somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেরুজালেম, জর্ডান এবং প্যালেস্টাইল ( ইতিহাসের সরল যাত্রা ) পর্ব-৪

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নাদির রাশিদ (জর্দানিয়ান ইন্টিলিজেন্স), ভেরি ক্লোজ টু কিং হুসেন ।
কাবিইয়াহ ম্যাসাকারের পর কিং হুসেন খুব আঘাত পেয়েছিলেন এবং এটা তাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে । এই ম্যাসাকারের পর এটা লেভেল গ্রাউন্ড সমান করে দিয়েছিলো দুই পক্ষকেই , জর্দানও চাচ্ছিলো এর একটা জবাব দিতে কিন্তু জর্দান সেটা দিতে পারেনি , সেইসময় নাদির রাশিদ ছিলেন জর্দানের ইন্টিলিজেন্সের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।তার ভাষ্য অনুযায়ী , কাবিইয়াহ ম্যাসাকারের পর আর্মির অভ্যন্তর থেকে তাদের জানানো হয় আর্মির গোলাবারুদ প্রায় নেই বললেই চলে এবং স্ট্যাটিজিক্যাল কারনে তাদের সৈন্য সমাবেশ বেশ এলোমেলো। রাশিদ তৎক্ষণাৎ তা কিং হুসেনকে জানান ।সেই সময় জর্দান আর্মির নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল গ্লাব পাশা এবং এর জন্য গ্লাবের সাথে কিং হুসেনের সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপুর্ন্য ছিলো । কিন্তু একই সাথে তার খুব কঠিনও ছিলো ।
১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কিং হুসেন বার বার লজ্জিত হতেন তার দেশে বৃটিশ সৈন্যদের অবস্থান নিয়ে।এটা তার একটি দুর্বলতা হিসেবে দেখা হত।
ইতিমধ্যে ১৯৫১ সালে জর্দানে কমিউনিস্ট পার্টি গঠন হয়ে গেছে ,এবং সেই সময় আরব বিশ্বে আবর স্যোশালিজম চলে এসেছে এবং এটি খুব বড় একটি বিষয় হিসেবে উঠে আসছিলো।
১৯৫৫ সালে কিং হুসেনর সামনে বাগদাদ প্যাক্টে সাক্ষর করার বিষয়টি আসে। এটি ছিলো বৃটেন কতৃক আয়োজিত একটি উদ্যোগ সেখানে বৃটেন, ইরাক,ইরান,জর্দান,ইউএস এবং পাকিস্তান যোগ দিয়েছিলো। এটা মূলত ছিলো কমিউনিস্ট বিরোধী একটি বলয় যার উদ্দেশ্য ছিলো সোভিয়েত প্রভাব হ্রাস করা এই অঞ্চলে কিন্তু এটা একটি বিশাল আকার ধারন করলো দেশের মধ্যে, কমিউনিস্টরা এর বিরোধিতা শুরু করলো এবং এটা সাক্ষর না করার জন্যে কিং হুসেনকে চাপ দিতে লাগলো , আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠছিলো এবং অপর দিকে বাগদাদ প্যাক্ট সাক্ষর করার জন্যেও চাপ বাড়ছিলো। চাপ দিচ্ছিলো বৃটেন ,যারা জর্দানের আর্মি চালায়। সব কিছু নিয়েই কিং হুসেন খুব চাপের মধ্যে ছিলেন , সেই সাথে তিনি অনেক দিন ধরেই ভাবছিলেন কিভাবে আর্মির নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নেওয়া যায় পুরোপুরি ভাবে ,গ্লাব পাশার সাথে তার সম্পর্কও ভালো যাচ্ছিলো না ।
