মা গর্ভে ধারণ করেছিল বলেই তো আজ এত বড় প্রথিবী দেখার সুযোগ হয়েছে। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরেছিল বলেই কি আমরা প্রত্যেক সন্তান মায়ের কাছে ঋণী? সন্তান জন্মানোর পর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত মায়ের অবদান, মায়ের ত্যাগী মনোভাব পৃথিবীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয়। তাই তো মা পৃথিবীর সব সমাজব্যবস্থাতেই অনন্য। মায়ের অপার মহিমা গল্প করে বা হাজার পাতায় লিখেও শেষ করা যাবে না। মা মায়ের জায়গায়, সেখানে অন্য কাউকেই মানায় না।
পরিবারে বাবা প্রধান ব্যক্তি হলেও সন্তানের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গলজনক কাজে মায়ের নিঃস্বার্থ ত্যাগ বাবার চেয়েও বেশি। তাই তো সন্তানের কোনো সুসংবাদে মা সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হয়। সন্তান পড়াশোনায় ভালো হলে, পরীক্ষায় ভালো ফল করলে, খেলাধুলায় পুরস্কার পেলে, নিষ্ঠা সহকারে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চললে এবং ন্যায়ানুগভাবে জীবনযাপন করলে মা ভীষণ খুশি হয়। সন্তান হিসেবে ছেলেমেয়ে উভয়েই কিন্তু মাকে হৃদয়নিংড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু মাকে কখনো কখনো সন্তানদের বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য কাঁদতেও হয়।
একটি মেয়ে যখন বউ হয়ে স্বামীর সংসারে আসে, তখন শাশুড়িকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করলে ওই মায়ের কান্না আমৃত্যু অবিরত চলতে থাকে। মায়ের কান্না বহু গুণ বেড়ে যায়, যখন বউ অন্য কোনো পরপুরুষের কিংবা বাপের বাড়ির মামলাবাজ দালালদের কথায় স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
এক নারী যখন অন্য নারীর দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন নারী হিসেবে মাকে মুখ বুজে নীরবে তা সহ্য করতে হয়।
অনেক বউ চায় না, তার স্বামী-শাশুড়ির স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করুক কিংবা দরিদ্র ননদের ছেলেমেয়েদের পাড়াশোনার জন্য খরচাপাতি করুক। মা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সন্তানের পরিবারের বৃহত্তর কল্যাণের কথা চিন্তা করে ‘সুস্থ’ থাকার ভান করে। এভাবেই মাকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নানাভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। মা ছাড়া একজন সন্তান পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারে না বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। মায়ের আদর্শ ধারণ করে সন্তানেরা বড় হতে থাকে। মায়ের প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর ।
আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকেরা যদি শিক্ষার্থী বন্ধুদের মায়ের প্রতি যত্নবান ও দায়িত্ববান হওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা দেন, ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিক প্রত্যেকে যদি মাকে শ্রদ্ধা জানানোর তাগিদ ও পারামর্শ দেন, তাহলে সমাজ এবং দেশে দেশে মায়েরা শুধু তাদের সন্তানদের কৃতকর্মের জন্য গর্ববোধ করবে, মায়েদের আর কখনোই কাঁদতে হবে না।
মায়ের হাসি-কান্না
অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায়