somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গিটার ও আমার বেদনা...

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতবছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে মানে এক সপ্তাহ আগে আমার শখের গিটারের নেকটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো...
মাঝে ঠিক করলেও, আজ একটা গান 'বার কর্ডে' বাজাতে গিয়ে, আবার আগের জায়গায় ভেঙ্গে গেলো...
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো...

এই গিটারটা আমার মা ২০১৪ সালে আমার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন...
আমার মায়ের চাকরির উপার্জিত টাকা দিয়ে এই গিটার কেনা, তাই এই গিটারের প্রতি ভালোবাসাও দ্বিগুণ...

সেদিনের সেই খুশির ব্যাখ্যা কাউকেই বর্ণনা করেও শেষ করা যাবে না। এতই ভালোলাগা কাজ করেছিলো সেদিন...

আমার এই গিটারের সাথে অনেক আবেগ, অনেক মায়া, অনেক ভালোবাসা জড়িয়ে আছে...
আর মাকে, মিহিরকে শোনানো কত গানের যে স্মৃতি, যা লিখেও শেষ করা যাবে না...
গিটার আহামরি বাজাতে পারি তাও না...
মূলত আমি শুধু গিটারের বেসিকটাই শিখেছি। তাও মাত্র দুইটা মেজর-মাইনর স্কেল দিয়ে। একটা C মেজর স্কেল। আরেকটা Am স্কেল।
মূলত এই দুই স্কেলের মধ্যেই যেকোন গানের সুর তোলার চেষ্টা করি।
আবার কয়েকজনকে গিটারও শেখায়, এই দুই স্কেল আর এই গিটারটি দিয়ে...
আবার অনলাইনে ফ্রীতেও একটা ৫/৬ জনের ব্যাচকে শেখাই। তবে ছোট্ট একটা শর্ত প্রযোজ্য দিয়ে...
যাদের কাজ শুধু দিনে একবার কুকুর অথবা বিড়ালকে বিষ্কুট বা অন্যকিছু খাওয়ানো সামর্থ্যনুযায়ী...

আমি এই গিটারের সাউন্ডহোলের পাশে ফুলের ডিজাইন দিয়ে আর্ট করেছি। বিভিন্ন ট্যাটু করেছি।
কতকিছুই না করেছিলাম এই গিটারটিকে...

এই গিটার দিয়েই নিজের লেখা ও সুরেই করেছিলাম ৫টি মৌলিক গান...
একেকটা গানের কত স্মৃতি...
একেকটা সুরের কত গল্প...
একেকটা আঙ্গুলের কত শত ব্যথা...
সব গানই মিহিরকে নিয়ে লেখা...

আমার এখনও মনে পড়ে 'বার কর্ড' আয়ত্বে আনার জন্য কত সপ্তাহে যে এই গিটারের উপর অত্যাচার চালিয়েছি...
আমার হাতের আঙ্গুল যখন ব্যথা হয়ে যেতো, রক্ত পড়তো, তখন নিজেই আবার গিটারটিকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতাম...
কোনো ফ্রেডের ক্ষতি হয়েছে কী না! স্ট্রিং গুলো ঠিকাছে কী না! কোথাও রক্তের দাগ আছে কী না ইত্যাদি ইত্যাদি...

এই গিটার ছিলো আমার অবসরের সঙ্গী। মন খারাপের সাথী। আর খুশিতে থাকলে, তার টুং টাং শব্দে নিজেই সুখের সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার সাক্ষী...
বলতে গেলে নিজের আপন ছোট ভাইই ভাবতাম এই গিটারকে...
কতবার যে আমরা কথা বলেছি, স্বপ্নে, বাস্তবে, কল্পনায়...
পাশে রেখেই ঘুমাতাম...
প্রতিদিন পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছতাম। সপ্তাহে একদিন সরিষার তেল দিয়ে স্নান করাতাম...
অনেক বেশি যত্ন নিতাম, যাতে তার শরীরে কোন প্রকার ময়লা না জমে...
আমার কোন বন্ধু বাসায় আড্ডা দিতে এসে যদি এই গিটারে হাত দেয়, তাহলে আমার বুক কেঁপে উঠতো...
পরমুহূর্তে অন্য আরেকটা গিটার দিয়ে বলতাম, এইটাতে বাজা। এইটাতে যা খুশি কর। কিন্তু ওই গিটারে ভুলেও হাতও দিসনা। ওইটা আমার প্রিয়দেরও প্রিয়...

মাঝে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম, চেয়েছিলাম তাকেও নিয়ে যেতে...
শুধুমাত্র মা রাগারাগি করেছেন বলে নিয়ে যেতে পারিনি...
তবে যাওয়ার আগে এমনভাবে কভার পরিয়েছি যে, যাতে তার শরীরের কিংবা স্ট্রিং এর কোন ক্ষতি নাহয়...
এসেই যাতে আমার সাথে টুং টাং শব্দে কথা বলতে পারে...
মাঝে প্রায় বলতে গেলে ২/৩ বছর গিটারের আশে-পাশেও ছিলাম না কোন একজনকে কথা দেওয়ার কারণে...
সেই গল্প অন্য আরেকদিন...
পরে মিহিরের অনেক রাগারাগি, জোড়াজুড়িতে আবার ২০২০ সালে এই গিটার নিয়ে নতুন ভাবে নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে জীবন চলা শুরু করলাম...
কত নির্ঘুম রাত এই গিটারের টুং টাং শব্দে কাটিয়ে দিয়েছিলাম...
কতশত রাতের অন্ধকারকে গান শুনিয়েছি...
ঝিঁঝিঁ পোকার তালে তালে কত সুর বাজিয়েছি...
আহা...
যেদিন এই গিটারের নেকটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো, সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম...
মাঝে ঠিক করার পর, রিস্ক নিয়ে আর বাজাতে চাইনি। আজ কোন দুঃখে যে বাজাতে গেলাম, তাও ৫ মিনিটের জন্য!
আফসোস করতে করতে এখনও এই আফসোস মন থেকে যাচ্ছে না...
এখনও আমার পাশেই আছে, আমার মত মন খারাপ করে, আমার দিকেই তাকিয়ে আছে...
নতুন বছরে প্রিয় জিনিস হারানোর বেদনা সবার না হোক, এইটাই সর্বদা কামনা করি...
সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন..

নয়ন বড়ুয়া
জানুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:১৯
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।"

লিখেছেন এমএলজি, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৩০

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।" বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ কাজটি করা হয়নি বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

বিষয়টি সত্য কিনা তা তদন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

ইয়াতিমদের সাথে ইফতার অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া, ছবি https://www.risingbd.com/ থেকে সংগৃহিত।

তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রীও তিনি। তাকেই তার বৈধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বছরশেষের ভাবনা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮


এসএসসি পাস করে তখন একাদশ শ্রেণিতে উঠেছি। সেই সময়ে, এখন গাজায় যেমন ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন বসনিয়া নামে ইউরোপের ছোট একটা দেশে এরকম এক গণহত্যা চলছিল। গাজার গণহত্যার সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উৎসর্গ : জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৮



খিচুড়ি

হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল “হাঁসজারু” কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে—“বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।”
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা—
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×