
মৌরিতানিয়া,একটি সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশ। আয়তন প্রায় ১০,৩০,০০০ বর্গ কি.মি। বিশাল দেশ, বিশাল আয়তন কিন্তু জনসংখ্যা খুবই কম। মাত্র ৪৩ লক্ষ , প্রতি বর্গ কি.মি তে মাত্র ৩.৪ জন বাস করে । বুঝাই যাচ্ছে প্রায় জনমানবহীন বিশাল দেশ, এই দেশের এক পাশে অ্যাটলান্টিক মহাসাগর আর আরেক পাশে সাহারা মরুভূমি । এই দেশটির প্রায় সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে আছে সাহারা মুরুভূমি ।
হ্যাঁ, সেই সাহারা মুরুভূমি যার কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বিস্তীর্ন বাদামী ধূ ধূ বালিরাশি । মাথার উপর তপ্ত সূর্য,আলো ছড়াচ্ছে । পায়ের নিচে বালু যেন,কোনো একঅগ্নিকুন্ড ।পিপাসার বুক ফাটে তবুও একফোঁটা পানি মিলবে না,আরা আছে বিষাক্ত সাপ,বিচ্ছু আর প্রচণ্ড ধূলি ঝড় ,হঠাৎ করেই বালি ঝড়ে চোখের সামনে বিশাল পর্বতের মত বালির দেয়াল দাড়িয়ে এই হলো সেই সাহারা । সেই বিশাল সাহারা মুরুভুমির একটা বড় অংশ পড়েছে এই মৌরিতানিয়ায় । প্রায় শত ভাগ মুসলমানের বাস এই দেশে , তার বড় একটা অংশ থাকে শহরে । কারন সাহারা মুরুভুমি মানুষ বসবাসের জন্যে উপযুক্ত না। মৃত্যু সেখানে প্রতিনিয়ত কড়া নাড়ে ,প্রতিকূল পরিবেশ প্রায় জনমানবহীন অঞ্চল , জীবনকে করেছে আরোও কঠিন ।
যার কিছু নাই তার খোদা আছে । ঠিক প্রায় সেরকমই এই দেশে চাষ-বাশ করে খাদ্য উৎপাদন প্রায় করা যায়না বললেই চলে । দেশের মোট জমির মাত্র ০.২ শতাংশ মাত্র কৃষিযোগ্য। ভাবুন একবার কিভাবে চলে এই দেশ। কিন্তু আল্লাহ এদের দিয়েছে অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ । আর সেই সম্পদ ব্যাবস্থাপনা জন্যে তারা বানিয়েছে পৃথিবীর অন্যতম একটি বিখ্যাত ট্রেন লাইন। সাহারান রেলওয়ে,সে এক বিস্ময়।
এইটি চালু করা হয় ১৯৬৩ সালে , মূলত প্রাকৃতিক খনিজ পরিবহনের জন্যে ।এই রেলওয়ে হচ্ছে লম্বা সোজা একটি রেলওয়ে ট্র্যাক যা ৭০৪ কিমি লম্বা(৪৩৭মাইল)। এটাই হচ্ছে দেশের লাইভ লাইন । মরুভুমির মধ্যে দিয়ে সব বাধা পেরিয়ে ছুটে চলে এই ট্রেন।স্পেশালি এই ট্রেন শুরু করা হয়,প্রাকৃতিক খনিজ বহন করে নিয়ে আসার জন্যে।সেই খনিজ হচ্ছে লোহা ।এই লোহা উৎপাদনে এইদেশ শীর্ষস্থানীয়। এর সাথে বহন করে নিয়ে আসে মানুষ,মালপত্র পানি সহ আর অন্যন্য জিনিস।এই রেল লাইন শুরু হইয়েছে কাসাদো শহর থেকে এর পর অনেক গুলো জায়গা ঘুরে শেষ হয় মাহাওদাত খনিতে।সেখান থেকে আবার খনিজ নিয়ে যাত্রা শুরু করে একবার গন্তব্য পৌঁছাতে এর সময় লাগে ৩০ ঘণ্টা । সেখানে দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস !! ভাবা যায়।
আর এই ট্রেন গুলোর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩ কিমি, এত গুলো বগি এর সাথে সংযুক্ত থাকে যে এর একবারে পরিবহনকৃত লোহা দিয়ে একটি আইফেল টাওয়ার বানানো সম্ভব। ট্রেনের সাথে ৩ টি করে লোকোমটিভ (ইঞ্জিন) সংযুক্ত থাকে ।
মজার বিষয় হচ্ছে এই ট্রেনটি সে দেশের খনিজ সম্পদ অথরিটির মালিকানাধীন ।
জীবন কতটা রুক্ষ হতে পারে তার একটা ধারনা পাওয়া যায় এই রেলওয়ে এবং এর সাথে যুক্ত মানুষের জীবনাচারন দেখলে।
রুক্ষ হোক , সিক্ত হোক জীবন সুন্দর।
জীবন সেখানে যেমন।যদি কখনো ইচ্ছে হয় ঘুরে আসতে পারেন এই রেল পথ ,সেই ব্যবস্থাও রয়েছে ।
২০১৯ সাল থেকে তারা টুরিস্টদের জন্যে এই ট্রেনে ভ্রমনের সুযোগ করে দিচ্ছে । টুরিস্টদের জন্যে ২ টি কামরা সংযুক্ত করা হচ্ছে এবং টুরিস্টরা একটি লোহার খনিও পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন ।












সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




