সৌদি সরকার শব্দ দুষন প্রতিরোধে সে দেশে একটি বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। আযানের সময় লাউডস্পীকারের ব্যাবহার একটা অতি পুরাতন এবং গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি। কিন্তু বেশীরভাগ মসজিদ উচ্চ মাত্রার শব্দ এবং প্রচুর পরিমানে লাউডস্পীকার ব্যাবহার করার কারনে আযানের সময় ঐ এলাকায় জনসাধারনের দারুন ভোগান্তি হয়। তাই সরকারের আদেশে একটি বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিদর্শক দল পশ্চিমাঞ্চলের আল-বাহাহ্ এলাকার বিভিন্ন মসজিদ থেকে একশরও বেশী লাউডস্পীকার খুলে নিয়েছে। দেখা গেছে যে একটি মসজিদের উচ্চ শব্দের আযানের দাপটে অন্য মসজিদের আযানের শব্দ হারিয়ে যায়।
নামায বেহেশতের চাবি। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হচ্ছে নামায। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রধান অংশ আযান। তাই অত্যাবশ্যকীয়ভাবে প্রতিটি মসজিদ, যেখানে জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা হয়, সেখানে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের আগে আযান দিতে হয়। কিন্তু আযান প্রচারের সময় প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী লাউডস্পীকারের ব্যাবহার হচ্ছে এবং এতে করে জনসাধারন পড়ছে দুর্ভোগে। এই বিষয়টা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । সরকারভিত্তিক সৌদি প্রেস এজেন্সী (SPA) জানিয়েছে, এমনও দেখা গেছে যে ইমাম সাহেবের ওয়াজ-নসিহতের সময়ও অনেক মসজিদে সবগুলো লাউডস্পীকার চালু রাখা হয়। এতে করে আশপাশের এলাকা এবং অন্যান্য মসজিদও শব্দ দুষনের শিকার হয়। জণজীবনে নেমে আসে ভোগান্তি। সৌদি সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন যে অনেক মসজিদ আছে যাদের মাইকের আওয়াজ পাঁচ কিলোমিটার দুর থেকেও শোনা যায়।
সৌদি মন্ত্রনালয়ের এক বিশেষ আদেশে সারা দেশে শুরু হবে অভিযান। যে সকল মসজিদ আযানের সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশী শব্দের প্রয়োগ করবে তাদের বাড়তি লাউডস্পীকার খুলে নেবে কতৃপক্ষ।
খবরটা পড়ার পর আমার নিজের দেশের কথা মনে পড়ছে। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত আযান নয়, প্রতি জুম্মার দিন আযানের মেইন মাইক অন রাখা হয়। এখানে ওখানে ওয়াজ-মাহ্ফিলের সময় শত শত মাইক লাগানো হয় বটেই তার উপর লম্বা তার টেনে মাইলখানেক দুরেও মাইক বসানে হয়। শব্দের দাপটে মানুষের বিশ্রামের সমস্যা হয়। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার ক্ষতি হয়। অন্যান্য ধর্মালম্বী যাঁরা আছেন তাদের প্রতি অবিচার করা হয়। অসূস্থ্য এবং বয়োঃবৃদ্ধ যাঁরা আছেন তাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম।
এই সবই সহ্য করতে হয় নীরবে। দাঁতে দাঁত চেপে। এতে করে ইসলামের কতখানি উপকার হচ্ছে শিক্ষিত শ্রেনী সেটা বোঝেন। পাশাপাশি সাধারন মানুষে উপর দিয়ে কি যাচ্চে, সেটাও সবাই উপলব্দি করতে পারেন। কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই কারো।
ইবাদতের নামে শব্দ দুষন রোধে সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের খবরটা জানার পর এতো ভালো লাগছে! আমাদের দেশের কোনো সরকার এই নূইসেন্স রোধে ব্যাবস্থা নেবার সাহস পায় নি। কিন্তু আমরা এখন জলজ্যান্ত উদাহরণ দেখানো। ইসলামের পীঠস্থান থেকেই এই নূইসেন্সের বিরূদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে শুরু হবে না কেন? ইসলাম শান্তির ধর্ম। চীৎকার চেঁচামেচি করে মাইকে ওয়াজ প্রচার করা, আযান সুন্দরভাবে না দিয়ে বিশ্রীভাবে দিয়ে মানুষকে বিরক্ত করা, শুক্রবারের জুম্মার দিন পুরা জুম্বার ওয়াজ নসিহত অপ্রয়োজনীয়ভাবে মাইক অন্ রেখে প্রচার করা__ – এসবের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখন সময় এসেছে সবাইক বোঝানের। ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্য সবাইকে বিরক্ত করা, ডিসটার্ব করা। এতে করে নিজের ধর্মকে খাটো করা হয়। এটা গুনাহ্র কাজ। আসুন আমরা আমাদের ধর্মের মর্যাদা বিষয়ে সচেতন হই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




