somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় শিক্ষকগণ- মুনশি আলিম

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম প্রথম ভাবতাম পিতামাতার প্রভাবেই সন্তানরা আজীবন প্রভাবিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝলাম স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এ প্রভাবও রূপ বদলায়। বাস্তবজীবনে দেখছি, মা-বাবা নয় বরং আদর্শ শিক্ষকের মহাপ্রভাবের দ্বারাই জীবনের বাঁকে বাঁকে প্রভাবিত হচ্ছি। সাধুবাদ! এ প্রভাব ছড়িয়ে পড়ুক গোটা পৃথিবীর সকল শিক্ষাঙ্গনে।

খুব ছোটোবেলা থেকেই ছিলো সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ আর সেইসঙ্গে শিক্ষকতা পেশার প্রতি সীমাহীন দুর্বলতা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে যোগদান করলাম শিক্ষকতা পেশায়। ছাত্রজীবনে পড়াশোনাতে খুব একটা ফাঁকিবাজ ছিলাম না। বরং পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সাহিত্যের বই নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতাম। ব্যক্তিগত সীমবদ্ধতার কারণে প্রিয় সাহিত্যিকদের সকল বই ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এজন্য বইপড়া থেকে কখনো বিরত থাকিনি। সাইকেলযোগে পাবলিক গ্রন্থাগার, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ কিংবা প্রিয়জনদের ব্যক্তিগত পাঠাগারের সহযোগিতায় অপূর্ণ জ্ঞানসুধা পূরণের চেষ্টা করেছি।


শিক্ষাজীবনে কখনো ফাঁকি দিতে নেই—এ শিক্ষাটি প্রথম পেলাম গুরুজি Zafir Setu'র কাছে।


ছবি : জফির সেতু

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে হয়, কীভাবে প্রতিদিনই নিজে আপডেট হতে হয় এ শিক্ষাও তাঁর কাছ থেকে পাওয়া। সাহিত্যের একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে কীভাবে বিশ্বসাহিত্যের অলিগলি থেকে ঘুরে পুনরায় ফিরে আসতে হয় এ শিক্ষাও তাঁর কাছ থেকে পাওয়া। বইপড়া কিংবা পরিশ্রমের বিকল্প নেই। একজন ভালো শিক্ষককে যে শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হয়—এও তাঁর কাছ থেকে পাওয়া।


ছবি : প্রশান্ত মৃধা

নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা এবং নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমেই সফলতা আসে। নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা খুঁজে পেতাম আরেক মহান শিক্ষক Prasanta Mridha'র ক্লাসে। তিনি নিজেই যেনো ব্যক্তিত্বের মহাবিশ্ববিদ্যালয়! শিক্ষার্থীদের কখনো ফাঁকি দিতে হয় না—এ মূলমন্ত্রও উপরোল্লিখিত শিক্ষকদ্বয়ের কাছ থেকে শেখা।

এ মূলমন্ত্রকেই শিক্ষকজীবনের সবচেয়ে বড়ো পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করলাম। আমি কলেজে যোগদানের পর স্নাতকপর্যায়ের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসগুলো প্রথম বর্ষে হতো। তাও কালেভদ্রে! আমার আন্তরিকতা এবং যৌক্তিক প্রস্তাবে তা বিধিমোতাবেক হওয়া শুরু হলো। সরকারি বা বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই ফাঁকিবাজির ব্যবস্থা আছে। চাইলেই কৌশলে ফাঁকি দেওয়া যায়। কিন্তু কখনোই ফাঁকি দিইনি। পড়াশোনা করেই ক্লাসে ঢুকেছি। এর ফলাফলও পেয়েছি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। পরবর্তীতে দেখলাম অনিয়মিত শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত হওয়া শুরু করেছে।



ছবি : আশিকুজ্জামান

ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে অন্যান্যদের মধ্যে কেবল আশিকুজ্জামান স্যারের কথাই মনে পড়ে। তাঁর উদাস উদাস কাব্যিক ঢঙ আমাকে বেশ টানতো।



ছবি : সারোয়ার হোসেন

স্কুল জীবনে কত শিক্ষকেরই তো ক্লাস করলাম। এখন তাঁদের অনেকের কথাই মনে নেই। তবে একজনকে মনে পড়ে। আমার দৃষ্টিতে তিনি অনেক বড়ো মনের মানুষ, বড়ো মনের শিক্ষক, যুক্তিবাদী শিক্ষক। আমি জনাব Sarowar Hossain'র কথাই বলছি। তাঁর গোছলো কথা, নান্দনিক বাগ্মিতা আমাকে বেশ টানতো। টানতো বলতে এখনও টানে।


ছবি : আফাজ মোলভী

প্রয়াত অাফাজ মৌলভী স্যারের কথা প্রাইমারির সকল শিক্ষকেরই মুখে মুখে ছিল। তিনি ছিলেন সদাহাস্যময়ী।মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান এ নিয়ে তাঁর মোটেই অহমিকা ছিল না। তিনি ছিলেন খুবই মিশুক প্রকৃতির। হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে তিনি আমাদের শিখাতেন। ফলে কোনো শিক্ষার্থীই তাঁকে ভয় পেত না।

শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিতেন। তাঁর অপার স্নেহ-ভালোবাসা, আন্তরিকতার কারণেই আমার পরবর্তী পড়াশোনার পথ সুগম হয়েছে। আজ এই শিক্ষকদিবসে আপনাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আপনি শুধু আমার জন্য নন, পুরো এলাকার জন্যই ছিলেন বাতিঘর!

বন্ধুত্বসুলভ আচরণ আর আন্তরিকতার কারণেই Sunil Indu Adhikary স্যারকে বেশি মনে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বিপদে-আপদে তিনি যেনো আজীবন নিবেদিত প্রাণ!



ছবি : সুনীল ইন্দু অধিকারী ও তাঁর সহধর্মিনী

সকল শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের মনে স্থান করে নিতে পারে না। কেউ কেউ পারে। যাঁরা পারে তাঁরা অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম, সত্যিকারের শিক্ষক, প্রজ্ঞাবান তো বটেই! ওই যে জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন-সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। ঠিক তেমনই আারকি!

কিছুটা অপূর্ণতা সত্ত্বেও এ পেশাকে আমি খুব উপভোগ করি। কেননা, এটা আমার মনোনিত পেশা। শিক্ষার্থীদের কেবল পেশাদার শিক্ষক হিসেবেই পড়াই না। এর চেয়েও একটু বেশি দেওয়ার চেষ্টা করি। আর একারণে নিজেও প্রতিনিয়ত আপডেট হওয়ার চেষ্টা করি। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বই পড়তেও তাদের প্রতিনিয়ত উদবুদ্ধ করার চেষ্টা করি। কেননা, প্রতিযোগিতার বিশ্বে কেবল পাঠ্য নয়, তুলনামূলক সাহিত্য এবং বহির্বিশ্বকেও ভালোভাবে জানতে হবে। বাকীটা মূল্যায়নের ভার শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান এবং মহাকালের ওপরই রইলো।

শিক্ষকতাকে আমি কেবল চাকরি হিসেবে নিইনি। এটা আমার পেশা, এটা আমার নেশা, এটা আমার মিশন! জয়তু মানুষগড়ার কারিগর—সকল শিক্ষক। জয়তু বিশ্ব শিক্ষক দিবস।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:১৮
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×