somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঊনমানুষের দিন

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যাফের ভেতরটা গমগম করছে মানুষের ভীড়ে আর কোলাহলে । টুকরো টুকরো বাক্য চারপাশে । সাথে বাজছে রক মিউজিক । এক কোনে একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসি ।

ইদানীং ক্যাফেগুলোতে বইয়ের একটা শেলফ রাখার বাতিক চোখে পরে । ব্যাপারটা অনেকটাই যেন ড্রয়িংরুমে মোটামোটা রবীন্দ্র, বঙ্কিম, শরৎ রচনাবলী সাজিয়ে রেখে নিজেদের মননশীল পরিবার প্রমাণের বেশ স্থুল প্রচলিত চেষ্টারই অনুকরণ । আমার বসার টেবিলটার পাশেও একটা শেলফ দেখি । গুটিকয় ইংরেজি বই ওতে ছড়িয়ে আছে ইতস্তত সংকোচে । ক্যাফেতে বসে আনমনে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে নিজেকে বিশিষ্ট কিছু প্রমাণের চেষ্টা সবসময়ই বিরক্তিকর ঠেকেছে । তবুও কী মনে করে আজ মেন্যু দেখে অপরিচিত বিদঘুটে নামের কোন একটা কফি অর্ডার করে একটা ছোট গল্পের বই হাতে নেই । লেখকের নাম Ruskin Bond. প্রথমে চোখের ভুলে পড়েছিলাম Rascal Bond. বইটা নিতে কিছুটা নীরব প্রতিযোগিতা হয় এক লাস্যময়ী তরুণীর সাথে, সচেতনভাবেই যে জানে চারপাশের কারোরই তার চেহারার দিকে প্রথম দৃষ্টি যাবে না । অতি লো-কাট ঢোলা পোশাক গায়ে সচেতনভাবে অহেতুক ঝুঁকে পরে বই বাছতে থাকা, বিপুল স্তনাভারে ন্যুব্জ মানুষটার চাওয়াও বোধহয় সেটাই । আড়ালে থাকা সৌন্দর্যের এমন প্রায় আদ্যোপান্ত সহজলভ্য প্রদর্শনী কামের বদলে মনে জাগায় খানিকটা করুণা ।

আমি কখনোই চা-কফিপ্রেমী নই । অফিসে সঙ্গদোষে কাপাচিনো, আমেরিকানো, ল্যাটে, ব্ল্যাক কফি, মোকা, হ্যাজেল নাট মোকা জাতীয় শব্দগুলোর সাথে আমার পরিচয় বছর খানেক হবে । অফিস বিল্ডিংয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে একটা কফি শপ হয়েছে, যেখানে যাওয়া হয় প্রায়ই কাজের ফাঁকে । আমার কাছে ওটার সব ধরণের কফির স্বাদ ঘুরেফিরে একই লাগে .. এবং সেটা প্রায়শই বিস্বাদ । প্রতিশোধ হিসেবে আসার সময় প্রতিবার ব্রাউন সুগারের অনেকগুলো প্যাকেট নিয়ে ফিরি । লিফটে উঠে একটা প্যাকেট খুলে মুখে দেয়ার পর মনে হয় এই বুঝি মা বলবেন,- অতো চিনি খেতে নেই। দাঁতে পোঁকা ধরবে!

নিজের ভেতরের উন্নাসিকতার কারণেই হোক বা সত্য বলেই হোক, আমার কাছে ঢাকার রেস্টুরেন্ট, কফিশপগুলোতে গিজগিজ করা মানুষগুলোকে কেন যেন অনেকটাই ফাঁপা চরিত্রের বলে মনে হয় । এদের আত্মার একটা অংশ শুকিয়ে গেছে চর জাগা নদীর মতো । তারা যেন জীবনে ভণিতা করতে করতে নিজেকেই ভুলে বসে আছে অনেকটা । এদের সাথে কথা বলা যেতে পারে শপিং করা নিয়ে, কোথায় কোন রেস্টুরেন্টে নতুন Buy 1 Get 1 অফার আসলো তা নিয়ে, কে কাকে Ditch করলো কিংবা ফুটবল, ক্রিকেট, স্মার্টফোন, মুভি নিয়ে । কোন গভীর, প্রাণের আলোচনা এদের সাথে যেন করা যায় না । লোভীর মতো ক্রমাগত এরা ভোগ করে চলেছে সবকিছু । এদের মধ্যে জীবনবোধ যেন অনেকখানিই অসম্পূর্ণ । কখনও এদের কারও কাছে মনের খুব নিকট কোন জানলা খুলে দেয়ার ইচ্ছা হবে না ।

এসব বিবমিষা জাগানো ভাবনা ভাবতে ভাবতে কফিতে চুমুক দেই... হাতের বইটাও আর খুলে দেখার আগ্রহ পাই না । কোলাহলের মাঝে মন নিমগ্ন হয়ে ডুবে যায় ।

ফেরার পথ শাহবাগ মোড়ে নতুন ওভারব্রিজ হয়েছে একটা । সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে নজরে পড়লো আকাশে অর্ধেক চাঁদ উঠেছে আজ । রাস্তায় ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে রাত বাড়ার সাথে সাথে । নীরব ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চাঁদ দেখলাম । মনে হলো আবারও এখানে আসতে হবে .... ফাঁকা রাস্তা পেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলে যাচ্ছে নিচ দিয়ে। সবার প্রচন্ড তাড়া। অথচ আমরা জীবনে আসলে কোথায় পৌঁছতে চাচ্ছি সে গন্তব্যের কথা জিজ্ঞাস করলে কেউ জবাব দিতে পারবে না । ছুটতে ছুটতে এরা হাসতে ভুলে গেছে বহুদিন ।

প্রায় মধ্যরাতে ব্যস্ত মানুষদের মাঝে দাঁড়িয়ে আমার অকারণে নিজেকে বেশ সুখি একজন মানুষ বলে মনে হয়। কারও একদন্ড দাঁড়াবার, অপেক্ষা করার ফুসরত নেই। অথচ আমার সে অবসর আছে। আমি কিভাবে কিভাবে যেন শিখে গেছি জীবনে সবকিছুর চেয়ে, যে কোন অর্জনের চেয়ে বেশি জরুরি ভালো থাকা, পারিপার্শ্বিকতাকে গুরুত্ব না দিতে শেখা । অনেক রোজগার, গালভরা ডিগ্রি, সমবয়সীদের সাথে পাল্লা দিয়ে সম্পদের স্তুপ গড়তে আত্মা দিকে না তাকিয়ে দিনরাত ছুটে চলা - এসব কিছুই আসলে নিষ্প্রয়োজন । খুব বেশি কিছু পৃথিবীতে করে ফেলতে হবে এমনটাও না ।

বাসের জানলায় বৃষ্টি নামে রাতের শহরে । জানলার বাইরে হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে মনে হয় এমন সাদামাটা, গড়পড়তা হলেও পরিতৃপ্ত একটা জীবনের চেয়ে বেশি কিছু আসলে চাওয়ার থাকতে পারে না ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×