রাত ১২:১৩ ।
ঘরটা টিউব লাইটের আলোয় ভরে আছে কিন্তু বাইরে ঘন কালো অন্ধকার এখন যদি ধুম করে আলো টা চলে যায় তাহলে সব অন্ধকারে একাকার হয়ে যাবে । তন্ময় মনে মনে তাই চাচ্ছে । কারেন্ট চলে গেলে যে ওর খুব ভাল লাগবে তা কিন্তু নয় ।তবুও ওর এখন অন্ধকারে থাকতে ইচ্ছা করছে ।মাঝে মাঝে সারাক্ষণ অন্ধকারে থাকতে ইচ্ছা হয় যাতে কেও ওকে না দেখতে পারে । মাঝে মাঝে সারাদিন দরজা জানালা বন্ধ করে বসে থাকে । বসে থাকে বললে ভুল হবে আসলে সে শুয়ে থাকে । তাও আবার মাথার উপর একটা বালিশ দিয়ে ।মানুষ মাথার নিচে দেয় সে দেয় উপরে । আসলে সে আলোর পাশাপাশি শব্দগুলো কেও এভয়েড করতে চায় । দুনিয়া তার ভাল্লাগেনা । সে চায় মহাশূন্যে ঝুলে থাকতে । কিন্তু হায় ! বাস্তবে তার পক্ষে সম্ভব না ( দীর্ঘশ্বাস..)
বিকাল ৩:৩০
চারদিকে এত্ত হইচই শুনে আম্বিয়া বেগম বেরিয়ে এলেন ।তার চুল গুলো এখন ভিজা ,একটু আগেই সে গোসল করেছে । বাড়ির উঠানে এত্ত লোক জড় হয়ে গেছে যে সে উঠানের ঐ পাশের ঘরটাতেই যেতে পারছেনা । কি হয়েছে বোঝার আগেই সে দেখল পুলিশ ঐ ঘরটার সামনে দাড়িয়ে আছে ,একটু পরেই দেখল আরও পুলিশ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে । একি ! সঙ্গে তার স্বামীও । তার মানে পুলিশ তার স্বামীকেই ধরতে এসেছে । সে দৌড়ে গেলো সেখানে । স্বামীর মুখ নির্বাক । আম্বিয়া দারোগা উদ্দেশে বলতে লাগল “ কি করছে সে ,ওরে ধরেন ক্যা ?
দারোগা বলল “মার্ডার কেস” শুনে আম্বিয়া একটু অবাকই হল ।এর আগেও তার স্বামীকে পুলিশ ধরেছে ,কিন্তু সে সব কিছুই ছিল রাজনৈতিক । ভিলেজ পলিটিক্স । সেগুলোতে আবার ছাড়াও পেয়ে গেছে কিন্তু তাই বলে মার্ডার কেস !! তার মন কেমন যেন করে উঠল । “তার স্বামী কি কাউকে খুন করতে পারে” এই বার আম্বিয়ার চোখ পানিতে ভরে উঠল । সে চিৎকার করে করে কেঁদে উঠল ।আশে পাশের মহিলারা তাকে শান্ত করতে ছুটে এল অবশ্য তারা কাছে আসার আগেই সে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে । তার ভেজা চুল ধূলোয় লুটিপুটি খাচ্ছে ।
দুপুর ১:৩০
