সারা জীবন শুনে আসলাম শিয়ারা আদতে মুসলিম নয়। তাদের আকিদা নাকি সঠিক নয়। তবে ইরানি মুভিগুলো দেখে আমার কখনই মনে হয় নাই যে , শিয়াদের মাঝে ইসলামি বিরোধি কোন বিষয় আছে। সুন্নীদের সাথে শিয়াদের আমার একটাই পার্থক্য ধরা পড়েছে যে, তারা হযরত আলীকে প্রাধান্য বেশি দেয় এবং কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার জন্য বছরের পর বছর শোক পালন করে। ছোটবেলায় মহররম মাসে শিয়াদের তাজিয়া মিছিল অনেক দেখেছি। কান্না কাটি করে মাতমের সাথে নিজেদের রক্তাক্ত করার বিষয়টা খুবই অতিরঞ্জিত মনে হত। ভেবে পেতাম না হাজার বছর ধরে তারা এই প্রথা কেন পালন করছে। কয়েক বছর আগে ইউটিউবে কারবালা সিরিয়াল দেখে কারবালা ঘটনাটার আদ্যপান্ত বুঝতে পেরেছি। কেন বছরের পর বছর শিয়ারা মাতম করে , তার কারনটা ধরতে পেরেছি।
কুফা শব্দটা আমরা ব্যড লাক হিসাবে জানি। শব্দটার অন্তর্নিহিত অর্থ কারবালা ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। ইরাকে কুফা নামে একটা নগর রয়েছে। এই নগরের সন্নিকটে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা ময়দান অবস্থিত। মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) মদিনা থেকে কুফাতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। উররাধিকার সুত্রে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) সন্তান ইয়াজিদ ৬৮০ সনে ক্ষমতায় আসেন। উত্তরাধিকার সূত্রে খিলাফত লাভকারীদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম খলিফা হন। কুফার জনগন সিরিয়া-ভিত্তিক উমাইয়া খলিফাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে তারা আলির বংশধরদের প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে আসছিল। তারা হযরত আলীর ছেলে হোসাইন (রা.কে ইসলামের খলিফা রুপে পেতে চাইছিল। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হোসাইনের (রা.) স্ত্রী, ছেলে, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তাকে বাধা দেন। রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধের উদ্দেশে হজরত হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন। ১. তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেয়া হোক। ২. তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক। ৩. ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক। কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণা ভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ভেবেছিলেন যে , কুফাবাসী তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। হোসাইন (রা এর জানা ছিল না যে, কুফাবাসীদের বেশিরভাগই সেই সময়ে ইয়াজিদের ছড়ানো টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে এবং অনেকেই ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেছে। ইয়াজিদ বাহিনী ১০ মুহাররম তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক অসম যুদ্ধে একমাত্র ছেলে হজরত জায়নুল আবেদিন (রহ.) ছাড়া ৭০ থেকে ৭২ জন শহীদ হন। হজরত হোসাইন (রা.) মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান।
হোসাইনের (রা. মর্মান্তিক শাহাদত বরনের পর কুফাবাসীর বিবেক জাগ্রত হয়। কুফার জনগণ নিজেদের বিশ্বাসঘাতকতাকে এই মর্মান্তিক ঘটনার অন্যতম কারন হিসাবে চিহ্নিত করে। পরবর্তীতে কুফাবাসীরা এই খুনের বদলা নেয়। সেই সাথে নিজেদের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তিস্বরুপ ১০ই মহররমে তাজিয়া মিছিল, মাতম (নাআহ), মার্সিয়া পাঠ, বুকপেটানো, এমনকি আত্ম-আঘাতের মাধ্যমে শোক পালনের প্রথা শুরু করে। হাজার বছর ধরেই শিয়ারা এই রীতি পালন করে আসছে। সুন্নী মুসলমানরা কারবালার ঘটনাকে একটি মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি এবং ইসলামের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক ঘটনা হিসেবে দেখে। কিন্ত মাতম, তাজিয়া, ও আত্ম-আঘাতমূলক কর্মকাণ্ড ইসলামবিরোধী বলে মনে করে। শিয়া সুন্নীর মধ্যকার দ্বন্দ এই ঘটনা থেকেই সুত্রপাত।
১৪০০ বছর পরেও আরব ভুমিতে রক্ত ঝড়া বন্ধ হয়নি। আজো ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন ইজরাইলের হাতে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যূ বরন করছে। কিন্তু নিজেদের সহি মুসলিম দাবী করা সুন্নিরা কি করছে তাদের জন্য ? বছরের পর বছর হজ্ব করতে দৌড়ানো হাজিরা কি কোনদিন এ নিয়ে ভেবেছে? ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল সৌদি আরবের বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে কি সুন্নী উম্মাহর আওয়াজ তোলার সময় হয়নি ? হজ্ব থেকে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লাভ করে সৌদি সরকার । সেই টাকা কি মুসলিম উম্মাহর জন্য ব্যায় করা হয় ? সৌদি রাজতন্ত্রের কাজকারবারেতো মনে হয় না একটা টাকাও তারা মুসলিম উম্মাহর জন্য খরচ করে। বরং ইজরাইলের অকৃত্রিম বন্ধু সৌদি রাজপরিবার ইজরাইলকে মিসাইল, যুদ্ধাস্ত্র কিনতে টাকা দিলে অবাক হবার কিছু নাই। বছরের পর বছর ইজরাইল যে পরিমান টাকা অত্যাধুনিক মিসাইল, আয়রন ডোম, যুদ্ধাস্ত্র কিনতে ব্যায় করে , সেই টাকার উৎস কি ? আমেরিকা ইজরাইলেকে সমর্থন করতে পারে কিন্ত তাই বলে আমেরিকার জনগনের ট্যক্সের টাকা নিশ্চই ইজরাইলের অস্ত্র কিনতে ব্যায় করবে না।
আজ শিয়াপন্থী ইরান ইসলামের শত্রু ইজরাইলের বিরুদ্ধে একাই লড়াই করে চলছে । ইরানের ক্ষমতাসীন শাষকের বিরুদ্ধে ইরানবাসীর হাজারো ক্ষোভ থাকলেও ইজরাইলের বিরুদ্ধে পুরো জাতি একতাবদ্ধ হয়ে গেছে। ইজরাইল ইরানিদের খোমেনির বিরুদ্ধে সরকারবিরোধি গন অভূত্থ্যানের আহবান জানালে তারা সেটা নাকচ করে তেহরানে ইসরায়েলি ও আমেরিকান পতাকা পোড়াচ্ছে এবং নিহত নেতাদের ছবি প্রদর্শন করছে । জানি না ইরান কতদিন এই যুদ্ধে একা টিকে থাকতে পারবে , কিন্তু ইসলামের জন্য তারা যেভাবে জীবন বাজি রেখেছে তা চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। প্রতি বছর কয়েক দফা উমরাহ , হজ্ব করা নিজেদের সহি মুসলিম দাবী করা সুন্নীদের চোখের সামনের অজ্ঞতার পর্দাটা যতদিন না সরবে, ততদিন মুসলিমদের রক্ত দেশে দেশে ঝড়বেই।
তথ্য সুত্র ঃ উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




