somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুনীল চন্দ্র কুন্ডু একজন সমাজ সংস্কারক ও তাঁর সমাজব্যবস্থা

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুন্ডু পাড়া ।পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর উপজেলার সদর থানার ৫নং টোনা ইউনিয়নের টোনা গ্রামের ২নং ওয়ার্ড(সাবেক ১নং ওয়ার্ড) এর সুপরিচিত নামকরা একটি এলাকা।এটাকে রাজধানী ধরে একটি সমাজব্যবস্থা।পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানার রঘুনাথপুর,গোবিন্দপুর,বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার বাধাল-বক্তারকাঠী,মোরেলগঞ্জ থানার বিষখালী এ সমাজব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত।টোনা,রঘুনাথপুর,গোবিন্দপুর এই তিনটি নিত্যসমাজ।আবার বাধাল,বিষখালী মিলে নিত্যসমাজ।
টোনা কুন্ডু পাড়ায় এই পাঁচ পরগনার রাজাদের বাস।চারটি গ্রুপে এরা বিভক্ত ছিলো।রজনী(অনুকুল চন্দ্র কুন্ডু এর ঠাকুরদা)র দল,তালুকদারের দল,চিত্ত কুন্ডু এর ঠাকুরদার দল(যা অনেক আগে বিলুপ্ত),বসন্ত সিকদারের ঠাকুরদার দল(যা অনেক আগে বিলুপ্ত)।দুই গ্রুপের মন্ত্রীরা বাস করতো প্রত্যেক পরগনায়।উল্লেখ্য রজনীর দল সবথেকে বড় ছিলো এরপর তালুকদারের দল।
কারোর মৃত্যুর পর তার সন্তান বা আত্মীয় শ্রাদ্ধক্রিয়া করতে চাইলে ও সে উপলক্ষে নিজের গ্রামের লোকজন বা নিত্যসমাজ বা পাঁচ পরগনা বা সাত পরগনা বা দশ পরগোনার লোকদের খাওয়াতে চাইলে সমাজের নিয়মানুযায়ী(আইন অনুযায়ী) খাওয়াতে হতো।কোন বৌয়ের মা-বাবা কেহ মারা গেলে তেরাত্রির পর শ্রাদ্ধক্রিয়া করতে চাইলে ও সে উপলক্ষে খাওয়াতে চাইলে সমাজের নিয়মানুযায়ী করতে হবে।কেহ বিয়ে করতে চাইলে বা বিয়ে দিতে চাইলেও নিয়মানুযায়ী অনুমতি নিতে হবে।অনুমতির জন্য যার অনুষ্ঠান সে ডাকবে।বৈঠক হবে রাজা-মন্ত্রীদের ঘরে বা বাড়ী।টোনার বৈঠক তালুকদার বাড়িতে অনন্ত তালুকদারের ঘরে।আলোচনা শেষে অমলেন্দু মজুমদার সবার অনুমতিতে আনুমতি বলতো।অমলেন্দু মজুমদার ,পিতা অশ্বিনী সাধুখা(রঘুনাথপুর থেকে আগত), অতিথী হিসেবে আলোচনা শেষে দশের অনুমতিতে আনুমতি বলতো।
মারা যাবার পর চতুর্থ পিন্ডি,দশা পিন্ডি ও ত্রিশ দিনে অশৌচ পালোনের পর শ্রাদ্ধ করার আগে গ্রামের সবাইকে ডেকে অনুমতি নিতে হতো।নিত্য সমাজ,পাঁচ পরগনা,সাত পরগনা,দশ পরগনা খাওয়াতে চাইলে,প্রথমে নিজ গ্রামের পরে নিত্য সমাজ এরপর অন্যগ্রামের অনুমতি নিতে হতো।তেরাত্রির পর শ্রাদ্ধ করতে চাইলে সবাইকে ডেকে অনুমতি নিতে হতো।বিয়ের আগে অনুমতি নিতে হবে এবং সমাজের একজনকে বরযাত্রি নিতে হবে।অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে সে বিয়েতে অনুমতি পাবে না।অনুমতিতে নির্দিষ্ট অঙ্কের (৫০,১০০..) টাকা জমা রাখতে হবে,এ টাকা সমাজের জিনিসপত্র কিনতে ব্যয় হবে।ছেলে যে গ্রামে বিয়ে করতে যাবে সেখান থেকেও সম্মানী আনতে হবে,নইলে তা অসম্মানের হতো।কেহ না মানলে বা ভুল করলে তাকে ডাকা হতো বা তার এমন কাজ বাজলে সে সময় তাকে জিজ্ঞেস করা হতো।ছোট ভুল স্বীকার করলে তা ক্ষমা চাইলে মিটমাট বা কখনো সামান্য জরিমানা দিতে হতো।বড় ভুল করলে ক্ষমার যোগ্য না হলে শেষ পর্যন্ত একঘরে করে রাখা হতো।তার বাড়ি কেহ বিয়ে শ্রাদ্ধের মত অনুষ্ঠানে খেতে যেতে পারবে না।আত্মীয় স্বজন কেহ অংশগ্রহণ করলে তাকেও খেসারত দিতে হতো।