বারান্দায় রোদে চুল শুকাচ্ছে একটি মেয়ে । ফর্সা মুখ তার উপর দুপুরের রোদের আলো ,আলোর দেবী মনে হচ্ছে মেয়েটাকে ।উচ্চতা মাঝারি ,শরীরে আদুরে মেদ ।দেখেই মনে হয় অনেক আদরে মানুষ । কিন্তু আদর তার জোটেনি কপালে ।হয়তো কোন কাজ করতে হয়নি কখন কিন্তু প্রতিনিয়ত মানসিক ভাবে লড়াই করতে হয়েছে সমাজ সংসার আর কাছের তথাকথিত পরিবারের সাথে ।সে ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে । সে আর যাই করুক পৃথিবীতে তার পরিচয় পৃথিবী করায় ঐ নামেই । মেয়েটা এগুলো যে খুব একটা গায়ে মাখে তা কিন্তু নয় । এই সব তার এখন গা সয়া হয়ে গেছে । মেয়েরা বাসায় ,পরিবারের কাছে থাকলেই সুখে থাকে ,আনন্দে থাকে ।কিন্তু ওর ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ও যেন বাইরে আসলেই স্বাধীন হয়ে যায় । একদম মুক্ত । ছেলেমেয়েরা বাবা –মার মধ্যে যে কোন এক জনের খুব আদরে থাকে আর এক জনের শাসনে । ওর ক্ষেত্রে ভিন্ন । ও দুই জনেরই শাসনে থাকে । ওর বাবা মনে করে মা আদর দিয়ে মাথায় তুলছে , আর মা মনে করে বাবা ।তাই দুই জন পাল্লা দিয়ে শাসন করে ওকে । মাঝে মাঝে যখন শাসনের এনট্রপি বেড়ে যায় তখন শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি । তখন ও ইচ্ছা মতো ভাংচুর চালায় । মনের মাধুরী মিশিয়ে । ও মেয়েটা নাম নামই তো বলা হয়নি ! ওর নাম তানিয়া ।
ক্লাস রুমে ,
তন্ময় গভীর চিন্তায় মগ্ন ।ভাবনায় কলেজের প্রথম দিন । হঠাৎ করে যেন বড় হয়ে গেলে ও । বাসার কেউ অবশ্য তাকে সে রকম করে বড় করে দেখছে না । তবে নিজের কাছে নিজেকে বড়ই মনে হচ্ছে । সে যাই হক ,নিজে মনে করলেই হল ,সে কলেজে পড়ে এইটাই সত্যি আর সে বড় হয়েছে । তবে তার ভুল ভাঙল কয়েকদিন পরই ,যখন দেখল আগে স্কুল এ যেত সকাল ৭ টায় আর এখন কলেজে জেতে হয় ৮ টায় । আর সব সেমই আছে । সেই একই অবস্থা টানা ক্লাস ।একটা চেঞ্জ অবশ্য হয়েছে আগে যে স্কুল এ পড়ত সেখানে কোন মেয়ে ছিল না ,এখানে আছে । তো তাতে কি ?? বড় তো আর হতে পারলনা । সে হিসেব করে দেখল সে শুধু ১ ঘণ্টা বড় হতে পেরেছে ।শুধু এক ঘণ্টা পর তাকে ক্লাস যেতে হয় । এই শুধু পরিবর্তন ।
ক্লাসে দুইটি কলাম । ছেলেরা বাম কলামে ,আর মেয়েরা ডান কলামে । এই সেকশন এ ছেলের চেয়ে মেয়ের সংখ্যা বেশি ।আজকে তন্ময় ক্লাসে ঢোকার সময় একটা মেয়ের দেখে কেমন যেন লাগল । সে মেয়েটার মুখ দেখেনি ওর ঘাড় দেখেছে ।