somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'দ্য আর্ট অব ওয়ার' : ১২ : এটাক বাই ফায়ার

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেল গিবসন অভিনীত ‘দ্য পেট্রিয়ট (২০০০)’ মুভির দৃশ্য। সাউথ ক্যারলিনার বিদ্রোহী নেতা বেঞ্জামিন মার্টিন (মেল গিবসন) গিয়েছেন বৃটিশ কন্টিনেন্টাল আর্মির জেনারেল কর্নওয়ালিসের অফিসে দেখা করতে। উদ্দেশ্য কন্টিনেন্টাল আর্মির হাতে ধরা পরা কিছু বিদ্রোহীদের ছারিয়ে নিয়ে যাওয়া। কর্নওয়ালিসের অফিসে যাওয়ার আগে বেঞ্জামিন মার্টিন কিছু খড়ের তৈরি পুতুলের গায়ে বৃটিশ অফিসারদের ইউনিফর্ম পরিয়ে দিয়ে এমন জায়গায় খুটির সাথে বেঁধে রেখে এসেছিলেন, যেন কর্নওয়ালিস চোখে দুরবীন ঠেকালেই খুটির সাথে বেধে রাখা একসারি বৃটিশ অফিসারদের আবছা দেখতে পান। বেঞ্জামিনের এই আয়োজন দেখার পর কর্নওয়ালিস চোখ থেকে দূরবীন নামিয়ে বললেন, ‘ওদের নাম আর র‍্যাঙ্ক কি?’

জবাবে বেঞ্জামিন মার্টিন বললেন, ‘তারা আমাকে তাদের নাম বলেনি। তবে তাদের নয় জন লেফটেন্যান্ট, পাচ জন ক্যাপ্টেন, তিনজন মেজর, আর একজন খুব মোটা কর্নেল যিনি আমাকে “চিকি ফেলো” বলে ডাকছিলেন।’

কর্নওয়ালিস উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, ‘আপনি জানেন কোন ভদ্রলোক এমন কাজ করতে পারেন না।’

বেঞ্জামিন মার্টিন জবাব দিলেন, ‘আপনার অফিসারদের কাজকর্ম যদি ভদ্রলোক যাচাইয়ের মাপকাঠি হয়, সেক্ষেত্রে আমি নিজেকে প্রশংসিতই ভাবব। যাহোক, আমি কি এবার আমার লোকদের নিয়ে যেতে পারি?’

বিব্রত কর্নওয়ালিস চিবিয়ে চিবিয়ে জেনারেল ও’হারার উদ্দেশ্য উচ্চারন করলেন, ‘আরেঞ্জ দ্য এক্সচেঞ্জ!’

‘দ্য পেট্রিয়ট’ মুভির বেঞ্জামিন মার্টিন চরিত্রটি আদতে আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের জনক ফ্রান্সিস মেরিওনের ছায়া অবলম্বনে তৈরি। ফ্রান্সিস ১৭ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা রাজ্যে বৃটিশ কন্টিনেন্টাল আর্মির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। গেরিলা যুদ্ধে তার সাফল্যের জন্য তাকে ‘সোয়াম্প ফক্স’ নামে ডাকা হত। একবার তাকে ধরতে বৃটিশ কর্নেল টার্লেটন জলাভুমির ভেতর দিয়ে টানা ২৬ মাইলেরও বেশি পর্যন্ত পিছু ধাওয়া করে ব্যর্থ হয়ে বলেছিলেন, ‘স্বয়ং শয়তানেরও সাধ্য নেই এই বুড়ো শিয়ালটাকে ধরার!’

