somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ নেতা নেত্রীদের নিয়ে কিছু কথা

০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুল আকাংখিত নতুন রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক পার্টির গতকাল আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। মানিক মিয়া এভিনিউতে সম্পুর্ন ভিন্ন ধারার এক রাজনৈ্তিক দলের সমাবেশ আমরা দেখলাম। মঞ্চে কোন চেয়ার ছিল না। দলের সব নেতৃবৃন্দ একসাথে মঞ্চের ফ্লোরে বসেছিল । আলাদা করে বিশেষ কাউকে প্রাধান্য দিতে দেখা যায়নি। নেতা নেত্রীদের সবাইকে একই কাতারে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একের পর এক নেতা এসে তাদের বক্তব্য রেখে গেছে। নেতাদের বক্তব্য কেমন লেগেছে , তা নিয়ে আলোচনা করতেই এই পোস্টের অবতারনা।

জুলাই বিপ্লবের কান্ডারি ধীর স্থির স্বভাবের নাহিদ ইসলাম সবার শেষে বক্তব্য রেখেছে। বরাবরের মতই স্বান্তভাবে সে তার বক্তব্য রেখেছে। পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ডে প্রকৃত গনতান্ত্রিক একটা রাজনৈ্তিক দল গঠনের কথা জানিয়েছে নাহিদ। তার বক্তব্যের প্রতিটা বাক্যে জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। ধীর, স্থির স্বভাবের এই নাহিদকে দেখলে বোঝার উপায় নাই যে , সে কতটা দৃঢ়চেতা ও নির্ভীক এক তরুন। জুলাই মাসে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে নাহিদই প্রথম গুম এর শিকার হয়। আয়নাঘরে নিদারুন টর্চারের শিকার হয়ে সে যখন ফিরে আসে , তখন ভেবেছিলাম এরপর তাকে আমরা আর আন্দোলনে দেখতে পাব না। আওয়ামিলীগ আমলে যারাই গুমের শিকার হয়েছে , তারা সবাই ছাড়া পেলেই নিভৃতে চলে যেত। জনসমক্ষে তাদের আর দেখা যেত না। গুম সংক্রান্ত কোন কথাই তাদের মুখ থেকে বের করা সম্ভব হত না। কারনটা সহজেই অনুমেয়। নাহিদই প্রথম ব্যক্তি যে বিবিসি বাংলায় তার গুম হবার কথা প্রকাশ করে এবং আয়নাঘরে নিয়ে শারীরিক টর্চারের প্রমান সাংবাদিকদের সামনে উন্মোচন করে। আসলে এই তরুনেরা তখন মৃত্যূ্ভয়কে অতিক্রম করে ফেলেছিল। জুলাই এ নিহত শহীদদের কাতারে সামিল হবার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। সেই নাহিদকে যখন উপদেষ্টা পদে দেখেছি, এক বিন্দু পরিবর্তন তার মাঝে দেখতে পাইনি। এত অল্প বয়সে ক্ষমতা হাতে পেয়েও , এক বিন্দু অহংকার তার মাঝে প্রকাশ পায়নি।আবার দেশের প্রয়োজনে ক্ষমতা ছেড়েও এসেছে খুব স্বাভাবিকভাবে। এই প্রজন্মের তরুনেরা বুঝিয়ে দিয়েছে ক্ষমতা আসলে ব্যক্তিগত কোন প্রাপ্তি নয় , রাস্ট্রীয় ক্ষমতার অর্থ হচ্ছে জনগনের সেবক।

জুলাই বিপ্লবের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের এর সহজ সরল আঞ্চলিক টানে বক্তব্য বরাবরই ভাল লাগে। তাকে দেখলেই আমার জুলাই এর সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায় । গুম হয়ে যাওয়া আসিফ, বারেক ও রিফাত রশিদের জন্য কাদঁতে কাদঁতে বক্তব্য দেয়ার সময় রাস্তায় শুয়ে পড়ে হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দিয়েছিল এই হান্নান। এই ছেলেগুলো যেভাবে জনগনকে রাস্তায় নেমে আসতে অনুপ্রানিত করেছে , তা আসলে ভুলবার নয়। তবে গতকাল তার বক্তব্যে নাহিদ ইসলামকে '' গনতন্ত্রের ইমাম '' বলাটা ভাল লাগে নাই। এইসব চাটুকারীতা সুলভ আচরন থেকে ছাত্রদের দূরে থাকতে হবে।