অদ্ভুদ সুন্দর একটা ঘাড় । মানুষ পাগল বলতে পারে বাট ওর মেয়েটার ঘাড় দেখে কেমন যেন খুব ভাল লাগল । ক্লাস শেষে মেয়েটাকেও দেখল দূর থেকে । দেখতে মোটামুটি কিন্তু ওর উপরের ঠোঁট উপরের একটা তিল আছে ঐটার জন্য ওকে কেন জানি তন্ময় এর খুব ভাল লাগল । তারপর থেকে ফাঁক ফোঁকর পেলেই ওকে দেখত । মনে একটা এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ভাব । মনে হত সে আলাদিন আর ও জেসমিন । কিন্তু আশেপাশে জিনির অস্থিত খুঁজে পাওয়া যেত না । আসলে তখন ও তন্ময় বুঝতে পারনি টিনএজ প্রেম তার মস্থিস্কে হানা দিয়েছে । প্রতিদিন ক্লাসে আসা-যাওয়া ওর দিকে তাকিয়ে একটু দেখা , এইভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ।সবার অলক্ষে তন্ময় একটু একটু করে বড় হচ্ছিল । কিন্তু তন্ময় ভুলে যাচ্ছিল মানব হৃদয়
“যাহা চায় তাহা পায় না ,যাহা পায় তাহা সে ভুলেও চায় না ।”
সন্ধ্যা বেলা চারদিক টা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে যায় ।ঐ সময় যে কাউকে ছাদে দাড় করিয়ে দিলে সে নির্ঘাত জীবন নিয়ে একটা দার্শনিক দর্শন ব্যাখ্যা করে ফেলবে । তন্ময় আজকে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে অন্য একটি কারনে সচরাচর সে ছাদে খুব একটা আসে না । আজকে আম্মু বলল “বাবা যাও তো ছাদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে এসো তো ” তাই আজকে ছাদে আসা । ছাদে এসেই দেখল সূর্য একে বারে পশ্চিমে হেলে পরেছে এক্কেবারে গোধূলি বেলা । সময়টাই এমন যেন সারা জীবনের সব স্মৃতি এক এক করে চোখের সামনে ভেসে উঠে । যেমন এখন ভেসে উঠছে গতকাল বিকাল এর কথা । কি করে যে কি হল ো বুঝতেই পারলনা । সেদিন বিকাল ওরা সবাই স্যারের কাছ থেকে ফিরছিল ।যখন বটতলায় পৌঁছল দেখল মিম নেই । একটু বাদে তাকে দেখা গেলো । কাছে এসে তার স্বভাবসিদ্ধ নাকি হাসি হেসে তন্ময় দিকে তাকিয়ে বলল “মামা মুটিকা তাইলে শেষ পর্যন্ত তোরেই ধরল ”সেইদিনের সেই এক কথা তন্ময় এর গায়ে জ্বর এনে দিল । বন্ধু গ্রুপ এ মিটিং বসল কি করে তন্ময় কে রক্ষা করা যায় এই রাক্ষসীর কাছ থেকে । বলা বাহুল্য তন্ময় এর বন্ধু গ্রুপ এ তখন “মুটিকা” এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ।সবাই ওর নামে অনেক কিছুই বলত কিন্তু ও সামনে আসলে কেউ কিচ্ছু বলতে পারতোনা । মুটিকার আসল নাম “তানিয়া” ।
“মুটিকা” নাম করনটি হয়েছিল “ফ্রুটিকা” থেকে । এটা ছিল ওর কোডনেম ,যাতে গ্রুপ এর বাইরে কেও বিষয়টা নিয়ে না জানে । গ্রুপ এর মেম্বাররা গোপনীয়তার ক্ষেত্রে কিংবদন্তী তুল্য। তানিয়া একটু মোটা ছিল তাই ওর এই নাম করন । নামকরনটি করেছিলেন মহান “মিম” । তো এখন আশা যাক কিভাবে তানিয়া-তন্ময় এর দেখা হয়েছিল ??
