এক। হিজাব = জামা'ত
একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কি মেয়েদের পর্দা করার বা হিজাব পড়ার অধিকার নেই? কেন হিজাব পরলেই একজন মহিলাকে জামা'তী বলা হবে? দাড়ি রাখলেই কেন একজন মুসলমান মৌলবাদী হবে? ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষিকাকে অধ্যক্ষ করা হল। তাকে সরানোর জন্য কি কোন যুক্তিসঙ্গত আপত্তি তোলা যেত না? কেন বয়স্ক একজন ভদ্রমহিলা যাকে শিক্ষার্থীরা তাঁর সততা এবং নির্ভীকতার জন্য সম্মান করে, তাঁর নামে অপমানজনক পোস্টার লাগানো হল? নিচে ছাত্রীদের বরাত দেয়া হল?
দুই। অশুভ শক্তি
আমরা এমনই এক দুর্ভাগা দেশে বাস করছি যেখানে নিজের ইচ্ছায় কিছুই করার উপায় নেই। সবকিছুই হতে হবে "অশুভ শক্তি" র ইঙ্গিতে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনারা কোন নির্দিষ্ট মানুষের শক্তির কাছে বশীভূত হলেও দেশের অনেক মানুষ এখনও নিজের ইচ্ছা, নিজের বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়, অন্তত ভিকারুন্নিসার কয়েক হাজার মেয়ে এখনও কলুষিত হয়নি। তাই বলছি সবকিছুর মধ্যে জামা'ত, যুদ্ধাপরাধী আর "অশুভ শক্তি" খোঁজার চেষ্টা করবেন না।
তিন। দল বনাম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য
গতকাল বিক্ষোভের সময় উপস্থিত থাকা এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন এক শিক্ষিকাকে, "আপনারা কি বিএনপির মদদে এসব করছেন?" আমার প্রশ্ন সরকার অন্যায়ভাবে একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেছেন বলে কি সব রাজনৈতিক দল এর মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়বে? আর এই প্রশ্ন দিয়ে ওই সাংবাদিক কী বোঝাতে চাচ্ছিলেন? দেশে যারা সরকারি দল করবে শুধু তাদেরই অধিকার আছে? তাহলে একদলীয় ব্যবস্থা করলেই হয়?
চার। এক্স ভিকি এবং হুমকি
স্কুল থেকে বের হয়ে গেলেই কি স্কুলের সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়? বার বছর যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের জীবনে আলো ছড়িয়েছে তার দুঃসময়ে, ছোট বোনদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার অধিকার কি এক্স ভিকিদের নেই? বিক্ষোভ শুরু করেছে বর্তমান ছাত্রীরা, সিনিয়ররা এগিয়ে গিয়েছিল তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে। তবে কেন তাদের দিকে আঙুল তুলবে পুলিশ যে, ওরা এখানে কেন? যে কোন সময়ে স্কুল বা কলেজে প্রবেশের অধিকার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা রাখে। পাশ করে বেরিয়ে গেলেই স্কুলের প্রতি ভালবাসা শেষ হয়ে যায়না, এ কথাটা কেন মানুষ মনে রাখবে না? কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেয়া হবে?
পাঁচ। শিক্ষা ও আমাদের সরকার
আমি একজন নিরপেক্ষ নাগরিক। তবে সরকারের কিছু কার্যকলাপ সব নিরীহ নাগরিককেই ভাবিয়ে তুলেছে। ২০০১-২০০৬ আমলে ভিকারুন্নিসা সহ বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ রাতারাতি বদলে দেয়া হয়। সেই সময় একইভাবে ছাত্রী বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল। অনেকের মনেই প্রশ্ন, কী কারণে অথবা কোন "অশুভ শক্তি"র প্রভাবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়? কেমন করে এবং কী কারণে রাতারাতি নতুন এডহক কমিটি গঠন করা হল, তাও আবার অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে সদস্য করে? গভর্নিং বডি মেয়াদোত্তীর্ণ- কেন অধ্যক্ষ নির্বাচনের উদ্যোগ নেননি বা তাগিদ দেননি? অথবা প্রিয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে এ কথাটা কেন হুসনে আরা এতদিন জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি? যখন নিজের চেয়ার নিয়ে টানাটানি পড়ল তখনই তার মন্ত্রণালয় বা বোর্ডের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হল? নাকি এখানেও কোন “নিউচুয়াল” ব্যাপার আছে? আমার এবং আমাদের অনুরোধ, দয়া করে রাজনীতির ছায়া থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্তি দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




