somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন দাসত্ব

১৯ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্ধকার রাস্তায় একা একা হাটছিলাম। কিছু কুকুর ছিল সঙ্গী আর ছিল একরাশ লাল-নীল-হলুদ-সবুজ-কমলা-বেগুনী তারারা। বাতাশ থেমে থেম বইছিল আর আমি ঘুমবিহীন চোখে সুস্থভাবে হাটছিলাম। রাস্তার দুপাশের স্থাপনারা খুব চেষ্টা করছিল আমাকে কিছু আলো দেবার জন্য, যাতে আমি ভাঙ্গা রাস্তাটায় হোঁটচ না খাই। আমি তাদের কৃতজ্ঞতায় আবিভূত হয়ে অন্যমনষ্ক হলাম এবং একটা দুর্দান্ত হোঁচট খেলাম। আমার ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটার নখ কিছুটা ভেঙ্গে গেল এবং আমি আমার বাট্টা স্যান্ডেলটায় বুড়ো আঙ্গুলের নীচে রক্তে ভেজা প্যাচপ্যাচে আনুভূতি পেলাম। ভোতা যন্ত্রনা আমার মাথায় আঘাত করছিল এবং আমি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ছিলাম যে এই মূহুর্তে আমার বাসায় ফিরে ক্ষত পরিষ্কার করাটা উচিত কিনা। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষনের পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি বাসায় ফিরে যাচ্ছিনা এবং আমার পায়ে হাটা কার্যক্রম সচল রাখছি। আমি হাটা শুরু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি কৃষ্ণচুড়া গাছের সাথে আমার সাক্ষাত হল। রাস্তার আলো যথাসম্ভব চেষ্টআ করছে গাছটিকে ষ্পষ্ট করে তুলতে, কিন্তু তারপরেও তার সবুজ পাতাগুলোর রং কালটেই থেকে যাচ্ছে। আমি গাছটির দিকে তাকালাম আর ভাবতে চেষ্টা করলাম শেষ যখন এই গাছে ফুল ফুটেছিল তখন দৃশ্যটি কেমন সুন্দর ছিল। কৃষ্ণচুড়ার লাল ফুল বরাবরই আনন্দের সঞ্চার করে থাকে। বিশেষ করে দুপুরের রোদে খালি পেটে ক্ষুধা নিয়ে যদি লাল কৃষ্ণচুড়ার ফুলের ঘনত্বের দিকে তাকানো যায় তবে অনেক্ষণের জন্য ক্ষুধাটা মরে যায়। কৃষ্ণচুড়ার লম্বা শিমের মত ফলগুলোও দেখতে খারাপ না। তবে সেটার বিশেষত্ব বাচ্চাদের খেলনা তরবারী হিসেবেই মনে হয় বেশী। কিছুক্ষন তরবারী হিসেবে ব্যাবহারের পরে যখন ফলগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে তখন সেখান থেকে সেই একই গন্ধ পাওয়া যায় যা কিনা কৃষ্ণচুড়ার নরম কচি ডাল ভাঙ্গলে পাওয়া যায়।

আমি কৃষ্ণচুড়াকে আর বেশী সময় দিতে পারছিলাম না। আমাকে আরো হাটতে হবে। ইতিমধ্যে আমার প্যাচপেচে রক্ত জমাট বেধে ধুলো হয়ে গেছে আর ব্যাথাটাও অনেক কমে এসেছে। ঠিকমত রাস্তার দিকে মনোনিবেশ করতে পারলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাথাটা ভুলে যাব। ব্যাথা নিরাময়ের চেয়ে ভুলে যেতেই আমরা বেশী আগ্রহী। কেননা ব্যাথা নিরাময়ের জন্য বাড়ি ফিরে গেলে আমাদের পথচলার বিঘ্ন ঘটবে। আমিও আশাবাদী যে আমার ব্যাথাটা আমি ভুলে যাব এবং আমার রাস্তায় চলাটা খুব উপভোগ্য ও আনন্দদায়ক হবে। আমি হাটতে থাকি আর আমার সাথে হাটতে থাকে একদল কুকুর আর একরাশ তারা। আমি আমার রাস্তার সামনের দিকে তাকালাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম কোন খানাখন্দ আছে কিনা। দেখলাম কোন খানাখন্দ নাই। আমি মনস্থির করলাম আমি কিছুক্ষণ আকাশের তারাগুলির দিকে তাকিয়ে হাটব। বুড়ো আঙ্গুল,কৃষ্ণচুড়াকে অনেক সময় দিয়েছি। অনেক বেশী সময় দিয়েছি রাস্তাকে আর তার দুপাশের বৈদ্যুতিক বাতিকে। কিছুটা সময় অন্তত তারারা পেতে পারে। তাই আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম। তারাদের জন্য তাদের বরাদ্দ সময় ব্যায় হতে থাকল। আমাকে অবশ্য কেউ সময় দেয় না। আমি আসলে কারো কাছে সময় পেতে পারি এ কথাটাই ভুলে গেছি। আসলে আমার অস্তিত্ত্ব অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি সবার মন যুগিয়ে চলি, কেউ আমার মন যুগিয়ে চলে না। মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করার কথা ভাবি, কিন্তু এর ফলে সাম্ভাব্য অশান্তি এবং অশান্তি থেকে মুক্তির পেয়ে পুনরায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দুঃসাধ্য পরিশ্রমের কথা ভেবে ঠায় বসে থাকি। এখন আমি তারাদের সময় দিচ্ছি। এরপরে রাস্তায় একটা ব্রীজ আসবে। ওটাকে কিছুটা সময় দিতে হবে। নতুবা ওটা অভিমানে ভেঙ্গে পড়তে পারে। এর ফলে সৃষ্টি হবে জনদুর্যোগ যা মোটেও আমার কাম্য নয়। একটা ব্রীজ বানানো অনেক কষ্টের।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:৪৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×