সেইসময়, জর্দানের আর্মিতে সব হাই র‍্যাঙ্ক অফিসার ছিলো বৃটিশ এবং লোয়ার ব্যাঙ্কে ছিলো জর্দানিজরা । ১৯৪৮ সালে জর্দান আর্মিতে ১৫০০ নিয়মিত সৈন্য ছিলো। এত অল্প সৈন্যদের মাঝে এমন অফিসার ট্রেইন করা যায় না যারা ৬০,০০০ ট্রুপস’কে নেতৃত্ব দিবে , এর মাঝে কিছু ফ্রি অফিসার ছিলো যারা জর্দান সেনাবাহিনীর সাথে নিয়োজিত ছিলো, এরা চাইতো জর্দানের সেনাবাহিনীতে বৃটিশ প্রভাব মুক্ত হোক। এরা আবর স্যোশালিজমে বিশ্বাসী ছিলো ,তাছাড়া জেনারেল গ্লাব জর্দানিজদের দক্ষ মনে করতেন না , একধরনের অবজ্ঞাও ছিলো ।
কিং হুসেন এই সব ফ্রি অফিসারদের কাজে লাগাতে চাইলেন, কারন পাশের দেশ ইজিপ্টে ইতিমধ্যে এই সব ফ্রি অফিসারদের নিয়ে গামাল আব্দেল নাসের কিং ফারুককে অপসারন করে আরব রিপাবলিক গঠন করেছে ,সেই হাওয়া এখানেও আসছে কিং হুসেন বুঝতে পারছিলেন এদের দিয়ে গ্লাব পাশা তথা বৃটেনকে সরিয়ে দেওয়াই উত্তম নইলে এরা কিছুকাল পরে তাকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দিবে । এই সুযোগও এসে গেলো , ১৯৫৬ সালে জেনারেল গ্লাব কিং হুসেনের সাথে দেখা করতে এলেন এবং তিনি তাকে কিছু জর্দানিজ আফিসারের লিস্ট দিলেন এবং তাদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করেত বললেন। এতে কিং খুব রাগান্বিত হলেন এবং তিনি তার বিশ্বাসভাজন জর্দানিজ অফিসারদের ডাকলেন এবং বললেন তিনি গ্লাব পাশাকে অপসারন করতে চান এবং তাদের দেশ থেকে বয়কট করতে চান। অফিসাররা তার সাথে একমত হলেন এবং খুব গোপনে গ্লাব পাশাকে অপসারণের মিশন শুরু হলো ।
১৯৫৬ সালের ভোর বেলা , আম্মানে গ্লাবের বাসভবন ঘিরে ফেলা হলো এবং সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলো কিং হুসেনের নির্দেশে ।
কিং হুসেন সরকারকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানান এবং প্রাধানমন্ত্রী সামির রিবাইকে আদেশ দেন গ্লাবকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে এবং তাকে অতি দ্রুত দেশ ত্যাগ করতে ।
আহমেদ আল লাউজি ( সাবেক সহকারী চিফ অফ রয়্যাল প্রটোউকল) ভাষ্যমতে সেদিনকার ঘটনা, “সেদিন আমি সকাল ৮ টায় অফিসে ছিলাম ,কিং হুসেন অফিসে আসলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, চিফ অফ রয়্যাল প্রটোউকল কোথায় ? আমি বললাম ইউর ম্যাজ্রেস্টি , তিনি তো অফিসে আসবেন সকাল ১০টায়, কিন্তু তিনি যদি জানতেন কিং আসবেন সকাল ৮ টায় তাহলে তিনি সকাল ৭ টায় অফিসে থাকতেন। ”
কিং হুসেন আমাকে তাকে ফোন করতে বললেন। চিফ আসলেন। কিং হুসেন চীফকে প্রধানমন্ত্রী সামির রিফাইকে ফোন করতে বললেন এবং জানাতে বললেন তিনি কাউন্সিলের সাথে বসতে চান , তখনও প্রধানমন্ত্রী জানেন না কিং হুসেন কি বলবেন।
কিং হুসেন যখন কাউন্সিলে ঢুকলেন , তিনি প্রবেশ করেই পকেট থেকে একটি কাগজ বের করলেন এবং পড়তে শুরু করলেন , তিনি এখন থেকে সেনাবাহিনিকে আরবারাইজ করতে চান এবং সেই জন্য জেনারেল গ্লাব পাশাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সেই সাথে সমস্ত বৃটিশ কমান্ডকেও ।
