সে এক স্বপ্নের মত অভিষেক। ওবামাকে স্বাগত জানাতে ওয়াশিংটন মলে জড়ো হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্নের ভাষা মিলেছে ওবামার প্রতিশ্রুতির সাথে। ওবামা বললেন, বিশ্বের সাথে সাথে তিনি পালটে ফেলবেন স্বদেশের ভাবমূর্তিকেও। অনেকেরই আশা, ওবামার ছোঁয়ায় এক এক করে সমাধান হয়ে যাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকট, মার্কিন জনগণের আট বছরের দুঃস্বপ্ন, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যাসহ প্রায় সবকিছু।
আশা করতে দোষ কোথায়। যখন সামনের পথটাতে কেবল হতাশা আর অনিশ্চয়তা। পথের দিশা যেখানে এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট। সে জন্য অভিষেকে ওবামা কি বলেন এ নিয়ে আগ্রহ ছিল সর্বমহলেই। নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি আর নির্বাচিত হওয়ার পরে দেয়া ঘোষণার মধ্যে ঝামেলা থাকার ইতিহাস শুধু আমাদের দেশেই নয়, তাদের দেশেও আছে। আবেগে-উদ্দীপনায় মোড়া বক্তব্যে ওবামা বললেন আবার পরিবর্তনের কথা।
কিন্তু তার বক্তব্যের ভেতরে আরও অনেক মনযোগ দিয়ে তাকালে আশংকাটাও না জেগে পারে না।
যদি প্রশ্ন করা হয়, আমেরিকান শক্তিশালী পুজিঁবাদী রাষ্ট্রটির গভীরতম অর্থনৈতিক সংকটের জন্য কে দায়ী, নিশ্চয়ই উত্তরটা খুব কঠিন হবে না। যদি পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিতে হয় তবে সংকটের জন্য দায়ীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারাটাও খুব জরুরী। ওবামা বললেন, "কিছু কিছু মানুষের লোভ আর দায়িত্বহীনতার জন্য আমাদের আজকের অর্থনীতিটা দূর্বল। কিন্তু সাথে সাথে জাতিকে নতুন দিনের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারায় এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা।"
প্রায় এক কোটি শ্রমিক আমেরিকায় কাজ হারাল, ঘর হারাল- কোন অপরাধ না করেই। ওয়াল স্ট্রিট ধ্বসের সাথে এদের কোন সংযোগ ছিল না। বেইল আউটের নামে পুজিঁপতিদের সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য তাদের হাতে তুলে দেয়া হল সেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু আজ তাদেরও নিতে হবে ব্যর্থতার দায়। স্পষ্ট করে বক্তব্যে এল না- বিরাট পুজিঁপতিদের আরও মুনাফার লোভ আর তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে উৎসাহ দানের কারণেই এ সংকটের সৃষ্টি।
তার বদলে এল এমন সব কথা, যে কথাগুলো একইভাবে ছিল রোনাল্ড রেগ্যান বা তার মত অমন মারকুটে রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে।
যুদ্ধের ব্যাপারেও তার অবস্থান খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। তিনি বলছেন," আমাদের দেশ ঘৃণ্য দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।"
বুশ বলতেন 'ওয়ার এগেইনস্ট টেরর'। এ কর্মসূচির আওতায় দেশে দেশে মাস্তানি করে বেড়িয়েছে আমেরিকা। ওবামা কিন্তু তার বিরুদ্ধে একটি কথাও বললেন না। তিনি সে যুদ্ধকে আসলেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মনে করছেন, আগ্রাসন নয়। তাই তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ইরাক থেকে সৈন্য অপসারনের কিন্তু মনযোগ দিতে চান আফগানিস্তানের দিকে। কদিন আগে বললেন, লাদেনকে হত্যা করা হবে তার প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আফগানিস্তানে আবার সৈন্যসহ হাজির হবেন ইরাক থেকে সরিয়ে এনে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে বেশ আক্রমনাত্মভাবেই বললেন,"আমরা আমাদের জীবনযাত্রা নিয়ে কারও কাছে ক্ষমা চাইব না। সব সময় এর পক্ষে দাঁড়াব।" কাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন এল? সে সব দেশ যারা "নিজেদের সমাজের মন্দ দিকের দায় পশ্চিমের ওপর চাপিয়ে দেয়।" স্পষ্টতত এটা লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা আর এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত।
তিনি আবেগী দৃপ্ততায় বললেন,"সন্ত্রাস করে নিরপরাধীদের হত্যা করতে চাইছ, আমরা তোমাদের পরাজিত করব।"
সাথে সাথেই মনে পড়ে ইজরাইল যখন গাজায় মার্কিনীদের সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে দিনের পর দিন হত্যাযজ্ঞ চালাল, এই ওবামা আশ্চর্যভাবে নীরব হয়ে ছিলেন।
তারপরই ব্যপক প্রশংসা করলেন মার্কিন সৈন্যবাহিনীর। তাদের সেবার ব্রত মার্কিনীদের সবার ধারন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। কি সে ব্রত? বিনা বাক্য ব্যয়ে, ভাল-মন্দ বিবেচনা না করে নির্দেশ পালন করে যাওয়া ছাড়া সে ব্রত আর কি হতে পারে!
কেউ বলতে পারেন, মাত্র তো এল, আরও চার বছর থাকবে ক্ষমতায়। দেখেন না কি করে। হ্যাঁ, দেখতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু যে বদলে যাওয়ার শ্লোগানে চারদিক মাতোয়ারা করে ওবামা আজ বিশ্বের মনযোগের কেন্দ্রে, তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে-তৎপরতায় তিনি কতটা আশা আসলেই জাগিয়ে রাখতে পারছেন সেটা অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




