আমাদের জীবনে গালাগালি করা, শোনা, বা প্রত্যক্ষ্য করা একটি নিত্তনৈমত্তিক ঘটনা। ছোট খাটো ভুল বা ঝগড়া থেকে বড় ভুল বা ঝগড়া পর্যন্ত যে কোন কারণে একে অপরকে গালাগালি করা আমাদের স্বভাব ! খুব কম লোকই আছেন যারা এ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। রাস্তায় পথচারী রিকশাওয়ালাকে গালি দেয়, রিক্সাওয়ালা কাদা-পানি ছিটিয়ে দেয়া গাড়িওয়ালকে গালি দেয়, গাড়িওয়ালা সামনে পথ আটকিয়ে থাকা সিএনজিকে গালি দেয় , বাজারে গায়ের সাথে ধাক্কা লাগায় গালাগালি নিত্যদিনের ঘটনা। আর, কোনো কারণে ঝগড়া লাগলে তো কথাই নেই, মা বাপ্ তুলে গালাগালিও শুরু হয়ে যাওয়া বিরল নয়। বাড়িতে কাজের মেয়ে একটা প্লেট ভেঙে ফেললে যেমন গালি দেই, অফিসেও বস বেশি কাজ দিলে মনে মনে তার গোষ্ঠী উদ্ধার করি !
পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা নেই যাতে গালাগালি নেই, যা প্রমান করে শুধু বাঙালিই নয় দুনিয়ার সবাই গালাগালি করে থাকে। এইসব গালাগালির ভাষা সামান্য বিদ্রুপাত্বক থেকে অকথ্য খারাপ পর্যন্ত হতে পারে। আর এর প্রতিপক্ষ হতে পারে সবাই, এমনকি অনেক সময় হতে পারে নিজেদের আত্মীয় পরিজনও। গালাগালি ক্ষমতাশীল থেকে দুর্বল সবাই ব্যবহার করে। তবে দুর্বল অনেক সময় ক্ষমতাশীল প্রতিপক্ষের সামনে করতে পারেনা, করে তার অগোচর। এতে তার অন্তরে জমা ক্ষোভের কিছুটা উপশম ঘটে এবং আত্মপ্রশস্তি লাভ করে।
"ভদ্র" "অভদ্র" লোকই বলেন আর "ভদ্র" "অভদ্র" গালাগালিই বলেন, গালাগালির একটাই উদ্দেশ্য, অপরপক্ষকে আঘাত করা, অপমান করা ! এতে রাগের কিছুটা উপশম হওয়া ছাড়া আর তেমন প্রকৃত লাভ নেই। কাজের মেয়েকে বকা দিলে যেমন ভাঙা প্লেট ফিরে আসবে না, ট্রাফিক পুলিশকে বকেও রাস্তায় যানজট কমানো সম্ভব নয় !
অথচ ক্ষতি কতটুকু আমরা কখনো খেয়াল করি না ! সামাজিক শিষ্টাচার ছাড়াও ধর্মীয় দিক থেকে গালাগালি বা ফাউল ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা কোনো ধর্মই অনুমোদন দেয় না। কোরানে আল্লাহ পাক বলেন, “মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।“ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ৪৯)
এমনই অন্য্ ধর্মের উপাস্যদেরকেও কোনো মন্দ বলা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, “তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। …” (সূরা আনাম , আয়াত ১০৮)
ইমাম বুখারী ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (স) এর বিখ্যাত হাদিসও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, "যে আল্লাহ ও শেষ বিচারে বিশ্বাস করে সে যেন ভালো কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে !"
এরিস্টটলের একটা গল্প দিয়ে শেষ করছি ,
এরিস্টটলকে এক লোক অত্যন্ত বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করলো, তিনি টু শব্দটুকু করলেন না, এতে এক লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, আপনাকে লোকটা এতো গালি দিলো আপনি তাকে কিছুই বললেন না ? জবাবে এরিস্টটল বললেন, আমি যদি তোমাকে দুটো পয়সা দিতে চাই, তুমি যদি তা না নাও, তো সে কার কাছে থাকে ?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৬:১২