ব্যাপারটা সোজা ।যদিও তারা এক কলেজে পড়ত এমন কি এক সেকশনেও ছিল কিন্তু তাদের দেখা হয় স্যারের বাসায় পড়তে গিয়ে । আজব দেশ আজব কাহিনি ,ছেলেমেয়ে ডাক্তার হওয়ার জন্য ক্লাসে যায় না যায় প্রাইভেট পড়তে । আমাদের মনে তখন ডাক্তার হবার অদম্য বাসনা । তাই বায়লোজি ঠিক মতো পড়তে হবে । সো লেট’স গো .........। সেখানেই কোন এক অকালকুফা লগ্নে তন্ময় অ্যান্ড তানিয়ার দেখা এবং সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভাবে একে অপরের সামনা সামনি বসতে হয় । কেন হয় ?? এর ২ টা কারন হতে পারে ।
১। ঈশ্বরের ইচ্ছা (এর কোন ব্যাখ্যা নাই )
২। পৃথিবীর সবচেয়ে ফালতু সিটিং কম্বিনেশন (ব্যাখ্যা করার ইচ্ছা নাই )
যাই হোক । যেমনে হোক তাদের দেখা হল । এখানে একটা বিষয় ক্লিয়ার করা উচিৎ ,বাংলা সিনেমার মতো তাদের প্রেম প্রথম দেখাতেই হয়নি । তবে হ্যাঁ ,এক্কেবারে যে বাংলা সিনেমা ফলো করেনি তা কিন্তু নয় । “মানে কাহিনি মে টুইস্ট হ্যাঁয়”
একটা ভুল হয়ে গেছে । বলাই হয়নি যে তন্ময় আর তানিয়ার মধ্যে কিন্তু একটা প্রেম ছিল। কিভাবে ?? দাঁড়ান সে কাহিনি বলছি ।
তো ওদের মধ্যে ঝগড়া হত । প্রায়ই হত ,মাঝে মাঝেই হত আসলে সব সময়ই হত । আর একটা হত সেটা হল বেঞ্চের নিচে দুই জন মিলে পা ঠুকাঠুকি । সারাক্ষণ তারা এই কাজটি করত ।যাকে বলে পা দিয়ে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ । একদিন তানিয়ার পায়ের নখের আঘাতে তন্ময় এর পা আহত । সেই দিন থেকে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ শেষ । আর অন্য এক যুদ্ধ শুরু । ভালবাসার যুদ্ধ ।
সব কিছু শুরু হয় কিছু শেষ থেকে । সেই শেষ কারও জন্য সুখের কারও দুঃখের । তন্ময় এর প্রতি তানিয়ার ভালবাসাও সে ভাবেই শুরু । তানিয়া কখনই বলেনি কিভাবে বা কেন এই ভালবাসার শুরু ।সেদিনএর ঠুকাঠুকির পর্ব শেষ হল ক্ষুদ্র রক্ত বন্যার মধ্য দিয়ে । পড়া শেষ করে সবাই যখন বেরুচ্ছিল তখন সবার আগেই তন্ময় বেরিয়ে গেলো । কেন বেরিয়ে গেলো সে নিজেও জানে না । হঠাৎ সে অনুভব করল কে যেন পেছন থেকে তার শার্ট টা টেনে ধরেছে ।ঘাড়টা পেছনে ঘোরাতেই তানিয়ার মুখ চোখে পরল । ওর চোখেগুলো ছল ছল । যদিও অন্ধকার হয়ে গেছে তাও বোঝা যাচ্ছে । “অ্যাই কই যাচ্ছিস ???” তন্ময় কিছু বলল না ,এক রকম জোর করেই সামনে এগু্তে চাইল । “যাচ্ছিস কই ?? শোন ,শোন একটু ” তন্ময় কিছুই বলছে না ।বাকিরা এর মধ্যেই এসে গেলো ।ওদের সামনেও তানিয়া তন্ময় কে টানতে লাগল ।আর তন্ময়ও কিচ্ছু বলছে না । এর মাঝে সিমু এসে হঠাৎ একটা জোরে ধমক দিল ।ধমক এর আকস্মিকতায় তানিয়া তন্ময়কে ছেড়ে দিল । তন্ময় চলে আসল আর তানিয়া দাড়িয়ে রইল, একা ।
কয়েকদিন পর আবার স্যার এর বাসায়,
আজ তানিয়া সেজে এসেছে। সঙ্গে একটা হটপট ও এনেছে । কি আছে তার মধ্যে সারা ব্যাচ এ জল্পনা । এই রহস্যের সমাধান হল পড়া শেষ হবার পর ।তেমন কিছুই না ,পাস্তা বানিয়ে এনেছে সে । সবাইকে খাওয়াবে বলে । তবে যুক্তিবাদীদের মনে কিঞ্চিত সন্দেহ ।এত্ত কম পাস্তা এত্ত জন কিভাবে খাবে ??? (পাস্তা আসলে বানানো হয়েছে তন্ময় এর জন্য ,কোন এক কালে তন্ময় বলছিল সে পাস্তা খেতে চায় ।সেটা তানিয়া মনে রেখেছিল ।তাই ......)
