somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যঃ লগআউট ফ্রম সুন্দরবন (কার্টুন কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার ঘুড্ডির পাইলট)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকাল থেকেই পাংকু টাইগারের মন খুব ফুরফুরা। ঘুম থেকে উঠার পর পরই সে ফেসবুকে কঠিন একটা স্ট্যাটাস দিয়া দিলো - "আজ ঢাকা যাইতেছি। ফিলিং অসাম।"

মিনিট দুই পরেই ২৬৬৭ টা লাইক, ৪৩টা কমেন্ট।
টাইমপাস বান্দর লিখলো - "কিউ। ডেট হে কিয়া ? ;) "
কুল বয় সজারু লিখলো - "মাম্মা, কাহিনী কি ? আম্গো ছাইড়া ভাগতাছ নাকি ?"
টেডি বান্দর লিখলো - "মাঝি, আমারে নিবা লগে ? :পি "
রাজকুমারী খরগোস লিখলো - "ওয়াও !!! হ্যাফ ফান।"
ঘারত্যারা মহিষ লিখলো -"কিছু দিন তোর ত্যান্দরামি খাইক্যা রক্ষা পামু। যা ভাগ।"
পাংকু টাইগার রিপ্লাই করলো - @টাইমপাস বান্দরঃ তু হারপাল মেরা দিলকি বাত ক্যাহ দেতাহে মেরি জান। B-) @সজারুঃ ঢাকায় নাকি মর্ডান সুন্দরবন তৈরি হৈছে। ভাবতাছি একটু ঢু মাইরা আছি। @টেডি বান্দরঃ ভাগ হালা। আমি গে নাকি ? X( @রাজকুমারী খরগোসঃ যাবে নাকি ? :)
আরো কয়েকজনকে রিপ্লাই করে সে মর্নিং ওয়াকে বের হইলো।

পাংকু টাইগার তার নিজের দেওয়া নাম না। তার ফ্রেন্ড সার্কেল এই নামের উদ্ভাবক। পিচ্চিকাল থেকেই সে ব্যাপুক ভাবের সহিত চলাফেরা করে। আশেপাশের দশ এলাকার সুন্দরী বাঘিনীরা তার বিরাট ফ্যান। তাই বনের অন্যান্য ইয়াং বাঘেরা তাকে সহ্যই করতে পারেনা। সুযোগ পাইলেই তারা পাংকু টাইগাররে পঁচানি মারে। তবে এইটা সে খুব এনজয় করে। সুন্দরবনে থাকতে থাকতে সে বোরিং হয়ে গেছে। তাই একটু রিফ্রেস হওয়ার জন্য ঢাকা না গেলেই নয়। মর্ডান পশু সমাজের একজন গর্বিত সদস্য হওয়ার পরও এতোদিনেও সে ঢাকার মর্ডার সুন্দরবনে যেতে পারলোনা এটা তাকে খুবই পেইন দেয়। ঢাকার মর্ডান সুন্দরবনের পশুরা নিশ্চয় তার থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। আর সে এখনো এই অজপারা গায়ের বনে পড়ে আছে। ওহ নো !!!!

মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরে নাস্তা করেই সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সাথে তার প্রিয় আইপ্যাডখানা লইতেও ভুল করলো না। নিজের চাইতেও সে তার আইপ্যাডটাকে বেশি ভালবাসে। বুড়া বাঘেরা কিভাবে ফেসবুক আর ব্লগিং না করে থাকে সে কিছুতেই বুঝতে পারেনা।

সরদঘাটে নামার পড়েই তার নতুন কেনা আইফোন ৫ দিয়া ধামাধাম কিছু ছবি তুলে ফেললো পাংকু টাইগার। ছবি তুলতে দেরি কিন্তু ফেবুতে শেয়ার করতে বিন্দুমাত্র দেরি করলোনা। সাথে একটা স্ট্যাটাসও দিয়ে দিলো। "ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে। :D "

সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ফুরফুরা মেজাজেই বের হলো পাংকু টাইগার। কিন্তু সিএনজি ভাড়া করতে গিয়া মেজাজ বিলা হৈয়া গেলো। তাই সিএনজির আশা বাদ দিয়া রিক্সা ভাড়া করতে গেলো। রিক্সাওয়ালা সদ্য ধরানো বিড়িতে গভীর একটা টান দিয়া ডাবল ভাড়া দাবি করিয়া অন্য দিকে মুখ ফিরাইয়া রাখিলো। অগ্যতা ডাবল ভাড়াতেই রিক্সা ঠিক করতে মনোস্থির করলো পাংকু টাইগার।

সদরঘাট থেকে রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত আসার পথে তার সাথে গোটা দশেক ঘোড়ার সাথে দেখা হলো। ঘোড়াগুলো তার দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকাইয়া একজন আরেকজনকে বলতে লাগলো- "পুরান পাগলে ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি।" কথাটা পাংকু টাইগার শুনেও না শোনান ভান ধরলো। কিন্তু কথাটা সোজা তার বুকের মাঝবরাবর হিট করলো। লম্বা জ্যাম ঠেলে তাতীবাজার বাজার মোড় পর্যন্ত আসতেই তার ঢাকা শহর আসার সাধ অর্ধেক মিটিয়া গেলো। কিন্তু কিছু পাইতে হইতে কিছুতো ত্যাগ করিতেই হইবে- এই বলিয়া নিজেকে নিজেই সান্তনা দিতে লাগিলো। কিন্তু গুলিস্তান পাড় হইবার আগেই তার ঢাকা শহর দেখিবার শখ আল্লাদ ধুলার সহিত মিশিয়া গেলো। অগত্যা রিক্সাওয়ালাকে পুরা ভাড়া প্রদান করিয়া হাটিয়া বাকি পথ অতিক্রম করিবার সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করিলো।