বাবু সুনীল চন্দ্র কুন্ডু এই প্রথার কয়েকটি বিষয়ে সংস্কারের চেষ্টা করে আসছিলেন।তিনি তাঁর মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন যৌতুক বিহীন সেই ১৯৯৮ সালে।তখন এ সমাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যৌতুক প্রথা চালু ছিল।ছেলেদের বিয়েতেও যৌতুক আনেননি।সে সময়ে এ সমাজগুলোয় মেয়ের বিয়তে এলাকার কন্যাপক্ষের আত্মীয়স্বজনদের বিয়ের রাত্রের বরযাত্রিদের সাথে ভালো খাবার খাওয়াতো না।পরদিন বাশি বিয়ের দুপুর বেলায় যে সাধারন মাছ ভাত রান্না করতো তাই খাওয়ানো হতো।একদিকে মেয়ে বিদায়,তার কান্নাকাটি অন্যদিকে কোনরকমে আত্মীয়দের খাওয়ানো হতো।সে প্রথাও ভাঙ্গেন সুনীল চন্দ্র কুন্ডু তাঁর মেয়ের বিয়েতে সবাইকে একই খাবার খাওয়ায়ে।শাস্ত্রীয় বিধি অনুসারে কুন্ডুদের জননাশৌচ ও মরনাশৌচ ১৫ দিন।এ সমাজের যারা ভারত বা ভিন্ন দেশে বসাবস করে তারা ১৫দিন পালন করলেও তারি জ্ঞাতি বা পরিবারের এদেশী সদস্যরা ৩০ দিন পালন করে ।তিনি এর পরিবর্তন করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বহুদিন।কিন্তু কে কার কথা শোনে !রাজ প্রথা পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করার জন্য আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন তিনি।
টোনা কুন্ডু পাড়ায় সার্বজনীন দূর্গাপুজা,কালীপুজা(এখন হয়না) অনুষ্ঠান শুরুর আগে তালুকদার বাড়ি বৈঠক হবে।এ অনুষ্ঠানের সভাপতি তালুকদার বাড়ির বয়ঃজেষ্ঠ্য ব্যক্তি।সার্ব্জনীন রাসকীর্তন এর সেক্রেটারী সাধারনত কুন্ডুপাড়ার যে কেউ(আগে বড়বাড়ির কেহ হত),ক্যাশিয়ারও কুন্ডুপাড়ার একজন এবং সভাপতি কায়েস্থ পাড়ার একজন,অন্যপদগুলো সব পাড়ায় ভাগ করে দেয়া হতো।
সনাতন ধর্মাবলম্বিরা বেশিরভাগ ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শুদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত ।কুন্ডু- বৈশ্য সম্প্রদায়ভুক্ত।তৈ,তাঁতি,টটবর(নাপিত),গোপ(দুধের ব্যবসা),মালি,স্বর্ণকার,বারুজিবী,কুম্ভকার বৈশ্য সম্প্রদায় ভুক্ত।কুন্ডু সম্প্রদায় তৈ(তিলি বা তেলের ব্যবসা) অন্তর্ভুক্ত।জননাশৌচ,মরনাশৌচ এদের অনেকে ৩০ দিন করলেও ১৫ দিন পালন করা শাস্ত্রীয় বিধান।কুন্ডুদের অনেকেই আগে ব্যবসা করলেও এখন নানা পেশায় জড়িত।যারা চাকুরিজীবি তাদের ৩০ দিন অশৌচ পালন করা বা ৩০ দিন ছুটি পাওয়াটা কষ্টকর।সম্পর্ক বা উপযুক্ত পাত্র-পাত্রি পেতে এখন অন্য সম্প্রদায়ে যেতে হয়।আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসাবস করায় তারা ১৫ দিন অশৌচ পালন করলেও তাদের পরিবারের অন্যরা দেশে ৩০ দিন পালন করলে একটা শস্ত্রীয় জগাখিচুরি তৈরী হয়।এসব কারণে সমাজের নিয়ম কানুন সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের।ধর্ম যায়, জাত যায় বলে এ সংস্কার করতে চাইতোনা রাজা মন্ত্রীরা।কেহ অন্য সম্প্রদায় বিয়ে করলে তার অনুমতি দেয়া হতো না।কিন্তু সে বৌকে নিয়ে সে ফ্যামিলি সমাজের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত।অতীতে ঐ ফ্যামিলিকে অপদস্ত করত,কখন এক ঘরে করে রাখত।আবার কখন ক্ষমা চাইলে সে ফ্যামিলি সমাজে মিশে যেত।কেহ ১৫ দিনে শ্রাদ্ধক্রিয়া করতে চাইলে তাতে অনুমতি দেয়া হতো না।ফলে যা হবার তাই হয়েছে।সমাজে তৈরী হয়েছিলো নানা অসংগতি,নানা বিশৃংখলা,অনৈতিকতা।