স্মৃতির পাতা থেকেঃ
এগুলো মা এর কাছ থেকে শোনা, অত ছোটোবেলার কথা তো আমার সব মনে নেই।আমি সাড়ে তিন বছর থেকে ভাইয়ার হাত ধরে স্কুল এ যেতাম।মা বলে এটা নাকি আমার জেদ ছিল, ভাইয়া যাই, আমিও যাব।আল্লাদ আর কি! পড়ালেখা করার সময় তো করিনি, ছোটো বেলায় স্কুল যাবার শখ! আমি যখন ক্লাস ওয়ান এ পড়ি , সেই সময়ের ঘটনা।স্কুল ছুটির পর বাবা আমাকে রিকশা করে দিয়েছেন, সেদিন তারাহুড়া ছিল বলে পরিচিত রিকশা না খুজে যেটা সামনে পেয়েছে সেটায় বসিয়ে দিয়ে বাবা চলে গেছে।রিকশা ওয়ালা মনের সুখে আমাকে পাচার এর উদ্দেশে নিয়ে রওনা দিল।রিকশা চলছে তো চলছে, আমি দুইবার বলেছি,”আপনি তো অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের বাসার রাস্তা অন্যদিকে”।রিক্সাওয়ালা বলে,”বসে থাক, আমি নিয়ে যাচ্ছি”।চলতে চলতে একটা বাধের পাশে আসার পর আমার মনে পড়ল অনেকদিন আগে এই জায়গাতে আমরা দাওয়াত খেতে এসেছিলাম, তখন বাবা বলেছিল এটা আমাদের বাসা থেকে অনেকদূর।আমি রিক্সা থামাতে বললে সে আরো জোরে চালাতে লাগল।আমি কান্নাকাটি শুরু করলাম আর রিক্সাওয়ালার শার্ট ধরে টান্ দিলাম, এইটা রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো কিছু ছেলের নজরে পড়ল।ওরা পরে সাইকেলে ধাওয়া করে আমাকে উদ্ধার করে,আমি বাসায় ফিরার পর মার আমাকে জড়িয়ে কি কান্না! বাবা মসজিদে কত টাকা যেন দান করেছিল।এই মেয়ে তাদের কত কাদাবে তা কি তখন তারা জানত!
আমাদের এই বাসাতে টিয়াপাখি, খরগোশ, গিনিপিগ ছিল,আম্রা টিয়াটাকে চামচ এ করে খাবার খাওয়াতাম, বিকেল বেলা খরগস আর গিনিপিগগুলোকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য বাসার সামনের মাঠে নিয়ে যেতাম।একদিন বিকেলে টিয়াটা হঠাট করে মারা গেল, তার কিছুক্ষন পর আমার এক ফুপুর মেয়েটাও হাস্পাতালে মারা গেছে এই খবর আসল।হয়ত সেটা কাকতালীয় ছিল, কিন্তু আমাদের মনে স্মৃতিটা এভাবেই গেথে গেছে।আামার স্কুলে ভর্তি নিয়েও কাহিনী আছে,মানে আসল স্কুল যেখান থেকে আমি এস এস সি পাস করেছি।ভাইয়ার সাথে যে স্কুলে যে্তাম সেখানে মেয়েদের প্রাইমারি পর্যন্ত পড়া যেত, তেমন ভাল ও ছিলনা,তাই ক্লাস ওয়ান এর পরেই আমাকে ভাল স্কুল এ দেবার চেস্টা করা হচ্ছিল।পরীক্ষা দেবার পর থেকে আমার এক জেদ আমি ওই স্কুলেই পড়ব।রেজাল্ট হবার পর দেখা গেল আমি চান্স পায়নি।সবাই বলে সামনের বছর আবার চেস্টা করো, এখন আগের স্কুলেই যাও, কিন্তু আমি একরোখা জেদ ধরে বসে থাকলাম, না আমি ওই স্কুলেই পড়ব।পরে অবশ্য পুন-নিরীক্ষন এর মাধ্যমে আমি ওই বছরই নতুন স্কুলে ভর্তি হই।দুই বছর পর পটলাও একই স্কুলে ভর্তি হয়।ওর ভর্তি পরীক্ষা শেষে বের হয়ে কি কান্না- গাছের পাতার রঙ সবুজ না লিখে অন্য কিছু লিখেছে!! তবে পটলা কোনো ঝামেলা ছাড়াই স্কুলে ভর্তি হয়।
