সবাই আমরা কম-বেশী মাতা-পিতাকে ভালোবাসি । তবে সবার ভালোবাসার প্রকাশভংগি একরকম নয়। আর সবাই ভালোবাসি একথার অর্থ এই নয় যে আমরা সবাই তাদের প্রতি যে কর্তব্যবোধ সেটা যথাযথ ভাবে পালন করি । এখানে কোনো উপদেশ নয়, আপনাদের সাথে আমার চিন্তা-ভাবনা গুলো শেয়ার করার জন্য এই পোস্ট- এর অবতারনা ।
পারস্পরিক ব্যবধান
আপনার সাথে আপনার মাতা-পিতার মানসিক দুরত্ত্ব কতটুকু । তারা কি আপনাকে তাদের সমস্যাগুলো মন খুলে বলতে পারে ? আপনি অফিসের বড় বস , কিন্তু সেটা কি বাসায় ও ? এমন কি হতে পারে অফিসে আপনি যেমন একটি নির্দিষ্ট পারসোনালিটি মেইনটেইন করেন , যাতে আপনার সাব-অর্ডিনেট - এর সাথে আপনার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দুরত্ত বজায় থাকে , সেই ব্যবধান কি আপনার মাতাপিতার সাথেও রয়ে গেছে ?
এমনও তো হতে পারে তারা মন খুলে আপনার সাথে কথা বলতে পারে না , তাদের সমস্যাগুলো বলতে পারে না , অথচ একসময় আপনি যখন ছোট ছিলেন , কত আবদার তাদের কাছে করেছেন চোখের জলে ভিজে।
আপনার সন্তান
আপনি যদি আপনার মাতা-পিতাকে যথাযথ সম্মান, ভালোবাসা, দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হোন , তাহলে নির্দিধায় আপনিও আপনার সন্তানে থেকে ভালোবাসা পাবেন না।
তাদেরকে আঘাত দিয়ে ফেললে
তাদেরকে কোনো কারণে আঘাত দিয়ে ফেললে সাথে সাথে ক্ষমা চেয়ে নিন। তাদের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে ' অহংকার, ব্যক্তিত্ত্ব' এসব যেন প্রতিবন্ধক হয়ে না দাড়ায় । দশ বছর আগেও যদি আপনি কোনো কষ্ট তাদের দিয়ে থাকেন , তারপরেও তাদের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিন।
তাদের খাবার দাবার , পোষাক আষাক
তারা যে খাবার পছন্দ করে সেগুলো বাসায় বেশী করে আনুন। এবং মাতা পিতার কারো যদি ডায়াবেটিকস থাকে তাহলে চেষ্টা করুন তাদের সামনে মিষ্টি জাতীয় খাবার যত সম্ভব কম খেতে । দরকার হলে আপনি বাইরে থেকে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে আসুন ।
তাদের প্রয়োজনীয় পোষাক-আষাক আছে কিনা খেয়াল করুন এবং এসব ব্যাপারে খরচ করতে কার্পণ্য করবেন না। আপনি যদি বিবাহিত হন, তাহলে চেষ্টা করুন আপনার স্ত্রিকে যখন কোন পোষাক কিনে দিবেন , তখন মা-কেও ভুলবেন না।
পিতার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সময়ে কিনে দিলেই হবে ।
মাতা-পিতার মতামতকে সম্মান করা
তাদের সাথে পারতপক্ষে মতভেদ করবেন না , আর যদি কোনো কারনে হয়ও , তাহলে তাদেরকে সেটা বুঝতে দিবেন না।
কাকে প্রাধান্য দেন "স্ত্রি না মা-কে" ?
কখনো নিজের স্ত্রি-কে মায়ের উপর প্রাধান্য দিবেন না । তাদের দুজনের মাঝে ব্যালেন্স করার দায়িত্ব আপনার । যে মা ৩০/৪০ বছর এই সংসারকে আগলে রেখেছে আপনার বিয়ের পরে হঠাত যেন আপনার স্ত্রি কর্তৃত্য না নিয়ে ফেলে । মাকে বুঝতে দিন সেই এই সংসারে মুল দায়িত্বে তিনি এবং কাজ ভাগ করে ফেলুন । স্ত্রিকে খুশী করার জন্য কখনও তার নিকট আপনার মায়ের সমালোচনা করবেন না ।
মাতা-পিতাকে উপদেশ ?