কেহ কিছুদিন একঘরে থাকতো,এরপর তার সাথে অন্যরা যোগ হয়ে দলে ভারি হতো,গ্রুপিং চলতো।বাধাল বিষখালী এ কারনে বিভক্ত হয়ে গেছিলো।তারা কেন্দ্রে বহুবার নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলো সংস্কার করার জন্য।কিন্তু কার কথা কে শোনে! কিছু গোড়ামি,কুসংস্কার ও ক্ষমতা হারাবার ভয়ে তারা সংস্কার করতে রাজি হচ্ছিলনা বা পারছিলনা।নেতৃত্ব অযোগ্য,অশিক্ষিত হয়ায় সমাজ সংস্কারের পক্ষ নিতে পারছিলো না।তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতো।ফলে চারিদিকে অব্যবস্থা ও মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হতে থাকে।রাজাদের কেহ বিদেশ চলে গেলে বংশ বা পাশের কাউকে ক্ষমতা দিত ,সে অশিক্ষিত বা অজ্ঞানী হোক। অন্যগ্রামে প্রতিনিধি পাঠাতে হলে পাঠাতো অকর্মন্য,অযোগ্য কাউকে ।সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতোনা বা সিদ্ধান্ত দিতে পারতোনা।এতে ব্যপক সমস্যা তৈরী হয়।
২০০৩খ্রীষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রী তুলশী রঞ্জন তালুকদার(অব. সহ. প্রাথমিক বি. শিক্ষক) মারা গেলে তাঁর সন্তানরা পাঁচ পরগনা নিয়ে শ্রাদ্ধের ভুড়িভোজ করাতে ইচ্ছা প্রকাশ করে।কিছুকাল এসব নানা ঝামেলার জন্য পাঁচ পরগনার শ্রাদ্ধের খাওয়া বন্ধ ছিল।উল্লেখ্য শ্রী তুলশী তালুকদারের বারান্দায় তখন বৈঠক বসতো,এর আগে অনন্ত তালুকদার এর ঘরে বৈঠক হতো,উনি ব্যয় বহনে অক্ষম হলে সুনীল চন্দ্র কুন্ডু এর ঘরে বৈঠক বসতো-উনি (সুনীল চন্দ্র কুন্ডু) তালুকদার না তাই তাঁর ঘরে বৈঠক কেনো বসবে এসব বলে অনন্ত তালুকদারকে বুঝিয়ে তাঁর ঘরে বৈঠক বসানো শুরু করেন।তখনকার নেতৃত্বরা তুলশী তালুকদারের শ্রাদ্ধের ভুড়িভোজের দিন রাত্রে পাঁচ পরগনার বৈঠকে সংস্কার করা হবে বলে ওয়াদা করে কৌশলে অনুমতি নিয়ে আসে।আর তা ছিলো প্রহসন মাত্র।
পাঁচ পরগোনার লোকদের উপস্থিতিতে বৈঠক শুরু হয়।বৈঠকে জননাশৌচ,মরনাশৌচ ১৫ বা ৩০ যার যেটা পছন্দ সে তা পালন করবে এবং অন্য সম্প্রদায়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে সে যাতে অনুমতি পায় তার প্রস্তাব আনেন সুনীল চন্দ্র কুন্ডু(অবঃপ্রঃশিঃস.প্রা.বি)-গ্রাম টোনা,তালুকদার বাড়ি।তাঁর এই প্রস্তাব সমর্থন করেন মনোহর কুন্ডু-গ্রাম টোনা,কানাইবাড়ি। কিন্তু এই প্রস্তাব ক্ষমতাসীনরা মানতে চায়নি।ওই বৈঠকে টোনার বিপ্লব কুন্ডু,শুভংকর কুন্ডু(স.শি.স.প্রা.বি.) জোড়ালো সমর্থন দেন সংস্কারের পক্ষে।এছাড়া অন্য গ্রামের সংস্কারপন্থীরাও জোরালো ভূমিকা রাখেন।কিন্তু ক্ষমতাসীনরা হৈ হট্টগোল বাঁধায়,বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং অমিমাংসিতভাবে শেষ হয় বৈঠক।এরপর কেহ মারা গেলে বা কারোর বিয়ে হলে তার পক্ষের লোকদের ডাকতো বা সবাইকে ডাকলে কেহ কেহ বলতো আমি এই অনুমতিতে নেই।আংশিক অনুমতিতে অনুষ্ঠান হতে থাকে।আবার বিয়েতে কারোর সাহায্য প্রয়োজন হলে গোপনে সাহায্য নিতো বা গোপনে আত্মীয়তা রক্ষা করতো।সংস্কারের বিপক্ষের একটা গরিব মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য সংস্কারের পক্ষের লোকদের থেকে সাহয্য এনে বিয়ে দেয়।অর্থাৎ যাতে পাগোল মাথা ঠিক।বিচার মানি তালগাছ আমার এমন অবস্থা।একজন অনুমতির ডাক ডাকলে কেহ নিমন্ত্রণ রাখতো কেহ রাখতনা।এমন ভাবে বিশৃংখলা চলতে থাকে।সংস্কারের পক্ষে চার থেকে চল্লিশ ঘর সমর্থন আসে এবং তা বাড়তে থাকে।প্রায় ৭৫-৮০ ঘর কুন্ডু টোনায় বসাবস।সংস্কারের পক্ষে জোড়ালো অবস্থান তৈরী হয়।এভাবে দুই-আড়াই বছর চলতে থাকে।তবে সার্বজনীন রাস কীর্তন বা দুর্গা পুজা বন্ধ হয়নি,সে অনুষ্ঠানের বৈঠক স্কুলে হত।