যাহোক, সেয়ানে সেয়ানে যুদ্ধে চমৎকার সব ট্যাকটিকাল মেনুভার দেখা যায়, কিন্তু অসম যুদ্ধেও কিন্তু কম চমক থাকেনা। ২০০৬ সালের ইসরায়েল বনাম হেজবুল্লাহ যুদ্ধে সুসজ্জিত ইসরায়েলী বাহিনীর বিরুদ্ধে হেজবুল্লাহ সেনাদের কৌশলী যুদ্ধ ছিল সত্যি চমকপ্রদ। ইসরায়েলী বিমান বাহিনীর সামর্থ্যের বিপরীতে তারা তাদের কাতিউশা রকেট লাঞ্চার গুলো কুয়ার ভেতর এমনভাবে বসিয়েছিল যে রকেট ছোড়ার পর ইসরায়েলী বিমান আসার আগেই তারা পুলি টেনে এই লাঞ্চারগুলো কুয়ার গভীরে নিয়ে ওপরটা ঢেকে দিত, আর ইসরায়েলি বিমানগুলো টার্গেট খুঁজে হয়রান হয়ে ফিরে আসত। হেজবুল্লাহরা দামী ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের সাথে ট্যাঙ্ক কিনে পাল্লা না দিয়ে স্রেফ রাশান এন্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল দিয়ে টেক্কা মেরে দিল। তেত্রিশ দিনের এই যুদ্ধ শেষে শক্তিশালী ইসরায়েলী বাহিনী হাল ছেড়ে দিয়ে পিছু হটল। এই যুদ্ধ শেষে জনৈক ইসরায়েলী সৈন্যের স্বীকারোক্তি ছিল, ‘হেজবুল্লাহরা হামাস অথবা ফিলিস্তিনিদের মত না। এরা প্রশিক্ষিত আর উন্নত্মানের যোদ্ধা। এদের সাথে লড়তে এসে আমরা সবাই বেশ অবাক হয়েছি।’

সানজুর এই অধ্যায়ের নাম ‘অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আক্রমন।’ যুদ্ধে আগুনের ব্যবহার সত্যি ভয়ঙ্কর। কারন এঁর তাপে যেমন গা ঝলসে যায়, তেমনি ধোয়ার কারনে শ্বাস নিতেও কস্ট হয়। তাছাড়া ধোঁয়ার কারনে খুব বেশিদুর পর্যন্ত দেখাও যায়না, তাই সৈন্যদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পরে সহজেই। আধুনিক যুদ্ধক্ষত্রে এই ইফেক্টগুলোই নিশ্চিত করা হয় নানান ধরনের বোমা-গোলা মেরে। তাই সানজুর অগ্নিসংযোগ বলতে এই সময়ে আপনাকে বিভিন্ন প্রকার আধুনিক বোমা-গোলাবর্ষনকেই বুঝে নিতে হবে। সানজুর মতে পাঁচ উপায়ে আপনি বোমাবর্ষনের মাধ্যমে আক্রমন করতে পারেন।

একঃ শত্রুর ক্যাম্পের ওপর অগ্নিসংযোগ করে তাদের ক্যাম্প তছনছ করে দিতে পারেন। শত্রুর ক্যাম্পে এমন অতর্কিত আক্রমন তাদের মধ্যে চরম ভীতি আর বিভ্রান্তি সৃস্টি করে।

দুইঃ শত্রুর খাদ্য আর জ্বালানীর মজুদে অগ্নিসংযোগ করে তাদের ভীষন অসুবিধায় ফেলে দেয়া যায়। কখনো কখনো এমন আক্রমনের কারনে শত্রু তার পরিকল্পনা বদলাতে, এমনকি পিছু হটতেও বাধ্য হয়।

তিনঃ শত্রুর সাপ্লাই লাইনে অগ্নিসংযোগ করেও তাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে দেয়া যায়।

চারঃ শত্রুর গোলাবারুদের মজুদে অগ্নিসংযোগ করতে পারলে একে তো তাদের যুদ্ধের জন্য অপরিহার্য গোলাবারুদে টান পরে, তারউপর গোলাবারুদের মজুদ বিস্ফোরিত হয়ে চারপাশে ভয়াবহ বিপর্যয়ও ডেকে আনে।

পাচঃ সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আক্রমন শত্রু সৈন্যদের সরাসরি হতাহত করে, আর এঁর কলে সৃস্ট ধোঁয়ার কুয়াশা যুদ্ধক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয় ভীতি আর বিভ্রান্তি।


অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আক্রমনের জন্য উপযুক্ত উপকরন সবসময় মজুদ থাকা চাই। শুষ্ক মৌসুম এ ধরনের আক্রমনের জন্য উপযুক্ত। বাতাসের গতি আর দিক বোঝাও খুব জরুরী। অনুকুল বাতাসের দিক বুঝে আগুন লাগালে আগুন আর ধোঁয়া শত্রুর দিকে ছুটে যায়। মনেরাখা ভাল যে, বদ্ধ পরিবেশে কিন্তু আগুনের চে ধোঁয়ার কারনে বেশি প্রানহানী হয়। অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আক্রমনের সময় পাঁচটি বিষয়ে তৎপর থাকতে হয়।

একঃ ক্যাম্পে আগুন লাগার পর শত্রুদের মাঝে যখন বিশৃংখলা দেখা দেয়, তখনি আক্রমন করতে হয়। আধুনিক যুদ্ধে আক্রমনের আগমুহুর্ত পর্যন্ত শত্রু অবস্থানের ওপর টানা গোলাবর্ষন করা হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধে এল-আলামিনের প্রান্তরে জার্মানদের বিরুদ্ধে বৃটিশ ফিল্ড মার্শাল মন্টগোমারির অপারেশন লাইটফুট শুরুর পুর্বে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে ৮৮২টা কামান শত্রুর ওপর গোলাবর্ষন করেছিল। মোট গোলার সংখ্যা ছিল ৫,২৯,০০০!

দুইঃ ক্যাম্পে আগুন লাগার পরও শত্রুদের মাঝে যদি কাঙ্ক্ষিত বিশৃংখলা না দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে শত্রুর প্রস্তুতি বেশ ভাল বলেই অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে প্রত্যাশিত চমক অর্জন করতে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। আর প্রস্তুত শত্রুকে আক্রমনে জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তিনঃ আগুনের লেলিহান শিখা যখন দাউ দাউ করে জ্বলে তখন শত্রু সেনারা দিশেহারা থাকে, তাই এটাই আক্রমনের মোক্ষম সময়। আর আগুন যখন নিভু নিভু ততক্ষনে শত্রু নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করে, তাই এসময় আক্রমন না করাই শ্রেয়।

চারঃ দূর থেকে নিক্ষেপ করে যদি শত্রুর ক্যাম্পে আগুন লাগান যায়, সেক্ষেত্রে ক্যাম্পের ভেতর ঢুকে আগুন লাগাবার ঝুঁকি না নেয়াই ভাল। আর আগুন লাগানোর পর উপযুক্ত মুহুর্তে আক্রমন করা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন।

পাচঃ বাতাস যেদিকে বয়, আগুন সেদিকেই ধেয়ে যায়। তাই আক্রমনের সময় আগুনের পিছু পিছু এগুতে হয়। বাতাসের গতি যদি অনুকুলে না থাকে, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আক্রমনের চেস্টা না করাই ভাল।

অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আক্রমনের ক্ষেত্রে আগুন নিয়ন্ত্রনের কৌশল জানা আবশ্যক। দিনের কখন কি ধরনের বাতাস বয়ে যায়, তা জানতে হবে। জানতে হবে আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান। সর্বপোরি মোক্ষম সময়ের প্রতি নজর রাখতে হবে, যেন কোন সুবর্ন সুযোগ হাতছাড়া না হয়।


ঝড় বৃস্টির রাতে দেখার আর শোনার ক্ষমতা কমে যায়, তাই এমন আবহাওয়ার সুযোগে আপনি সহজেই শত্রুর খুব কাছে পৌছে যেতে পারেন। খরস্রোতা নদী পার হওয়া কঠিন, তাই নদী সামনে রেখে ডিফেন্স নিলে অনেক সুবিধা। কর্দমাক্ত এলাকা শত্রুর চলার গতিকে শ্লথ করে দেয়। আবার আটকে রাখা পানি হঠাত ছেড়ে দিয়ে শত্রুকে ভাসিয়ে দেয়া যায়। তাইতো আগুনের মত ভয়ঙ্কর না হলেও, কাজে লাগাতে জানলে পানিও কিন্তু কম বিধ্বংসী না।


১৯২১ সালে লিডেলহার্ট আক্রমনের নতুন ধারনা দিলেন। তার মতে আক্রমন করা যায় দুইভাবে। একঃ ম্যান ইন দ্য ডার্ক রুম কনসেপ্ট। ধরুন আপনি আর আপনার শত্রু দুইজনই একটা অন্ধকার ঘরে আটকা পরে আছেন। কেউ কাউকে দেখতে পান না। তখন আপনি কি করেন? প্রথমে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক হন, এইটা হল যুদ্ধে যে কোন আর্মির সহজাত ডিফেন্সিভ পোশ্চার। তারপর একটা হাত সামনে বাড়িয়ে হাতড়ে হাতড়ে শত্রুকে খুজতে থাকেন, এইটা হল রেকনিসেন্স পর্ব। এরপর শত্রুকে স্পর্শ করা মাত্র আপনি তার কলার চেপে ধরার চেস্টা করেন, এইটা হল ফিক্সিং দ্য এনিমি। এরপর আপনি তাকে সর্বশক্তিতে আঘাত করেন ধরাশায়ী করতে, একে বলে ডিসাইসিভ মেনুভার। সবশেষে আপনি তাকে পেরে ফেলে কষে বেঁধে ফেলেন, একে বলে এক্সপ্লোয়েটেশন।

দুইঃ এক্সপান্ডিং টরেন্ট কনসেপ্ট। পানির স্রোত যখন কোন দেয়ালের গায়ে আছড়ে পরে, তখন দেয়ালের ফাটলের ওপর পানির চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। একসময় চাপ এতোটা বেড়ে যায় যে ফাটলের দৈর্ঘ্য ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। একসময় সেই ফাটল বেড়ে দেয়াল ভেঙ্গে যায় আর পানির স্রোতও এগিয়ে যায়। যুদ্ধে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের ফাটল গলে এভাবেই আক্রমন করতে হয়।

বি এইচ লিডেলহার্ট ছিলেন ইংরেজ সমরবোদ্ধা, আর ১৯২০ সালে যখন তিনি এই থিওরি দুটোর উপর প্রজেন্টেশন দেন তখন তিনি সবে ক্যাপ্টেন। কিন্তু বৃটিশ আর্মি তার কাছ থেকে শিখতে দ্বিধা করেনি অথবা তাকে স্বীকৃতি দিতেও কার্পন্য করেনি। অথচ ২য় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আর্মির সফল ব্লিতজক্রিগ আক্রমন পদ্ধতি নাকি প্রথম এক ফরাসী ক্যাপ্টেনের মাথায় আসে। কিন্তু ফ্রেঞ্চ আর্মির সেই বাতিল করে দেয়া পান্ডুলিপি থেকেই নাকি গুদেরেইন ব্লিতজক্রিগ এর বাস্তবায়ন ঘটান। আবার আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সুয়েজ খাল পেরিয়ে ইসরায়েলী বার্লেভ লাইন অতিক্রম করতে গিয়ে ঈজিপশিয়ান আর্মি বার্লেভ লাইনের বালির প্রাচীরে আটকে গেল। কোন এক্সপ্লোসিভেই বালির এই দেয়ালের তেমন ক্ষতি হয়না। এদিকে পেছনে একেরপর এক ইউনিট সুয়েজ পাড়ি দিয়ে জমে যাচ্ছে। এমন সময় এক ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন আইডিয়া দিল পানির পাম্প দিয়ে এই বালির দেয়াল ধসানো সম্ভব। ভাগ্যিস ঈজিপশিয়ান হাই কমান্ড আইডিয়াটা নিয়েছিল, আর ঈজিপশিয়ান আর্মিও দ্রুত সিনাই তে ঢুকতে পেরেছিল। সানজু বলেন বিচক্ষন জেনারেল তার অধস্তনদের প্রতিভার মুল্যায়ন করেন বলেই তার পরিকল্পনায় উদ্ভাবনী চমকের শেষ থাকে না।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ডি-ডে তে সফল এম্ফিবিয়াস ল্যান্ডিং শেষে জার্মানদের ধাওয়া করতে করতে মিত্রবাহিনীর রসদে টান পড়েছে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল আইজেনহওয়ার চাইছিলেন বৃটিশ, আমেরিকান আর কানাডিয়ান সব বাহিনী মিলে একসাথে (মাল্টিপল থার্স্ট) জার্মানির দিকে এগুতে, কিন্তু বৃটিশ ফিল্ড মার্শাল মন্টগোমারি গোয়ার্তুমি শুরু করলেন তার বাহিনী নিয়ে একাই সিঙ্গেল থার্স্টে দ্রুত বার্লিনের দিকে এগিয়ে যেতে। অগত্যা আইজেনহওয়ারকে মন্টগোমারির প্রস্তাবিত অপারেশন মার্কেট-গার্ডেন কে হ্যাঁ বলতেই হল।

