somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিস - পর্ব ৬

১৬ ই জুন, ২০১২ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিস পর্ব- ১
সক্রেটিস পর্ব- ২
সক্রেটিস পর্ব- ৩
সক্রেটিস - পর্ব ৪ (এটাকে প্রেম পর্বও বলা যায়)
সক্রেটিস পর্ব- ৫

শায়মা আপিকে কথা দিয়েছিলাম, আমি সক্রেটিস নিয়ে লিখবো। সেই কথা রাখতেই এই লেখা শুরু করা। আজ সক্রেটিস এমন একটি বা দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা সাধারণ পাঠক হয়তো চিন্তা করেনি বা জানেন না।

সক্রেটিসকে অনেকেই সোফিস্টদের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। সেই সময়ে সোফিস্টদের যে চিত্র আমরা পাই, তা অনেকটা এরকম যে, সোফিস্টরা কিছু কিছু তত্ত্ব জ্ঞান দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করতেন। সেই সময়ে এই সবের রেওয়াজ ছিলো। গ্রিকে এমন লোকদের ও দেখা পাওয়া যায় যারা সেই সময়ে কিছুই করতো না, শুধু মানুষকে গল্প শুনিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন। সেই সময়ে মানুষদের চিত্ত বিনোদনের তেমন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ভিন্ন কিছু করে অর্থ উপার্জন করতেন। সোফিস্টরাও এই একই দলভুক্ত ছিলেন। সোফিস্টদের সাথে সক্রেটিসের এই পার্থক্য যে তিনি কোনো দিন শিক্ষা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করেন নি। Apology তে সক্রেটিস বলছেন, 'ঘটনা এই; এই যে আমি এত বছর ধরে নিজের বিষয় সম্পত্তির ভাবনা ভানি নাই এবং ভাবি নাই বলে কষ্টও পাই নাই, শুধু আপনাদের ভালোমন্দ নিত্যদিন ভাবলাম, আপনাদের সকলের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বাপের মতো, বড় ভাইজানের মতো সকলকে একে একে বোঝালাম, বললাম বীর্যের পথে, সদ্ধর্মের পথে আসুন- আমার এই কান্ড কারখানাতো মানুষের মতো মনে হয় না। অবশ্য আমি যদি উপদেশ দিয়ে দু পয়সা উপায় করতাম তো একটা কথা না হয় ছিল। কিন্তু আপনারা নিজের চোখেই পরিস্কার দেখতে পারছেন, আমার বিরুদ্ধে যারা নালিশ নিয়ে এসেছেন তারা অনেক নির্লজ্জ মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলেও নিজেদের তাবৎ বেয়াদবি এক জায়গায় জড় করেও একজন সাক্ষি পর্যন্ত হাজির করতে পারেন নাই যিনি বলবেন, আমি কোনদিন কারো কাছে কোনো প্রকার বেতন গ্রহণ কিংবা দাবি করেছি। এদিকে আমার পক্ষে একজন সাক্ষি হাজির আছেন যাকে সকলেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মেনে নেবেন। তিনি বলছেন আমি যা বলছি তা সত্য বলেছি। আমার গরিবিহালই আমার সাক্ষি।'

সক্রেটিসের জবানবন্দী থেকে এই রূপ কি মনে হয় না, তিনি আল্লাহ পাকের প্রেরিত কোনো নবী বা রাসুল না হওয়া সত্ত্বেও আদতে তিনি তাদের কাজই করেছেন। কিছু কিছু বিষয় যেমন তাঁর 'পুলক-মূর্ছা' বা 'ভাবাবেশ' দেখা দিতো। গভীর চিন্তায় বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি কখনো কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। এমনকি তার কাছে ওহি আসতো। এই ব্যাপরটা নিয়ে সক্রেটিস নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার মুখেই শুনি তিনি কি বলছেন, 'খোদাতালার বা ফেরেশতাদের থেকে আমার কাছে ওহি আসে সে কথা নিয়ে মেলিতস তার জবানবন্দিতে বিস্তর হাসিঠাট্টা করেছেন। আমি যখন নিতান্তই শিশু তখন থেকেই আমার কাছে ওহি আসা শুরু হয়। ওহি মানে আওয়াজ। যখনই শুনতে পাই তখনই দেখি আমি করতে যাচ্ছি এমন কোন কাজ থেকে সে আমাকে নিবৃত্ত করতে চায়, এ আওয়াজ আমাকে কোনদিন কোন কাজে প্রবৃত্ত করতে চায় না। এই আওয়াজই আমাকে সরাসরি রাজনীতিতে যোগদানে নিবৃত্ত করেছে।'

