সম্মানিত ব্লগার চাদগাজী কে অনেকদিন ধরেই চিনি, ফারমার নামে প্রথম দিকে ওনার কমেন্টের জন্য আমারব্লগ থেকে ওনাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, মুক্তকন্ঠে উচ্চকিত মতামত প্রদানের জন্য উনি অনেকেরই চক্ষুশূল। তবে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা হবার সুবাদেই উনি ভালমন্দ যাই বলেন, সেটা সবার শ্রদ্ধাভরে শোনা উচিত। ফারমার সাহেবের প্রত্যেকটা পোস্টই আমি পড়ি, মাঝে মাঝে কিছু বলার থাকলে বলি , না থাকলে মৌনতায় সমর্থন জানাই , তবে তার নতুন পোস্ট পড়ে কিছু চিন্তার খোরাক এল, সেটাই এখানে বলছি
ফারমার/চাদগাজী সাহেবের মত এদেশের সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিল না, কিণ্তু স্বাধীনতা চেয়েছিল অনেকেই। আজকে সবাই আওয়ামী লীগ করে না, কিণ্তু দেশে সুশাসন চায় অনেকেই। দেশে কুশাসন বজায় থাকলে যাদের সুবিধা হয়, তাদের অনেকেই আজকে নানা দলের হয়ে কেচাল বাড়াচ্ছে, কিণ্তু এদের মধ্যেকার কানেকশনের কিন্তু কোন কমতি নেই। রাজাকারের ছেলে আজ আওয়ামী লীগে বিয়ে করছে, বিএনপির বেয়াই আওয়ামী বেয়াইয়ের বাড়িতে কোরবানীর গরু পাঠাচ্ছে, আর জাতীয় পার্টি বা জামাতের মেম্বাররাও ঘি ভাতের শেয়ার পাচ্ছে।
চাদগাজীর মতো অভাগা কয়েকজন যারা স্বদেশ ছেড়ে চলে গেছেন, তারা দূর থেকে এসব খাওয়া খাওয়ি দেখে দেশের দুঃখে বুক চাপড়াচ্ছেন।
একটু প্যারাডাইম শিফট করি, এইসব দেশ নীতি নেতা ধর্ম নিয়ে যে বিভেদ ঘটছে দেশে, এইসব লোক আপনার বলা কথা শুনবেও বা কেন?
সামনের যে জেনারেশন এসব দলের হাল ধরবে, এদের জন্ম ৭১ এর পরেই। দশ বছর আগে যে শিশুর জন্ম হয়েছে সে শিশু আর আট বছর পরে দেশের ভোটার হবে, এই ভোটারকে স্বাধীনতার গপ্প শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করা যাবে? না কি টাকাপয়সার লোভ দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করা যাবে?? আজকাল আদর্শ বা নীতিবাদের কথা কেউ শুনতে চায় না, সকলেই আছে দেনা পাওনার হিসাবে। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে দেশটাকে যারা চালাবে, তারা যদি দেশের মানুষকে ঠিকমত লাইফ ও লিবার্টির নিশ্চয়তা দিতে না পেরে মুজিব বা জিয়ার দোহাই দেয়, কোন শালায় সেটাকে মুখ বুজে মেনে নেবে?? দেশবাসীর সবাই তো তাবলীগের লোক না, দেশের জন্য জান দিলে হয়ত শহীদি খেতাব মেলে, দলের জন্য জান দিলে বেহেস্তেরও কোন গ্যারান্টি নাই।
মধ্যবিত্ত মানসিকতার লোকজন কে দিয়ে আর যাই হোক, দেশ ও সমাজকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না। বাঙালী মধ্যবিত্ত জীবনের লক্ষ্য একটাই, একটা বিয়া, দুইটা পোলাপান, এক টুকরা জমি বা ফ্ল্যাট, মরার আগে কালচার বা ধর্ম নিয়া হাদুমপাদুম করা। তারপর আজরাইলে আসলে মিরপুর বা যাত্রাবাড়ীর গোরস্তান বা শশ্মানে ঠাই নেওয়া। এই টুকু হাসিল করার জন্য তারা স্কুলে যায়, গোল্ডেন জিপিএ পায়, কলেজে যাইয়া চোথা বানাইয়া কোচিং করে, ইউনিভার্সিটিতে যাইয়া প্রেম পিরীতির ফাকে ফাকে পরীক্ষা পিছানোর আন্দোলন করে, সবশেষে দুইটা পয়সার জন্য বিসিএস দিয়া সরকারী ঘুষের চাকরী অথবা বিদেশী ফোনের কুম্পানীতে কুলিগীরি করে।
এখন এই অলস জাতিকে সরাতে হলে কি করা উচিত? ব্লগে পোস্ট লিখে বা শাহবাগে মানববন্ধন করে এই সমাজকে চেন্জ করা সম্ভব হবে না। সবাই মিলে গড়বো দেশ, দু:খের দিনের হবে শেষ; দাসত্বের হোক শেষ, ব্উ ফেলে যাবো না বিদেশ; ভোট দিতে না দিলে, পাকাবো কাঁঠাল হাতের কিলে! এই রকম মনোভাবের কিছুই আজকে নেই
জাতি বিশাল এক স্বপ্নে বিভোর ছিল ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালে; এই জাতির ছেলেরা যুদ্ধে গিয়েছিল, সেই প্রেরনা আজকে পাবেন না, জাতীয় প্রেরণা গড়ে উঠে যখন জাতির সামনে আশা থাকে, উদ্দীপনা থাকে, স্বপ্ন থাকে! নতুন আশা উদ্দীপনা স্বপ্ন গড়তে আরেকটা লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসুন
দেশের প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রী পর্যন্ত বিনে পয়সায় পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করে দিন, দেশ পাল্টে যাবে
এই জেনারেশনের ছেলেগুলা বিদেশে গিয়ে কামলা খাটুক, অসুবিধা নেই, শ্রমের মর্যাদা শিখবে
দেশের প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রী পর্যন্ত পড়াশোনা করা বাধ্যতামূলক করা হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসবে আর সেসব মাস্টার্স পড়া মায়েরাই শিক্ষিত হয়ে নেক্সট জেনারেশনগুলোকে শিক্ষা দিয়ে উপরে উঠিয়ে দেবে, বাঙালীকে আর আরব দেশে গিয়ে কামলা খাটতে হবে না ওটাই হবে দেশের উন্নতির জন্য সর্বোৎকৃষ্ট ফর্মুল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৯