পুরো দেশ এই খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলো । দেশের মতামত দুইটি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিলো । কেউ এটাকে সমর্থন করছিলো , কেউ আবার এটার ফলে বৃটিশদের ব্যাকল্যাশের সম্ভাবনাও দেখছিলো। গামাল আব্দুল নাসের এটাকে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না , তিনি ভাবছিলেন এটা বৃটিশ আমেরিকানদের চাল , নিশ্চইয় কোনো মতলব আছে এর পেছেনে, আর বৃটিশরা ভাবছিলো এটা নাসেরের কাজ সে এটার পেছনে আছে । বৃটিশরা এর প্রতিবাদ জানালো ।
কিং হুসেন আর্মি এবং জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন।বললেন , “ প্রিয় আর্মি এবং দেশবাসি , আমাদের আর্মি গুণগত পরিবর্তনের জন্যে উচ্চপদে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে , যা আমাদের দেশের স্বার্ধ রক্ষার্থে আমাদের সয়াহতা করবে এবং এই পরিবর্তন করা হয়েছে মহান আল্লাহ ইচ্ছায় এবং এটা শুধু মাত্র আমাদের দেশের স্বার্থের জন্যে কাজ করবে। আমি আপানাদের কাছ থেকে এই পরিবর্তন হেতু আগের মত শৃংখলা এবং আনুগত্য আশা করছি । মহান আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন । “
এই পরিবর্তনের কারনের বৃটেনের সাথে অ্যাংলো- জর্দানিয়ান প্যাক্টও শেষ হয়ে গেলো । নতুন একটা দিকের সূচনা হলো । ১৯৫৬ সালে গ্লাবের অপসারণই একটি বড় ঘটনা। ঠিক এই সময় কিং হুসেন মনে করলেন দেশে একটি সাধারন নির্বাচন হওয়া উচিৎ। এবং তিনি একটি সাধারন নির্বাচনের পক্ষে মত দিলেন ।কিন্তু তার কাউন্সিল এটার বিরোধিতা করলেন তারা বললেন এখন নির্বাচন দেওয়া ঠিক হবে না । কারন দেশে কমিউনিজমের উদ্ভব হয়েছে এবং তারা খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । যদি তারা এই নির্বাচনে জিতে যায় তাহলে সব কিছু অন্য রকম হয়ে যাবে ।এই লেফট উইং পার্টিগুলো নাসের পন্থি ছিলো । কিন্তু কিং এটা মানলেন না এবং তিনি নির্বাচন দিলেন।নির্বাচন হলো এবং কিং হুসেনের কাউন্সিলের ধারনাই সত্য হলো , লেফট উইং এবং নাসেরপন্থি স্যোসালিস্ট পার্টি গুলোই পার্লামেন্টে মেজরিটি পেলো। লেফট এমপিদের মধ্যে ইয়াকুব জিয়াদিন নামে একজন এমপি নির্বাচিত হলো, সে জেরুজালেমের আসনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন । সে ছিলো সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল অফ জর্দানিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি ।
কমিউনিস্টদের ভাষ্য ছিলো,তারা এইসব রাজতন্ত্র চান না ,তারা জনগণের অধিকার চান। দেশের সব জায়াগায় চুরি আর লুট চলছিলো এগুলো দেশের স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো । দেশ গরিব থেকে গরিবতর হচ্ছিলো।এবং এজন্যে তারা এর পরিবর্তন চান।
