শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডের নামে তামাশা
অলিউল্লাহ নোমান
শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডের নামে নির্যাতন চলছেই। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতও পুলিশের আবেদন গ্রহণ করে কারণে অকারণে রিমান্ড মঞ্জুর করছেন। রিমান্ডে আসামিদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি শ্যোন অ্যারেস্ট, রিমান্ড এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। এক্ষেত্রে আইন, হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা ও সংবিধান স্বীকৃত মানবাধিকার কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও পুলিশ। মামলার কোথাও উল্লেখ না থাকার পরও ৬ মাস, এক বছরের পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে। আদালতও পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আসামিকে রিমান্ড দিচ্ছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ড হচ্ছে আইনের পরিপন্থী। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিহিংসামূলক আচরণের কারণে শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডে নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। অথচ শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডে নির্যাতনের বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক মামলায় রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করলে পুরনো মামলা খুঁজে বের করে অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড দেয়া হচ্ছে। অথচ যে মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর করা হচ্ছে সেই মামলার কোথাও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ নেই। রিমান্ডে নিতে হবে, দিনের পর দিন রিমান্ডে রাখতে হবে এই মানসিকতা ফুটে উঠছে পুলিশের আচরণে।
কেস স্টাডি-১ : ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির রফিকুল ইসলাম খান সব মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর গত ৩ ডিসেম্বর বেলা পৌনে ১টায় কারাগার থেকে মুক্তি পান। কারাগারের প্রধান ফটকের বাইরে পা রাখতেই সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ তাকে গাড়িতে ওঠায়। ডিবির গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সারাদিন, রাত রাখার পর পরের দিন বিকালে তাকে ঢাকা মহানগর সিএমএম আদালতে হাজির করে একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয়। ২৭ জুন হরতালের সময় ভাংচুরের অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চায় ডিবি। অথচ ২৭ জুনের হরতালের সময় ভাংচুরের অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা এ মামলাটির কোথাও কোনো পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম খানের নাম নেই। এ মামলায় অন্য আসামির মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর শরফত আলী সপুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। তারা সবাই জামিনে আছেন। রফিকুল ইসলাম খানকে ওই মামলায় অ্যারেস্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাইলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অথচ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে, কোনো আসামিকে একসঙ্গে
৩ দিনের বেশি রিমান্ড মঞ্জুর করা যাবে না। রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ম্যাজিস্ট্রেটকে সংশ্লিষ্ট মামলার নথি ও ডায়রি ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এ মামলায় রিমান্ড শেষ হলে তাকে আদালতে হাজির করে আরও একদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। এছাড়া শাহবাগ থানার অপর একটি মামলায়ও অ্যারেস্ট দেখিয়ে পৃথক রিমান্ড চায় ডিবি। এ মামলায়ও তাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। দ্বিতীয় দফায় তাকে দুই মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। কোনো মামলারই এফআইআর, এজাহার কোথাও তার নাম নেই।
গত শুক্রবার বিকাল পৌনে ৩টায় শাহবাগ থানার ৭৯(৬)১০ নং মামলায় রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পল্টন থানার ৮(৭)১০ নং মামলায় পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ফরোয়ার্ডিং পাঠানো হয় আদালতে। কিন্তু এ মামলায় রফিকুল ইসলাম খানকে আগে একবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং হাইকোর্ট থেকে তিনি এ মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন। রফিকুল ইসলাম খানকে কোর্টের ভেতর কাঠগড়ায় আটক রেখেই পল্টন থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তড়িঘড়ি করে আরেকটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ফরোয়ার্ডিং পাঠানো হয়। এ মামলায়ও তিনি হাইকোর্ট থেকে আগেই জামিন পান। এ মামলায়ও রিমান্ড শুনানি সম্ভব না হওয়ায় তৃতীয় দফায় পল্টন থানা থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে দায়ের করা ৩৭(২)১০ নং মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। এ আবেদনের ওপর সন্ধ্যায় মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সি আবদুল মজিদের আদালতে শুনানি হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রফিকুল ইসলাম খানের আইনজীবীরা বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া মামলাগুলোতে তাকে আবারও রিমান্ডে নেয়ার জন্য আবেদন করে সরকার চরম জিঘাংসার পরিচয় দিচ্ছে। এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। মামলা না থাকার পরেও আসামিকে জোর করে রিমান্ডে নিতে হবে—এটা কোনো সরকারের কাজ হতে পারে না। তাকে রিমান্ডে নিতে হবে তাই—এ মামলাটিতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রফিকুল ইসলাম খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, তাজুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাকসহ অর্ধশত আইনজীবী। সরকারপক্ষে শুনানি করেন পুলিশের সহকারী কমিশনার মকবুল হোসেন।
কেস স্টাডি-২ : গত ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে প্রথমে ক্যান্টনমেন্ট থানায় এবং পরে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে নেয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর বিকালে তাকে আদালতে উপস্থাপন করার আগেই নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। তার শরীর ব্লেড দিয়ে কাটা হয়েছে এবং পায়ের নখ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যখন আদালতে হাজির করা হয়, তখন তাকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম এবং প্যান্টে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছিল। তার নাক দিয়েও তখন রক্ত ঝরছিল। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি নিজেও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তখনও তিনি জানতেন না কোন মামলায় তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেখা গেল ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে মগবাজার এলাকায় একটি গাড়ি পোড়ানো মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চায় ডিবি। এ মামলার কোথাও তার নাম নেই। এছাড়া এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে অতীতে আটক হওয়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস এরই মধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। ৬ মাস আগে দায়ের করা মামলায় যেখানে কোনো নাম নেই বা সংশ্লিষ্টতার কোনো কিছুই নেই, তারপরও তাকে অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড চাইলে তা মঞ্জুর করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
