আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি বিয়ের। সব প্রস্তুতি শেষ- হবু স্ত্রীর জন্য বিয়ের শাড়ি, গহনা, বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে দাওয়াত দেয়াও হয়ে গিয়েছে। অফিস থেকে দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে রওয়ানা হল মিনহাজ। পথে যেতে যেতে রাহেলার কথা ভাবছিল সে। মেয়েটা কেমন তা ঠিক বুঝতে পারছেনা সে। সেই তো এক পলকের দেখা, তারপরই চলে গেল। মোবাইল নাম্বার থেকেও লাভ নেই। বিয়ের আগে পরপুরুষের সাথে কথা বলবেনা রাহেলা- খুবই পর্দাশীল মেয়ে। কিন্তু হবু স্বামীর সাথে ফোনে কথাও বলতে চাইবেনা! এরকম মেয়ে যে আজকালকার যুগে থাকতে পারে তাই ধারণা ছিল না মিনহাজের।
বাড়ি পৌঁছে মিনহাজ দেখে মেহমানদের অনেকেই এসে গেছে এর মধ্যেই। বিয়ে বাড়ি মাতিয়ে রেখেছে সবাই। মিনহাজ বাড়িতে আসার পর বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলতে তার বাবা ফোন করেছিল মেয়ের বাড়িতে। কবে পাঠাবে বিয়ের তত্ত্ব, তাদের প্রস্তুতি-ই বা কেমন চলছে জানতে চাইলেন। কিন্তু মেয়ের বাবার জবাব শুনে তো মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। তাদের নাকি কোন প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। কোন কেনাকাটা হয়নি। বিয়ে পিছিয়ে দিতে চাইছে তারা। বিয়ের দু'দিন আগে এমন আবদার(!) শুনে পুরো বাড়ি যেন থমকে গেল। শুরু হয়ে গেল কানাঘুষো আর নিন্দুকদের হাসাহাসি।
পরে তারা জানতে পারল মেয়ে অন্য এক ছেলের সাথে কোর্ট ম্যারেজ করেছে এবং এখনও সেই ছেলের স্ত্রী। জেনেশুনে মেয়ের পরিবার এমন প্রতারণা করছিল মিনহাজ ও তার পরিবারের সাথে।
***ঘটনাটি আমি শুনি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে। মিনহাজ (প্রকৃত নাম নয়) তার পরিচিত। ঘটনাটি শুনে দুঃখিত হই ছেলেটি ও তার পরিবারের জন্য। একজন মেয়ে হয়ে আমি বলছি, যখন কোন মেয়ের বিয়ে ভাঙে সমাজ (৮০%) তাকে সহানুভূতি জানায়। কিন্তু যখন কোন ছেলের সাথে এ ধরণের ঘটনা ঘটে মানুষ হাস্যরসের খোরাক পায়। ঘটনাটি যদি উলটো ঘটত, যদি রাহেলা (প্রকৃত নাম নয়) ও তার পরিবার প্রতারিত হতো- ঘটনাটি নিয়ে অনেক হইচই হতো। নারী কল্যাণ সংস্থার লোকজন মেয়ের পরিবারকে মানহানির মামলা করতে উৎসাহ দিত। আর কোনভাবে ব্লগে আসতে পারলে তো ব্যস- রাহেলার সম্মান উদ্ধারে উঠে -পড়ে লাগত সবাই। কিন্তু এই ঘটনাটি এরকম প্রতিক্রিয়া পাবে না।
আমাদের সমাজে মেয়েরা নানাভাবে নিগৃহীত হয় এবং তারা যাতে ন্যায় বিচার পায় সেজন্য সরকার, সমাজ সবাই সচেষ্ট। কিন্তু মিনহাজ যদি আজ মানহানির মামলা করতে যায় তবে সমাজের কাছে ছোট হবে সে নিজেই। দুঃখ নয়, কৌতুক বোধ করবেন সবাই।
আমার লেখার উদ্দেশ্য নারী-পুরুষ কাউকে ছোট করা নয়। নিজের খামখেয়ালির জন্য অন্যকে ভোগান্তিতে ফেলা কারুরই উচিত নয়, এটাই সবাইকে বলতে চেয়েছি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