সরাসরি মাতা-পিতাকে উপদেশ দিবেন না, তারা কষ্ট পেতে পারেন । আর যদি কখনও দেবার প্রয়োজন পরে তাহলে কখনও অন্য কারো সম্মুখে দিবেন না । সবচেয়ে ভালো হয় তাদের সরাসরি উপদেশ না দিয়ে কোনো একটি ঘটনা উল্লেখ করে অন্য ঘটনা বুঝানোর মাধ্যমে তাদের বুঝানো , কাজটাও হয়ে গেলো তাদেরও সরাসরি বলা হল না ।
আবার অনেক সময় তাদের শিক্ষনীয় বই উপহার দিতে পারেন ।
তাদের চিকিতসা খরচ
তাদের প্রয়োজনীয় চিকিতসা খরচ দিতে কখনও কার্পন্য করবেন না। যথাসম্ভব আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ দিন ।
তাদের সাথে বিরক্তি সুচক ব্যবহার
তাদের সাথে কখনও বিরক্তি সুচক ব্যবহার করবেন না। কখনও এমন যদি হয় কোনো আকস্নিক ঘটনায় আপনি খুবই বিরক্ত তাহলে আপনার ছোটকালে তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে সেটা স্নরন করুন , অথবা সামনের থেকে চলে গিয়ে অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিন , এতে হয়ত আপনার রাগ কমে যাবে।
আপনি কি তাদের সংগ বা সময় দেন ?
অফিস থেকে এসে তাদের খোজ খবর নিন, অযথা টিভি-র পিছনে সময় ব্যয় করবেন না । বৃদ্ধ বাবা মাকে যথাযথ সময় দিন । বাবা - মার মধ্যে কেউ যদি মারা গিয়ে থাকে , তাহলে আরো বেশি করে তাকে ( বাবা বা মা যে বেচে আছে ) সময় দিন।
মনে রাখবেন এই সময় তারা খুবই অসহায় ।
বৃদ্বাশ্রম
যদিও আমাদের এখানে এই কালচার ব্যাপকহারে চালু হয়নি , কিন্তু কেনো যেনো ব্যপারটাকে কোনোমতেই মেনে নিতে মন সায় দেয় না। আমাদের মাতা-পিতা কি এতই অপাংতেয় যে , যারা আমাদের শিশুকাল থেকে কত বিনীদ্র রজনী কষ্ট করে এই পজিশনে এনেছে তাদের আমরা দুর করে দিচ্ছি । কি এমন অসুবিধা যদি তারা আমাদের সাথে থাকে ?
তাদের অন্তিম মুহুর্তে
তাদের অন্তিম মুহুর্তে শুনে নিন তাদের কোনো শেষ ইচ্ছে আছে কিনা, সামর্থ্য থাকলে সেটা পালন করার চেষ্টা করুন । তাদের কোনো দেনা থাকলে সেটা আপনি মিটিয়ে ফেলুন ।
তাদের বিদায়- এর পরে
তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় এর পর যথাসম্ভব তাদের পছন্দনীয় ব্যক্তির সাথে ভালো ব্যবহার করুন , যদিও কিছু ক্ষেত্রে হয়ত আপনি সেসব লোকদের ভালো চোখে দেখেন না। বাবার বন্ধুদের-কে পারলে মাঝে মাঝে উপহার দিন।
--- উপসংহার ---
একসময় আপনি বৃদ্ধ হবেন ( যদি বার্ধক্যের আগে মৃত্যু না হয় ) সেই সময়কে স্নরন করুন । আপনি আজ যে অবস্হায় আছেন তার জন্য তাদের প্রতি কৃতগ্য হোন । আপনার মানসিক, চারিত্রিক , সৌজন্যমুলক চিন্তাধার সবকিছুর জন্য তাদের অবদান অপরিসীম । বলা হয় বিখ্যাত দার্শনিক 'শোপেনহাওয়ার' ছিল নৈরাশ্যবাদি , প্রচুর হতাশায় ভুগতেন এবং কারন হিসেবে বলা হয় সে ছোটকালে মায়ের আদর পাননি ।
আমার এটা ভুলব না আশাকরি ।
যদি আপনাদের কারো পিতা বা মাতা মারা গিয়ে থাকে তাহলে সময় থাকলে মাঝে মাঝে তাদের কবর জিয়ারত করুন । এতে মনের অহংকার দুর হয় । কবরের সামনে দাড়িয়ে স্নরন করুন " আজ আমরা যেমন বেচে আছি একসময় তারাও বেচে ছিল , আজ তারা যেমন মৃত একসময় আমাদেরও পরিণতি তেমন হবে"
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




