somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*** ইসলামী সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য ***(১)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসসালামু আলাই্কুম..............
মহাগ্রন্থ, আল-কুরআনের ‘বর্ণনানুযায়ী’ ইসলামী সার্বভৌমত্বের কতিপয় বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। নিম্নে এ সকল বৈশিষ্ট্য পেশ করা হল:
১। স্থায়িত্ব : (Permanence) :
ইসলামী সার্বভৌমত্বের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর স্থায়িত্ব। স্থায়িত্ব বলতে তাই বুঝায় যার কোনো ক্ষয়, লয় নেই, কোনো কমতি নেই। সকল অবস্থা ও পরিস্থিতিতে এর অবস্থান ও গুণসমূহ অটুট থাকে। আয়াতুল কুর্সীতে এ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে ‘আল হাইয়্যু’ চিরঞ্জীব শাশ্বত সত্তা শব্দ ব্যবহত হয়েছে, আল্লাহ চিরঞ্জীব যার জীবনের শুরুও নেই শেষও নেই। তিনি চিরন্তন অনাদি এবং চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহ তা‘আলার সার্বভৌমত্ব এককভাবে অন্য কারো এক বিন্দু অংশীদারিত্ব ব্যতীতই। সেই অবিনশ্বর সত্তার জন্য চির নির্দিষ্ট। যিনি অন্য কারো দেওয়া জীবন দ্বারা নয়, নিজস্ব জীবন দ্বারাই চিরঞ্জীব এবং যার অনুগ্রহ শক্তির উপর ভর করে বিশ্ব নিখিলের এ গোটা ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা কোনো শাসক এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে না। কারণ এ ব্যাপারে সে সম্পূর্ণ অযোগ্য, অক্ষম, কাজেই সে সার্বভৌমত্বের দাবীদার হতে পারে না।
২। চির প্রতিষ্ঠিত (Al quayaum Endlessly Established) এ প্রসঙ্গে আয়াতুল কুরসীতে ‘আল কাইয়্যুম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কাইয়্যুম শব্দ কেয়াম শব্দ হতে উৎপন্ন। এর অর্থ হচ্ছে এ যে, নিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। তার সত্তা স্থায়ীত্বের জন্য অন্য কারো মুখাপেক্ষী নয়। অর্থাৎ আল্লাহ শুধু চিরঞ্জীব শ্বাশত সত্তাই নন তিনি ক্ষমতায় চির প্রতিষ্ঠিত। মূহুর্তের জন্যও তিনি সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রয়োগ কার্য থেকে অবসর গ্রহণ করেন না। এ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও মানুষ একবারেই অযোগ্য।
৩। সর্বব্যাপকতা/সার্বজনীনতা (Universality):
ইসলামী সার্বভৌমত্বের অপর বৈশিষ্ট্য হলো এর সর্বব্যাপকতা বা সার্বজনীনতা। সার্বজনীনতা হলো ইসলামী সার্বভৌমত্বের অসীমতার পরিচায়ক। সৃষ্টিজগতের এমন একটি প্রাণীও নেই, থাকতে পারে না যারা তার সার্বভৌম শক্তির অধীন নয়। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক ও মা`বুদ আল্লাহ। তাঁর ক্ষমতা সর্বত্র। সৃষ্টিজগতের প্রতিটি প্রাণী আল্লাহর এ সার্বভৌম শক্তির অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য। এর গতি সৃষ্টি জগতের সর্বস্তরে অবাধ ও অপ্রতিহত। একথা বুঝানোর জন্যই আয়াতুল কুরসীতে বলা হয়েছে।
﴿ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সবকিছুই তার।” সূরা আল বাকারাহ:২৫৫।
তাঁর ক্ষমতা কোনো পরিসীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।’’ সবচেয়ে বড় ক্ষমতার যিনি মালিক তার ক্ষমতা কোনো বিশেষ এলাকার মধ্যে হলে চলবে কি? তার ক্ষমতা হতে হবে সর্বত্র, যার মালিক হওয়া মানুষের জন্য কোনদিনই সম্ভবপর নয়। যেমন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি অন্যদেশের একটি চৌকিদারের চাকুরী ও বাতিল করতে পারবে না। তাই বলা যায়, দুনিয়ার প্রতিটি রাজা-বাদশাহরই ক্ষমতা এমন একটা নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
৪। মৌলকথা, চরমতা ও সীমাহীনতা : (original, Absolute and Unlimited)
আয়াতুল কুরসীর বর্ণনা হতে এটি প্রতীয়মান হয় যে, সার্বভৌম ক্ষমতা মৌলিক চরম ও সীমাহীন। বিধান দেয়ার ক্ষমতা সার্বভৌম শক্তির চরম ক্ষমতা। এ ক্ষমতা কোনো কিছুর দ্বারা সীমিত নয়। সৃষ্টি জগতে এর সমকক্ষ বা এর উর্ধ্বে কোনো ক্ষমতা থাকতে পারে না। সার্বভৌম সত্তা আল্লাহ চূড়ান্ত ক্ষমতার আঁধার। তিনি সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। তাঁর ক্ষমতা শুধু কোনো পূর্ণ সত্তার উপরই নয়। বরং এ সত্তার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক তাঁর ইচ্ছা ও আদেশ প্রতিফলিত হয়। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, মানুষ অন্য যে কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ তাঁর নির্দেশেই পরিচালিত হয়, বিষয়টি এটিই নয় বরং ঐ প্রাণীর প্রত্যেকটি কোষ বা তাঁর ক্ষুদ্রতম একক মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশে পরিচালিত হয়। ঠিক তেমনিভাবে এ মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি অনু-পরমানু তাঁর নিয়ন্ত্রনাধীন।
৫। অবিভাজ্যতা ও একত্ব (Indivisibility and unity):
ইসলামী সার্বভৌমত্ব একক ও অবিভাজ্য এ সার্বভৌমত্বকে বিভক্ত করা যায় না। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর চূড়ান্ত ক্ষমতা একটিমাত্র কেন্দ্রেই কেন্দ্রীভূত এবং এর কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছেন আল্লাহ। যদি দু বা ততোধিক ক্ষেত্রে তা ন্যস্ত হত তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধ ঘটত। চরম ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হত। এজন্যই আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণ বলা হয়। এর বিভাজনের চিন্তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও নাফরমানির শামিল। আল্লাহ তাঁর ক্ষমতা কোনো ফেরেশতাকে বা কোনো নবীকে বা কোনো রাষ্ট্র প্রধানকে কিংবা কোনো পীর, সূফী, দরবেশকেও ভাগ করে দেন নি। সৃষ্টিকূলের কেউ সার্বভৌমত্বের অধিকারী হতে পারে না, যে কোনো বাদশাহ বা রাষ্ট্র প্রধান তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার উপর নির্ভরশীল। আবার তার ক্ষমতা ও আদেশ নিজ ভুখণ্ডের বাইরে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর। একথাই কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
“কে আছে এমন (স্বীয় ক্ষমতা, অধিকারী বলে) আল্লাহর নিকট কোনো সুপারিশ করতে পারে তার অনুমতি ছাড়া।’’
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
﴿ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا يَ‍ُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘তাঁর কুরসী আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সর্বত্রই পরিব্যাপ্ত হয়।’’ তাঁর এ সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ ও সংরক্ষনে তিনি হিমশিম খান না; ক্লান্ত শ্রান্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
পবিত্র কুরআনের বাণী:
﴿ ۖ وَلَا يَ‍ُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘আসমান ও যমীনের প্রতিটি বিষয়কে সংরক্ষণ ক্রমবিকাশ ও ক্রমোন্নতি দানে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন না, বা এসব তাকে ক্লান্ত করতে পারে না।’’৫
কারণ তিনি মহান ও শ্রেষ্ট সত্তা।
﴿وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
‘‘তিনি পরাক্রমশালী ও অসীম মর্যাদাবান।’’৬
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×