থনা জানান। এ নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আদালত বাদীর দেয়া প্রথম জবাবের পরিবর্তে দ্বিতীয় জবাবই লিপিবদ্ধ করেন।
পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে গতকাল মামলার বাদী ও সরকারপক্ষের প্রধান সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে পঞ্চম ও শেষ দিনের মতো জেরা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আহমেদ আনসারী, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ। ২০০৯ সালে পিরোজপুরে সাঈদীর বিরুদ্ধে করা এজাহারের সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে দেয়া বাদীর জবানবন্দির কোনো মিল নেই—উল্লেখ করে জেরা করতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম সাঈদীর আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ওই এজাহারটি এই ট্রাইব্যুনালের বিষয়ভুক্ত নয়। ওই এজাহারের সঙ্গে এই ট্রাইব্যুনালে দেয়া তার জবানবন্দির মধ্যে কোনো কন্ট্রাডিকশন (বৈপরিত্য) করা যাবে না। এটা করলে এই ট্রাইব্যুনালের বিধি লঙ্ঘন হবে। বিচারপতি নিজামুল হকের এ বক্তব্যের জবাবে সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, মাহবুবুল আলম নিজে বাদী হয়ে পিরোজপুর আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এজাহারটি দায়ের করেছেন। ওই এজাহার বিষয়ে সরকার তদন্ত করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনসহ এজাহারটি এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কাজেই ওই এজাহার বিষয়ে বাদীকে প্রশ্ন করার আইনগত এখতিয়ার আমাদের রয়েছে। এটা ন্যায়বিচারের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটা করা না হলে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হব। তিনি বলেন, বাদী আমার বিরুদ্ধে প্রথম যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাতে আমার বিরুদ্ধে এক ধরনের অভিযোগ এনেছেন, এখন জবানবন্দিতে বলছেন অন্য কথা। এ বিষয়ে পার্থক্য নির্ণয় করা না হলে আমরা সুবিচার পাব না। সাঈদীর আইনজীবীদের অনুনয়-বিনয়ের পর বিচারপতি নিজামুল হক সরকারপক্ষের আইনজীবীদের তাদের মতামত দেয়ার জন্য বলেন। বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে একমত পোষণ করে সরকারপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হায়দার আলী ট্রাইব্যুনাল বিধির বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে দেয়া জবানবন্দির সঙ্গে আগের কোনো এজাহার বা নথিপত্রের কনট্রাডিকশন তৈরি করা যাবে না। এটা করলে বিধি লঙ্ঘন হবে। সরকার পক্ষের আইনজীবীর এ বক্তব্যের জবাবে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। আর আমরা বাদীকে যৌক্তিক প্রশ্নও করতে পারব না—এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের কোনো ধারাতেই নেই, বাদীকে তার আগের দায়ের করা এজাহার সম্পর্কে প্রশ্ন করা যাবে না। এটা সাধারণ জ্ঞানেও বলে, একজন লোক আগে আমাকে একভাবে চিহ্নিত করেছেন। দুই বছর পরে এসে আমার ব্যাপারে ভিন্ন কথা বলছেন। কাজেই আগের কথার গুরুত্ব অনেক বেশি। উভয় পক্ষের আইনজীবীর বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আদালত এই পয়েন্টটি বাদ দিয়ে প্রশ্ন করতে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পরামর্শ দেন।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বাদী মাহবুবুল আলমের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি তো ২০০৩ সালে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার আহ্বায়ক ছিলেন। আপনি নিজেকে একেক সময় একেক পরিচয় দিয়ে সুবিধা নিয়েছেন। আপনি ২০০৪ ও ২০০৫ সালে নিজেকে অসহায়, বেকার ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে আল্লামা সাঈদীর সুপারিশ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েছেন। বর্তমান সরকারের সময় এসে আপনি সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিনিময়ে টাকা নিয়ে পাকা দালানঘর তৈরি করেছেন। একই সঙ্গে নিজের স্ত্রীকে দুস্থ শিশুর মাতা হিসেবে দেখিয়ে ভিজিএফ কার্ড করে নিয়েছেন। এছাড়া আপনি আপনার প্রথম স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং সংখ্যালঘুর বাড়িতে চুরির দায়ে আপনি জেলও খেটেছেন। আপনি সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তা একশ ভাগই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বর্তমান সরকার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাদের ভাতা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। আপনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম ও পদবি ধরে রাখতেই সরকার ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্ররোচনায় সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের এসব প্রশ্নের জবাবে বাদী মাহবুবুল আলম বলেন, আমাকে কেউ মামলায় প্ররোচনা করেনি। আমি নিজ থেকেই এ মামলা করেছি। আমি যা সত্য মনে করেছি, তা-ই করেছি; মিথ্যা কিছু করিনি।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের আগে মাহবুবুল আলমকে আগের দিনের জেরার সূত্র ধরে গতকাল সকালে জেরা শুরু করেন মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আহমেদ আনসারী। তিনি বিসাবলী সাহার হত্যার স্থান, পাড়েরহাটের মদনসাহার স্বর্ণের দোকানে লুট, ক্যাপ্টেন মাজেদসহ পাকিস্তান আর্মির ৫২ জন সদস্য ২৬টি রিকশায় করে পাড়েরহাটে আগমন, মাওলানা সাঈদীকে অভ্যর্থনা জানানো, বাদীর গোয়েন্দাগিরির বিবরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেরা করেন। বাদী অধিকাংশ প্রশ্নেরই ‘জানি না’ বলে জবাব দেন।
গতকাল বাদী মাহবুবুল আলমের জেরা শেষে আদালত আগামী রোববার পর্যন্ত কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করে। ওইদিন মামলায় সরকার পক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষীকে জেরা শুরু করবেন আইনজীবীরা।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×