somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওবামার বক্তব্যে আশাবাদী হওয়ার মত কিছু নেই

২১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে এক স্বপ্নের মত অভিষেক। ওবামাকে স্বাগত জানাতে ওয়াশিংটন মলে জড়ো হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্নের ভাষা মিলেছে ওবামার প্রতিশ্রুতির সাথে। ওবামা বললেন, বিশ্বের সাথে সাথে তিনি পালটে ফেলবেন স্বদেশের ভাবমূর্তিকেও। অনেকেরই আশা, ওবামার ছোঁয়ায় এক এক করে সমাধান হয়ে যাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকট, মার্কিন জনগণের আট বছরের দুঃস্বপ্ন, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যাসহ প্রায় সবকিছু।
আশা করতে দোষ কোথায়। যখন সামনের পথটাতে কেবল হতাশা আর অনিশ্চয়তা। পথের দিশা যেখানে এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট। সে জন্য অভিষেকে ওবামা কি বলেন এ নিয়ে আগ্রহ ছিল সর্বমহলেই। নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি আর নির্বাচিত হওয়ার পরে দেয়া ঘোষণার মধ্যে ঝামেলা থাকার ইতিহাস শুধু আমাদের দেশেই নয়, তাদের দেশেও আছে। আবেগে-উদ্দীপনায় মোড়া বক্তব্যে ওবামা বললেন আবার পরিবর্তনের কথা।
কিন্তু তার বক্তব্যের ভেতরে আরও অনেক মনযোগ দিয়ে তাকালে আশংকাটাও না জেগে পারে না।

যদি প্রশ্ন করা হয়, আমেরিকান শক্তিশালী পুজিঁবাদী রাষ্ট্রটির গভীরতম অর্থনৈতিক সংকটের জন্য কে দায়ী, নিশ্চয়ই উত্তরটা খুব কঠিন হবে না। যদি পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিতে হয় তবে সংকটের জন্য দায়ীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারাটাও খুব জরুরী। ওবামা বললেন, ‌"কিছু কিছু মানুষের লোভ আর দায়িত্বহীনতার জন্য আমাদের আজকের অর্থনীতিটা দূর্বল। কিন্তু সাথে সাথে জাতিকে নতুন দিনের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারায় এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা।"

প্রায় এক কোটি শ্রমিক আমেরিকায় কাজ হারাল, ঘর হারাল- কোন অপরাধ না করেই। ওয়াল স্ট্রিট ধ্বসের সাথে এদের কোন সংযোগ ছিল না। বেইল আউটের নামে পুজিঁপতিদের সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য তাদের হাতে তুলে দেয়া হল সেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু আজ তাদেরও নিতে হবে ব্যর্থতার দায়। স্পষ্ট করে বক্তব্যে এল না- বিরাট পুজিঁপতিদের আরও মুনাফার লোভ আর তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে উৎসাহ দানের কারণেই এ সংকটের সৃষ্টি।
তার বদলে এল এমন সব কথা, যে কথাগুলো একইভাবে ছিল রোনাল্ড রেগ্যান বা তার মত অমন মারকুটে রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে।

যুদ্ধের ব্যাপারেও তার অবস্থান খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। তিনি বলছেন," আমাদের দেশ ঘৃণ্য দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।"

বুশ বলতেন ‌'ওয়ার এগেইনস্ট টেরর'। এ কর্মসূচির আওতায় দেশে দেশে মাস্তানি করে বেড়িয়েছে আমেরিকা। ওবামা কিন্তু তার বিরুদ্ধে একটি কথাও বললেন না। তিনি সে যুদ্ধকে আসলেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মনে করছেন, আগ্রাসন নয়। তাই তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ইরাক থেকে সৈন্য অপসারনের কিন্তু মনযোগ দিতে চান আফগানিস্তানের দিকে। কদিন আগে বললেন, লাদেনকে হত্যা করা হবে তার প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আফগানিস্তানে আবার সৈন্যসহ হাজির হবেন ইরাক থেকে সরিয়ে এনে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে বেশ আক্রমনাত্মভাবেই বললেন,"আমরা আমাদের জীবনযাত্রা নিয়ে কারও কাছে ক্ষমা চাইব না। সব সময় এর পক্ষে দাঁড়াব।" কাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন এল? সে সব দেশ যারা "নিজেদের সমাজের মন্দ দিকের দায় পশ্চিমের ওপর চাপিয়ে দেয়।" স্পষ্টতত এটা লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা আর এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত।

তিনি আবেগী দৃপ্ততায় বললেন,"সন্ত্রাস করে নিরপরাধীদের হত্যা করতে চাইছ, আমরা তোমাদের পরাজিত করব।"
সাথে সাথেই মনে পড়ে ইজরাইল যখন গাজায় মার্কিনীদের সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে দিনের পর দিন হত্যাযজ্ঞ চালাল, এই ওবামা আশ্চর্যভাবে নীরব হয়ে ছিলেন।
তারপরই ব্যপক প্রশংসা করলেন মার্কিন সৈন্যবাহিনীর। তাদের সেবার ব্রত মার্কিনীদের সবার ধারন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। কি সে ব্রত? বিনা বাক্য ব্যয়ে, ভাল-মন্দ বিবেচনা না করে নির্দেশ পালন করে যাওয়া ছাড়া সে ব্রত আর কি হতে পারে!

কেউ বলতে পারেন, মাত্র তো এল, আরও চার বছর থাকবে ক্ষমতায়। দেখেন না কি করে। হ্যাঁ, দেখতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু যে বদলে যাওয়ার শ্লোগানে চারদিক মাতোয়ারা করে ওবামা আজ বিশ্বের মনযোগের কেন্দ্রে, তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে-তৎপরতায় তিনি কতটা আশা আসলেই জাগিয়ে রাখতে পারছেন সেটা অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।


৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×