২০০৯-১০ সালের বাজেট কয়েকটি দিক থেকে আলাদা। এবার বাজেট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকে; আগে যেমন মাসখানেক আগে 'বাজেট কেমন চাই' ধরণের আলোচনা শুরু হত আর তাতে কেবল অর্থমন্ত্রী বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে যেতেন এবার তার বদলে দেখা গেল মাস তিন চারেক ধরেই নানান ফোরামে আলোচনা।
বাজেট বক্তৃতাটাও আগেরগুলো থেকে একটু ভিন্ন। বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ ব্যাখ্যার পাশাপাশি এতে আছে প্রচুর তথ্য। বাজেট কাঠামো সংস্কার করার প্রস্তাব দেয়া, বক্তৃতার শিরোণাম বিন্যাস ইত্যাদি বিষয়েও আছে নতুনত্ব। আছে পিপিপি সহ অনেকগুলো নতুন টার্মের পরিচিতি। ওয়েব সাইটেও আগের যে কোন সময়ের তুলনায় দ্রুত সব তথ্য তুলে দেয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতার বাইরেও খুঁটিনাটি অনেক দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ পাওয়া গেছে তাতে। মধ্যমেয়াদী বাজেটে আছে ২০১১-১২ মেয়াদ পর্যন্ত সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে রূপরেখা। এমনকি বাজেটের পরদিন অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করে নানান প্রশ্নের উত্তর দেয়াটাও অভিনব। বামপন্থী দুটো দল ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ, 'কৌশলগত' কারণে সরকারে থাকলেও, বাজেট নিয়ে বলেছে, অর্থমন্ত্রী পশ্চাৎপদ ধারা ধেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।
সরকারের ২০২১ সালের স্বপ্নযাত্রায় যে গন্তব্য ঠিক করা হয়েছে, তাতে আছে- দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করা, আয় দারিদ্র ও মানব দারিদ্র ন্যূনতম পর্যায়ে আনা, সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, বিকশিত সৃজনশীলতার সুযোগ তৈরি, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র চালু, জলবায়ু বিপর্যয় রোধ এবং তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ। এ সব লক্ষ্য পূরণ হলে তবেই পাওয়া যাবে আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাজেট প্রণয়নেও নিশ্চয়ই সেই স্বপ্নযাত্রাটি মাথায় রাখতে হয়েছে। বাজেট পরবর্তী পরিস্থিতিতেও একটি ছোট পরিবর্তন। গরীবের বাজেট আর গরীব মারার বাজেট- এ দুই বিশেষণের বাইরে গিয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিতর্ক এসেছে- উচ্চাভিলাশী বনাম বাস্তবসম্মত।
বাজেট অনেকগুলো পরিসংখ্যানিক তথ্য সংকলন। সরকারের অর্থনৈতিক দর্শনের একটি প্রায়োগিক দলিল। সাধারণ মানুষের সেখান থেকে বোঝার আছে সামান্যই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কি বাড়ছে না এটুকু জানতে পারলেই হল। কি হলে বাড়বে আর কি হলে কমবে এটা বোঝার সুযোগ নেই। আর বুঝেই বা কি হবে! কে শুনতে যাচ্ছে তার কথা! জনগণের এই নাচার অবস্থার সুযোগ নেয় প্রতিটি সরকার। এ বাজেটও যে তার ব্যতিক্রম হয়নি, তা যারা ভেতরে পড়েছেন তারা না বুঝে থাকেননি। একই রকম লক্ষ্যমাত্রা, একই রকম বাজার অর্থনীতির স্রোতে ভাসা, একই রকম বরাদ্দের চরিত্র। সরকারের সাথে থাকা 'ওয়ার্কার্স', 'সমাজতন্ত্রী' বা 'সাম্যবাদী' কোন মিত্রই কোন আওয়াজ করলেন না, সেই স্রোতে ভাসা দর্শনে তলিয়ে গেলেন। কয়েকটি বিষয় ধরে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছি।
কাল টাকা সাদা করার রেওয়াজ সেই আশির দশক থেকে চলা প্রতিটি সরকারের সাধারণ কৌশল। এবং সবার যুক্তি মোটামুটি একইরকম। দেশের পুঁজিবাজারে অর্থের সঞ্চালন নিশ্চিত করা। এবার বাজেটের পর খোদ প্রধানমন্ত্রীও সে একই কথা বললেন। যে পথে বিএনপিও হেঁটেছে, সে পথের সমালোচনা তার মুখে শোভা পায় না। কিন্তু জনগণের প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে সে কাল টাকা বৈধ করার সমালোচনা করেছে। গত সামরিক-আমলাতান্ত্রিক সরকারও কাল টাকা বৈধ করার সুযোগ রেখেছিল। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা, যাদের সব সময় সরকারের আশেপাশে সুন্দর সুভদ্র পোশাকে দেখা যায়, তারা সবাই কাল টাকার বৈধতার পক্ষে। তাদের ভাষায় এদিক ওদিক থাকতে পারে, কিন্তু মর্মার্থ একই। অনৈতিক (তাদের ভাষায় মরালি অসমর্থনযোগ্য) হলেও এটা নাকি অর্থনীতির প্রয়োজন।
বরং বাজেটেগুলোতে আগে ছিল, এবার যেটা অনুপুস্থিত, সেটা হল ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য। সালমান এফ রহমান কেন্ত্রীয় নেতৃত্বের পাশে বসার সুযোগ পেলে সেটার ছাপ নীতির ওপরও পড়বে তাতে আর অবাক কি!
