দিনটা ছিল স্বাধীনতার মাস ১১ মার্চ ২০১২ রবিবার।
আমার স্কুলের বন্ধুদের একটা সার্কেল আছে। যারা আমার অনেক কাছের। আমাদের মধ্যে কোন গোপন কথা নেই।
৫ মার্চ আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা স্কুলের সব বন্ধুরা মিলে বান্দরবানে একটা পিকনিক করব ১১ মার্চ তারিখে। প্রায় ৩ বছর পর আমরা সবাই পিকনিকের আয়োজন করতে যচ্ছিলাম। তাই স্বভাবতই আমরা অনেক এক্সসাইটেড ছিলাম। ৫ তারিখের পর থেকে আমরা দিন গুনা শুরু করলাম, কবে ১১ তারিখ আসবে। আমাদের কয়েকজন বন্ধু তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকে। তারাও এই পিকনিকে আসবে বলে কথা ছিল। আমরা সবাই নিজ দায়িত্ব বন্টন করে নিলাম। আমার এক বন্ধু নাম সাগর আর আমার দায়িত্ব পড়ল গাড়ি ঠিক করার। আমরা দুইজনে মিলে গাড়িও ঠিক করলাম পিকনিকের জন্য।
১০ তারিখ আমাদের একটা মিটিং বসল শেষ প্রস্তুতির খবরাখবরের জন্য। আমরা যার যার দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেছিলাম। ফলে অনেক আনন্দ লাগছিল।
কিন্তু আমাদের আনন্দ দুঃখে পরিণত হতে বেশিক্ষণ লাগল না।
সে দিন সিদ্ধান্ত হল পিকনিকের দিন অর্থাৎ ১১ তারিখ সকাল ১০টার মধ্যে আমরা সবাই নিউ মার্কেটে সবাই একসাথে হব। আমরা বান্দরবানে দুইদিন থাকব। সেখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। ১০ তারিখ অনেক রাত পর্যন্ত আমরা একসাথে ছিলাম। যাওয়ার সময় সাগর বলল সকালে আমি যেন ওর বাসায় আসি তারপর একসাথে মার্কেটে যাব। আমি বললাম ঠিক আছে। যাহোক রাতটা কোনমতে কাটালাম।
তারপর দিন অর্থাৎ ১১ তারিখ আমি সকাল ৮টা বাজে আমি ওর বাসায় পৌছালাম। ওর দেরি হতে দেখে আমি ওর সাথে আরো বকাবকি করলাম। যাহোক ও রেডি হয়ে আমার সাথে বের হল। ওর বাসা হল খুলসীতে। তারপর আমরা যখন ফয়সলেক গেটের সামনে টেক্সী দেখছিলাম। ও তখন আমার সাথে রাস্তা পার হয়ে টেক্সীতে উঠতে গেল।
ঠিক ঐসময় একটা রাইডার অতিরিক্ত স্পিডে এসে ঠিক আমার পেছন দিয়ে গেল। আমি তেমন কিছু বুঝার আগে দেখলাম ঠিক আমার পেছনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আমার বাল্যবন্ধু সাগর। আমার তখন কি অবস্থা আমি লিখে বুঝাতে পারব না। ওকে ঐ অবস্থায় দেখে আমি হিতাহিত জ্ঞান একরকম হারিয়ে ফেললাম।
তারপর রাস্তার মানুষের চিৎকারে আমি জ্ঞান ফিরল। আমি তৎক্ষণাত যে টেক্সী ঠিক করেছিলাম সে টেক্সী করে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। এমনকি আমার অন্য বন্ধু যারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তাদের ফোন করতেও ভুলে গেলাম। যখন আমার আরেকবন্ধু লিনকনের কাছ থেকে ফোন আসল তখন আমি তাদেরকে এককথায় বলে দিলাম ঘটনাটা।
তারপর তারজন্য অনেক দৌড়াদুড়ি সবাই পিকনিকের জন্য এসে তার জন্য হাসপাতালে দৌড়াদুড়িতে লেগে গেল।
তারপর ডাক্তার তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলল ইমার্জেন্সি।
আমরা যখন এম্বুলেন্স ঠিক করলাম তখন ভেতর থেকে খবর আসল সাগর আর নেই। সবাই কান্নাও করতে পারছিল না।
সবচেয়ে বেশি সকড হয়েছিলাম আমি। চিন্তা করতেছিলাম আর কয়েক ইঞ্চি এদিক সেদিক হলে আমারও একই অবস্থা হত। অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে দোষী মনে হয়।
এ দুঃখ ভুলতে আমার অনেক দিন লাগল। এখনও আমাকে মাঝে মাঝে অনেক দুঃখ দেয়।
আপনারা সবাই তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন।
আর এইটা আমার প্রথম ব্লগ, কোণ ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।
ধন্যবাদ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