জুলাই বিপ্লবের দুই আলোচিত নেতা হচ্ছে সারজিস ও হাসনাত। এই দুইজনকে লোভ দেখিয়ে আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল বিগত লীগ সরকার। সেদিন যদি তারা টাকা ও ক্ষমতার কাছে বিক্রি হয়ে যেত , তাহলে স্বৈরাচারী পতনের এই আন্দোলন সফল হত কিনা সন্দেহ। অনেক আন্দোলনই সফলতার মুখ দেখে না ষঢ়যন্ত্রকারীদের কারনে । সেই সময়ে প্রাথমিকভাবে সমন্বয়কদের মাঝে কিছু ভুল বোঝাবোঝি তৈরী হলেও খুবই দ্রুততার সাথেই তারা সেটা মিটিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ছয় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ককে সব সময় এক সাথেই দেখা গেছে। হাসনাত ও সারজিস বিপ্লবের পরে আরো নজর কেড়েছে তাদের জ্বালাময়ী বক্তৃতায় । দুইজনেই এক্স বিতার্কিক হওয়ায় তাদের বক্তব্য সব সময়েই অত্যন্ত ক্লিয়ার এবং টূ দ্যা পয়েন্ট। এদের সাথে টকশোতে বিতর্ক করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছে অনেক বক্তাই।

এবার আসি নাগরিক কমিটি থেকে আসা কিছু নেতাদের বিষয়ে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এরা পরিচিত মুখ নয়। এরা সমন্বয়কও ছিল না। এরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে কাজ করেছে। এদের মাঝে অন্যতম হচ্ছে আখতার হোসেন এবং মাহফুজুল আলম। এরা দুই জনেই ঢাবিতে আইন বিভাগে সহপাঠী ছিল এবং ঢাবি শিক্ষক আসিফ নজরুলের ছাত্র। তবে জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে যারা এসেছে তাদের কাউকেই তেমন প্রমিজিং মনে হয়নি। আখতারের বেশ ভুষা , বক্তৃতা কোনটাই নজর কাড়ার মত নয়। সে বিবেচনায় মাহফুজ বরং এগিয়ে । মাহফুজের বক্তব্য বরাবরই বস্তুনিষ্ঠ , তথ্য নির্ভর এবং জোড়ালো। নাগরিক কমিটির আরেক নেতা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর বক্তৃতাতো আরো সাদামাটা। গতকাল অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে কিছুটা বিশৃংখলা তৈ্রী হলে সে যেভাবে হাত নাড়িয়ে মানুষজনকে ধমকাচ্ছিল তা খুবই দৃষ্টিকটু ছিল। পরে সারজিস এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে তিনজন নারী নেত্রীকে দেখা গেছে যাদের মাঝে একজন হচ্ছেন তাসনীম জারা। তাসনিম জারা যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের একজন চিকিৎসক ও ‘সহায় হেলথ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে উচ্চতর পড়াশোনা করতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখান থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল (ডিসটিঙ্কশন) অর্জন করে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। নতুন দলে এই সিলেকশনটা খুবই ভাল হয়েছে। ভবিষ্যতে মেধাবী ও যোগ্য মানুষেরা রাজনীতিতে আগ্রহী হবে। তাসনিম তার বক্তব্যে বলেছেন, '' আমরা রাজনীতি ক্ষমতা দখলের জন্য করতে আসিনি। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে এসেছি। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে যেকেউ তার যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে জনগণকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। এতে তার পারিবারিক পরিচয় মুখ্য হয়ে উঠবে না। ''। আরেক গুরুত্বপুর্ন নেত্রী সামান্তা শারমিনকে নাগরিক কমিটি গঠন করার পরেই প্রথম দেখেছি। কিসের বিবেচনায় সে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে এত গুরুত্বপুর্ন পদ পেল বোধগম্য নয়। গতকাল ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্য শুনেছি। একেবারেই সাদামাটা। তার বক্তব্য মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তার করার মত নয়। সে তুলনায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম অনেক বেশী প্রমিজিং । নুসরাত পরিচিত মুখ এবং তার ভাল বক্তৃতা দেবার ক্ষমতা আছে।