একবারের ঘটনা , আমি থ্রিতে আর পটলা ক্লাস ওয়ানে পড়ে।আমি, আমার বান্ধবি রিমা আর পটলা একসাথে স্কুল যাওয়া আসা করতাম।আগেই বলেছি পটলা ছোটোবেলা থেকেই নাদুস্ নুদুস।আমরা দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হয়ে গেছি, ও দৌরাতে গিয়ে পরে পা কেটে ফেলেছে।কান্না সাথে আমাকে মার, রাগ আমি কেন দৌড় দিলাম, পরে বহু বুঝিয়ে স্কুল নিলাম।ওর ছুটির পর আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হত আমার ছুটির জন্য, ও তো একা যেতে পারবেনা বাসায়।সেদিন শইয়তানটার মাথায় কি হল সে থাকবেনা, ছুটির পর একা বাসাই চলে যাবে, আমি শত বুঝিয়েও তাকে রাখতে পারলাম না।ক্লাস শুরু হবার পর আমার কি টেনশন,ও কিভাবে একা জাবে,কিছু হলে তো মা আমাকে বকবে, আমি কান্না শুরু করলাম,পরে ছুটির সাথে সাথে বাবার কাছে গিইয়ে নালিশ দিলাম, বাবা হেসে বলল, বাসায় যাও , কিছু হবেনা।বাসায় এসে দেখি সুন্দর খেলছে পাজিটা।অবশ্য ওকেও কাদতে হয়েছিল, বাসায় ফিরে কলিংবেল বাজাই, কিন্তু কারেন্ট না থাকায় কেউ দরজা খুলে দেইনা।একসময় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কান্না শুরু করে!!
আজকের পাতাঃ
আজ ডাক্তারের কাছে আপয়ন্টমেন্ট ছিল, সকালে দশটা ত্রিশে।বাবু ডেকে দিল নয়টা ত্রিশে।রেডি হয়ে রওনা দিলাম।কাল রাতেও ঘুম অনেক দেরী করে এসেছে।এটা সেটা ভাবছিলাম, রাতে দেড়টার দিকে চোখ বন্ধ করতেও ভয় লাগছিল, মনে হচ্ছিল আমার শরীরটা পচে গেছে, মাংস খুলে পরছে এই দৃশ্যটা আমার চোখের সামনে ভাসছে।বাবুকে কল দিলাম, কিন্তু সেতো মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমাবে! আমি যতই কল দিইনা, তাতে তার কিছু যায় আসেনা, রাতে মন খারাপ করেই একসময় ঘুমিয়েছিলাম।যেতে যেতে কিভাবে যেন অনিক মাথায় ঢুকে গেল আর কি লাগে, সারাটা দিন মাটি, ডেস্ক এ বসেও কতবার চোখের পানি মুছি।ভাল লাগেনা কিছু,নিজেকে শেষ করার ইচ্ছেটা আবার ফিরে আসছে।আমার ওজন বেড়েছে অনেক, মোটাও হয়েছি, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি আমি অনেক দুর্ব্ল হয়ে গেছি।অদ্ভুত সব সমস্যা।মিনা ভাবি কল করেছিল, জিজ্ঞেস করল, মহুয়া আমাকে দাওয়াত দিয়েছে কিনা ওদের বিবাহ বার্ষিকীতে।আমি কিছুই জানিনা, অবশ্য ওরা এটা আশা করতেই পারে আমাকে দাওয়াত দেবার তো দরকার নাই ফরম্যালি।সারাদিন বাবুর সাথেও তেমন কথা হয়নি।আমি ওর কাছ থেকে সরে আসতে চাই, জানি একদিন ও চলে যাবে, কিন্তু ও যেদিন থিকমতো কথা বলেনা, সেদিন আবার অস্থির হয়ে যায়।আল্লাহ আমাকে তুমি উদ্ধার কর, এ কোন পথে চলছি আমি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




