somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপ (আতরাফদের জন্য নহে)

০১ লা মার্চ, ২০১১ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা: এই লেখায় ক্লাউড নাইনের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। কারণ এই লেখাটি ক্লাউড নাইন নিকধারীর নহে। এটি বৃশ্চিক ছদ্মনামের এক লেখকের যিনি এই নামেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখে থাকেন। কোন ব্লগেই উনার নিজের কোন অ্যাকাউন্ট না থাকায় আমাকে তিনি অনুরোধ করেন এই লেখাটি ব্লগে প্রকাশের। আমি সেটি প্রকাশ করে দায়মুক্ত হলাম।

খেলার মধ্যে ক্রিকেট খেলাটা আমার পছন্দের খেলা ছিল। কারন ছিল। ক্রিকেট ছিল আশরাফদের খেলা। ইংরাজরাজের সময় ইহার শুরু। ইহা খেলিতে তখন সময় লাগিত, পয়সা লাগিত, স্ট্যাটাস লাগিত। পাচদিন ধরিয়া একটা খেলা দেখা, বুঝা, হজম করা চাট্টিখানি কথা নহে। ইহার সঙ্গে আতরাফদের খেলা ফুটবলের তুলনা চলে? উহা তো জাম্বুরা দিয়া ফকিরের বাচ্চারা খেলে। ক্রিকেট খেলিতে যে সাদা পোশাক খানা লাগে তাহা কিনিতেই তখন উহাদের উপাস দেওয়া লাগিত।

কিন্তু হায়, সে রামও নাই, সে অযোধ্যাও নাই। সোনার ব্রিটিশ ভাঙ্গিয়া গেল। ব্রিটিশের সাথে সাথে ক্রিকেটের পতন শুরু হইল। ইংল্যান্ড ছাড়িয়া এই ভারতে আসিয়া ক্রিকেট লী স্থান পাইল। কি আর করিবে, খোদ ইংল্যান্ডে ইংলিশ লীগের একখানি খেলায় সারা বছরের ক্রিকেটের দর্শক হইয়া যায়। ভারতবর্ষের কোন দেশ জাম্বুরা জুত করিয়া খেলিতে না পারায় উহারা জাম্বুরা ফল টক বলিয়া জাম্বুরার বদলে ক্রিকেট লইয়া পড়িল। নয়া মিডিয়া জামানায় বহুজাতিক কোম্পানীর রঙীন দেশপ্রেমের মুনাফা আসিয়া ক্রিকেটকে আরও উসকাইয়া দিল। পোলাপান ও তাহাদের বাপেরা পড়াশুনা ছাড়িয়া বল ব্যাটে যুদ্ধ শুরু করিল। সুন্দরী ললনারা ক্রিকেটার প্রেমে দেওয়ানা হইলে জাম্বুরাওয়ালারা খেলা ছাড়িয়া দিল। আর কিছু না হউক, ক্রিকেট তাহার শেষ নি:শ্বাস ছাড়িবার আগে এমন এক ইনটেনসিভ কেয়ার পাইল যাহাতে সে আবার বাচিয়া উঠিল।

কিন্তু আশরাফ ক্রিকেটের মৃত্যু হইল। পাচদিনের খেলা নামিয়া ওয়ান ডে আসিল। সাদা পোশাক রঙীন হইল। তাহাতেও মন ভরিল না বলিয়া এখন জাম্বুরার সঙ্গে পাল্লা দিতে তাহা বিশ ওভারে নামিয়া আসিয়াছে। ফকিরের বাচ্চাদের মাঠে আনিতে ইহার সঙ্গে অর্ধনগ্ন তরুনীদের লম্ফ ঝম্ফ মিলাইয়া এখন খেলা দেখি না উহাদের দেখি তাহা বলা মুশকিল। এই ভাবে চলিতে থাকিলে ভবিষ্যতে আশরাফদের পে মাঠে যাওয়াই মুশকিল হইয়া যাইবে।

