somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্ত্রই ধর্ষণ তাদের

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিসফিসিয়ে মেয়েটি বলল, ‘প্রথমে ওই লোক আমাকে মেরেছে। এরপর আমাকে বলেছে গা থেকে সব জামাকাপড় খুলে ফেলতে। তারপর সে আমাকে ধর্ষণ করেছে।’ মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন শহরের জনাকীর্ণ একটি আদালতে দাঁড়িয়ে সাত বছরের ওই মেয়েশিশু এভাবে তাকে ধর্ষণের ঘটনার কথা বর্ণনা করে। সে সময় আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ধর্ষক মং উইন। তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। গত ১১ নভেম্বর এই সেনাসদস্য শান রাজ্যের এই মেয়েশিশুকে ধর্ষণ করেন ।

৮ জানুয়ারির ঘটনা। কাচিন রাজ্যের মিতকিয়ানা-সামপ্রা বাম সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে সেখান থেকে তিনজন নারীকে নামিয়ে আনেন কয়েকজন সেনাসদস্য। তাঁদের মধ্যে দুজন নারী পালিয়ে যেতে পারলেও একজন গণধর্ষণের শিকার হন।

সংস্কার ও শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে সহায়তা পেলেও মিয়ানমার সরকারের সেনারা জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে যচ্ছে।

থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা উইমেন্স লিগ অব বার্মা সম্প্রতি অভিযোগ করেছে, দমন করার অস্ত্র হিসেবে এখনো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নারীদের ধর্ষণ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, অর্ধশতকের নিষ্ঠুর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার তিন বছর পরও মিয়ানমারের নারীরা সেনাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ২০১০ সালের পর ১০০টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা জানা গেছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৭টি। ধর্ষণের শিকার হয়েছে বহু শিশু। রেহাই পায়নি অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাসমর্থিত সরকার দেশটির উত্তর ও পুর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় বিশেষ করে কাচিন ও শান রাজ্যে দমন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অঞ্চলের সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীগুলো বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকায় বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এসব ধর্ষণের ঘটনায় ২৮ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রধারী ও উর্দি পরা সেনা সদস্যরা ধর্ষণের ঘটনা ঘটান। ক্যাপ্টেন ও মেজর পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তারাও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। ধর্ষকদের মধ্যে কমপক্ষে একজন মেজর জেনারেল রয়েছেন। অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে তাঁদের স্বামী বা অন্য স্বজনদের সামনে। এই প্রতিবেদনের লেখকদের ধারণা, জাতিগত মিলিশিয়াদের যাতে আর সমর্থন না করে, সে জন্য স্বামী বা অন্যদের সামনে নারীদের ধর্ষণ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মনোবল গুঁড়িয়ে দেওয়া ও তাদের ধ্বংস করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যৌন সহিংসতাকে তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

তবে মিয়ানমারের সরকার উইমেন্স লিগ অব বার্মার এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মুখপাত্র ইয়ে হুতুত বলেন, ‘ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা আমাদের সামরিক বাহিনীর নীতি নয়। যদি কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমরা ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্ট করি এবং দোষী প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’

বেসামরিক সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সরকারের সব ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব বজায় রেখেছে। পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ।

এসব ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিষয়ে জানলেও সরকারের খুব কম কর্মকর্তাই সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেছেন। এমনকি দেশটির বিরোধীদলীয় ও গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিও কোনো সমালোচনা করেননি, যিনি কিনা সাবেক সামরিক জান্তার আমলে ১৫ বছরেরও বেশি সময় গৃহবন্দী ছিলেন।

গত মাসে ইয়াঙ্গুনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা সু চিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তিনি সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে জানেন কি না। সু চি তখন সেনাবাহিনীর সমালোচনা করার বদলে বলেন, যৌন সহিংসতার জন্য জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও দায়ী।

সু চির এই কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, সু চি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে চাইছেন। তাঁর এই ইচ্ছা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেনাবাহিনী। আর সে কারণে তিনি সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা ছেড়ে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা উইমেন্স লিগের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত আছে এবং মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীকে এ ব্যাপারে তদন্ত করার এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যারি হার্ফ বলেন, গত তিন বছরে মিয়ানমারে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তার পরও মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

উইমেন্স লিগ অব বার্মার সাধারণ সম্পাদক টিন টিন নিও বলেন, তাঁর সংগঠন যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ধর্ষণের শিকার নারী বা ধর্ষণের ঘটনার সাক্ষীদের কাছ থেকে তাঁরা এসব তথ্য জানতে পেরেছেন। যেসব এলাকায় বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, নিরাপত্তার কারণে সেসব জায়গায় গবেষকেরা যেতে পারছেন না।

উইমেন্স লিগের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনা আদালতে ওঠে না। সামরিক আদালতে যেসব মামলা ওঠে, সেসব মামলার আসামিরা খুব দ্রুত খালাস পেয়ে যান। তবে মং উইনের ঘটনা ব্যতিক্রম। জনগণের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বেসামরিক আদালতে তাঁর বিচার করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্র্যাং ডি বলেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×