সুনীল চন্দ্র কুন্ডু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।তিনি নীতিতে ছিলেন অটল,আদর্শে অনন্য,সাহসিকতায় অবিচল।তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ সংস্কারের বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠে।বেশিরভাগ সচেতন মানুষ সংস্কারের পক্ষে এক পতাকাতলে অবস্থান নেয়।বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিয়েতে বাধা দিলে তা তিনি শক্তহাতে সমঝতা করে দিয়েছেন।বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটে এলাকার লোকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।এক্ষেত্রেও তাই সকলে সমঝতায় রাজি হন।
নানা ঝামেলার পর ঊভয় পক্ষ সমঝতায় আসতে সম্মত হয়।সিদ্ধান্ত হয়-টোনার অনেকেরই গুরুদেব শ্রী যিতেন্দ্রনাথ গোষ্মামী,মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার(প্রাক্তন সভাপতি টোনা সম্মিলিত মা.বি),শ্রী হরিপদ ব্রহ্ম(বৈষ্ণব),শ্রী বিমল দাস(এটিইও),শ্রী রতন শীল(প্র.শি.টো.সম্মিলিত.মা.বি) বসে একত্রে যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা সবাই মেনে চলবে।উল্লেখ্য আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বেই এ বৈঠকের আয়োজন হয়।তাঁরা ২০০৫ সালের ২৮ নভেম্বর টোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একত্রে বৈঠকে বসেন এবং সম্মিলিত সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্তগুলো হলোঃ ১।জননাশৌচ-মরনাশৌচ শাস্ত্রমতে ১৫দিন ,তবে যদি কেহ পূর্বপুরুষের পালনীয় ৩০ দিনে করেন তা করতে পারবে এবং ১৫ দিনেও করতে পারবেন , ২।রাজপ্রথার পরিবর্তে যার অনুষ্ঠান তার বাড়িতে অনুমতির জন্য ডাকবেন,তার বাড়িতে বসে যে সিদ্ধান্ত হবে সে অনুযায়ী অনুমতি হবে, ৩।সভায় যিনি বয়ঃজেষ্ঠ্য তিনিই অনুমতি দেবেন, ৪।অসবর্ন(অন্য সম্প্রদায়) বিবাহ শাস্ত্রে নেই তবে অনুমতি নিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন, ৫।দূর্গা পুজা,রাস কীর্তন এ জাতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সভা স্কুলে বা মন্দিরে হবে,তবে তালুকদার বাড়ি থেকে আপ্যায়ন করবে।
এরপর যার যার বাড়ীতে নতুন নিয়মে অনুষ্ঠানাদি চলতে শুরু করে বাধাবিঘ্নহীণভাবে।
২০১০ খ্রীষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর শ্রী মনোহর কুন্ডু(মনু কুন্ডু) মারা গেলে তাঁর সন্তানরা ১৫ দিনে অশৌচ পালন করে শ্রাদ্ধক্রিয়া করার সামাজিক অনুমতি নেন।এটাই ১৫ দিন মরণাশৌচ পালনের আনুষ্ঠানিক প্রথম অনুষ্ঠান।টোনা কুন্ডুপাড়ার সমাজ,আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী নিয়ে অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।
প্রথম প্রথম দেখা যেত কেহ ১৫ দিন অশৌচ পালন করে শ্রাদ্ধ করেছে কিন্ত লোকজনদের ভুড়িভোজ করিয়েছে একমাস পরে।এভাবে দিনে দিনে নতুন ব্যবস্থার সাথে খাপ খেয়ে নেয় সমাজ। যারা এর বিরোধিতা করেছিলো তারাও ১৫ দিন অশৌচ পালোনের অনুমতি নিয়ে শ্রাদ্ধ করছে আবার অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।
