হত্যা গুম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ হত্যা, অপহরণ, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ ৫টি অভিযোগ এনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গত ৩১ জানুয়ারি এ অভিযোগনামাটি দায়ের করা হয়। আরজিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের সাবেক আইজি নুর মোহাম্মদ, বর্তমান আইজি এইচএম খন্দকার ও র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বাংলাদেশের বিদ্যমান অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি অনুসন্ধান শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালের রোম স্ট্যাটিউটের ৬ ও ৭নং ধারা, জেনেভা কনভেনশন, আইসিসির ৯৪নং ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়। ব্রিটেনে বসবাসরত ৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক যৌথভাবে এ অভিযোগ দায়ের করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মামলা নং ওটিপি-সিআর-২৩/১২, আরজি গ্রহণ করে অভিযোগ উত্থাপনকারীদের উদ্দেশ করে আদালতের তথ্য প্রমাণ ইউনিটের প্রধান এম. পি. ডিলন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের উত্থাপিত আরজি গ্রহণ এবং রেজিস্ট্রি শাখায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিধিমালার (রোম স্ট্যাটিউট বিধি) আলোকে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আপনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সূত্র জানিয়েছে, ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক তাজউদ্দিন, মোহাম্মদ আবদুস সালাম, দেওয়ান এএম চৌধুরী, মোহাম্মদ শামিম হুসাইন ও বাহাউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন। তাদের এ অভিযোগের সমর্থনে তারা মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অধিকার-এর ২০১১ সালের প্রতিবেদন, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট পেশ করেন। আরজিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন বছরের শাসনামলে খুন, অপহরণ, গুম, পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিরাপত্তা হেফাজতে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা, সাধারণ নাগরিকদের ওপর পীড়ন, সাংবাদিক নির্যাতনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের বিবরণ দেয়া হয়। আরজিতে ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড’কে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচারের প্রার্থনা জানানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অভিযোগ : বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রার্থনা জানিয়ে আরজিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বর্তমানে বিপজ্জনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম মাসেই ৩৬ জন নিহত ও ২১৪০ জন আহত হয়। ওই সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন ২৪ জন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরেই ২৫১ জন নিহত হয়। একই সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আরও ১৪০ জন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের ১৬ হাজার ৪৫১ জন গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন। আরজিতে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, শুধু এক মাসেই রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪ জন নিহত হন। গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন ১৯ জন সাংবাদিক। ওই মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন ১১ জন। ২০১১ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন ৮৪ জন, সরকারি বাহিনীর হাতে নির্যাতনের পর মারা যায় আরও ১৭ জন। নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুম হয়েছে ৩০ জন। আরজিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানাবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক, অপহরণ, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। পুলিশ ও র্যাব ক্রসফায়ারের নামে নিয়মিত মানুষ খুন করে চলেছে। সরকার এসব বাহিনীকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকারের দায়িত্বহীনতা সম্পর্কে আরজিতে বলা হয়েছে, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শেখ হাসিনার সরকার ঠিক তার উল্টো কাজ করছে। সরকার দলীয় ক্যাডাররা অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে বিরোধী দলের সমর্থক নাটোরের পৌর চেয়ারম্যানকে হত্যা করেছে, যা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। হত্যাকারীরা সরকার দলীয় হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত তিন বছরে ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা পরিচালনাকারী ব্যারিস্টার আলী আজহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে টেলিফোনে জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিধি অনুযায়ী যে কোনো দেশের ক্ষুব্ধ নাগরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তার নিজ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা অপর কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। অভিযোগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রতিকার চেয়েছে। আদালত অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিসহ যে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ উত্থাপনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে জানান, এ বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তাছাড়া এটি আমাদের জানার কথাও নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো বিষয় হলে সেটা দেখাশোনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।
আন্তর্জাতিক আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ :
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা
সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন
লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন