ছাত্ররা জানায়, মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস তার একটি ক্লাসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর বহু বিবাহ নিয়ে কটাক্ষ করেন। তিনি মহানবী সা: প্রতি অত্যন্ত অমর্যাদাকর, অবমাননাসূচক ও অসত্য অপবাদ আরোপ করেন। ইসলাম ধর্মের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত পবিত্র হজ নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য রাখেন। এতে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, তরুণ বয়সী কোনো ছাত্রের মুখে দাড়ি দেখলে ওই শিক্ষক তাকে অপমান করেন এবং ছাগলের সাথে তার তুলনা করেন। গতকাল স্কুলে পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মদনের এসব কাণ্ড নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং একপর্যায়ে তারা বাইরে বেরিয়ে আসে। এরপর ছাত্ররা বিষয়টি প্রধান শিক্ষিকাকে জানিয়ে মদন মোহন দাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্খা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ খবর পুরো স্কুলে ছড়িয়ে পড়লে সব ছাত্রছাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসে। তারা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্খা নেয়ার দাবি জানায়। শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের কক্ষের সামনের নামফলক ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা স্কুল প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে রাস্তায় চলে আসে। এ সময় ছাত্র-অভিভাবকেরা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মিরপুর সড়কে অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাদের বিক্ষোভ মিছিলটি মানিক মিয়া এভেনিউয়ের পশ্চিম প্রান্ত ঘুরে আবার স্কুলের সামনে অবস্খান নেয়। খবর পেয়ে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ ঘটনাস্খলে পৌঁছে ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে প্রধান শিক্ষিকাসহ অন্য শিক্ষক ও পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিলে দেড় ঘন্টা পর অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
রওশন জাহান নামে এক অভিভাবক বলেন, মদন মোহন খুবই বদমেজাজি ও উগ্র। তিনি ছাত্রদের মারধর করেন, যা তারা স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর অভিভাবকদের জানায়। এ নিয়ে কিছু বলতে গেলে ওই শিক্ষক অভিভাবকদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন। নবম শ্রেণীর ছাত্র শাফায়েত আহমেদ জানায়, কোনো কারণ ছাড়াই এই শিক্ষক মাঝে মধ্যে মুসলমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে থাকেন। কিন্তু ভয়ে তাকে কিছু বলা হয়নি। ছাত্রদের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রওশন আরা আক্তার জানিয়েছেন, ‘মহানবী সা:কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার বিষয়টি শিক্ষক মদন মোহন স্বীকার করেছেন। তবে ছাত্ররা ক্ষেপে উঠবে তা বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত আসার পরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্খা নেয়া হবে। এ দিকে ঘটনার পর থেকে স্কুলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কিছু দিন যাবৎ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একশ্রেণীর শিক্ষক বিশেষত ইসলাম ধর্ম ও মহানবী সা: সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন। তাদের কেউ কেউ মুসলমান ছাত্রীদের সাথে অবমাননাকর আচরণ ও তাদের শ্লীলতাহানির মতো দুষ্কর্মেও জড়িত হচ্ছেন। এই অপরাধপ্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের সাহস জোগাচ্ছে বলে অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা একমত। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জিটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গত ১৪ জুলাই শঙ্কর বিশ্বাস নামে এক শিক্ষক মহানবী সা:কে নিয়ে কটাক্ষ করেন। এতে সেখানে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে দ্রুত ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে পরিস্খিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষক পরিমল জয়ধর কোচিংয়ে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সম্ভ্রমহানি করেন। পরিমলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সরকার বাধ্য হয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তেজগাঁও সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুলে রতন কুমার পাল নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ছাত্রী-মহিলা শিক্ষিকাদের সাথে অনৈতিক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিমল ও শঙ্করকে বরখাস্ত করা হলেও রতন পাল এখনো বহাল রয়েছেন বলে জানা গেছে। কয়েক মাস আগে ধামরাইতে অপর একজন হিন্দু শিক্ষক মহানবী সা: ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অত্যন্ত অশালীন মন্তব্য করেন।
এ দিকে গতকাল ধানমন্ডি স্কুলের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। গত সপ্তাহে শিক্ষকদের সৎ পথে থাকার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নসিহত করার পর ধানমন্ডির স্কুলে ইসলাম ধর্ম অবমাননার ঘটনা ঘটল। অভিযোগ উঠেছে তেজগাঁও স্কুলেও। ভিকারুননিসা স্কুলের ঘটনার পর শিক্ষামন্ত্রী এর পেছনে রাজনৈতিক মতলব আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা ধানমন্ডি স্কুলে ছিলেন।