কোরবানীর কিছু অভিজ্ঞতা যেগুলো মোটেও সুখকর নয়ঃ একটা করুণ দিনের কাহিনী
কোরবানী আসে ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে, নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার তাগিদ আর গরীব দূঃখীর মুখে একদিনের জন্য ভালো খাবার তুলে দিতে।আর আমার জীবনে কি নিয়া আসে দেখেন-
পরিবারের বড় ছেলে তাও আবার একমাত্র , ঝড় ঝাপটা বয়ে গেলে মুখ বুজে নীরবে সয়ে যেতে হয়।
তা যাহোক আমি তখন কলেজ পড়ুয়া আলাভোলা পোলা আর আমার বাবার খুব শখ হইল কুরবানী দিব।কিন্তু গরুর দাম সেই বার খুব চড়া- যেন শিং দিয়ে চার্জ করে । নিরুপায় হয়ে পিতা মহারাজ কিনে নিয়ে আসলেন একটা খাসী যার জাত ছিল ব্ল্যাক বেংগল।দাম মোটামুটি নাগালে থাকায় এটাই ভরসা।
বাসায় নিয়ে আসতে আসতে রাত হয়ে গেল।শীতের দিন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চিন্তিত হয়ে পড়লাম এটাকে কোথায় বাধব।আমাদের ফ্ল্যাট বাসায় এক্সট্রা কোন জায়গা না পেয়ে দরোজার বাইরে রাখলাম।
কিন্তু ঘরে ঢুকতে না ঢুকতে ছাগলটা এমন করুণ সুরে ডাকতে লাগল, আর খুটা দিয়ে সেকি খট খট। যেন মেহমান এসেছেন। না পেরে এটাকে ঘরে নিয়ে আসা হল।সে এখন আমার রুমের বাসিন্দা।
ওটা কিন্তু কিছুই খায়নি, খাওয়ানো যায়নি। ভাবলাম হোম সিক হয়ে গেছে।
রাত কিন্তু পুরাই বাকি, ঘুমুতে চলে গেলাম বিছানায়।ঘরের আরেক প্রান্তে দড়িতে বাধা ব্ল্যাক বেংগল।
মাঝরাতে কিসের যেন শব্দ পেলাম, লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। এমন আরামের ঘুম কে ভাঙ্গাল? মেজাজ তখন চরমে। তাকিয়ে যা দেখলাম আরকি, হইচই এর চোটে পুরা ঘরের মানুষ চলে আসল। দেখলাম ব্ল্যাক বেংগল আমার বিছানায় ঊঠে করুণ মুখে তাকিয়ে আছে।নড়াচড়া করছেনা কিন্তু কাজ যা করার করে ফেলছে।আমার বিছানায় উঠে তার মুত্রনালী খালি করে ফেলছে !!
আমার বিস্ময়ে যেন হতবাক অবস্থা কাটতে আর চায় না, এটা কি যন্ত্রণা শুরু হইল ?
বাসার সবাই তো হাসাহাসির বন্যা বঈয়ে দিল আর আমার মেজাজ আরো খারাপ । তাও আবার আমার পায়ের তলায় গিয়ে হিসু করছে লেপ আর বিছানা দুইটাই কাল-যমুনা ! তার মধ্যে আবার ছোট বোনটা খোচা দিতে শুরু করল ভাইয়া ...... কইরা দিছে । আম্মু বলতেছে দেখ তোকে মনিব মনে করছিল।
আর কি রাতে ঘুম হয়, ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত আমার একান্ত বাধ্য গত ছাগল কে সময় দিলাম !!আর তার সে কি আহ্লাদ ।আমার হীরার চেয়েও মুল্যবান রাতের ঘুম হারাম করে চুপচাপ বসে আছে আমার পাশে।
.........
সকাল সকাল উঠে নামাজ পড়ে ছাগ বন্ধুর কাছে চলে এলাম।মনে মনে বললাম বন্ধু তোমার পথের সাথী কে চিন আর নাই চিন তোমার হায়াত ফুরাইছে।জিন্দেগী তোমারে ইয়াদ রাখবে কারন সেই রকম কষ্ট পাইছি তোমার কাছে। ওটা দেখি খালি মাথা নাড়ল ,দুইটা ডাক ও দিলনা।
যাক আধাঘণ্টা পড়ে হুজুর এসে পড়ল। কিন্তু বাবা আমার বাসায় বসে সেমাই খেতে ব্যাস্ত। ছাগলটারে শোয়াতে আমার মত তিনজন অ্যামেচারের বেগ পেতে হবে।দেখলাম এক গাঁজাটি রে । সে আবার চামড়ার বিজনেসে নামছে। তারে বললাম আমার চামড়া তোমারে দিমু আমারে হেল্প কর। তাও হইল দুইজন।
শোয়ায় দিলাম ওইটারে, মনে আবার প্রচুর কষ্ট হচ্ছিল কেন জানি। একটু বেখেয়াল হয়ে পড়লাম।
তারপরেই এক মারাত্মক ভুল হয়ে গেল।ছুরি চালিয়ে হুজুর যখন কাজ সমাধা করলেন, ছাগলটাকে ধরে রাখা সেই গাঁজাটি কি করল- মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা প্রাণীটাকে ছেড়ে দিল ।
তো আমি টাল সামলে উঠার চেষ্টা করলাম সাথে সাথে। আমার হাতের দুটো সহ আরও একটা পা ধরতে সক্ষম হলাম, কিন্তু বাকিটা এসে আমার উন্মুক্ত হাতে জোরে এসে লাগল। ছাগলের গায়ে এত শক্তি টের পেলাম সেদিন।
ব্যাথায় আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেলেও আমি কিন্তু চারটা পা ছাড়লাম না। ছাগলটার যন্ত্রণা কে চাপা দেয়ার চেষ্টা করলাম। আর সেই গাঁজাটি দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল।এদিকে আমার হাত এর চামড়া উঠে ছিলে মাংশের কাছে চলে গেল।
যদিও আমার ব্যাথাটা খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল। কিন্তু ক্ষত শুকাতে এক মাস সময় নিল।
মায়ের হাতে রান্নাটা সেদিন একটু বেশীই যেন স্বাদ হয়েছিল।এখনও কোরবানীর হাটে যাই আর গরু ছাগল নিজেই দেখাশুনার চেষ্টা করি। আরও গল্প আছে বলব সাম্নের যে কোন একদিন
বিঃদ্রঃ গাজাখোর কে গাঁজাটি বলা হয়েছে, বাস্তবে যা বলে থাকি।
সময়টা ছিল ২০০৭
আমার আরও কিছু লেখা: চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। আগে পড়ে থাকলে ধন্যবাদ।
হালকা মজা , স্থুল মজা
নুলা মুসা কিংবা প্রিন্স মুসাঃ যে রাজাকারের সম্পদ আর ক্ষমতার কথা শুনে আপনি চমকে যাবেন ।
পর্ব - ২ নুলা মুসা কিংবা প্রিন্স মুসাঃ যে রাজাকারের সম্পদ আর ক্ষমতার কথা শুনে আপনি চমকে যাবেন
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