Your eyes will see
The dawn of the day
And the writing
On the wall
মোবাইলের এলার্মের শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল রুদ্রের। আড়মোড়া ভেঙে মোবাইলটা তুলে দেখে সাড়ে আটটা বাজে। এত সকালে কেন অ্যালার্ম দিল মনে করার চেষ্টা করতে থাকে রুদ্র। কাল রাত্রে বন্ধুদের সাথে পিনিকটা একটু বেশী হয়ে গেছিল। রাহিনটা নতুন একটা প্রেম শুরু করেছে তাই পার্টি। খেয়াল ছিল না। ডোজটা একটু বেশী হয়ে গেছে। মাথাটা এখনো বাড়ি দিচ্ছে হালকা।
‘ওফফফ, শিট। আজকে তো প্রথম ক্লাস।’ পরীক্ষার পর মাস্তি করতে করতেই তিনটা মাস চলে গেছিল। কোন পাবলিক ভার্সিটিতেই চান্স হলনা। শেষমেষ মাকে পামপট্টি দিয়ে প্রাইভেটের টিকেট নিতে হল বাবার কাছ থেকে। শালায় একটা ফাউল। বলে, আবার ট্রাই কর। আমি এত টাকা দিতে পারবনা। মগের মুল্লুক নাকি? টাকা দিতে পারবিনা তো জন্ম দিলি কেন? টাকা তো আর কম কামাসনাই ঘুষ খেয়ে? - যাই হোক মা জিনিসটাকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। না হলে খবর ছিল। বিছানার পাশ থেকে গিটারটা নিয়ে ৫ মিনিট একটু বাজিয়ে শাওয়ারে ঢুকে গেল রুদ্র। ভার্সিটি লাইফের প্রথম ক্লাস। দেরী করা যাবেনা। নতুন মাল ধরতে হবে। “ও ম্যান, ইটস ইউনিভার্সিটি লাইফ গন্না কামইন। ক্যান ইউ বিলিভ ইট। নিউ ফ্রেন্ডস, নিউ হট চিকস... উম্মাহহহহহ।” শাওয়ার শেষ করে গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে পরে রুদ্র। “বাই মাম, দুপুরে বাইরে খাব। ইটস গন্না লিটলবিট লেইট”। গাড়ীতে চড়ে বনানীর দিকে এগিয়ে যায় রুদ্র। গন্তব্য : এ.আই.ইউ.বি।
রুদ্রর গাড়ী থেকে প্রায় ২০০ কি.মি. দুরে ট্রেনে বসে অঝোড়ে চোখের জল ফেলছে একটি মেয়ে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। এমন হবে জানলে সে এত ভাল পরীক্ষা দিতনা। আগামী ৫ বছর নাকি ঢাকাতেই থাকতে হবে মা-বাবাকে ছেড়ে। এটা কেমন নিয়ম। নিজের শহরটার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। এমনকী খারাপ লাগছে পাশের বাসার পলাশ ভাই নামের হাবা লোকটার জন্যও। লোকটা তাকে পছন্দ করে সেটা তুলি জানে। কিন্তু কখনো বলতে পারেনি। এজন্যই তুলির যত রাগ। বেটা নাকি অনেক মেধাবী। সারাদিন নাকে একটা চশমা লাগিয়ে বই পড়ে। আরে এতই যখন মেধাবী, বললেই তো পারিস যে আমাকে পছন্দ। তা না। দেখা হলে তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করবে, “কেমন আছ? বাসার সবাই ভাল?”- “আরে পাশের বাসায় থাকিস আর এটাও জানিস না বাসার সবাই কেমন আছে? গাধা একটা”। কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে তুলি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির আ্যাপ্লাইড ফিজিক্সের ক্লাশ শুরু হবে দু দিন পর। তাই নিজের আপন শহর ছেড়ে বাবার সাথে ঢাকায় গমন। বাবা মুখ ঢেকে পত্রিকা পড়ছেন। বাবার দিকে তাকিয়ে বুকটা আবার মোচড় দিয়ে উঠে তুলির। কতদিন পরে আবার বাবার সাথে দেখা হবে কে জানে? মামা কোন একটা হোস্টেলে সিট ম্যানেজ করে রেখেছেন। সেখানেই আপাতত থাকতে হবে।
