বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা দিলেন টিফা চুক্তি নিয়ে তারা নতুন উদ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছেন। টিফা মানে হল- TIFA-Trade and Investment Framework Agreement; অর্থাৎ বাণিজ্য আর বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ আমেরিকার সাথে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে যাচ্ছে।
সমঝোতায় আসাটা নতুন কিছু নয়। এর আগে সরকারের ঘোষণাতেই আমরা অনেক রকম চুক্তি হয়ে যাওয়ার কথা শুনতে পেয়েছি। চুক্তিতে আমাদের কি লাভ হবে বা হবে না এটা নিয়ে জানার সুযোগ ছিল না। এবারই বা অন্তত সরকারি আগ্রহের খবরটা পত্রিকায় এল কিভাবে? মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্তি গিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে। গিয়ে বললেন, আমাদের টিফা নিয়ে আলোচনা তো স্থগিত হয়ে ছিল। চলেন এ ব্যাপারটা আবার শুরু করি। শুনে বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, তবে তাই হোক। কাগজপত্র তো তৈরিই আছে। এখন সরকার নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে প্রক্রিয়াটি চালু করতে চায়। আর তার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, আসলে টিফা থেকে আমাদের অনেক লাভবান হবার সুযোগ আছে।
দিন বদলের পালায় প্রত্যাশিত ছিল অন্যরকম বক্তব্য। যদি কথাটা হত এরকম যে- মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রস্তাব দিয়েছেন, ঠিক আছে, আমরা সংসদে আলোচনা করি, দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ-রাজনীতিবিদদের-জনগণের মতামত নিই। তারপর আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। কিন্তু গত জোট সরকারের আমলে যেমন হয়েছে, তার আগের আমলেও যেমন হয়েছে, এবারও তাই হল। সংসদ বা জনগণের কাছে জবাবদিহিদার বদলে সেই একপেশে সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশের সাথে টিফা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে। মার্কিনীদের দেয়া প্রথম প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পরে আরও দুটি বৈঠক হয়। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে দ্বিতীয় আর ২০০৫ এর ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় দফা বৈঠক হয়। তারপর বড় একটা বিরতি দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে আমেরিকান প্রতিনিধিরা সরকারের কাছে আবার বিষয়টি নতুন করে তুলে ধরে।
টিফা নিয়ে আলোচনার ধারা
সর্বশেষ চুক্তির খসড়ায় ৭ টি আর্টিকেল আর ভূমিকায় ছিল ১৯ টি পয়েন্ট। ভূমিকায় বন্ধুত্ব-সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রথাগত কথা তো আছেই। তার পরে যে বিষয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হল, সেগুলো হল- বিদেশী বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ, শুল্কমুক্ত উন্মুক্ত বাজার এবং মেধাসত্ব আইনের প্রয়োগ। আর্টিকেলগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে একটি কাউন্সিল গঠনের কথা। এই কাউন্সিল দু পরে ব্যবসা বানিজ্যের স্বার্থ নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কাউন্সিলে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্ব দেয়ার কথা।