সে পাস্তা দেখে তন্ময় এর খেতে ইচ্ছা করতেছিল না । এক্কে বারে সত্য কথা । দেখতে সে পাস্তা একদম পাস্তার মতো ছিল না । কেমন যেন ছিল ।তাই সে ডিসিশন নিল সে পাস্তা খাবে না ।একে বারা পাক্কা ডিসিশন । এই কথা যখন কানে গেলো তানিয়ার সে তন্ময়ের কাছে গিয়ে বলল ,“তুই নাকি বলেছিস এই পাস্তা খাবিনা ”
“হুম” বলছি । তো ???
“তো কিছুই না””
“আমি শুধু সব গুলো পাস্তা তোর মাথায় ঢালব”
কি ??
হুম ,সত্যি । “তো ,ইট’স ইয়োর ডিসিশন”
তন্ময় ভাবল এই মেয়ে বিপদজনক ।সবার সামনে যদি পাস্তা তার মাথায় ঢালে তবে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে ।
এদিকে ঐ পাস্তা দেখে তার বমি আসতেছে ,কিভাবে খাবে সে ???
এই সময় সিমু এসে বলে দোস্ত পাস্তা খাবি না ?? চল অনেক ভাল হয়েছে । তার চোখে আনন্দের ঝিলিক ।
“ভাল হইসে তুই কেমনে জানলি ?? খাইসিস ??
“না ,দেখে মনে হল ।তাই বললাম ।”
তন্ময় মাথায় একটা আইডিয়া এল । ও তানিয়ার কাছ থেকে পাস্তা টা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে খাবে । আর দূরে গিয়ে সব সিমু কে দিয়ে খাওয়াবে ।ব্যাস কাজ খতম ।পাস্তাও শেষ ,ঝামেলাও শেষ ।
এবং তন্ময় করলও তাই । সবাই খুশি ।
বিকাল ৫:৪৫ ,কলেজ রোড
পাস্তা ট্র্যাজেডির পর থেকে তন্ময় ,তানিয়া কে একটু সামলে চলে । পারত পক্ষে ওর সাথে বিবাদে যায় না ।
“তোর ফোন নাম্বার টা দে তো ।
“তোর ফোন আছে ?? ”
“হ্যাঁ আছে তো ,কাল আব্বু দিয়ে গেছে”
“ও”
“অ্যাঁই ,কি হল তন্ময় ?? তোর নাম্বারটা দে না ”
“নে ” বলে তন্ময় ওর নাম্বার টা ওকে দিয়ে দিল ।
নাম্বারটা নিতে ওর নাম্বারটা তন্ময়কে দিল আর নাম্বারটা দিতে দিতে বলল ,“তন্ময় তুই যে সেলফিশ ,কখন কি ফোন দিবি আমায় ”
“না ,দেব না” নির্বিকার চিত্তে বলল তন্ময় ”
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে ফিরতে তানিয়ার কথা টা তন্ময়ের কানে বাজতে লাগল ।হঠাৎ হাতটা পকেটে চলে গেলো ,আর ফোনটাও হাতে চলে আসল । তারপর ফোন চলে গেলো তানিয়ার কাছে ।
“হ্যালো তানিয়া , আমি তন্ময় । আর আমি সেলফিশ না ”
রাত ১:৩০ ।
“হ্যালো,তন্ময় ” “হুম ”
“কি করিস”
“ঘুমাই”
“ও”
“আচ্ছা,ঘুমা ”
৫মিনিট পর
“হ্যালো”
“তন্ময়”
“কি করিস”
“ঘুমাই”
“আমার তো ঘুম আসছেনা”
“তো আমি কি করব ”
“কি করবি মানে কথা বলবি আমার সাথে ”
“পাগল ,এত রাতে কথা বলতে দেখলে আম্মু আমাকে মেরে ফেলবে ।আমি পারবনা ।কাল কথা হবে ।”
“এখন রাখি ,বিদায় ”
“এই রাখিস না ,আমার কথা শোন একটু ”
ফোন কেটে গেলো । কিন্তু তানিয়ার চেষ্টা থামালো না । আবার শুরু করল নতুন উদ্যোমে।