কেস স্টাডি-৩ : দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয় বিনা ওয়ারেন্টে। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ। এতে বলা হয়, গ্রেফতারের সময় পুলিশি কাজে বাধা দেয়া হয়েছে। বাধা দেয়ার সময় কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের নাম-ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ড চায় পুলিশ। তেজগাঁও থানার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিমের আবেদনে রিমান্ড মঞ্জুর করা হলেও তাকে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। তারপর তাকে আরও দুটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয়, যে মামলাগুলোর কোনো পর্যায়ে তার নাম ছিল না। তাকে টানা ১৪ দিন রিমান্ডে দেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করতে এবং হাইকোর্ট বিভাগের এর আগে দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলে দেয়া হয়। হাইকোর্ট বিভাগের এই আদেশ উপেক্ষা করেই তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন।
কেস স্টাডি-৪ : গত ১৩ মে নোয়াখালীর চাটখিল থানায় অ্যারেস্ট দেখিয়ে একটি মামলায় রিমান্ডে নেয়া আসামি রবিউল ইসলাম খোকন পুলিশের নির্যাতনে মারা যান। জেলখানায় থাকা অবস্থায় একটি মামলায় তাকে অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তার নামও ওই মামলায় ছিল না। অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড চাইলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তা মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে নির্যাতনের একপর্যায়ে খোকনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। নোয়াখালী হাসপাতাল থেকে খোকনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
কেস স্টাডি-৫ : ১১ মে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় নির্যাতনে মারা যায় এক নৈশপ্রহরী। তিনি চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা পুলিশের নির্যাতনে মারা যান।
কেস স্টাডি-৬ : রমনা থানার ওসি ও এক এসআইর নির্যাতনে ৯ মার্চ মারা যান জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। প্রথমে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে একটি মামলায় অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নিলে নির্যাতনে মারা যান জাকির। ১১ মার্চ জাকিরের স্ত্রী বাদী হয়ে রমনা থানার ওসি ও এসআইর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
কেস স্টাডি-৭ : শাহবাগ থানা হেফাজতে নির্যাতনে মারা যান আমিনুল ইসলাম মিন্টু নামে এক জাসাস নেতা। তাকে অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে তিনি মারা যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন থানায় এভাবে নানা মামলায় লোকদের শ্যোন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে। নির্যাতনে আসামি মারাও যাচ্ছে। এসব নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনার কোনো বিচার পরিবারগুলো পাচ্ছে না। রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন ও শ্যোন অ্যারেস্টের ঘটনা নিয়ে হইচই হলেও দেশের বিভিন্ন থানায় ঘটে যাওয়া এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল রিমান্ড ও ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের বিষয়ে একটি রায় দিয়েছিলেন। রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল কাউকে রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন হলে কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ম্যাজিস্ট্রেটদের করণীয় সম্পর্কেও রায়ে বলা আছে। কিন্তু এ রায়ের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলার রায়ে ১৩টি নির্দেশনা ছিল রিমান্ড গ্রহীতা ও রিমান্ডদাতার প্রতি। হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনাগুলো এখনও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বহাল আছে। যদিও হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে তত্কালীন সরকার লিভ টু আপিল দায়ের করেছিল। আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নির্দেশনাগুলো বহাল রাখেন।
নির্দেশনাগুলোতে বলা আছে, রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ম্যাজিস্ট্রেটকে সংশ্লিষ্ট মামলার ডায়রি দেখতে হবে। এক মামলায় টানা ৩ দিনের বেশি রিমান্ড মঞ্জুর করা যাবে না। রিমান্ডে নেয়ার আগে ও রিমান্ড থেকে ফেরত দেয়ার সময় ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট দেখতে বলা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায়।
রিমান্ডে নেয়ার পর আসামিদের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ দেয়া এবং আইনজীবী দেখতে পারেন এমন জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে। যে তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ড চাইবেন তিনি ছাড়া অন্য কেউ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনাগুলো অধস্তন আদালত ও পুলিশ মানতে বাধ্য। সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই। কিন্তু শ্যোন অ্যারেস্ট, রিমান্ড মঞ্জুর ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কেউ হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না। অহরহ ঘটছে শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডে নির্যাতনের ঘটনা। আদালতের সামনে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার পরও ম্যাজিস্ট্রেট তাতে কান দিচ্ছেন না।
সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শ্যোন অ্যারেস্ট এবং রিমান্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যেভাবে রিমান্ড মঞ্জুর করা হচ্ছে তা সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এটা হচ্ছে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ চরিতার্থ করতে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহযোগিতা। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে নিম্নআদালত বাধ্য। কিন্তু বর্তমানে রিমান্ড ও শ্যোন অ্যারেস্টের নামে যেভাবে ন্যায়বিচার পরিপন্থী কাজ চলছে তা অব্যাহত থাকলে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না। দেশে তখন চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে একটি নৈরাজ্যকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের তামাশা চালিয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে বলেন, শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ড হচ্ছে ক্ষমতার দাপট। যেভাবে শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ড চলছে তা সরকারের অসহিষ্ণু মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ড মঞ্জুর হচ্ছে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সুনির্দিষ্ট মামলার তদন্তসাপেক্ষেই কেবল কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা যায়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত হয়রানি-নির্যাতন করার জন্য শ্যোন অ্যারেস্ট ও রিমান্ডে নির্যাতন অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ ধরনের রিমান্ড মঞ্জুর ও নির্যাতন সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