Apology এর এক জায়গায় সক্রেটিস বলছেন, 'সাংঘাতিক একটা তেজি ঘোড়া, কিন্তু বিশালবপুর কারণে ধরুন ঘোড়াটা বেজায় আলসে। এখন এই আলসে ঘোড়াকে চাবকে দেওয়ার ওয়াস্তে খোদাতালা এক ডাঁশ (এটা একধরনের মাছির মতো যা কামড়ে দিলে প্রচন্ড ব্যথা হয়) পাঠালেন। আমিই সেই ডাঁশ। আমার বিশ্বাস এই ডাঁশের মতো কিছু একটা কাজ করার আদেশ দিয়ে খোদাতালা আমাকে এই দেশে নাজেল করেছেন। কাউকে বাদ না দিয়ে আপনাদের সবাইকে আমি জাগতে বলেছি, বুঝসমঝ দিতে চেয়েছি, গালমন্দও করেছি- করেছি ক্ষান্তিহীন, সারা দিনমান। আপনারা যেখানে যান আমিও ছায়ার মতো আপনাদের পিছু পিছু গিয়েছি।'

তিনি কখনো অন্যায় কে প্রশ্রয় দেন নাই। দেশের প্রয়োজনে তিনি একবার মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন। সেবার নৌযুদ্ধে প্রাণে বেঁচে যাওয়া নাবিকদের উদ্ধার না করে যে দশজন সেনাপতি পিছু ফিরে ফেরত এসেছিলেন তাদের সকলের বিচার একযোগে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এ রকম বিচারের কোনো বিধান সেই সময়ের আইনে ছিলো না। সেদিন সভাপতি মন্ডলির একজন মাত্র সদস্য সেই বেয়াইনি বিচারের বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি সক্রেটিস।

এরপর গোষ্ঠীতন্ত্র চালু হলে, তিরিশজনের গোষ্ঠী অন্য চারজন সমেত সক্রেটিসকে আমদরবারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তারা আদেশ দিয়েছিলেন সালামিস গিয়ে লিয়নকে ধরে আনতে, যেন আনার পর তার মৃত্যূদন্ড কার্যকার হয়। এই ঘটনা বর্ণনা করতে সক্রেটিস বলেছেন, 'সেবারও আমি আরেকবার প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম, কথায় নয় কাজে প্রমাণ করেছিলাম, মৃত্যূকে আমি থোড়াই পরোয়া করি। কথাটায় একটু বড়াইয়ের গন্ধ আছে। আশা করি তা আপনাদের ক্ষমা পাবে। আমার মাথাব্যথার একমাত্র বিষয় ছিল আমি যেন কোন অন্যায় বা অধর্মের সঙ্গে নিজেকে না জড়াই। সে সরকারের ক্ষমতা কম ছিল না, তবু তারা ভয়ের মুখে আমাকে দিয়ে কোনো অন্যায় কাজ করিয়ে নিতে পারেন নাই। আমরা দরবার ঘর থেকে বের হলাম, অন্য চারজন ঠিকই সালামিস গিয়ে লিয়নকে ধরে নিয়ে এলেন। আমি বাড়ি ফিরলাম। এই অপরাধে আমাকে ওঁরা মৃত্যূদন্ড দিতে পারতেন।'

মোদ্দা কথা তিনি নিজে যে উপদেশ দিতেন তা নিজে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তাঁর বড় শিক্ষাই হলো 'জ্ঞান ও কর্ম এক অর্থাৎ জ্ঞান যদি কর্মে রূপান্তরিত না হয় তাহলে তাকে জ্ঞান বলাই যাবে না এবং যদি কর্ম জ্ঞান ব্যতিরেকে হতে থাকে, তাহলে তা অকর্ম বা দুষ্কর্ম।'
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×