বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পোড়ানো বা বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙার সপক্ষে এবং বিপক্ষে মতামত আছে অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশকে স্বাধীন একটা রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনের তার অবদান কেউ অস্বীকার করবে না। তার অবদান যতটুকু ততটুকু দিতে কারো কোনো আপত্তিও নেই, থাকতেও পারে না। তবে শেখ মুজিবও ছিলেন মানুষ, আর সবার মতো তিনিও ভুলের উর্ধে ছিলেন না। তার জীবনেও সাফল্য যেমন ছিল, ব্যর্থতাও ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমান। তাকে অস্বীকার করা মূর্খতা ! তাকে ফেরেস্তা বানানোর চেষ্টা ব্যার্থ হতে বাধ্য !
কিন্তু বিগত সরকার বঙ্গবন্ধুকে মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে যত অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে তার নজির দুনিয়ার আর কোথাও আছে মনে হয় না। জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তার নামে রাষ্ট্র যন্ত্রের লাগামহীন গুণগান প্রচার, অন্যদের অবদানকে ক্রমাগত অবমূল্যায়ন, সারাদেশে অসংখ্য সরকারি স্থাপনার নাম করণ ছাড়াও, চাটুকারদের পরামর্শে ভাস্কর্যের নামে তার অসংখ্য মূর্তি/ছবি স্থাপন করে জন মনে তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার বদলে বিতৃষ্না সৃষ্টি করেছে, সেই পুঞ্জীভূত বিতৃষ্না, ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে এই সরকারের পতনে। বেলুনে বাতাস ধরার একটা সীমা আছে, তার চেয়ে বেশি ঢুকাতে চাইলে ফেটে যাবে সে ভুলে গেলে চলবে না। আজকে এই বঙ্গবন্ধুর অপমান সবটাই তার নিজের কামাই না, এর জন্য দায়ী তার কন্যা, তার অপরিণামদর্শী অবিমৃষ্যকারী ফ্যাসিবাদী কর্মযজ্ঞ!
পাথর ভাঙে ছেলেদের দেখেছেন, একটা পাথর ভাঙতে হয়তো দশটি বাড়ি দিতে হয়, দশ নম্বর বাড়িতে পাথরটি ভাঙে, তবে আগের নয়টি বাড়ির প্রত্যেকটির অবদান আছে এ পাথর ভাঙ্গায়। এ সত্য অস্বীকার করার কোনো জো নেই। এদেশেরই আরো যারা সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ ছিলেন, যেমন এ কে ফজলুল হক, হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বা মাওলানা ভাসানী, তাদেরও অবদান নেই বললে সত্যকে অস্বীকার করা হবে। ইতিহাস নির্ধারণ করবে কে 'হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি'! সে বিচার করতে দেন দেশের জনগণকে। জোর করে চাপিয়ে দিতে গেলে যা হয় সে আজ দেখা যাচ্ছে।
এ সংস্কৃতি বিএনপির শাসনামলেও ছিল, শোনা গিয়েছিলো, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জিয়ার মাজার জিয়ারতে যাননি বলে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা এখন জরুরী।