(২ সপ্তাহ পর)
ঢাকার সাথে মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যা হচ্ছে তুলির। এখানকার ছেলে-মেয়ে গুলো কেমন জানি। প্রথম ক্লাশেই রিংকি নামের এক মেয়ে জিজ্ঞেস করে ফেলল, “এই, তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে? কখনো বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটিয়েছো?”- হায় খোদা। কি বলে এসব। ছি ছি ছি। লজ্জায়, অপমানে মুখ ঢেকে ফেলে তুলি। মেয়েদের মধ্যে হাসির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। তুলি বুঝতে পারেনা এরা এমন কেন। তবে এরই মধ্যে ক্লাশের দুটা মেয়ের সাথে একটু ভাব হয়ে গেছে তুলির। এদের সাথেই বেশীরভাগ সময় কাটে তুলির। মাঝে মাঝে বাইরে ঘোরে তিনজন মিলে। কাল শুক্রবার। ক্লাশ নেই। তাই সন্ধ্যায় ঘুরতে এসেছে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে। আনিকা ইন্টারমিডিয়েট থেকেই ঢাকায় আছে। তাই গাইড আপাতত সেই। লেকে ঢোকার মুখে ফুচকা খেয়ে তিনজন হাটতে শুরু করে লেকের পাশ দিয়ে। অল্প একটু যাবার পরই চোখে পড়ে লেকের পাশে আবছা আলোয় একটা ছেলে একটা মেয়ে বসে একে অপরকে চুমো খাচ্ছে। ছেলেটা মেয়েটার বুকে হাত দিয়ে কি যেন করছে। মেয়েটাও কোন বাধা দিচ্ছেনা। মাথাটা কেমন যেন ঘুড়ে ওঠে তুলির। ‘আল্লাহ, এসব কি? ছি ছি?’ চিৎকার দিয়ে উঠে তুলি। চিৎকার শুনে চুম্বনরত জুটি তাদের কর্মে বিরতি দেয়। “হু ইস টা মাদাফাি.... বিচ?” গালি দিতে দিতে পেছনে ঘুরে তাকায় ছেলেটা। তাকিয়ে দেখে অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়ে চিৎকার করছে। ছেলেটা আরো হয়তবা গালাগালি করত। কিন্তু মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে তার কেমন জানি লাগে। মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হয়না। এ পর্যন্ত ১৪ টা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল। কিন্তু এ মেয়েটার মুখে কি যেন একটা আছে যেটা অন্য কারো মধ্যে দেখেনি এখন পর্যন্ত। “এসব মেয়ে যে কেন লেকের পাড়ে মরতে আসে? নিয়ে যান একে”- আনিকার দিকে তাকিয়ে ছেলেটা হুংকার ছাড়ে। তুলি ছেলেটার চেহারাটা দেখার চেষ্টা করে কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। কেমন জানি লাগছে তুলির। গা ঘিনঘিন করছে। “চল, হোস্টেলে চলে যাই। ভাল লাগছেনা।” তিন বান্ধবী হাটা শুরু করে রাস্তার দিকে। চুম্বনরত জুটির মেয়েটা ছেলেটাকে বলে, “বাদ দাও না রুদ্র। এসব গাইয়া কোথা থেকে যেন আসে। ব্লাডি ভিলেজার্স। কাম অন ডার্লিং। লেটস হ্যাভ সাম ফান।” রুদ্র মুখ ফিরিয়ে তার ঠোট জোড়া লাগিয়ে দেয় মেয়েটার ঠোটে।
বাকীটা ২য় পর্বে
২য় পর্বের লিংক
শেষ পর্বের লিংক