somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ : গ্যাংস্টার স্কোয়াড (২০১৩)

০৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Genre: Drama
Director: Ruben Fleischer
Release date: Jan 11, 2013

শিরোনাম টা লিখতে গিয়ে অনেকক্ষণ ঝিম ধরে থাকলাম। ভাবছিলাম, মুভি রিভিউ নামে যা লিখছি তা কি ঠিক আছে ? ঠিকমত সব তুলে ধরতে পারব তো ? এটা পড়ে মুভি দেখার ইচ্ছাটাই না আবার চলে যায় ! নিজে যখন রিভিউ পড়ি, তখন কোন কোন রিভিউ এত ভাল হয় যে মুভিটাকে ছাপিয়ে যায়। সেই রকম কোন রিভিউ লিখতে পারব কিনা জানি না। চেষ্টা করতে দোষ নাই।

কথিত আছে, ডেনভারে 'ডার্ক নাইট রাইজেস' এর একটি শোতে গোলাগুলির পর এই ছবির পরিবেশক ওয়ার্নার ব্রস এ ছবির ট্রেইলার উঠিয়ে নেন এবং ছবিতে থাকা একটি সিনেমাহলে গোলাগুলির সিকোয়েন্সকে বাদ দিতে বাধ্য হন।

ছবির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ১৯৫০ সালে দুর্ধষ ক্রিমিনাল মাস্টারমাইন্ড 'মাইক কোহেন' কে নিয়ে। ছবির শুরুতেই আধো আলো আঁধারে বক্সিং প্র্যাক্টিস করা লোকটি যে শক্তিমান অভিনেতা মাইক কোহেন রুপদানকারী 'শন পেন' তা বোঝা যাচ্ছিল না। এর পরের সিকোয়েন্সেই সে তার শিকাগোর প্রতিদ্বন্দী কে শিকল দিয়ে বেঁধে গাড়ি দিয়ে টেনে দুভাগ করে ফেলার মধ্যে দিয়ে তার অস্তিত্ব জানান দেয়।



ঠিক তার ৬০ সেকেন্ড এর ভেতর মূল হিরো রুপে সার্জেন্ট ও'মারা ( জশ ব্রলিন) এর প্রবেশ এবং কোহেন এরই একটি ব্রোথেলে জনা পাঁচেক এর সাথে মারামারি করে তাদের গ্রেফতার করে। কিন্তু কোহেন রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পুলিশ প্রসাশন পর্যন্ত কিনে ফেলায় আটক ৩ জনকে জেলে নেবার পরও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ও'মারা।
এই কাজ করে অন্য অফিসারদের চক্ষুশূল হলেও ও'মারা ঠিকই চীফ পার্কার (নিক নোল্টে) এর নজরে চলে আসে। এই চীফই পরে ও'মারা কে একটি টিম সিলেক্ট করতে বলে যারা শুধুমাত্র "এরেস্ট" করে ক্ষান্ত হবে না, বরং লস এঞ্জেলস কে দুর্গন্ধমুক্ত( কোহেনমুক্ত ) করবে সম্পূর্ণরূপে।



ও'মারা কোনভাবেই 'ফ্যামিলি ম্যান' না। তার প্রেগনেন্ট স্ত্রী (মিরেল ইনোস) কে ঠিকমত সময় দিতে পারে না। চীফের কথানুযায়ি সব অফিসারদের বায়োডাটা বাছার কাজ করে, খুঁজতে থাকে কে আছে সৎ, নিষ্ঠাবান অফিসার, যে কিনা ও'মারার মতই অপরাধের বিরূদ্ধে, মাইক কোহেনের সাথে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হবে। এই বাছাই এর কাজটা করে দেয় ও'মারার প্রেগনেন্ট ওয়াইফ ! তার ঠিক করে দেয়া লোক নিয়েই তৈরি হয় 'গ্যাংস্টার স্কোয়াড'।

ও'মারার স্ত্রী যাদের পিক করে তাদের মধ্যে 'ট্রু ডিটেকটিভ ম্যাগাজিন" এ পড়া এক শার্পশুটার 'কাউবয়' (রবার্ট প্যাট্রিক)। ও'মারা কেবল ম্যগাজিনে ছাপা এমন একজনকে দলে নিতে ভরসা পায় না, কিন্তু পরে এই কাউবয় ই ও'মারার জীবন বাঁচায় জীবনের শেষ টার্গেট এ গুলি করে। গুলি করাকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কাউবয়ের মহান উক্তি,' সবসময় টার্গেট কে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ো না, টার্গেট যেখানে থাকতে পারে, সেখানে লক্ষ্য করে গুলি কর"।



তার সাথে আছে তার শিষ্য ল্যাটিন (মাইকেল পেনা) যে কিনা একরকম জোর করেই দলে ঢুকে যায়।



আরেক সদস্য এফ্রো এমেরিকান, কোলম্যান হ্যারিস(এনথনি ম্যাকি) যে কিনা ছুরি চালনায় বিশেষ পারদর্শী



ও'মারার স্ত্রী আরেকজন কে চয়েস করে যে কিনা ব্রেইনওয়ার্ক করবে, মানে অস্ত্র চালনা করলেই তো শুধু হবে না, মাথা খাটানোর লোকও দরকার। সে জন্যে বেছে নেয় সাবেক এক আর্মি অফিসার কনওয়ে কিলার (জিওভান্নি রিবসি) কে যে কিনা ওয়ারট্যাপ (তার সংক্রান্ত কারিকুরি) তে বিশেষ দক্ষ।



