একটা উদাহরণ দিয়েই শুরু করি ।
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত হাদিস, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, "তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জাগার পর হাত তিনবার না ধুয়ে পানির পাত্রে ডুবাবে না, তোমরা জাননা ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাদের হাত কোথায় স্পর্শ করেছে ।" (সহী বুখারী ১৬০, সহী মুসলিম ২৭৮ )
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلَا يَغْمِسْ يَدَهُ فِي الْإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلَاثًا فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ
160 صحيح البخاري كتاب الوضوء باب الاستجمار وترا
278 صحيح مسلم كتاب الطهارة باب كراهة غمس المتوضئ وغيره يده المشكوك في نجاستها في الإناء قبل غسلها ثلاثا
রাসূল (স) এর এই মূল নির্দেশকে আমলে নিয়ে বিভিন্ন আলেম তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা, পারিপার্শিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা, ফতোয়া দিতে পারেন, যেমন ;
১. এ নির্দেশ রাতের ঘুমের বেলায় প্রযোজ্য, দিনের স্বল্পকালীন ঘুমের বেলায় হাত না ধুলেও ক্ষতি নেই
২. হাতে স্পষ্টত কোনো ময়লা যদি না থাকে হাত না ধুলেও ক্ষতি নেই
৩. গভীর ঘুম না হলে, হালকা ঘুমের বেলায় হাত না ধুলেও ক্ষতি নেই
৪. পড়নে লুঙ্গি থাকলে ধোয়া আবশ্যক, পায়জামা বা প্যান্ট পড়া থাকলে হাত না ধুলেও চলবে
৫. পায়জামায় ইলাস্টিক থাকলে ধুতে হবে, ফিতা দিয়ে বাঁধা থাকলে হাত না ধুলেও চলবে
৬. মলমূত্র ত্যাগে বেশি জরুরি হলে হাত পরে ধুলেও চলবে, ইত্যাদি ইত্যাদি !
এর কোনোটিই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলা চলে না, যদিও সবকটিতেই রাসূল (স) এর সার্বজনীন মূল নির্দেশনাকে অবস্থাভিত্তিক করে এর পরিধিকে সীমিত করা হয়েছে .
আমরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো একটা কাজ করতে আগ্রহী হই এবং তার ধর্মীয় অনুশাসন সম্বন্ধে সন্দেহ জাগে, তখন তার শর’য়ী অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন আলেমের কাছে এ সম্পর্কিত ফতোয়া তালাশ করি। এক আলেমের ফতোয়া পছন্দ না হলে আরেক আলেমের কাছে ছুটি! আমরা ফতোয়া তালাশ করি যতক্ষণ না মনোমতো ফতোয়া মিলে! এ এক মারাত্বক ভুল !!
যে বিষয়ে কোরান এবং রাসূল (স) এর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে সে বিষয়ে কোনো প্রকৃত আলেম উক্ত নির্দেশনার সাথে সংঘর্ষিক ফতোয়া দিতে পারেন না, এমনকি তা আপাত দৃষ্টিতে যতই যুক্তিযুক্ত মনে হোক; দিলেও তা পরিত্যাজ্য।
এমতাবস্থায় আমার আপনার কি করণীয়, এর নির্দেশনা আল্লাহ পাক সুরাহ নিসার আয়াত নং ৫৯ এ স্পষ্ট করে দিয়েছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
"হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্ববান তাদের। তারপর যদি তোমাদের মাঝে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।"
লক্ষণীয় যে মতবিরোধ হলে "দায়িত্ববানদের" কাছে আর যেতে বলেন নি, আল্লাহ এবং তার রাসূল (স) এর কাছে ফিরে যেতে বলেছেন !
রাসূল (স) এর নির্দেশনা মানতে হবে এবং তাতে কোনো মনক্ষুন্নতা থাকতে পারবে না বলে সাবধান করে এর পর আল্লাহ পাক ৬৫ নং আয়াতে এরশাদ করেন,
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا
"অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংশয় থাকবে না এবং তা সম্পূর্ণ হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।"
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান এবং তা গ্রহণ করার মানসিকতা দান করুন !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৩৩