দিন যায় রাত যায় তানিয়ার ফোন বাড়তেই থাকে ,এক সময় তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায় ।সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে ওদের মধ্যে । তানিয়া তন্ময়কে ভালবাসে ।কিন্ত তন্ময় ভাবতেই পারেনা তানিয়া সাথে এরকম কিছু । কিন্তু তানিয়া জেদ এর কারনে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে থাকে এক সময় তা আর আর শুধু সাধারন কিছু থাকেনা । তন্ময় তানিয়া কে শত্রু ভাবতে শুরু করে । ফোন এলে ফোন ধরতে ভয় পায় । যেকোনো ফোন এলেই মনে করে তানিয়ার ফোন এসেছে । আর তানিয়ার ফোন এলেই শুরু হয় বিশাল ঝগড়া । কথা একটাই তন্ময় তানিয়া কে ওরকম কিছু ভাবেনা এবং ভাবতে পারেনা । তানিয়াও তন্ময় কেই চায় । আর ও ওকে নিয়েই ছাড়বে । অনেক বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ওরা দুই জনেই যায় । কিন্তু মজার বিষয় হল তন্ময় ততদিনে তানিয়া কে একটু বুঝতে শিখতে শুরু করেছে ।তানিয়াও তন্ময় কে পড়তে শুরু করেছে । এক সময় তন্ময় এর মনের অজান্তেই তানিয়ার কথা ভাবে ।তানিয়াও তন্ময় কে ফোন দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে । এখন আর ও ঝগড়া করতে চায়না । এক সময় তন্ময় ভাবে তানিয়ার সাথে রাগ করে আর কথা বলা যাবে না ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে । আমরা ভাল ফ্রেন্ড হতে পারি ,তারপর যদি কিছু হয় তবে হবে । তন্ময় ভাবে এক দিন তানিয়ার সাথে দেখা করতে হবে । ওরা এখন আর একসাথে আর পড়তে যায়না ।ফলে খুব একটা দেখাও হয় না । তানিয়া এখন ফোন করাও কমিয়ে দিয়েছে। এখন আর ফোনই দেয় না । দেখা আজ করবে কাল করবে বলে আর করে উঠা হয় না ।
একদিন সকালে কলেজে পুতুল এর সাথে তন্ময় এর দেখা । পুতুল কে তন্ময় আনমনেই জিজ্ঞেস করে তানিয়া কই ??
পুতুলের শীতল জবাব “ও চলে গেছে”
“মানে ??”
“ওর মা ওকে নিয়ে গেছে” ।
“কবে আসবে ??”
“আর আসবে না ”
তন্ময় এর মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো ।মনে হল খুব আপন কেউ খুব দূরে চলে গেছে ।
[আম্বিয়া বেগম ,তানিয়ার মা । তানিয়ার বাবা কে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবার পর তানিয়ার মা তানিয়ার বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল ,তাই তারা তানিয়া কে জোর করেই বাড়িতে নিয়ে আসে । আগামী রবিবার তানিয়ার বিয়ে ।]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩২