পর্ব-২ Click This Link
কিং হুসেন অভিষিক্ত হলেন।ঠিক সেইদিনই আরবের অন্য একটি দেশ ইরাকে তার কাজিন কিং ফায়সাল (দ্বিতীয়)ও অভিষিক্ত হলেন। একই অঞ্চলের দুইটি ভিন্নদেশে হাশেমাইটদের দুইটি পৃথক সাম্রাজ্য। ইরাক অনেক আগের থেকেই বৃটিশদের শক্তিশালী বলয়ের মধ্যে ছিলো,এবং সেখানে বৃটেনের প্রভাব সবসময়ই অনেক বেশি ছিলো। আর মধ্যপ্রাচ্য তথা আরববিশ্বের অবস্থা তখন অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ন্য ছিলো, চারিদিক ধ্বংস শুরু হবার আগের একধনের চাপা আবহাওয়া। সেই সাথে অবিশ্বাস সহ নানা রকম ঝড়ের পূর্বাভাস। কিং হুসেন যখন ক্ষমতা নেন,তখন তিনি প্রধানত তিনটি সমস্যার মুখোমুখি হোন।
প্রথম, কিং আবদুল্লাহ ১৯৪৮ সালে অ্যাংলো- জর্দানিয়ান ট্রিটি সাইন করেন,এর ফলে তারা জর্দানের মাটিতে নিজেদের মিলিটারি বেস তৈরি করেছিলো।এর ফলে তারা জর্দানের উপর একধনের ডমিনেশন করতো।
দ্বিতীয়, ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন। ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম হবার চার বছর পর সেই রিজিওনের অবস্থা অনেক সঙ্গিন হয়ে উঠেছিলো এবং যেহেতু জেরুজালেম এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে জর্দানের দায়িত্বে ছিলো,অতএব তাদের রক্ষা এবং সম্মান বজায় রাখা জর্দানের একটি বিশাল দায়িত্ব হিসেবে দাঁড়ায়।
তৃতীয়,গামাল আবদেল নাসের।সেই সময় ইজিপ্টের রাজাকে মিলিটারি ক্যু’র মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে নাসের পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রকে একধরনের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। সেইসাথে কিং হুসেনের সাথে তার সম্পর্ককেও ।
কিং হুসেন সেইসময় ছোট্ট একটি কাউন্সিন্সের মাধ্যমে পরিবেষ্টিত থাকতেন যাতে ছিলো তার মা কুইন জেইন , তার চাচা সারিফ নাসের বিন জামিল ফ্রম হাশেমাইট ইরাক , এবং তারা সারজিবনের বন্ধু এবং কাজিন জেইদ ইবনে শাকির । এছাড়াও সেনাবাহিনীর একটি বিশস্ত অংশ । কিং হুসেনকে সেই সময় তার দাদার সাথে কাজ করা রাজনীতিবিদদের সাথে কাজ করতে হচ্ছিলো এবং সেটা মোটেও সহজ ছিলো না , সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী তাওফিক আল হুদা ,সামির রিফাই ,ইব্রাহিম হাশিম সহ আরোও অনেকে।
এক বছর পর , কিং হুসেন মুখোমুখি হোন তার প্রথম চ্যালেঞ্জের। অক্টোবর ১৯৫৩ , কাবিহইয়া নামে একটি গ্রামে এরিয়েল শ্যারনের নেতৃতে ইসরেইলি সেনাবাহিনীর একটি দল আক্রমণ চালায়। তাদের অভিযোগ ছিলো প্যালেস্টাইনি দুষ্কৃতিকারিরা সেখানে লুকিয়ে আছে যারা ইসারাইলে হামলা চালিয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতি করেছে , এই আক্রমণে ৬৯ জন মানুষ মারা যায় । এরমধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিলো ।এই আক্রমণে প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে ঝড় বয়ে যায়।তারা জর্দানের সেনাবাহিনী আর কিং হুসেনকে এর জন্যে দায়ি করেন এবং জর্দানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন । রাজ পথে নেমে আসেন । প্রথমবারের মত কিং হুসেনকে প্যালেস্টাইনিদের বিশাল আন্দোলনের মুখে পড়তে হয় । এর ফলে আরও একটি জিনিসের সুচনা হয় যা হচ্ছে প্যালেস্টাইনি রিফিউজি যা এখনো বিদ্যমান।
প্যালেস্টাইনি ভাষ্য ,
প্যালেস্টাইনিরা অনেক আগ থেকেই জর্দানের রাজ পরিবারের উপর ক্ষ্যাপা ছিলো,যেটা কিং আবদুল্লাহ হত্যা থেকেই বোঝা যায়। এখানে আরও একটি কথা জরুরী প্যালেস্টাইনিদের দায়িত্ব কিন্তু জর্দান নেয় ১৯৪৮ সালের প্রথম আরব –ইসরাইল যুদ্ধের পর । কাবিহইয়া ম্যাসাকারের পরে , ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আরও ক্ষোবের সঞ্চার হয় তারা জর্দানের সেনাবাহিনীকে সরাসরি এর জন্যে দায়ী করেন, তারা অভিযোগ করেন, জর্দানের সেনাবাহিনী দুর্বল এবং এটা শুধু তাদের কিং কেই হেফাজত করে এবং শুধু মাত্র জর্দানিজদের এলাকাটুকুই রক্ষা করে । তাদের জন্যে কিচ্ছু করে না উল্টো তাদের উপর গোয়েন্দাগিরি করে এবং ইসরাইলকে সাহায্য করে । তাদের রাগ শুধু জর্দানের উপরই ছিলো না , তারা এই ঘটনার জন্যে জেনারেল গ্লাব পাশাকেও দায়ী করেন সেই সাথে বৃটেনকেও । কারন সেই সময় জর্দানের সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন জেনারেল গ্লাব পাশা , তিনিই মূলত জর্দানের সেনাবাহিনী পরিচালনা করতেন , আর তাকে নিযোগ দেওয়া হয়েছিলো অ্যাংলো –জর্দানিয়ান প্যাক্ট অনুসারে। তার মানে ফিলিস্তিনিরা জানতো কিং হুসেন তার সেনাবাহিনিকে নিয়ন্ত্রন করেন না এবং বৃটেন সেখানে হস্তক্ষেপ করে ।
এই সব কিছু নিয়েই তারা জর্দানের সরকার এবং রাজার বিরুদ্ধে মাস মুভমেন্টে নামে , তীব্র আন্দোলনের সূচনা হয় । কিং হুসেন মুখোমূখী হন এক গণ- অসন্তোষের ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৯