somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চানক্যঃ একঃ কে এই চানক্য B-)

০২ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চানক্যঃ এক

সদ্যই উনুন থেকে নামানো ধুমায়িত পায়েসের বাটিটার ঠিক মধ্যেখানে কব্জি অবধি ডুবিয়ে দিয়েই বাচ্চা ছেলেটা গরমে আর্তনাদ করে উঠল। ছেলের কান্ড দেখে বিরক্ত মা তারস্বরে তাকে তিরস্কার শুরু করল, “উজবুক কোথাকার! গরম পায়েসের বাটির মাঝখান থেকে খেতে গেলে তো হাত-মুখ পুড়বেই। কিনারা থেকে ফুঁ দিয়ে জুড়িয়ে নিয়ে খেতে শুরু করতে হয়…”

কিছুদিন আগেই রাজা ধননন্দের সেনাবাহিনীর কাছে আরো একবার পরাস্ত হবু সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য আর তার গুরু চানক্য তখন এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তেমনি এক পলায়ন যাত্রার যাত্রা বিরতিতে বাড়ির উঠানে বসে রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা মায়ের কথাগুলো চানক্যের কানে গেল। অম্নি কুটিলমতি কৌটিল্য ওরফে চানক্য পাটালিপুত্রের নন্দ রাজবংশকে চিরতরে ধ্বংসের সুত্রটা পেয়ে গেলেন। এতটা দিন ধরে তার শিষ্য চন্দ্রগুপ্ত আসলে ঐ ছোট্ট বালকটির মত সরাসরি মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী পাটালিপুত্র জয়ের চেস্টা করতে গিয়েই বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। স্ট্রেটেজিটা আসলে হওয়া উচিত ছিল ধননন্দের মূল সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ এড়িয়ে আগে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো দখলে নেয়া। তাতে শত্রুও ক্রমশ দূর্বল হতে থাকত আর নিজেদের শক্তিও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি করা যেত। তারপর মোক্ষম সময় বুঝে চূড়ান্ত যুদ্ধে নেমে ধননন্দকে হারিয়ে পাটালিপুত্র দখল করে নেয়া যেত।

যীশুর জন্মের প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে ভারতবর্ষে দুই পাটি দাঁত সমেত কদাকার এক ছেলে শিশু জন্ম নিল। শিশুটির পিতা ঋষি চানক পেশায় শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মন, তিনি তার স্ত্রী চানেস্বরীর সাথে পরামর্শ করে তাদের নবজাতক পুত্রের নাম রাখলেন চানক্য আর সেই সাথে জন্মের পরপরই তারা নবজাতক চানক্যের দাঁতগুলো উপড়ে ফেললেন। কারন শাস্ত্র মতে দুই পাটি দাঁত সমেত জন্মানো শিশু মানেই ভবিষ্যত রাজা। কিন্তু ব্রাহ্মনের ঘরে এমন শিশুপুত্র জন্মেছে জানলে মগধের রাজার রোষের মুখে পরতে হবে জেনেই এভাবে তার দাঁত উপড়ে ফেলা। তবে তাতেও শেষরক্ষা কি হল?

ঘটনাচক্রে কিছুদিনের ভেতরেই ঋষি চানক মগধরাজ ধননন্দের কোপের মুখে পরে কারাগারে গেলেন। ইতোমধ্যে শিশু চানক্য ত্রিবেদ মুখস্ত করে তার কৃতিত্বের জাহির দিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু পিতা চানকের কারাবরনের পর তার পরিবারের ওপর নেমে আসা দূর্বিসহ বঞ্চনা সইতে না পেরে তিনি দেশ ছাড়লেন। ঋষি চানক কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন, কিন্তু বিদুষী মায়ের পরামর্শে চানক্য পৌছে গেলেন তখনকার দিনের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় তক্ষশীলায়।

