অলৌকিক ঘটণার প্রতি আমার মোটেও বিশ্বাস ছিল না। তাছাড়া প্রবীর ঘোষ, ভবানী প্রসাদ সাহু, ড. কুভোরদের বই পড়ে পড়ে ভূত-প্রেতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে বিন্দু মাত্র বিশ্বাসও আমার মনে অবশিষ্ট ছিল না। তবে মুসলিম হিসেবে জ্বিন সম্পর্কে কিছুটা বিশ্বাস যে ছিল তা অস্বীকার করতে পারছি না। কিন্তু তা যে আমার জীবনে এমন ভাবে আসতে পারে সেটা আমার ধারণার মধ্যেও ছিলনা। যাহোক আমার ছোট ছেলের জন্ম একটি ক্লিনিকে। যেদিন বাসায় আনা হলো সেদিন থেকেই একটা সমস্যা দেখা দিল। ঘড়ির কাটায় রাত ঠিক একটা বাজতেই ওর কান্না শুরু হতো আর ভোর চারটা পর্যন্ত তা চলতে থাকতো বিরতিহীনভাবে। প্রতি রাতে কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চা দুর্বল হয়ে গেল। সে কান্নাও ছিল সর্বশক্তি দিয়ে চীৎকার করে। আমাদের পরিবারের শিশু চিকিৎসক শিশু হাসপালের ডাইরেক্টর ডাঃ চৌধুরী হায়দার আলির ব্যাক্তিগত তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলতে লাগলো। কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন হলোনা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও কোন রুগের লক্ষণ পাওয়া গেল না। আমি কয়েকটি ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, ১.কান্নার সময়টা একেবারে রাত একটা হতে ভোর চারটা (কখনো এক মিনিটেরও হের-ফের হয়নি), ২.কান্নার সময় বাসার পিছনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্তভাবে চীৎকার করা (অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দিলেও পিছনের দেয়ালের দিকে আবার মুখ ফিরিয়ে আনতো), ৩. কান্নার সময় শরীরের রং পরিবর্তিত হয়ে লালচে হয়ে যাওয়া। ৪.কান্নার সময় কোন খাবার খেতনা।
এবার পরিবারের সবাই শুধু ডাক্তারের উপর ভরসা রাখতে পারছিলো না। তাই ঝাঁড়-ফুঁকের শরনাপন্ন হলো যার যে দিকে জানাশোনা আছে। চললো তদবীর.. নাহ্ বিশেষ কোন কাজ হলো না। শুধু একজন বললো বাচ্চা ও বাচ্চার মায়ের উপর খারাপ জ্বিনের আছর আছে।
এরপর আরো কিছু রহস্যজনক অলৌকিক ঘটণা ঘটলো। এসবের ব্যাখ্যা আমি জানিনা তবে ঘটণা শতভাগ সত্য। আমার শ্যালিকা এসময় আমাদের বাসায় ছিল। সকালে আমার অফিস থাকায় আমি একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তাম। দু’বোন পালা করে বাচ্চা সামাল দিতো। ভোর চারটা বাজে, দু’বোনের চীৎকারে আমি ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে ওদের রুমে গেলাম গিয়ে যা শোনলাম তাতে আমারও ভীমড়ি খাওয়ার অবস্থা। ভোর চারটায় বাচ্চা যখন একটু শান্ত হয়ে শুয়ে আছে তখন আমার স্ত্রী এবং তার ছোট বোন বাচ্চার দু’দিকে দু’জন আধা শোয়া হয়ে বাচ্চার দিকে তাকিয়ে আছে। আর তখনই বাচ্চার শরীর হঠাৎ করে টিউব লাইটের মতো আলোকিত হয়ে উঠলো... । তিন-চার সেকেন্ড মাত্র। তারপর আবার সব স্বাভাবিক। আমরা যেন আরো অজানা আশংকায় ভেঙ্গে পড়তে লাগলাম। কারণ যদি ঘটণাটি একজনে দেখতো তাহলে ধরে নেয়া যেতো এটা স্রেফ দৃষ্টিভ্রম বা ভিজ্যুয়াল হ্যালোসিনেশন। কিন্তু দু’জনের একই সময়ে দৃষ্টিভ্রম !!! নাহ্ এটা বিজ্ঞানও মেনে নেবে না।