‘মার্কেট’ ছিল প্যারাট্রুপারদের দিয়ে নেদারল্যান্ডের তিনটা ব্রিজ দখলের পরিকল্পনা আর ‘গার্ডেন’ ছিল ব্রিজ দখলের চার দিনের ভেতর বাদবাকি বৃটিশ সেনাবাহিনীর এগিয়ে গিয়ে প্যারাট্রুপারদের সাথে যোগ দেবার পরিকল্পনা। তিন ব্রিজের একটা ছিল আর্নহেমে, যা পিছুহটা জার্মানরা বেশ শক্তভাবেই দখল করে রেখেছে বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। ইন্টেলিজেন্স অফিসার যখন এই তথ্য বৃটিশ কমান্ডার জেনারেল ব্রাউনিং কে জানাতে গেলেন, তখন তিনি তা উড়িয়ে দিয়ে ইন্টেলিজেন্স অফিসারকে অসুস্থতাজনিত ছুটি যেতে বাধ্য করলেন যেন আর কেউ অপারেশন মার্কেট-গার্ডেন রুখবার কথা ভাবতেও না পারে। ‘মার্কেট’ ছিল ইতিহাসের সবচে বড় এয়ারবোর্ন অপারেশন, কিন্তু আর্নহেমে জার্মানদের প্রতিরোধের মুখে গোটা অপারেশন মার্কেট-গার্ডেন এমনভাবে ভেস্তে যায় যে, ক্রিসমাস আসার আগেই যুদ্ধ শেষ করার স্বপ্নটা মিত্রবাহিনীর জন্য অধরাই রয়ে যায়।

ক্রিসমাসের আগে যুদ্ধ শেষ করার একটা তাগদা তো মন্টগোমারির ছিলই, আরো ছিল মিত্রবাহিনীর কমান্ডারদের মাঝে অন্যতম সেরা কমান্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমান করার অদম্য বাসনা। জেনারেল ব্রাউনিং মুল্যবান গোয়েন্দা তথ্য উপেক্ষা করেছিলেন নাইটহুড পাবার মোহে। আর ব্রাউনিং এর এমন উপেক্ষাকে মন্টগোমারি প্রশ্রয় দিয়েছিলেন আইজেনহাওয়ারের প্রতি ঈর্ষা আর নিজের পরিকল্পনামত যুদ্ধ নিশ্চিত করতে। অপারেশন মার্কেট-গার্ডেনকে মন্টগোমারি তার অন্যতম বাজে ভুল বলে পরে স্বীকার করে গেছেন। এই অপারেশনে ১৫,০০০ এরও বেশি মিত্রবাহিনী সৈন্য প্রান হারায়। সানজু বলেছিলেন, ক্রোধান্বিত হয়ে কোন ভাল শাসক তার আর্মিকে যুদ্ধে পাঠায় না, আর স্রেফ অহঙ্কারে বশবর্তি হয়ে কোন জেনারেল যুদ্ধে লড়তে যাননা।

লাভজনক না হলে অযথাই এগিয়ে যাবেন না, বিশেষ কোন প্রাপ্তি না দেখলে অযথাই বল প্রয়োগ করবেন না, বাধ্য না হলে লড়তে যাবেন না। যুদ্ধে আবেগের বশবর্তি হয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রন করুন। সৈন্যদের মৃত্যুমুখে পাঠানোই জেনারেলের কাজ, কিন্তু এই মৃত্যু যেন অর্থহীন কারনে না হয় তা নিশ্চিত করাও তারই দায়িত্ব। কারন মৃত ব্যক্তিকে তার প্রান যেমন ফিরিয়ে দেয়া যায় না, তেমনি ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাজ্যকে আর কখনই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই একজন আলোকিত শাসক হয় পরিনামদর্শী, আর বিচক্ষন জেনারেল হয় খুব সাবধানী। আর এভাবেই রাস্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং রাস্ট্রের সেনাবাহিনীকে অক্ষুন্ন রাখা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:০৬
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×