চতুর্মাত্রিক ব্লগে লিখেছেনঃ দেশী পোলা (পূর্বপ্রকাশিত তারিখঃ ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩:০৪ পূর্বাহ্ন)
ছোটবেলায় বিচ্ছু টাইপের নাস্তিক ছিলাম,
হুজুরদের পাইলে একটা প্রশ্ন করতাম, আচ্ছা আল্লাহরে কেডায় বানাইছে?
আপনের আল্লাহ নাকি সর্বশক্তিমান, উনি কি একটা পাথর বানাইতে পারবে যেইটা আল্লাহ নিজেই উঠাইতে পারবে না?
এইরকম আউফাউ গ্যান্জাম করতে ভাল লাগতো, ফাযিল কামিল পাশ করা তালবে এলেমরা এইসব প্রশ্নের উত্তর না দিতে পেরে আমাকে কোরআন পড়তে বলতো, আমিও দাঁত কেলিয়ে হাসতাম। আল্লাহ সুবহানাতালা এই দোষে আমাকে আজও ছাগুদের সামনে নাস্তিক বানিয়ে রেখেছে
ব্লগের সত্তর ফেরকার নাস্তিকদের সাথে তুলনা করলে আমি মনে হয় দুধভাত ক্যাটাগরিতেই পড়তাম। আকাশ মালিকের মত বিবি আ্য়েশাকে নিয়ে পরচর্চা, অথবা অভিজিত রয় এর মত আতলামী করার বয়স তখন ছিল না। গীতা বাইবেল ত্রিপিটক পড়ে পড়ে নিজের মাথায় নানা রকমের চিন্তা ঢুকিয়ে কনফিউজ থাকতাম, কখনও হাদিস কোরান নিয়ে সংশয় হতো, কখনও বা মনুসংহিতা নিয়ে। সত্যি বলতে আমি যতটা না নাস্তিক তার চাইতে হয়তোবা সংশয়বাদটাই বেশী ছিল আমার মাঝে
আমার এই সংশয়বাদী ভাবটা মোটামুটি দূরীভূত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময়ে। আমার অভিজ্ঞতাকে নাড়া দিয়ে বেশ কয়েকটা অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে সে সময়ে, সবচেয়ে মনে দাগ কাটার মত ঘটনা ঘটে পাশের শহরে, একটা তিন বছরের ছোট্ট ছেলে ও এক মহিলার গলিত লাশ পাওয়া যায়, খুনী ছিল মহিলার স্বামী, এক বাংলাদেশী। ছেলেটি ছিল মহিলার বোনের ছেলে, দুই বোন সোফিয়া ও মেরি জামান নিউইয়র্ক থেকে এসেছিলেন ইন্ডিয়ান দোকানে কাজ করতে। মহিলার স্বামী এক অশুভদিনে দোকান থেকে কুড়াল বস্তা দড়ি ইত্যাদি কিনে এনে মহিলা ও তার বোন এবং ছোট ছেলেটিকে মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়, তারপর বাংলাদেশে চলে যায়। আমেরিকান সরকারের সব তৎপরতা ও প্রমানাদি থাকা সত্ত্বেও তাকে আমেরিকাতে ফেরত নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি
তিন বছরের ছোট্ট ছেলেটির লাশ নিয়ে বেশ হুলস্থুল হয়েছিল, শহরের অনেক চার্চ ও সামাজিক সংগঠন এক হয়ে গলাকাটা লাশ দুটির সৎকারের ব্যবস্থা করেন। আমি তখন আমেরিকান বিচার ব্যবস্থা ও বাদবাকি নাস্তিক লেভেলের বস্তুবাদী মতবাদে প্রচন্ড বিশ্বাসী, কিন্তু ছোট্ট শিশুটির উপরে করা অবিচারটা নিয়ে আমার প্রশ্ন জাগে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের বিচার ব্যবস্থা যেখানে মূল্যহীন, সেখানে শিশুটির আত্মা বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা কার কাছ থেকে বিচার চাইতে পারে?? এর উত্তর আমার কাছে ছিল না। সেদিন থেকে মানুষের প্রতি অবিচার দেখে আমার ঈশ্বরে বিশ্বাস জন্মেছে। আশা করি মরনের পরে এইসব অবিচারের বিচার করার জন্য কেউ আছেন, তা না হইলে এই পৃথিবীতে মানুষের আসলেই দরকার নাই। মানুষের সভ্যতারও কোন দরকার নেই, মানুষ ছাড়াই পৃথিবীটা ভাল চলত। যে সর্বশক্তিমান এই মানুষ সৃষ্টি করেছে, সে যদি আসলেই না থাকে, পৃথিবীতে বেঁচে থাকা, সংসার করা, জীবনের বাকি মূল্য, সবই অর্থহীন। কারণ আমি মরলেই তখন সব শেষ, আমার অভিযোগ অনুযোগ, সবই তখন মূল্যহীন। কেউ আমার উপর কোন অবিচার করলে, বা আমার প্রতি কারো কোন অভিযোগ থাকলে, তার জওয়াব দেবার জন্য তো কেউ আমার দেহকে ধরে রাখবে না। তাই আন্তরিকভাবেই আমি কামনা করি যে সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছেন, বিচার করবার কেউ আছেন, তা না হলে এই মানবজীবনের অবিচার অনুযোগ অভিযোগ গুলো এক জনমে কেউ প্রতিকার করতে পারবে না।
নাস্তিক হওয়ার সবচেয়ে বেশি জ্বালাতন সহ্য করেছেন আমার স্নেহময়ী মা, হাসিমুখে সব বেখাপ্পা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেন, আমাকে প্রশ্ন করবার সাহস যোগাতেন। আমি ঘুরে ফিরে আবার সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসে ফিরে এসেছি শুনে তিনিই সবচেয়ে বেশি হেসেছিলেন।
এমাসে আমার মায়ের ইহধাম ত্যাগের চারবছর পূর্ন হলো। প্রতিদিন মাকে স্বপ্নে দেখি, তার আদেশ শুনি। এই নশ্বর দেহত্যাগ করলে আমার আমিত্ব ফুরাবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি, আশা করি পরপারে মায়ের দেখা পাব।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৯