এবারের ঘটণাটি আরো ভয়ানক। আমি সবেমাত্র শুয়েছি, তখনো ঘুমাইনি। দু’বোনের গগণবিদারী চীৎকারে দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর আমার শ্যালিকা পাশে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। তাদের বর্ণনামতে ঘটণাটি এরকম, আমার শ্যালিকা বাচ্চাকে আমার স্ত্রীর কোলে দিচ্ছিলো... কিন্তু আমার স্ত্রী বাচ্চাকে ধরার সুযোগ পাওয়ার আগেই আমার শ্যালিকা বাচ্চাকে ছেড়ে দেয় এবং বাচ্চা ক্রমেই উপরের দিকে শূন্যে ভেসে যেতে থাকে এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী কিছুটা লাফ দিয়ে বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে চীৎকার দেয়। আমরা যখন এরকম বিপদগ্রস্থ হয়ে নাওয়া-খাওয়া প্রায় ছেড়ে দেয়ার উপক্রম তখন আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু অবাঙ্গালী পরিবার এগিয়ে এলো। ওই পরিবারের গৃহকর্তা আর গৃহকর্ত্রীকে আমরা খালা এবং খালু বলতাম, তারা আমাদেরকে এক বিকেলে এক অবাঙ্গালী বয়স্ক লোকের বাসায় নিয়ে গেলেন। ভদ্রলোকের চুল দাড়ি সাদা। তিনি নামাজী ও পরহেজগার। আমাদের নিকট সব কথা শুনে তিনি আসরের নামাজ পড়তে বসলেন। নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসেই দোয়া দরুদ পড়তে লাগলেন। আমাকে ছয়টা তাবিজ আর কিছু কালো সূতা (তার ভাষায় তাগা আর আমরা যাকে কাইতান বলি) আনতে বললেন। আমি তাবিজ ও কাইতান নিয়ে এলাম। ভদ্রলোক তাবিজগুলি তৈরী করে আমার হাতে দিলেন এবং একটা বাচ্চার মায়ের গলায় আরেকটা বাচ্চার গলায় পরাতে বললেন। বাকি চারটা একগ্লাস পানিতে চুবিয়ে সেই পানি পুরো বাসায় ছিটিয়ে দিতে বললেন। তারপর তাবিজ চারটা বাচ্চা যে রুমে থাকে সেই রুমের চার কোণে বেঁধে দিতে বললেন । এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসাটা ছেড়ে অন্য বাসায় যেতে বললেন। বাচ্চার গলার তাবিজটি বাচ্চার বয়স পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত গলায় ধারণ করতে বললেন। সবকিছু তার নির্দেশমতো করার পর আমাদের জীবন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। বাচ্চা সারা রাত শান্তিতে ঘুমাতে লাগলো। পরের মাসে বাসা শিফ্ট করলাম। কয়েকমাস এভাবে চলার পর গোসলের সময় তাবিজের কাইতান ছিড়ে যাওয়ায় সেটা তুলে রাখা হয়েছিল আর সে রাতেই আবার একটা থেকে চারটা পর্যন্ত আগের মতো কান্না শুরু হয়ে গেল। পরেরদিন আবার তাবিজ গলায় ধারণ করায় আজ পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। এখন সেই বাচ্চার বয়স ১৫ বছর। ক্লাস নাইনের ছাত্র। তার প্রিয় বিষয় ভূত-প্রেত। রেডিওর প্রিয় অনষ্ঠান ভূত এফ.এম। প্রিয় টিভি শো ঘোস্ট হান্টার। তার ফেসবুকের একাউন্টে নামের পূর্বে ভৌতিস্ট শব্দটা লাগানো। প্রিয় মানুষ সুমন, জিবরানসহ তাদের দল (এরা বাংলাদেশে ভূত নিয়ে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সহযোগে গবেষণা করেন)।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ রাত ১:২৮