নির্বাচনে কোনো পার্টিই একক মেজরিটি পায়না । সুলাইমান আল নাবুইছির পার্টী সবচেয়ে বেশি সিট পায়, ১১ টি । যদিও তিনি নিজে কোনো সিট থেকে জিততে পারেননি । তার পরও তিনি সরকার গঠন করেন । এইভাবে জর্দানের ইতিহাসে প্রথম বারের মত নির্বাচিত সরকার গঠিত হয় ।এবং সুলাইমান আল নাবুইছি প্রধানমন্ত্রি হন। এবং নাবুইছি সরকার ছিলো প্রো নাসের এবং এন্টি হাশেমাইট । এই সরকার সব সিদ্ধান্তে কিং হুসেনের বিরোধীতা করতো তাকে নিচু দেখাতে চাইতো । এই ভাবে কিছু দিন যাবার পর কিং হুসেন গোপন রির্পোট পান যে তাকে সরাবার জন্যে ক্যু এর পরিকল্পনা হচ্ছে এবং সেটা সরকার ই করছে। এই সব খবর পেয়ে কিং হুসেন নাবুইছি সরকারকে বরখাস্ত করেন । সরকারকে বরখাস্ত করার পরই ১৯৫৭ এ তার বিরুদ্ধে ক্যু হয় এবং কিং হুসেন সেটা প্রতিরোধ করেন। এবং দেশে মার্শাল ল জারি করেন। এর অবশ্য কিছু দিন পর আবার সেটা তুলে নেন । কিন্তু মার্শাল ল তুলে নেবার পর তিনি দেশে পলিটিক্যাল পার্টি নিষিদ্ধ করেন এবং জর্দান সম্পুর্ন এক ব্যাক্তির শাসনের দেশে পরিণত হয়।
কম্যুনিস্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, “ এর পর সবাই যে যার মত বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায় ,কেউ ইরাক ,কেউ টার্কি ,কেউ মিশর ,কারন কেউ এই স্বৈর শাসকের দেশে থাকতে পারছিলো না। চারদিকে দ্রারিদ্রে ছেয়ে গিয়েছিলো।“



যত দ্রুত কিং হুসেন তার দেশের অভন্তরীন সমস্য নিয়ে একটা সমাধানের চেস্ট করছিলেন ততই দ্রুত একটি বিরাট বড় আন্তজার্তিক সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলেন ।সেই সমস্যা আরব দেশগুলোকে অনেক বড় বড় সংকটের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাবে ।
১৯৫৭ সালের ২২ ফ্রেরুয়ারি, গামাল আব্দেল নাসের আরব ইউনাইটেড রিপাবলিকের ঘোষনা করেন । এই রিপাবলিকে সিরিয়া আর ইজিপ্ট ছিলো। আর নাসের নিজেকে এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষনা করেন।
নাসের সম্পর্কে বলা হয় ,তিনি আরব বিশ্বে অন্যতম বড় এবং প্রভাবশালী নেতা । তিনি জর্দানকে খুব একটা ভালো চোখে দেখতেন না , তিনি মনে করতেন জর্দান পশ্চিমা ঘেঁষা এবং প্যালেস্টাইন নিয়ে ইসরাইলের উপর খুব কোনো শক্ত অবস্থা নেয় না । সেই সাথে তিনি আরব বিশ্বে রাজতন্ত্রে বিরোধী ছিলেন এবং একই সাথে রাজতন্ত্রকে আবার বিশ্বের পশ্চাতপদ অংশ মনে করতেন এবং এদের বিলুপ্তির পক্ষে ছিলেন ,তার এই মতামত জর্দান ,সৌদি আরব, এবং গালফের রাজতন্ত্র ভুক্ত দেশ গুলোর প্রতি সমান ছিলো।
নাসেরের এই আরব রিপাবলিককে কাউন্টার দিতে গিয়ে কিং হুসেন ইউনাইটেড হাশেমাইট কিংডম তৈরি করলেন ,ইরাককে সাথে নিয়ে।কিন্তু তার এই উদ্যোগ টিকলো না, মাত্র পাঁচ মাসের পরেই একদিন কিং হুসেন একটি নাটকীয় ফোন কল পেলেন , তাকে জানানো হল একটি সামরিক ক্যু হয়েছে , ইরাকী হাশেমাইট কিংডম এর বিরুদ্ধে। আব্দুল কারিম কাসেম নামে এক ইরাকী জেনারেল এই ক্যু করেছেন এবং তার কাজিন কিং ফয়সালকে (দ্বিতীয়) পুরো পরিবার সহ মেরে ফেলা হয়েছে । এই খবর কিং হুসেনকে স্তব্ধ করে দিলো , সে হাশেমাইট কিংডমের একটি ধারাকে হারিয়ে ফেলল এবং সম্পুর্ন একা হয়ে গেলো আরব রিপাবলিকের বিরুদ্ধে।
আরব রিপাবলিক এর মধ্যে আরও অনেক কিছু ঘটনা ঘটায় জর্দানিয়ান রাজতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্যে। এর মধ্যে ১৯৬০ সালে জর্দানের প্রধানমন্ত্রী হাজা আর মাজালির হত্যাকান্ড অন্যতম। কিং নিজেও কয়েকবার অভিযোগ করেন তার উপর হত্যাচেস্টা করে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক ।১৯৬১ সাল পর্যন্ত এমন চলতেই থাকে। তার পর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয় কিন্তু তারপরও কিং হুসেন এবং নাসেরে মধ্যে সম্পর্ক শীতলই থাকে। এর মাঝে নিয়মিতই গামাল আব্দেল নাসের কিং হুসেনের বিরুদ্ধে তার প্যালেস্টাইন কার্ড খেলতে থাকে। প্যালেস্টাইন কখনই ইজিপ্ট কিংবা নাসের জন্যে কোনো দায়িত্ব ছিলো না , তারা সব সময় এটাকে একটা অস্ত্র হিসেবে ইউজ করেছে নিজেদের স্বার্ধে এবং এখনো করছে। খুব কম আরব নেতাই আছে যারা সত্যিকার অর্থে চায় প্যালেস্টাইন সমস্যার সমাধান হোক। সবাই এটাকে নিজেকে জনপ্রিয় করবার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। শান্তি পূর্ণ সমাধানের পথ কেউ খুজে বের করবার চেস্টা করেনি যারা করেছে তাদেরকেও হেনস্তা করা হয়েছে । এটা ছিলো একটি সরল বিষয় যা নিয়ে কথা বলে যে কেউ জনপ্রিয় হয়ে পারতো ।


১৩ জানুয়ারি,১৯৬৪ । গামাল আব্দেল নাসের প্রথম আরব সামিটের আয়োজন করেন কায়রোতে, এবং কিং হুসেন ছিলেন অতিথি তালিকার সবার প্রথমে।
এই সামিটে এমন ২ টি বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হয় যা সরাসরি কিং হুসেনকে ইফেক্ট করবে ।
প্রথমটি ছিলো , একটি সম্মিলিত আরব সামরিক কমান্ড গঠন করা যা সম্ভাব্য ইসরাইয়েলি আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্যে তৈরি থাকবে ।
দ্বিতীয়ত , প্যালেস্টাইনিদের রিপেজেন্ট করার জন্যে একটি সম্পুর্ন আলাদা এবং স্বাধীন কমিটি গঠন করা ।যা হবে প্যালেস্তাইনি লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও ) ।
প্যালেস্টাইনি ভাষ্য ,
কিং হুসেন নিজেকে এবং হাশেমাইট কিংডমকে প্যালেস্টাইনিদের মুখ্যপাত্র ভাবতেন ,কারন বেশিভাগ প্যালেস্টাইনি জর্দানের পুর্ব দিকে বসবাস করতো এবং সেই সাথে তিনি নিজেকে প্রবিত্র ভূমির এবং মসজিদের রক্ষকর্তা হিসেবেও মনে করতেন । কিন্তু গামাল আব্দেল নাসের তা ভাবতেন না ,তাই তিনি আহমেদ শুকাইরিকে দিয়ে ,তিনি এবং শুকাইরি মিলে পিএলও গঠন করলেন ১৯৬৪ সালে।
পিএলও গঠন করার পর শুকাইরি এবং কিং হুসেনের মধ্যে সম্পর্ক অনেক উত্তপ্ত হয়ে উঠলো । তারা এরপর সেই সামিটে শুধু পরস্পরের উদ্দেশ্যে কেবল নেতিবাচক বাক্যই ব্যবহার করে গেলেন ।যাকে আমরা বলতে পারি ইনসাল্ট।
