বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার: কিছু ইতিহাস..... ধারাবহিকতা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বাংলাদেশের স্থপতি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। আর ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করতে লেগেছিল দুই যুগেরও বেশী সময়। বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অবিসংবাদিত এই নেতাকে হত্যা করেছিল সে সময় সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্তকারী চক্র। তাকে হত্যার পর ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন ওই সময়কার আওয়ামী লীগ নেতা ও বানিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তিনি খুনীদের রক্ষায় জারী করেন দায়মুক্তি অধ্যাদেশ। আর সেই অধ্যাদেশ বাতিল করতে বাঙ্গালী সময় নেয় ২১ বছর। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে ওই বছরই নভেম্বর মাসে বাতিল করা হয় কুখ্যাত এই অধ্যাদেশটি। আর একই বছরের অক্টোবরের ২ তারিখে বঙ্গবন্ধুর আবাসিক ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় ১৫ই আগস্টের হত্যাকান্ডের ঘটনায় ২৪ আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। চার আসামী মারা যাওয়ায় ২০ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ১২ই মার্চ, ঢাকার দায়রা জজ আদালতে।
দেড়শ' কার্য দিবস শুনানির পর ১৯৯৮ সালে দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই সময় পাঁচ আসামী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। হাইকোর্ট ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল এই মামলায় ১২ আসামীকে ফাসিঁর দন্ডাদেশ দেন।
ওই রায়ের পর কারাবন্দি চার আসামি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ ও বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান হাইকোর্টে আপিল করে। সেই মামলার চূড়ান্ত পরিনতি হতে সময় লেগেছে ১৩ বছর।
১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এই হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায় দেবে আপিল বিভাগ।
কিভাবে ঘটে এই হত্যাকান্ড?
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে ঘটা জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডে বরখাস্ত হওয়া একদল সেনা সদস্যের সাথে হাত মিলিয়ে চাকুরীরত কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য । সেই কালোরাতে ধানমন্ডীর ৩২ নাম্বার রোডের বাড়ীতে খুনীরা মেতে উঠেছিল হত্যার উল্লাসে। একাধিক বাড়িতে বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধু, ভাই, কাজের লোক সবমিলিয়ে ২১জনকে হত্যা করা হয় সেই রাতে।
সেইদিন গুলির শব্দে ভোরের আযানের আগেই ঘুম ভাঙ্গে বঙ্গবন্ধুর। যে বিষয়টি কল্পনা করেননি কখনো সে বিষয়টিই চরম বাস্তব হয়ে সেই রাতে ধরা দেয় তার চোখে। গোলাগুলির শব্দে দোতলা বাড়ীর উপর তলা থেকে ঘুমঘুম চোখে নীচে নেমে আসেন বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল। মুহুর্তেই স্টেনগানের গুলিতে ঝাঝরা হয়ে যান তিনি। এরপর এলোপাথারি গুলি চলে কিছুক্ষণ।
কালো পোশাকধারী কয়েকজন দোতলা থেকে নীচে নামিয়ে আনে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে কামালের বন্ধু ছিলেন মেজর নূর। ছেলের বন্ধুই ১৫ই আগস্টের রাতের মোহাম্মদী বেগ। নূর আজ হাত মিলিয়েছে খুনী চক্রের সাথে। বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির শেষ ধাপে আসতে না আসতেই গর্জে ওঠে নূর-বজলুল হুদার রাইফেল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে এভাবেই বর্ননা করা হয়েছে ওই হত্যাকান্ডকে। আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন শুনানিতে গত ২৮ অক্টোবর ওই রায় পড়ে শোনান আপিল বিভাগের সামনে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর খুনীচক্র মেতে ওঠে রক্তের হোলি খেলায়। দোতলায় তারা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধু আর তার ভাই শেখ নাসেরকে। অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম রায়ের পেপারবুক থেকে এভাবেই বর্ননা করেন সেই ঘটনাকে।
পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে শেখ রাসেলের বয়স ছিল নয়। বাড়ীর নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে তাকে আগেই বন্দী করে খুনীরা। উপরে গুলির শব্দ শুনে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য আকুতি করে ছোট্ট অবুঝ ছেলেটি। ছলনা করে তাকেও বাঁচতে দেয়নি খুনীরা।
সেইদিন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহেনা ছিলেন বিদেশে। আর সে কারনেই বেঁচে গেছেন তারা। ১৫ই আগস্ট কালোরাতে বাঙ্গালী হারিয়েছিল তার প্রিয়নেতাকে, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নায়ককে। ষড়যন্ত্র, মিথ্যা আর অপপ্রচারে তাঁর আর বাঙ্গালি জাতির সব অর্জনকে চাপা দেওয়ার সব চেষ্টাই গত ৩৪ বছর ধরে চলেছে। আজ দিন এসেছে সত্য প্রকাশের আর পাপমোচনের।
খুনীরা কে কোথায়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১২ আসামীর মধ্যে ৫ জন এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। অন্যদের মধ্যে পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন একজন। আর বাকী ৬ জন বিভিন্ন দেশে আত্নগোপনে রয়েছেন।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, আর্টিলারি কোরের লে. কর্নেল মহিউদ্দিন ও বরখাস্ত হওয়া সেনা কর্মকর্তা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাসিঁর দন্ডপাওয়া আসামীদের কারাপ্রকোষ্ট-কনডেম সেলে বন্দী। এদের সবাইকে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়েরের সময় গ্রেফতার করা হয়। মৃত্যদন্ড পাওয়া অপর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর বজলুল হুদাকে ১৯৯৮ সালে থাইল্যান্ড থেকে ফেরত আনা হয়।
একই দন্ড পাওয়া আরেক পলাতক আসামী সেনা বাহিনীর ল্যান্সার ইউনিটের লে.কর্নেল একেএম মহিউদ্দিনকে ২০০৭ সালে গ্রেফতার করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অবৈধভাবে বসবাস করার অভিযোগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিস আইনে তাকে আটক করে ওই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। একই বছরের জুনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় ল্যান্সার মহিউদ্দিনকে। ওইদিন থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন তিনি।
পলাতক ৭ আসামীর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে অবস্থান করার সময় মারা গেছেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ পাকিস্তানে, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম কানাডায়, লে. কর্নেল নূর চৌধুরী যুক্তরাষ্টে ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এম এ রাশেদ চৌধুরী দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ কেনিয়ায় অবস্থান করছে । তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন কয়েকদিন আগে জানান : খুনীরা প্রতিনিয়ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলের ৭৮তম সম্মেলন থেকে ফিরে গত ১৯ অক্টোবর তিনি বলেছেন: পলাতক এই আসামীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশকে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।