মহব্বত আলীর কত গর্ব... ছেলে শহরে পড়াশোনা করছে, একদিন অনেক বড় হবে। গাড়ী হবে, বাড়ী হবে।
আম্বিয়া বানু, মহব্বত আলীর স্ত্রী, রাজীবের মা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাটিতে ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে দোয়া করেন। অনেক কষ্টে সংসার চালান স্বামী-স্ত্রী, ছেলেকে কিছুই জানতে দেন না। পাছে, পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটে।
রাজীব বাবার পাঠানো টিউটর ফি, ল্যাব ফি, এমন কি নিজের খাওয়ার টাকা ও মোবাইলে রিচার্জ করে এ্যানার সাথে কথা বলাটা কেমন জানি নেশার মত হয়ে গেছে। রাত ১২টার পর এ্যানার কন্ঠ না শুনলে ঘুম আসেনা ইদানিং।
একদিন রাত ১২টার পর, রাজীব এ্যানার নাম্বার ওয়েটিং দেখতে পায়, রাত ১২টার পর ওয়েটিং দেখে বৈদুতিক শকের মত শক খায় রাজীব। অনবরত পাগলের মত এন্যার নাম্বার ডায়াল করতে থাকে, একসময় ওয়েটিং অফ করে দেয় এ্যানা। মাথায় নানা চিন্তা ঘুরতে থাকে, কার সাথে কথা বলছে এ্যানা। তবে কি এতদিন সে যা শুনেছে সবই কি সত্যি!! আরো অনেক BF আছে এ্যানার!!!
অবশেষে ১০ মিনিট পর রাজীবের ফোন রিসিভ করে এ্যানা।
রাজীব: কি ব্যাপার, তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?
এ্যানা: মামার সাথে, ক্যান কোন সমস্যা?
রাজীব: রাত ১২টায় মামার সাথে কি?
এ্যানা: মামা তো মামাই... তাইনা? রাত ১২টা আর ১টা কি?
রাজীব: এ্যানা তোমার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনছি, যদিও একটাও বিশ্বাস করিনি।
এ্যানা: কি শুনেছো?
রাজীব: থাক বাদ দাও.... শুধু শুধু তোমার মন খারাপ হবে....
এ্যানা: না বল, তুমি কি শুনেছো? আমার মন খারাপ হবে না।
রাজীব: তোমার নাকি আরো অনেক ছেলের সাথে রিলেশন আছে। আই মিন তোমার নাকি অনেক BF?
(অপরপ্রান্তে জোরে জোরে হাসির শব্দ)
এ্যানা: হ্যাঁ আছেই তো। আরে পাগল BF মানে তো Best Friend. তুমিও তো আমার Best Friend প্লাস।
রাজীব: Best Friend প্লাস মানে!
এ্যানা: মানে Best Friend এর চেয়ে বেশী কিছু।
রাজীব চুপ করে থাকে, কি বলবে কিছু খুজে পায়না।
এ্যানা: কি হল, চুপ ক্যান?
রাজীব: না এমনি...
এ্যানা: আমার লক্ষীমোনাটা, চুপ করে থাকে না.... কাচে আসো..... উমমমম্মাহ্ ..... আসো তোমার ঠোটে আদর দেই....
(এ্যানার কন্ঠ, এতদিনের স্বপ্ন সবকিছুই অর্থহীন আর যন্ত্রিক মনে হয় রাজীবের কাছে।)
এ্যানা: এ্যা......ই.... কি হল তোমার!
রাজীব: কই কিছুনা তো ....
এ্যানা: কিছু না হলে কিছু হওয়াও..... বুঝতেছোনা...... (উষ্ণ কন্ঠে বলে এ্যানা)
রাজীব: হু..
এ্যানা: হু কি!
রাজীব: কিছু না....
এ্যানা: এই একটু হোল্ড করোতো..... আমার একটা ফোন এসেছে...... Just 1 sec…
রাজীব কিছু বলার আগেই লাইন হোল্ড করে এ্যানা..... কিছুক্ষণ পর লাইন কেটে দেয় রাজীব।
এ্যানার Just 1 sec… সারারাতেও শেষ হয়না......
সারারাত ঘুমাতে পারে না রাজীব... প্যাকেটের সিগারেট সব শেষ....
সকালে এ্যানার নাম্বারে ডায়াল করে একটি যান্ত্রিক মহিলা কন্ঠে শুনতে পায়, “আপনি যে নামারে পায়াল করেছেন, তা এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা, দয়া করে একটু পর আবার চেষ্টা করুন।“
রাজীবের নাম্বার এ্যানার ব্লক লিষ্টে।
পরদিন ভার্সিটিতে যায়না রাজীব। মহম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পের পাশে নতুন কিছু ফ্রেন্ড হয়েছে...
বন্ধুদের আড্ডা গেলে মন ভালো হবে... এই উদ্দেশ্যে তুষারদের আড্ডায় যায় রাজীব।
৭-৮ জন ছেলে, চায়ের দোকানের পেছনে, চরম আড্ডাখানা। এককোনে বসে ১জন কাইচি দিয়ে কি জানি কুচিকুচি করে কাটছে, আর একজন সিগারেটের খালি শলাকার মধ্যে সেগুলো ভরছে এবং মাথা মুড়িয়ে রাখছে।
তুষার: কি হইছে বন্ধু? মন খারাপ?
রাজীব: নাহ! মন ভালো আছে...
তুষার: না না, আমি বুঝতাছি তোমার মন খারাপ।
এই নাদিম একটা জ্বালাতো। জ্বালায়ে আমার কাছে দে
বন্ধুর মন খারাপ-
মাথা মুড়ানো সিগারেটের একটা জ্বালায় নাদিম... একটান দিয়ে তুষার কে দেয়.... তুষার কষে একটান দিয়ে রাজীবের হাতে দেয়.....
তুষার: টানো বন্ধু.... জোরে....
একটানেতে সেমন তেমন
দুই টানেতে মজা...
তিন টানেতে উজির নাজির
চার টানেতে রাজা।
এখান থেকেই শুরু নতুন এক রাজীবের....
নেশাখোর রাজীব। সবার ঘৃণার বস্তু। এ্যানা, বাবা-মায়ের কান্না, নিজের ভবিষ্যত অর্থহীন। ঘোর.... চারিদিকে কুয়াশা... ঝিম ঝিম... । নতুন নতুন বন্ধু হয় রাজীবের... নতুন নতুন নেশা... বাবা-মা জানতেও পারেন না তাদের স্বপ্ন কিভাবে হাওয়াই মিলিয়ে যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে নেশা কাটলে রাজীব যখন নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার অবসর পায়, চারিদিকে শুন্যতা, হতাশা আর অন্ধকার। হতাশ হয়ে আবার নেশা করে রাজীব।
আর নেশা করে বন্ধুদের ফোন দিয়ে বা আন নোন নাম্বারে ফোন দিয়ে খুজতে থাকে নতুন কোন এ্যানাকে। কারন এ্যানাদের সাথে কথা না বললে রাতে যে ঘুম আসেনা।
এভাবে আর কত রাজীব ঝরে যাবে?
এর জন্য দায়ী কে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