অনেকেই হয়ত বলবেন যে পরিচিত মুখ এবং ভাল বক্তৃতা দেয়াটাকে আমি এতটা গুরুত্ব দিচ্ছি কেন? আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সামনে যখন এই নতুন দল ইলেকশন প্রচারনাতে নামবে, তখন তাদের বক্তৃতাই একমাত্র সম্বল যা জনগনের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম। আওয়ামিলীগ ও বিএনপি নেতাদের কোন ধরনের যোগ্যতার প্রয়োজন নাই। তারা টাকা দিয়েই প্রসাষন, ভোটার সব ম্যনেজ করে আমাদের দেশে যা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হিসাবে পরিচিত। এদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে প্রয়োজন জোরালো বক্তৃতা দেবার ক্ষমতা। এছাড়া জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে প্রাইভ্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের খুবই গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা ছিল। লাশ কিন্তু বেশিরভাগ প্রাইভেট ইউনির পড়েছিল। তাই প্রাইভেট ইউনি থেকে একজন প্রতিনিধি নেতৃত্বের ভুমিকায় নেয়া আবশ্যক ছিল। যাই হোক সব মিলিয়েই প্রাথমিকভাবে একটা দল গঠিত হয়। ভুল ত্রুটি শূধরে নেবার অনেক সময় পড়ে আছে সামনে। সবচেয়ে বড় কথা পরবর্তীতে যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রত্যেককে দলে টিকে থাকতে হবে।

১৭ বছর ধরে জেকে বসা বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম স্বৈরশাষককে উৎখাত করা এই অকুতোভয় তরুনের দল দেশের সকল গলে পচে যাওয়া সিস্টেম ভেঙ্গে চুরে একটা সভ্য , সুন্দর দেশ গড়ুক , সেই শুভকামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৩
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী কম পায় না, বরং সবটাই পায়—নিজের জন্য

লিখেছেন বক, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৫



ভাই নাঈম আর বোন নাবিলা
নাঈম ও নাবিলা দুই ভাই-বোন।
তাদের বাবা মারা গেলেন এবং রেখে গেলেন উত্তরাধিকার হিসাবে ১৮ লাখ টাকা।

ইসলামি বণ্টন অনুযায়ী:

ভাই নাঈম পাবেন: ১২ লাখ টাকা

বোন নাবিলা পাবেন:... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। একাত্তুর থেকে চব্বিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। তাদের সুস্থ করতে পারিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটু সৃজনশীল হও=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৬


খেয়ে দেয়ে আরামসে ঘুম, এ জীবন বুঝি
খাও দাও ঘুমাও এ কর্ম রোজই,
টিকটকে ভিডিও, ফেসবুকের রিল,
তাতেই করছো সুখ ফিল?

সাজুগুজু, প্রাশ্চাত্যের ড্রেসাপ, হাই হিলে হাঁটা
ব্যস! এমন অহমে পূর্ণ জীবনে ঝাঁটা
নেই সংসার গুছানোতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিসি বিল্ড বিষয়ে টেকি ভাইদের সাহায্য চাই

লিখেছেন জাহিদুল ইসলাম ২৭, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭

দেড় বছর ধরে ডেস্কটপ পিসিটি নষ্ট।ব্লগ লেখা হয় না।ব্লগে আসাও তেমন হয় না।মোবাইল থেকে খানিকক্ষন ব্লগ পড়লে মোবাইল সেটটি বিট্রে করে।আর মোবাইল থেকে কমেন্টের প্রত্যুত্তরও করা যায় না।

এখন রাইজেন ৫৬০০... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার কি পদক্ষেপ নিবে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৭


আওয়ামী লীগের মিছিলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার ডেমরা-উত্তরা- বাড্ডা - মিরপুর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করছে। প্রায় তিনমাস ধরে রাস্তায় মিছিল নামানোর প্রস্তুতি ছিলো। মিছিলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×