বাংলাদেশ টিফা নিয়ে কথা তুলেছিল তিনটি বিষয়ে - দেশের শ্রম আইন নিয়ে চুক্তিতে উল্লেখ করা ধারা, পরিবেশ সহায়ক বাণিজ্য সংক্রান্ত ধারা আর মেধাসত্ব আইনকে প্রধান করা নিয়ে। খসড়াটি মোট তিনবার সংশোধন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ড্রাফটে সব শিল্প ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন চালু আর শ্রমিক পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক মানের সমক করার কথা বলা ছিল। তৃতীয় ড্রাফটে ঐ বিষয়গুলো পাল্টে গেল। বলা হল- এ ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা না রেখে নিজ নিজ দেশের আইনের আওতায় বিবেচনাকরা হবে। সে সময়ের বাণিজ্যমন্ত্রীও মনে করছিলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার বাজারে দেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ তৈরি করা যাবে বলে। আলোচনা থেমে গিয়েছিল চুক্তির ধারায় ‘দুর্নীতি’ সম্পর্কিত ধারা যোগ করা নিয়ে। বাংলাদেশ প মনে করেছিল, এ ধারা যোগ করা হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ভাল হবে না।
১৯৮৬ সালের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি
টিফা চুক্তিতে রেফারেন্স আছে ১৯৮৬ সালে স্বারিত দ্বিপীয় বিনিয়োগ চুক্তির। ১৯৮৬ সালের মার্চে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার ঐ চুক্তিটি স্বারিত হয়। এশিয়ার কোন দেশের সাথে আমেরিকার এরকম চুক্তি ছিল সেটাই প্রথম। সে চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিশেষ সুবিধা পাবে, তাদের অর্জিত মুনাফা বা পুঁজির ওপর কোন কর থাকবে না এবং বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তাদের তিপূরণ দিতে হবে। সেখানেও মার্কিনীদের করা অন্যান্য সব চুক্তির মত বলা আছে অবাধ বাণিজ্যের কথা। কিন্তু একই চুক্তিতে স্পষ্টভাবে মার্কিন কিছু শিল্প ক্ষেত্রে কোন বিনিয়োগ করা যাবে না বলে স্পষ্টভাবে উর্লেখ করা আছে।
তার মানে বাজার সংরণ আসলে গরীব দেশের জন্য পাপ। ধনী দেশের জন্য জায়েজ। টিফাতে সে ঐতিহ্যের ধারাবহিকতা থাকছে বলেই ৮৬ এর সে চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাণিজ্য সংক্রান্ত কোন মতবিরোধ দেখা দিলে মীমাংসা কিভাবে হবে সেই পথ নিয়ে এখানে কতা ছিল। বাংলাদেশ ICSD(International Convention for the Settlement of Disputes) এ স্বাক্ষরকারী দেশ। ১৯৮৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী দু’পরে ব্যবসা সম্পর্কিত বিরোধ দেখা গেলে তৃতীয় পরে উপস্থিতিতে আইসিএসডি’র ফোরামে সেটা মীমাংসা করার কথা। এ ছাড়া বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ডব্লিউটিও আছে, ইউএনসিটিএডি (UNCTAD) আছে। কিন্তু টিফা চুক্তিতে আছে সব বিরোধের মীমাংসা হবে কাউন্সিলে। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সেখানে ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। আমলা নেতৃত্ব ঠিক করবে কোন সমস্যার কি সমাধান হবে।
আমেরিকার আগ্রহের কারণ
টিফা চুক্তিতে দোহা আলোচনাকে এগিয়ে নেয়ার ওপর জোর দেয়ার কথা বলা আছে। ডব্লিউটিও’র দোহা রাউন্ডের আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে। উদ্দেশ্য সব দেশে সবার বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ার পথ খুঁজে বের করা। সে আলোচনা ২০০৫ সাল পর্যন্ত কোন রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে ২০০৫ সালে এসে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ধনী দেশগুলো অন্যদের বাজার খুলে নিতে যতটা উদগ্রীব, নিজেদের বাজার খুলতে একেবারে নারাজ। সর্বশেষ ২০০৯ এর এপিলেও জেনেভায় আলোচনা ব্যর্থ।
দোহা রাউন্ডের আলোচনা ব্যর্থ হবার পরে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তাতে বড় ধনী দেশগুলো নাখোশ। তারা আলোচনার টেবিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুতই মুনাফার জন্য ঝাঁপ দিতে চায়। সবাইকে নিয়ে ডব্লিউটিও-তে আলোচনা করতে গেলে অনেক তর্ক বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়। এ জন্য আমেরিকা আর ইইউ এখন একেকটা দেশ ধরে ধরে দ্বিপীয় সমঝোতা আর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা FTA- এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন বিষয়। এর মধ্যে আছে পণ্য বাণিজ্যে উদারীকরণ, মেধাসত্ব আইনের অনেক নতুন নিয়ম, সেবা খাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদি। এফটিএ করার দিকে এগুনোর জন্য একটি পদপে হল টিফা চুক্তি। এ নামে ইতোমধ্যে আমেরিকা পাকিস্তান, সৌদি আরব, ব্র“নাই, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, ইরাক, উরুগুয়েসহ সারা বিশ্বে অনেকগুলো দেশের সাথেই এই টিফা চুক্তি স্বার প্রক্রিয়া শেষ করেছে। এবং সবগুলো দেশই আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন আজ্ঞাবাহী হিসেবেই বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, কোন দেশের সাথে এ চুক্তি করা হবে সেটা প্রধাণত নির্ভর করে কর্পোরেট স্বার্থ আর ভূ রাজনৈতিক গুরুত্বের ওপর। বাজার দখল নিয়ে সব ধনী দেশগুলোর মধ্যেই প্রতিযোগিতা আছে। যার যার মত করে সবাই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চায়। জ্বালানি খাতের দিকে নজরটাও আছে সেই সাথে। বিশ্ব জুড়ে যখন মন্দা তখন জ্বালানিসহ প্রাকৃতিক সম্পদ এর ওপর যত বেশি কর্তৃত্ব বজায় রাখা যায় তত ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। সব দেশেই এ ধরনের চুক্তি করা হয় আড়ালে-অবডালে, এমনকি সংসদীয় কামিটিকেও না জানিয়ে।
অন্য দেশগুলোতে টিফা চুক্তির বাস্তবায়নে কেমন ফলাফল মিলেছে সেটা যাচাই করা দরকার। মার্কিনীরা কেবল তাদের মুনাফা নিশ্চিত করার জন্যই কোন চুক্তি করে না। তার আরও দশ রকম উদ্দেশ্য থাকে। এর মধ্যে একটি হল একটি দেশকে তার নিজ প্রভাব বলয়ে নিয়ে এসে ঐ অঞ্চলের ওপর খবরদারি খাটানোর চেষ্টা। যেমন, উরুগুয়ে। লাতিন আমেরিকায় যখন দেশগুলো চেষ্টা করছিল অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে ঐক্যবদ্ধ বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার তখন মার্কিনীরা রুষ্ট হল। ঐ ঐক্যবদ্ধ অর্থনীতি হলে মার্কিন বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য। উরুগুয়েকে বেছে নিয়ে টিফা চুক্তি করানোর কারণে তাকে আলাদা করে দেয়া হল লাতিন ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে। ুদ্ধ হয়ে গেল ব্রাজিল-অর্জেন্টিনার মত দেশ। চুক্তি দিয়ে উরুগুয়ের বাজারেও ঢোকার ব্যবস্থা হল, ঐ অঞ্চলের ঐক্য প্রক্রিয়াকেও হোঁচট খাওয়ানো গেল।
ভিয়েতনাম চুক্তি করেছে ২০০৭ সালে। নামে সমাজতন্ত্রী দেশ হলেও ভিয়েতনাম এখন মুক্তবাজারের পথে হাঁটছে। মার্কিন অর্থনীতির ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলা আরেক বড় শক্তি চীনের ওপর সে ছিল অনেক ভাবে নির্ভরশীল। এখন টিফা চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা ঢুকে পড়ল মাঝখানে। চীনের সাথে দর কষাকষিতে আরেকটু বাড়তি সুবিধা অর্জন করে নিল সে।
চুক্তির ফাঁকি আর বাস্তবতা
চুক্তি তো একটা কাগুজে ব্যাপার। চুক্তিকে কার্যকর করতে গেলে কে কেমন ভূমিকা রাখে তার ওপর মূলত নির্ভর করে ভাল-মন্দ। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার অতীত ভূমিকা কিন্তু ভাল নয়। ২০০৫ সালে ডব্লিউটিও’র হংকং বৈঠকে বাংলাদেশের মত গরীব দেশগুলোর জন্য একটা ঘোষণা দিয়েছিল আমেরিকা। বলেছিল, ঐসব দেশের ৯৭ শতাংশ পণ্য আমেরিকায় শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাবে। তার মানে ঐসব জিনিসের জন্য আমেরিকা কোন শুল্ক দাবি করতে পারবে না। মাত্র ৩ শতাংশ পন্য থাকবে সংরতি। আর কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশের সব রপ্তানি পণ্যই পড়ে গেলে ঐ সংরতি ৩ শতাংশের তালিকায়। আসলে তো আর কাকতালীয় নয়। আমেরিকা ভাল করেই জানে দরিদ্র দেশের কয়টা রপ্তানিযোগ্য পণ্য থাকতে পারে। হিসেব নিকেশ করেই সে তালিকা তৈরি করেছে। তার ফলে তার সাপও মরল লাঠিও ভাংল না। চুক্তি হল কিন্তু বাজার খুলে দিতে হল না।
ভিত্তিহীন আশা