সেই জন্যে তারা দুই জন মিলে কখনই একটি পলিসি নির্ধারন করতে পারেন নি , যা দিয়ে সমন্বিত আরব বাহিনী সাহায্যে প্যালেস্টাইনকে ইসরাইলিদের থেকে মুক্ত করা যায়। তারা দুই জন পরস্পরের সাথে ক্ষমতা এবং ব্যাক্তিগত প্যাস্টিজ নিয়ে লড়াই করতেন।
১৯৬৪ সালের মে মাসের শেষে , প্যালেস্টাইনিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠিত হয় , এবং তারা একটি বৈঠকের আয়োজন করে, কিং হুসেন শুধু সেই বৈঠকে যোগই দেন নি সেখানে তিনি একটি ভাষনও দেন এবং তার উদ্বেগের কথাও ব্যাক্ত করেন।
তিনি বলেন , “ প্রিয় ভাইয়েরা আমি এখানে বলতে এসেছি জর্দান তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে এবং তার প্যালেস্তাইনি ভাইদের রক্ষা করবে । আমরা এই মহান জর্দান নদীর দুই পারে দুইটি মহান জাতি স্বতাকে রক্ষা করেছি। আমাদের ফ্যামিলি সবসময়ই প্যালেস্তাইনিদের সাথে আছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক , জেরুজালেম এবং পাশাপাশি বিরাট এলাকা আমাদের অংশ এবং আমরা তা রক্ষা করেছি । আরবরা ইতিমধ্যে প্যালেস্টাইনকে রক্ষা করেছে ।“
ঠিক এরপরেই পিএলও একটি মিটিং ডাকে এবং সেখানে বলে, আমরা জর্দানকে ভাংতে চাই না,জর্দানিজদের প্যালেস্তাইনিদের মত দেখি , প্যালেস্তাইনিদের জর্দানিজদের মত দেখি । আমরা জেরুজালেমকে হাশেমাইট দের হাত থেকে নিতে চাই না ,আমরা শুধু আমাদের দেশ চাই ,সেটা ওয়েস্ট ব্যঙ্কও না ,আমরা ওয়েস্ট ব্যঙ্কের ওয়েস্টে আমাদের জন্যে নির্ধারিত দেশ চাই। হাশেমাইটদের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক।
আল নাকবার ১৫ বছর পর , প্যালেস্টাইনিরা মনে করতে থাকলো ইসরাইলিরা হবার পর সবাই তাদের ভুলে গেছে এবং তারা রিফিউজি হয়ে গেছে । তাই তারা এটা ভাংতে চাইলো ।তারা একশন নিতে শুরু করলো ।নাসেরও তাদের এটেনশন দিতে শুরু করলো। তাদের অর্থ সহায়তা ও উৎসাহিত করতে লাগলো পিএলও বানানোর জন্যে এবং অবশেষে পিএলও হলো । এবং তারা প্যালেস্টাইনকে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করলো । জর্দানের জন্যে এটা ছিলো একটি অস্বস্তিকর বিষয়,কারণ পিএলও হওয়া মানে তারা প্রায় অর্ধেক প্যালেস্টাইনিকে নেতৃত্ব দিবে এবং এর ফলাফল জর্দানে ভাগ , বিভক্তি ।

১ জানুয়ারি,১৯৬৫। ফাতাহ একটি মিলিটারি কমিউনিটি ইস্যু করে , যার নেতৃত্বে থাকেন ইয়াসির আরাফাত ,যার নাম হয় প্যালেস্টাইনি লিবারেশন মুভমেন্ট ।প্যালেস্টানিয়ান আর্মস স্টাগলের সূত্রপাত করে যা মধ্যপ্রাচ্যে তথা বিশ্বের রাজনীতির গতি পথ বদলে দেয় । শুরু হয় এক অন্যরকম যাত্রা , জর্দান তথা প্যালেস্টাইনের জন্যে ..................।
( চলবে )

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪৬
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×