এভাবে লিখলে কতদিনে আমার ২৬ বছরের কাহিনি শেষ হবে! আজ থেকে অতীতের সাথে আজকের দিনপঞ্জিকাও লিখতে হবে!
আমরা তখন যে বাসায় ভাড়া থাকতাম তার বাড়িওয়ালি আমাকে খুব পছন্দ করতো।তিনি ছিলেন বিহারি মহিলা।প্রতিদিন গোসোল এর আগে মাকে বলতো , দাওগো ওকে আদর করে নিই, পরে আবার কোলে নিলে পেশাব করে দিলে আমার নামায বাদ জাবে।মা গল্প করে যখন ই চা খেতেন আমাকে একচুমুক দিতেন অবশ্যই। আর আমিও কাপ হাতে দেখলেই লাফালাফি আরম্ভ করতাম নেবার জন্ন।এর মাঝে এক ঘটনা ঘটল। আমাকে বিছানায় রেখে মা আর ফুপু বাইরে গল্প করছিল।বিছানার পাশেই এক চাচা ইস্ত্রি করছিল, সে আনমনে কখন গরম ইস্ত্রিটা বিছানায় রাখে আর আমি গিয়ে পড়ি সোজা ওতার উপরে।আমার একপাশের গাল পুড়ে গিয়েছিল।মা আর ফুপু তো ভয়ে অস্থির ।বাবা নাকি খুব রাগ করেছিল, একটা বাচ্চা সাম্লে রাখতে পারনা তোম্রা।অনেকদিন ছিল দাগটা ।কলেজে ওঠার পর মিলিয়ে গেছে সেই পোড়া দাগ। আমার দেড় বছরের মাথায় পটলার জন্ম হল।আমার ছোট্ট বোন , আমি ওকে অনেক নামে ডাকি টেপলি, পটলা- সবই আদরের ডাক।ও ছোটোবেলা থেকেই নাদুস নুদুস, নানা ওকে ডাকতো ভবেশ।মা রান্না করার সময় আমাকে বলত, বাবুকে দেখ আর খেলা কর আমি রান্না করি, কেমন।একদিনের গল্প বলি মা আমাক চক স্লেট দিয়ে বাবুকে পাশে শুইয়ে গেছে, আমি চক দিয়ে লিখা বাদ দিয়ে সেটা নাকে ঢুকিয়েছি, তার পর বের করার জন্য টানাটানি করতে গিইয়ে আরো ভিতরে ঢুকিএ ফেলেছি।পরে কাদতে কাদতে মা এর কাছে গিইয়ে বলতে র পারিনা অনেক্ষন বোঝানোর পর মা বুঝে আমি কি অকাম করেছি! এর পর বহু চেস্টা করেও বের না করতে পেরে শেষ মেষ হাসপাতালে গিয়ে সেই চক বের করা হয়। লিখাপরায় আমি কত মনযোগী তার দৃস্টান্ত তখন থেকেই দিচ্ছিলাম আর কি!
পটলা সবসময় আমাকে অনুসরন করত, আর একদিনের ঘটনা , ও তখন কেবল হামাগুড়ি দিতে পারে আমি বছর তিনেক হব,মা অন্য ঘরে ছিল আমি খেলার জন্য সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম, বদমাশটা কখন যে আমার পিছু নিয়েছে কেউ খেয়াল করেনি, সিড়িতে হামাগুড়ি দিতে গিয়ে পড়ল সিড়ি থেকে ।কান্না শুনে মা ছুটে আসে কিন্তু মা এক সিড়ি নামতে নামতে ও গড়িয়ে পরের সিড়িতে , এই করে একদম নিচের সিড়ি পর্যন্ত।
আমি ছোটোবেলায় অনেক চঞ্চল ,মিশুক আর জেদি ছিলাম।আমার বয়স তখন সাড়ে তিন বা চার, তখন যে বাসাই ভাড়া থাকতাম, তার অন্যান্য তলায় টেলিভিশন ছিল, কিন্তু আমাদের বাসায় ছিলনা।বাচ্চা বলে কেউ কিছু বলতনা , আমি সবার বাসায় গিয়ে টেলিভিশন দেখতাম।মার ব্যাপারটা খারাপ লাগত।একদিন বাবাকে বলল, “তোমার মেয়ে অন্যের বাসায় গিয়ে টেলিভিশন দেখতে বসে যায়”। আর কি বাবা নিয়ে আস্ল টেলিভিশন।
পটলা একদম গরম সহ্য করতে পারেনা।শুচিবায়ু রোগ আছে ওর ছোটবেলা থেকেই।টয়লেট এ গেলে নাকে কাপড় দিয়ে বসে থাকত।একবার নানা বেড়াতে এসেছেন আমাদের বাসায় গরমের সময়।পটলা টয়লেট এ গেছে বেশ কিছক্ষন, নানা দুষ্টুমি করে বলল, “কি নানুভাই গরম লাগছেনা?”।পটলার সরল আবদার, “মা টয়লেটের ফ্যান্ টা দিয়ে দাওতো”।সবাই হেসে উঠল, আমাদের টয়লেট তো আর ফ্যান নাই।
আজ সকালে ভার্সিটি গিয়েছি সোয়া এগারটায়।সারাদিন তেমন কোনো কাজ করিনি।প্রোগ্রাম এর এক্ জায়গায় অনেকদিন ধরে আটকে ছিলাম, পলাশ ভাইয়া ঠিক করে দিলেন।আমি এতদিন ধরে পারলামনা আর ভাইয়া ৫ মিনিটের মধ্যে সেটা ঠিক করে দিলেন।একেই বলে অভিজ্ঞতা।সকালে যখন বাবুর সাথে কথা হচ্ছিল তখন আবার অনুভব করলাম , আমাদের সম্পর্ক টা কতটা আবেগহীন। আমার ভাললাগা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যাথা নাই। না থাকাটাই নরম্যাল, কিন্তু আমি কেন যে এত চাই।আমি কি ওকে ভালবাসি? এটাতো চরম বোকামি, আমি জানি ও অন্য কারো, কেন আমার সাথে এই পথচলা।আমার যে কস্ট হবেনা তানা। আমার এখন বেশী দরকার ওকে। কিন্তু ও যেদিন চলে যাবে, সেদিন কি হবে? নামায পরার সময় আবারো মনে হল ,অনিক এর সব আছে আমার কিছু নাই ।আমি মনে হয় এটার এ যোগ্য।ও সংসার করছে , বউকে ভালবাসার চেষ্টা করছে আর আমি বাবুকে নিয়ে অন্য খেলায় মেতে আছি।সবার সুখে নিজের কষ্ট বেশি করে অনুভন করছি।আমি কি এর ই যোগ্য!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