বাংলাদেশও ইহার বাহিরে থাকিল না। জাম্বুরা খেলাতে পিছাইতে পিছাইতে উল্টা দিকে হাটা শুরু করিল। ক্রিকেটের বড় ভাইদেও দেখিয়া তাহারও ক্রিকেট খেলার শখ জাগিল। কিন্তু জাম্বুরার মত ইহাতেও বাংলাদেম তৈলাক্ত বংশদন্ডের বানরের মত দুই হাত উঠিলে এক হাত নামিয়া হতোদ্যম হইয়া গেল। শেষমেষ সবাই মিলিয়া জোর করিয়া বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস দিয়া দিল। এই স্ট্যাটাস পাইতে তাহারা সামনের দরজা দিয়া নিজে হাটিয়া ঢুকিয়াছে, নাকি জোর করিয়া পিছন দরজা দিয়া তাহা
দেওয়া হইয়াছে এই প্রশ্ন যে দুর্জনেরা তুলে তাহারা দেশের শত্র“। ইহা পাইবার জন্য বাংলাদেশে এক ক্রিকেট মিনি বিশ্বকাপ হইল যাহাতে স্বয়ং বাংলাদেশ খেলিল না । ইংরাজ দলের ক্যাপ্টেন জিনিশটাকে লজ্জাজনক বলিলেও বাংলাদেশী দর্শক স্টেডিয়াম ভরিয়া খেলা দেখিয়া উহাকে উল্টা লজ্জা দিল। । যেই ভাবেই হউক তাহারা ঢুকিল। বাঙালী খেলিতে পারে না, সব সময় দর্শক হইয়া থাকে সেই বদনাম তো ঘুচিল।

সেই ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধন হইবে এইবার ঢাকায়। ক্রিকেট আর কত ডুবিবে ভাবিতে ভয় লাগে। আর লজ্জাও লাগে। ঢাকায় আমরা যা করিতেছি তাহা দেখিলে গরীব আত্মীয়ের ঘরে বড়লোক আসিলে যাহা হয় তাহার কথা মনে পড়িয়া যায়। ভাঙ্গা রাস্তায় এখন পীচ পড়িয়াছে। বৃদ্ধ, রংচটা, গাল তোবড়ানো বাস রং মাখিয়া সঙ সাজিতেছে। ল্যাম্পপোস্টেও গায়ে রাতের রানী, দিনের ফকিরানী মার্কা জটিল ও কুটিল ডিজাইন করা বিভিন্ন কিছু ঝুলিতেছে। রাস্তার ফকির আর ফুটপাতের হকাররা উচ্ছেদ হইয়াছে। চৌদ্দখানা দেশের খেলাকে বিশ্বকাপ আখ্যা দিয়া সরকার, জনগন আর মিডিয়া গর্বে ফুলিয়া ঢোল হইয়া যাইতেছে। সারাদেশে একখানা জিগির উঠিয়া গিয়াছে। টিকেটের জন্য মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়িতেছে। পত্রিকাগুলান ক্রিকেটের উত্থান না শেয়ারবাজারের পতন কাহার খবর দিবে, তাহা ঠিক করিতে গিয়া পেরেশান হইয়া যাইতেছে। কোম্পানীগুলান প্রতিযোগীতায় নামিয়াছে। কেহ গান বানায়, তো কেহ লম্বা ব্যাট বানায়। কেহ পুরা দলের স্পন্সর তো কেহ বাচ্চা ক্যাপ্টেনকে দিয়া প্রেমের বিজ্ঞাপন দেয়। তাও ভাল যে, ভারতে পেপসীর মত আমাদের পেপসী নীল রঙের মত লাল সবুজ পেপসী বানাইয়া খাওয়ায় নাই।

গরীব আত্মীয় যেমন ধার করিয়া জিনিশপত্র সাজায় তেমনি আমাদেও দেশের অনুষ্ঠানে অন্য দেশের শিল্পীদেও ধার করিয়া আনা হইয়াছে। ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনা বাদ দিয়া অনুষ্ঠানের জন্য জীবন দিতে হইতেছে। পড়াশুনা করিয়া জীবনে কেই বা কি করিতে পাড়িয়াছে? ঢাকার লোকসংখ্যা কমাইতে না পাড়িয়া ছুটি দিয়া তাহাদের ঘরে রাখিবার চেষ্টা চলিতেছে। একবার পুরা ছুটি, তাহার পর অর্ধ ছুটি, কোথাও না ছুটি ইত্যাদি করিয়া এক বেড়াছাড়া কারবার হইতেছে।