সুনীল চন্দ্র কুন্ডুর দেখানো পথে টোনা কুন্ডুপাড়ার সমাজব্যবস্থা বিবর্তিত ও পরিমার্জিত হয়ে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে।বর্তমান প্রজন্ম ভোগ করছে এ সুযোগসুবিধা।যার নেতৃত্বে ছিলেন বাবু সুনীল চন্দ্র কুন্ডু।তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর টোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠা ও সততার সাথে।হ্যারিকেনের আলোতে বিনে পয়সায় রাতে শিক্ষার্থীদের বাড়তি ক্লাস নিয়েছেন।শুরু থেকে তাঁর নেতৃত্বে প্রায় বছর পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে ,সেন্টার ফার্স্ট হয়েছে,থানায় ভালো রেজাল্ট করেছে।কোন শিক্ষার্থী না খেয়ে স্কুলে আসলে তাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে খাইয়েছেন,টিচারদের খাওয়ার ব্যবস্থা স্কুলে করে তবে তিনি টিফিনে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করতে গেছেন,মাঝে মাঝে টিচারদেরও বাড়িতে খাইয়েছেন।এটিওদের কথা ছিলো উনি থাকলে তাদের আর স্কুল ভিজিট করতে হবে না। নৈমিত্তিক ছুটি মনে হয় কখনো ভোগ করেছেন কিনা সন্দেহ।রিটায়ার্ডের পর দীর্ঘদিন স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।কুন্ডুপাড়ায় জুনিয়র স্কুল প্রতিষ্ঠায় অনুকুল চন্দ্র কুন্ডু(অনুকুল বাবু) এর সাথে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিলো,সেখানে কিছুকাল শিক্ষকতা করেছেন,ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক খুঁজতে নৌকায় করে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছেন।এখন সে স্কুল টোনা সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত।টোনা সার্বজনীন রাস কীর্তনের সূচনালগ্ন থেকে বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।রাস কমিটি নিয়ে ঝামেলা অনৈতিকতা হলে এক ক্রান্তিকালে সেক্রেটারীর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি,তার আগে ক্যশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে দেখিয়েদিয়ছেন কী করে কড়ায়-গন্ডায় হিসাব রাখতে হয়।টোনা সার্বজনীন দূর্গাপুজার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কয়েকবছর।অসুস্থ হয়ে পড়লে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে দেন অন্যের হাতে। টোনা কুন্ডুপাড়াসহ এলাকার বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন নিঃস্বার্থভাবে।এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বর সিলেকশন বা নির্বাচন,ঝগড়াবিবাদ এর সালিশি,মেয়েদের বিবাহে কোন ঝামেলা তৈরী হলে তার সমাধানে ছিলো তাঁর অগ্রণীভূমিকা। বৈঠক করে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সিলেকশনে মেম্বর করেছেন তিনি।টোনা সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এর অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে তাঁর মেয়েকে ১০ মিনিটে হেঁটে স্কুলে যেতে না দিয়ে ১ ঘন্টা লাগে এমন দূরের স্কুলে ভর্তি করেছিলেন সেই ৯০ সালের দিকে।যখন এলাকায় দিনে দুপুরে চলত ছিনতাই,নারী নির্যাতন,মারামারি খুনাখুনি।
যুগে যুগে নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়ে এগিয়ে চলছে টোনা কুন্ডুপাড়া।বর্তমান প্রজন্ম নতুন সংস্কারে বড় হচ্ছে।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×