কিন্তু মানুষের ভীড় আর গাড়ির হর্নে জীবন অতিষ্ট হইবার উপক্রম হওয়া শুরু হইলো। কোনক্রমে গুলিস্তান পার হইয়া পল্টন নামন স্থানে হাজার হাজার মানুষের মাঝখানে পড়িয়া গেলো পাংকু টাইগার। এখানে কি ঘটনা ঘটিতেছে সে কিছুই বুঝিতে পারিলো না। তার কাছে মনে হইতেছে দুই পক্ষ চাকাচাকি খেলিতেছে। বনে ছোটবেলায় সে তার বন্ধুদের সহিত এই রকম চাকাচাকি খেলিতো। এক পক্ষ আরেক পক্ষরে ইটের টুকরা নিক্ষেপ করিয়া আহত করার এই খেলার মাতিয়া উঠিয়াছে। ছোটবেলার কথা মনে পড়িয়া যাওয়ায় পাংকু টাইগারেরও এই খেলা খেলিবার মন চাহিলো। কিন্তু খেলায় জয়েন করার আগেই এক দল বেরসিক পুলিশ আসিয়া খেলায় বিঘ্ন ঘটাইয়া দিলো। এক রকম সাদা ধোয়া ছুড়িয়া খেলোয়ারদের লাঠি লইয়া তাড়াইতে আসলো। পাংকু টাইগার কিছু বুঝিয়া উঠার আগেই তার পিঠে দু'চার ঘা লাঠির বাড়ি পড়িলো। সাথে সাথে কানফাটা বিকট শব্দও শুনিতে পাইলো। এরপর সে আর কিছু মনে করিতে পারিলো না।

পাংকু টাইগার নিজেকে একটা হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করিলো। চারদিক হইতে উহ-আহ কুকানির শব্দ কানে আসিতেছে। বুঝতে পারিলো সে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আছে। খেয়াল করিয়া দেখিলো তার পিঠে আর ল্যাজে ব্যান্ডেজ লাগানো হইয়াছে। একটা মোটামতোন নার্স আসিয়া তাকে জানাইলো গতকাল পল্টনে ককটেল হামলায় সে আহত হইয়াছিলো । তার পিঠের ছাল আর ল্যাজের বেশির ভাগ অংশ পুড়িয়া গিয়াছে। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে তিন চার দিন রেস্ট নিতে উপদেশ প্রদান করিয়া এক ডজন টেস্ট সম্বলিত ব্যবস্থাপত্র হাতে ধরাইয়া দিলো। পাংকু টাইগার ঐ দিন রাতেই কাউকে না জানাইয়াই গাট্টি বস্তা লইয়া ঢাকা শহর ত্যাগ করিলো।



সুন্দরবনে প্রবেশ করা মাত্র পাংকু টাইগার একটা থাক্কার মতোন খেলো। এইখানে একটা বন ছিলো কেউ কোনদিন ধারণাও করতে পারবেনা। বন উজার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। কালো ধোয়ায় চারদিক বিষাক্ত হয়ে গেছে। নিশ্বাস দিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। সবার কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো সুন্দরবনে রামপাল নামে একটা বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ করা হবে। আর সুন্দরবনের পশুপাখিদের ঢাকা শহরে কৃত্রিম বন তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যেই পশুপাখি বিষয়ক মন্ত্রনালয় তাদের প্রত্যেককে ঢাকা শহরে একটি করে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা বলে আস্বস্ত করেছেন। তাই সুন্দরবনের সব পশুপাখিরাও ক্যাপিটার সিটিতে থাকার সৌভাগ্য লাভ করার কথা ভাবিয়া মহা আনন্দে আছে। কিন্তু পাংকু টাইগারের কাছে ঢাকা শহরের কাহিনী শুনে সবার গলা শুকাইয়া কাঠ হইয়া গেলো। তাই সবকিছু চিন্তা করে সবাই সুন্দরবন ছেড়ে কোথাও না যাওয়ার শপথ গ্রহণ করলো। কিন্তু তাদের কথায় কর্নপাত না করে সমান তালে চললে লাগলো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের কাজ। অগত্যা পাংকু টাইগার "আত্মহুতি টু সেভ সুন্দরবন" নামক একটা ফেসবুক ইভেন্ট ওপেন করলো। ইভেন্টটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হলো। টেলিভিশন চ্যানেলে ফলাও করে এটা নিয়ে নিউজ আসলে লাগলো, বিভিন্ন টকশো তে বক্তারা আলোচনার ঢেউ তুলে ফেললো। কিন্তু সুন্দরবন রক্ষায় কোন কার্যকর সমাধান পাওয়া গেলোনা। নির্দিষ্ট দিনে সব টিভি চ্যানেলগুলি আত্মাহুতি দেওয়ার কর্মসূচি লাইফ টেলিকাস্ট করার জন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করলো। পাংকু টাইগার ও তার অনুসারিরা গলায় পাথর বেঁধে বঙ্গোপসাগরে ঝাপ মেরে আত্মাহুতি দিলো। আত্মাহুতি পর্ব শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের অনুভুতি নিলো ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা। ব্যাপারটা নিয়ে সপ্তাহ ভরে নানা আলোচনা সমালোচনা হতে লাগলো। এক সময় আলোচনার গতি মন্তর হয়ে আসলো আর ফলশ্রুতিতে এক সময় দেশের মানুষ পাংকু টাইগারের কথাও ভুলে গেলো। রামপালের কালো ধোয়ার মাঝে পাংকু টাইগারদের প্রাণের আকুতি ফিকে হয়ে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×