তক্ষশীলায় অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে একসময় তিনি তক্ষশীলারই আচার্য্য নিযুক্ত হন। তক্ষশীলায় অধ্যাপনার সুবাদে ভারতবর্ষের প্রায় সব রাজবংশের যুবরাজদের সাথেই তার পরিচিতি গড়ে উঠল। এমনসময় খ্রীঃ পূঃ ৩২০ সালে মেসিডনের রাজা গ্রীক বীর আলেকজান্ডার তার দিগ্বিজয়ী বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতবর্ষের উপকন্ঠে শিবির গাড়লেন। ভারতবর্ষে তখন ২৭ জন ছোট বড় রাজা মহারাজাদের রাজত্ব, যারা আবার একে অন্যের সাথে বহু কারনে বহুধাবিভক্ত।

"সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!” বলে আলেকজান্ডার যখন মহারাজা পুরুর বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর পায়তারা কষছিলেন, চানক্য তখন আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষীয় রাজাদের বৃহত্তর ঐক্যের জরুরতটা সম্যক টের পেলেন। মগধ ইতোমধ্যে তখন শক্তিশালী ভারতীয় সাম্রাজ্য, যদিও মগধের নন্দরাজ ধননন্দের ধনসম্পদের প্রতি সুতীব্র লোভের কারনে মগধবাসীর প্রান তখন ওষ্ঠাগত প্রায়। অতএব চানক্য তক্ষশীলা ছেড়ে মগধ রাজধানী পাটালিপুত্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালেন। তাছাড়া পিতৃহত্যার প্রতিশোধের হিসেবটাও যে তখনো বাকি রয়ে গেছে।

মগধে পৌছেই চানক্য জানলেন যে ইতোমধ্যে তার মাতৃবিয়োগ ঘটেছে। যাহোক, মগধে চানক্যের মত বিদ্বানের কদর ছিল। তাই পাটালিপুত্রে পৌছেই তিনি রাজা ধননন্দের ত্রান বিতরন সংঘের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেলেন। কিন্তু নিজের ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য দ্রুতই রাজার বিরাগভাজনও হতেও খুব বেশি সময় নিলেন না।

একদিন নেমন্তন্ন দিয়ে ডেকে এনে খাওয়া শুরু হতেই রাজা ধননন্দ সবার সামনেই চানক্যকে চরম অপমান করতে লাগলেন। অপমানিত চাণক্য খাবার ফেলে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের টিকির বাঁধন খুলে প্রতিজ্ঞা করলেন নন্দ বংশের নাশ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তিনি তার এই টিকি আর বাঁধবেন না।

অবশ্য ইতোমধ্যেই চানক্য নন্দবংশের বিনাশের মোক্ষম অস্ত্র খুঁজে পেয়ে গিয়েছিলেন। শহরেরই উপকন্ঠেই এক বালক তার সহজাত নেতৃত্বগুণ আর সাহসিকতার কারনে চানক্যের নজর কেড়েছিল। একদিন পথ চলতে গিয়ে ঘাসের দলায় হোচট খেয়ে চানক্য খাবলা দিয়ে সেই ঘাসের দলা উপড়ে তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। কারন ঘাসের দলার গোড়া খুব শক্তভাবে মাটি কামড়ে আকড়ে ছিল। তখন তিনি সেই ঘাসের দলার গোড়ায় কিছু মিস্টির শিরা ছিটিয়ে দিলেন। কিছুক্ষনের ভেতরই পিপড়ার দল এসে মিস্টির লোভে ঘাসের গোড়ার মাটি আলগা করে ফেলল। এরপর চানক্য সেই ঘাসের দলাটা মুঠি করে টান দিতেই তা সহজেই উপড়ে উঠে এল।

ঘাসের দলাটা দূরে ছুড়ে ফেলতে গিয়েই দেখেন সেই বালকটি মন্ত্রমুগ্ধের মত তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই থেকেই এই বালক তার শিষ্য, যাকে 'কিং মেকার' চানক্য মগধ সাম্রাজ্যের ভবিষ্যত রাজা বানিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই উদ্দাম বালক আর কেউ নন, স্বয়ং রাজা ধননন্দেরই সৎ ভাই চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য!

(ক্রমশ...)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৫
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×