আরেক জন থাকে এ দলে, স্পেশাল একজন। সেও ও'মারার মতই পুলিশ অফিসার থাকে, কিন্তু সে থাকে গা ভেসে যাওয়াদের দলে, মানে সিস্টেম যেভাবে চলছে চলুক টাইপ। সে আর কেও না, অতি সুদর্শন, অতি অতি হ্যান্ডসাম "জেরি" (রায়ান গসলিং)।



যেখানে অতি সুদর্শন রায়ান গসলিং আছে, সেখানে অতি সুদর্শনা নায়িকা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। এখানেও আছে। গ্রেস চরিত্রে 'এমা স্টোন'।



এই গ্রেস থাকে কোহেনের এটিকুয়েট টিউটর! মানে রেস্তোরায় খেতে গেলে কোন হাতে ফর্ক থাকবে এইগুলা বলে দেয়, কোহেন আবার এইগুলা কম জানে কিনা ! আদতে গ্রেস অনেকটা রক্ষিতার মতই থাকে। যদিও ছবিতে শয্যায় রায়ান গসলিং কেই পাওয়া যায়।

জেরির এ স্কোয়াডে আসার ঘটনাটিও নাটকীয়। একটা ছেলে প্রায়ই জেরির জুতো পালিশ করে দিত। জেরিও তাকে টাকা দিয়ে আগে ভাগে বাসায় চলে যেতে বলত। এই মুচি ছেলেটি আবার কোহেনের কমবেশি সব অপরাধের কথা জানত। একদিন কোহেনের পার্সোনাল কিলার কে দেখে সে জেরি কে মাথা নিচু করে থাকতে বলে, কিন্তু সে নিজে গুলি খেয়ে নিহত হয়। তার লাশটি দেখে জেরি নিজেকে সামলাতে পারেনা। ওই কিলার কে গুলি করতে থাকে, আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে কোহেন কেও মেরে ফেলতে চায়। এই ছোট মুচি ছেলেটির মৃত্যুই মূলত জেরি কে এই স্কোয়াডে নিয়ে আসে।

একে একে স্কোয়াডের সদস্যরা কোহেনের সব স্থাপনায় হামলা দিয়ে সেগুলা ধ্বংস করতে থাকে। যদিও একেবারে প্রথম মিশনটাই ছিল অসফল। কিন্তু তারা বেঁচে আসে এবং সফলতার সাথে পরের মিশনগুলো চালাতে থাকে।



একটা পর্যায়ে এসে কোহেন বুঝতে পারে যে গ্যাংস্টার স্কোয়াডের লোকজন তার বাসার টিভি তে ট্রান্সমিটার ফিট করে গিয়েছিল, যেখান থেকে তারা আগেই তাদের প্ল্যান জানতে পারত। সেই ট্রান্সমিটার কে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে তারা একটা সেটাপ দাঁড়া করায় যেখানে চায়নাটাওন নামের এক জায়গায় তাদের শেষ ড্রাগের ট্রান্সেকশন হবার কথা বলে তাদের বোকা বানিয়ে সেখানে নিয়ে যায়। আর একা অফিসার কনওয়ে কে নির্মমভাবে হত্যা করে। জেরির কল্যানে ও'হারা সেবার বেঁচে যায়।

সে সময় কোহেন স্কোয়াডের সদস্যদের বাড়িতে হামলা করে, ও'মারার বাসায় ব্রাশ ফায়ার করা হয়। ঠিক সেসময়ই গুলি থেকে বেঁচে যায় তার স্ত্রী এবং বাথটাবে এক শিশুর জন্ম দেয়। ও'মারা ভেবেছিল, তার স্ত্রী নিহত হয়েছে, কিন্তু তারা অক্ষতই থাকে।

সবশেষে দেখা যায়,চিফ ও'মারা কে বলে যে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ও'মারা কেও সরিয়ে দেয়া হবে। ও'মারা হাতে একদিন সময় নিয়ে,মানে শেষ একদিন যখন সে স্টিল পুলিশ সার্জেন্ট, এই ক্ষমতা বলে কোহেন কে এক খুনের মামলায় গ্রেফতার করতে যায়। সেখানে সেইরকম গোলাগুলি হয়, জেরি গুলিবিদ্ধ হয়,কাউবয় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়, তবে জীবনের শেষ গুলিটাও অব্যর্থ ভাবে লাগাতে সক্ষম হয়।

শেষমেষ অনেকক্ষণ গুতাগুতি, হুড়াহুড়ির পর কুখ্যাত কোহেন কে ধরতে সমর্থ হয় সার্জেন্ট ও'মারা। তবে এই কাজের জন্য তাদের আলাদা কোন পুরষ্কার দেয়া হয় না, কোন উপাধি দেয়া হয় না, স্কোয়াডের সদস্যরা চায়ও না, কারণ তারা এটা করে তাদের আপন শহরের জন্যে, তাদের সুন্দর ভবিষ্যত এর জন্যে।

অভারঅল, মুভিটা ভালই। যারা গ্যাংস্টার মুভি পছন্দ তারা তাড়িয়ে তাড়িয়ে মুভিটা উপভোগ করবেন, এটা বলাই যায়।

মুভিতে খুব ভাল কিছু ডায়লগ আছে, মনে রাখার মত (সময় সুযোগ বুঝে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেবার মত ;) )

যারা এখনো দেখেন নাই, ঈদের ছুটিতে দেখে ফেলতে পারেন। সময় খারাপ কাটবে না।

শেষমেষ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×