ঢাকা তিলোত্তমা হইতে চাহিতেছে।

ভাবিলাম অনুষ্ঠানে যাইবার তো অবস্থা নাই, বুড়ি ঢাকার ছুড়ির বেশ একদিন একটু ঘুরিয়া দেখি। বিমানবন্দর হইতে ভিআইপি রোড দেখিতে গিয়া মাথা তালগোল পাকাইয়া গেল। এখন মতায় আওয়ামী লীগ। আতরাফদের দল। শেয়ার মার্কেট বুঝে না, ধানের ফলন বুঝে এমনই আতরাফদের প্রাধান্য এই দলে। তাহাদের সময় এই আশরাফ খেলার উদ্বোধন হইবে, তাহা আমার মর্মপীড়ার কারন। তাহার পর দেখিলাম পথের দুইধারে ক্রিকেট থিম ছাড়াও মুজিব, তাহার কন্যার ছবি, মালাউনদের কাšতজীর মন্দিরের ছবি। যেই খানে দুই দিন আগেও তৌহিদি জনতা নাফরমান লালনের মূর্তি সরাইয়া হজ্জ্বেও প্রতীক বসাইছে, সেই খানে আজ কি অবস্থা। চিন্তা করো, বিদেশী লোকজন আসিয়া মুজিবরের ছবি দেখিবে। যাহাকে ইতিহাসের আ¯তাকুড়ে নিপে করিবার জন্য দেশী বিদেশী শক্তি একযোগে কাজ করিয়া প্রায় সফলকাম হইয়া গিয়াছিল, সে আবারও জাগিয়া উঠিয়াছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করিয়া যেখানে মালাউন, নাসারাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানান হইয়াছিল, সেখানে কান্তজীর মন্দিরকে দেশের ঐতিহ্য বলিয়া পরিচয় করাইয়া দেয়া হইতেছে। এত দিনের ইসলামী জজবার এই করুন হাল দেখিয়া আমার বাকরুদ্ধ হইল। আমার নাতি সঙ্গে ছিল, তাহাকে গাড়ী ঘুড়াইয়া বাড়ী ফিরিতে কহিলাম। নাতি হঠাৎ বলিল,
- দাদাজান, মজার জিনিস দেখেছ?
মজার জিনিষ, দুঃখে আমার প্রাণ যায়। আর সে দেখিতেছে মজা।
- কি মজা দেখলি।
- সব গুলো সরকারী বিলবোর্ড, প্রতি খাম্বায় ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন বা স্পন্সর।
- বলিস কিরে?
ইসলামী ব্যাংক, মৌলবাদীদেও অন্যতম আশ্রয় স্থল। সেও কিনা এখন এই সরকারের সঙ্গে সামিল হইল। কোথায় যাইব? আওয়ামী লীগও বা কিভাবে রাজী হইল। এই সকল চিন্তায় চান্দি গরম হইয়া গেল।

হঠাৎ আমি খুশি হইয়া উঠিলাম। আওয়ামী গাধারা বুঝে নাই। কিন্তু আমি ঠিকই বুঝিয়াছি। ইসলামী ব্যাংক দারুন একখানা কাজ করিয়াছে। সরকারের ধর্মনিরপেতার মধ্যে একখানা গিট্টু লাগাইয়া দিয়াছে। সকলে অতিথিরা নামিয়া দেখিবে, এইখানের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ব্যাংক হইল ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশের ভিতরের অবস্থা যা বুঝিাবার বুঝিয়া লইবে। গত তিরিশ বছর ধরিয়া গড়িয়া উঠা সা¤প্রদায়িক শক্তির অর্থনৈতিক ও সামাজিক শক্তি বুঝাইবার জন্য ইহার চাইতে ভাল মঞ্চ আর হয় না। সাবাস ইসলামি ব্যাংক, সাবাস। আর কষ্ট করিয়া তিন বছর ঘাপটি মারিয়া থাক। তাহার পর দেখা যাইবে কাহার ছবি টিকে!


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×