![]()
আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবন নামক স্থাণের সুবিশাল এলাকাজুড়ে হতদরিদ্র পশুপাখির বসবাস। বছরের পর বছরজুড়ে এরা দরিদ্রসীমার নীচে দিনাদিপাত করছিল। টাকার অভাবে স্কুলে যেতে পারতো না বাঘের নাদান বাচ্চারা। দিনের পর দিন অভাবে অনাদরে তাদের বান্দ্রামীটাও ভুলতে বসেছিল বানরের দল। সন্ধ্যার পরে পুরো সুন্দরবন জুড়ে নামতো ভূতুড়ে অন্ধকার। কেননা শহরের মতো তো আর সেখানে কোন বিদ্যুৎ কানেকশান নাই। তাই শিয়ালের দল তাদের বাচ্চাদের বিকেল বেলায়ই ঘুম পাড়িয়ে দিতো। পাছে বাচ্চারা আবার রাতের বেলা বই নিয়ে পড়তে বসতে চায়। কিন্তু আজ সুন্দরবন এলাকাজুড়ে খুশীর বন্যা। চারদিকে আনন্দের জোয়াড় বইতে শুরু করেছে। তাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
সুন্দরবনের রামপালে স্থাপণকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে জানতে চাইলে এক প্রবীণ শিয়াল আবেগপ্রবণভাবে আমাদের বললেন-"আমাদের বাপ দাদা চোদ্দগুষ্ঠি ছিল পন্ডিতের বংশ। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে আমাদের বাচ্চাদের পড়ালেখার ভীষণ সমস্যা হচ্ছিল। স্থাপণকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের অনেকদিনের আশার প্রতিফলন বৈকি। আশা করছি আমাদের ছেলেপেলেরা আগামী বছর থেকে গোল্ডেন এ+ পেয়েই সব পরীক্ষায় পাশ করবে।"
উঠতি বয়সী এক বাঘকে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি জানান-"এতো দিন বিদ্যুৎ এর কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেটদলের খেলা সরাসরি দেখতে পাইতাম না। খবরের কাগজই ছিল একমাত্র ভরসা। দল জয়ী হইলে যখন খেলোয়াড়দের বাঘের বাচ্চা বইলা বাহবা দিতো, তখন গর্বে বুকটা ভইরা যাইতো। এখন জঙ্গলে বিদ্যুতের লাইন আইবো, আমরা বড় পর্দায় লাইভ ম্যাচ দেখুম। ভাবতেই ভাল লাগতেছে। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ আগামীতে সুন্দরবনে একটা ক্রিকেট স্টেডিয়ামও তৈরি করে দিবে। এতে আমরাও ক্রিকেট খেলা শিখে জাতীয় দলের অংশীদার হইতে পারুম।"
কিছুদূর সামনে এগুতেই এক ময়ূরের সাথে দেখা হতেই তিনি মিটিমিটি হেসে আমাদের কাছে তার ইচ্ছার কথা জানালেন-"শুনেছি ভারতের ময়ূরগুলা দেখতে অনেক সুন্দর। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হইলে ওদের সাথে নাকি আমাদের বন্ধুত্ব আরো জোরদার হবে। একজন সুদর্শন ময়ূর হিসেবে এটা আমার জন্য অবশ্যই একটা বড় প্লাস পয়েন্ট।"
যে যতই সমালোচনা করুক না কেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের বেকার পশুপাখিদের কর্মসংস্থানের সুযোগের পাশাপাখি তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে আরো বহুগুণে উন্নত করবে। সেই সাথে এই কনকনে শীতের রাতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্তাপ সুন্দরবনের আবহাওয়াকে গরম রাখতে সাহায্য করবে বৈকি। বুঝতেই তো পারছেন দক্ষিণাঞ্চলে যেই শীত!!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