যখন আমাদের দেশে কেউ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলে এ ধরণের চুক্তি হলে মার্কিন বাজারে ঢোকার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে তার পেছনে তো ভাল যুক্তি থাকতে হবে। নিজেদের এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে সেটা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। সেরকম যুক্তির দেখা আসলে পাওয়া যায়নি। যেমন, ২০০৮ সালে আমেরিকা আর বাংলােেদশর বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৩০৪৩.৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪০৯.৬ মিলিয়ন ডলার আর আমদানি করেছে ৩৪৫৩.১ মিলিয়ন ডলার। এখন ধরা যাক টিফা চুক্তি অনুযায়ী আমাদের নতুন রপ্তানির সুযোগ তৈরি হল। বাংলাদেশ রপ্তানি খাতে কি কি নতুন পণ্য যোগ করতে পারে যার প্রতি আমেরিকা আগ্রহী হতে পারে? আমাদের অভিজ্ঞতায় বিগত সময় ধরে ধারাবহিকভাবে আমাদের শিল্প খাতের অবনমন ঘটেছে। কারখানা বন্ধ হয়েছে, শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। তাহলে আমি যদি রপ্তানি বাড়াতে চাই আগে তো নিজের দেশের ভিতটা শক্তিশালী করতে হবে! তারপরে তো অন্য দেশের সাথে দর কষাকষি করতে যাব- তুমি ঐটা দাও, আমি এইটা দিব। তা না করে কেবল চুক্তি করে বাজার খুলে দেয়া মানে অপর পরে পণ্য হু হু করে ঢুকতে থাকবে আর দর্শক হয়ে আমাদের মাথা চুলকাতে হবে। আর এটা বুঝেও যদি কেউ চুক্তিতে অগ্রসর হয় তাহলে বুঝতে হবে মতলব ভিন্ন। আমোরিকার স্বার্থ আর চুক্তিকারীর স্বার্থ কোন ভাবে, কোন মাধ্যমে, একটা বন্ধন পেয়েছে।
টিফা চুক্তি গুরুত্ব দেয় মেধাসত্ব আইনের ওপর। এটার প্রভাব কতটা জায়গা জুড়ে পড়বে, এটা বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা না বোঝার কথা নয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে মেধাসত্ব আইন পাশ করতে হবে। ডব্লিউটিও’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের মত গরীব দেশগুলোকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেধাসত্ব আইন না মানলেও চলত। ঔষধের জন্য সময়সীমা ছিল ২০১৬। চুক্তি হলে অতদিন আর মার্কিনীদের বসে থাকতে হবে না। এখনই চালু করে দিতে পারে সে আইন। বিদেশী ঔষধ, যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার, পোশাক, বই- সব কিছুর জন্য যে চড়া মূল্য দিতে হবে এটা চিন্তাও করা যায় না। আমাদের আই টি সেক্টর পড়বে সবচেয়ে ঝামেলায়। সবাই মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছে এখন বিনে পয়সায়। মেধাসত্ব আইন হলে পয়সা ছাড়া ঐ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে দন্ডনীয় অপরাধ। শুধু অপারেটিং সিস্টেম কেনার জন্যই খরচ হবে হাজার পঞ্চাশেক টাকা। তারপরে প্রতিটি সফটওয়্যারের খরচ তো আছেই। ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতার কথাই ধরুন। টিফা স্বারের দিন মাইক্রোসফট কোম্পানিও ভিয়েতনামিজ সরকারের সাথে চুক্তি করে ফেলল, ভিয়েতনামের সব অফিস আর শিা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। ফলাফল- টাকার ওপর টাকা।
আগে আলোচনা করুন
স¤প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী অন্য প্রসঙ্গে বলেছিলেন, টিসিবি-কে তিনি কার্যকর করতে চান না। তাতে বোঝা গেছে তিনি মুক্তবাজারের একনিষ্ট সমর্থক। কিন্তু তিনি যত সহজে বলে ফেললেন, টিফা চুক্তি নিয়ে তারা এগিয়ে যাবেন এবং বাংলাদেশের জন্য এর ফল ভাল হবে সেটা আরও চিন্তার দাবি রাখে। আমাদের দেশের স্বার্থ রা না হয়ে বরং মার্কিন স্বার্থের বিজয়ের অনেক সম্ভাবনাই এখানে আছে। কিন্তু এখনও জনগণের সামনে চুক্তির রূপরেখা, বিবরণ কিংবা সরকার যদি কোন লাভের সম্ভাবনা দেখেও থাকে তার সুনির্দিষ্ট কোন বিবরণ এখনও তুলে ধরা হয়নি। সে জন্য এখনই টিফা চুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়ো করে অগ্রসর না হয়ে আগে জনগণের সাথে বোঝাপড়া সেরে নেয়াটা সুবিবেচনার কাজ হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




