দেশীয় রাজনীতিতে বর্তমানে হট টপিক হচ্ছে পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। যদি কোনো দল মোট প্রদত্ত ভোটের ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবে।বর্তমানে বিশ্বের ১৭০টি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ৯১টি দেশ, অর্থাৎ প্রায় ৫৪ শতাংশ রাষ্ট্র, তাদের আইনসভা নির্বাচনে কোনো না কোনো ধরনের পিআর পদ্ধতি অনুশীলন করে। মূলত উন্নত বিশ্বে পিআর পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বেশি।
পি আর পদ্ধতির নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ,আমাদের দেশে এক দলীয় শাষন ব্যবস্থার অবসান ঘটবে। ফলে অবসান ঘটবে দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির। প্রসাষন, সসস্ত্র বাহিনী , বিচার বিভাগ, আইন শৃংখলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্ত হবে নোংরা লেজুরভিত্তিক তোষামোদির রাজনীতি থেকে । বর্তমানে জামাত সহ ইসলামপন্থী দলগুলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য লড়াই করছে । বিএনপি এই পদ্ধতির পুরোপুরি বিরুদ্ধে । তাদের পিআর পদ্ধতি না চাওয়ার পেছনে কারন রয়েছে । তারা পুর্বের ফ্যসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চায় না। ক্ষমতায় যাবার আগেই তারা প্রসাষন , আইন শৃংখলা বাহিনী ও বিচার বিভাগে পুর্ন দলীয়করন নিশ্চিত করেছে। ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপির আরেক ফ্যসিস্ট হিসাবে আবির্ভুত হবার সকল আলামত এখন স্পষ্ট। তবে ডাকসু ও জাকসু ইলেকশনের ফলাফল তাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেভাবে ছাত্র শিবিরকে বিপুল ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে , তাতে এর প্রভাব যে জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে তা স্পষ্ট। আওয়ামিলীগের দুঃসাশনে অতিষ্ঠ জনগন বিএনপিকে যে রুপে দেখতে চেয়েছিল দুঃখজনকভাবে সে রুপে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। শহীদ জিয়ার বিএনপিতো দূরে থাক, খালেদা জিয়ার বিএনপিকেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। দেশে না এসে অনলাইনে বসে কোন রাজনৈ্তিক দলের চেয়ারম্যানের ভার্চুয়াল স্ক্রীনে ভাষন দেয়ার নজির এই পৃ্থীবিতে আর নাই। এই কারনে বর্তমান বিএনপিতে এখন বলতে গেলে কোন চেইন অভ কমান্ডই নাই। নেতা নেত্রীরা যে যার ইচ্ছামত চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছে , পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে আঁতাত করছে, বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে দলকে আরো বিপাকে ফেলছে। নির্বাচনে কারচুপি করতে না পারলে বিএনপির ক্ষমতায় আসা দূরে থাক ইলেকশনে কয়েকটা সীটও পাবে কিনা সন্দেহ। তবে রক্তস্নাত গনঅভ্যূ্ত্থানের পর রিগড ইলেকশন আয়োজন করাটা এক প্রকার অসম্ভবই বলা যায়। তাই তারেক রহমানের ঘটে কয়েক ছটাক বুদ্ধি থাকলেও পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে রাজী হয়ে যাওয়া উচিত। জামাত শিবির রাজাকাররের দল, মৌলবাদি দল ইত্যাদি ট্যগিং বর্তমান ভোটের রাজনীতিতে উল্টো ফলাফলই বয়ে আনবে যেমনটা ডাকসু ও জাকসু ইলেকশনে দেখা গেছে।
গনঅভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুনদের সমন্বয়ে গঠিত দল এনসিপিও পি আর পদ্ধতির নির্বাচনে রাজী নয় । তারা কেন রাজী নয় , তা একেবারেই বোধগম্য নয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গনঅভ্যূত্থানের সুচনা ও পরবর্তীতে সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বৈরাচার বিতারন সেই শিক্ষাঙ্গনেই ডাকসু ইলেকশনে যেভাবে বাগছাসের ভরাডুবি ঘটেছে , তাতে জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি কি আশা করে ? তাদের নিজের শিক্ষাঙ্গনের গনঅভ্যূত্থানের সঙ্গীরাই তাদের যেখানে ভোট দেয়নি , সেখানে সারা দেশের জনগন তাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে এরকম আশা করাটা নেহাৎই আহাম্মকি ছাড়া আর কিছু নয়। বরং পিআর পদ্ধতিতে তাদের কিছু সীট পাবার আশা রয়েছে। দেশের সচেতন জনগন হিসাবে আমরা নাহিদ, হাসনাত, সারজিস , সারোয়ার তুষার ,তাসনিম জারাদের সংসদে দেখতে চাই। তারা যেভাবে রাস্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে বর্তমানে বক্তব্য দিচ্ছে , সংসদে বসে আরো জোড়ালোভাবে সেই বক্তব্যগুলো বিল হিসাবে উপস্থাপন করতে পারবে। আমরা এমন একটি কার্যকর জনবান্ধব সংসদই সামনে দেখতে চাই। ২০২৪ এর হাজারো তরুনের রক্তের সাথে সুবিচার একমাত্র পি আর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
তথ্যসুত্র ঃ গনমাধ্যম
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