আমাদের আমদানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই অত্যাবশ্যকীয়। বাজেট বক্তৃতাতেই জানা গেল তা। আমদানি নির্ভরতা মানেই বিশ্ব বাজারের নিয়মের কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়া। একটি দেশ যত বেশি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিজে উৎপাদনের সামর্থ্য রাখবে, তত বেশি তার জনগণকে নিরাপদ রাখতে পারবে। যে কাল টাকাগুলো বছরের পর বছর হালাল করে দেয়া হচ্ছে, সেগুলো সরকার উদ্ধার করে অনায়াসে বিনিয়োগ করতে পারত কৃষি-শিল্প-শিক্ষাসহ নানান উন্নয়নমুখী উৎপাদনশীল খাতে। কিন্তু দুর্নীতির টাকাকে ছাড় দেয়া হচ্ছে আরও বেশি মুনাফা করার জন্য, আরও দুর্নীতিতে বিনিয়োগের জন্য। কারণ অপ্রদর্শিত টাকা নিজের মুনাফা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর আশার কথা যদি সরকার করে, সেটা বিশ্বাস করা আমাদের বুদ্ধিতে সম্ভব নয়। চুরি করা টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে, শেয়ার বাজারে খাটিয়ে কি করে একজন চোর সৎ পথে আসবে সেটা বোধগম্য নয়। অথচ অর্থমন্ত্রী বলছেন, দুর্নীতিবাজদের সৎ পথে আসার সুযোগ করে দেয়াও নাকি কাল টাকার বৈধতার সুযোগ করে দেয়ার পেছনে একটি কারণ।
সব বাজেটে বক্তৃতার মত এতেও বলা হয়েছে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের কথা। শিক্ষা খাতের মোট বরাদ্দ ১৪০০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬৬১১ কোটি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৭৩৯৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে বাজেটের ১২.৩৪ ভাগ মাত্র। গত বছর মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১২,২৫৮ কোটি টাকা; বাজেটের ১২.২৬%। তার আগের বছর হারটি ছিল ১৪.২%। দেখা যাচ্ছে, আনুপাতিক হারে বরাদ্দ বরং কমতির দিকে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক সব জায়গায় এডিবি আর বিশ্বব্যাংকের দেয়া পিডিইপি আর এসইএসডিপি ইত্যাদি প্রকল্পের চাপে নিতে দেখা গেছে এমন সব সিদ্ধান্ত যার বিরোধিতা করেছেন ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাবিদ সবাই। বরাবরের মতই খাত হিসেবে দেখলে সর্বোচ্চ বরাদ্দ গেছে জন প্রশাসনে। আমলাতন্ত্রের খাতে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দও বেড়েছে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা।
২০০৮-০৯ এ সরকার ব্যাংক থেকে ২৪,৪০৪ কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে বলেছিল। সংশোধিত বাজেটে দেখা গেছে পরিমাণটা দাঁড়িয়েছে ৬৫,৬৩২ কোটি টাকা। আর এবারের বাজেটে সেটা দাঁড়িয়েছে ৭৮,২৮৩ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ ঋণের প্রবণতাও অতীতের ধারাবাহিকতা। দেশী বিদেশী ঋণের সুদ মেটাতেই সরকারের খরচ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। জন প্রশাসনের পরে এ বাবদ সরকারের খরচ সবচেয়ে বেশি।
কৃষি খাতে এবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮৯৫০ কোটি টাকা। গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এটি প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা কম। এ খাতে ভর্তুকি দেয়া হল ৩৬০০ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ৪৮২৫ কোটি। যুক্তি হিসেবে বলা হল বিশ্ব বাজারে ইউরিয়া এবং নন ইউরিয়া সারের দাম এক তৃতীয়াংশ হয়ে যাওয়ায় ভর্তুকি কমানো হল। অবাক করা বিষয়, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যিনি কৃষকের পক্ষে অনেক জোরালো ভূমিকা রেখেছেন বলে প্রচার, তিনিও তাতে সায় দিলেন! যেন বা কৃষিতে ভর্তুকি দিতে হয় কেবল সারের ক্ষেত্রেই। সেচ, বীজ, কীটনাশক থেকে শুরু করে উৎপাদনের সকল পর্যায়ে কৃষককে সহায়তা করতে পারলেই দেশে খাদ্য নিরাপত্তা তৈরি করা যাবে। বিদেশের উদাহরণ দিতে গেলে ভুরি ভুরি দেয়া যায়। যে দেশগুলো শিল্পে অনেক এগিয়ে তারাও কৃষিতে মোটা অংকের ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনযোগী। আর আমাদের দেশের ভর্তুকির বেশির ভাগটাই খেয়ে ফেলে মধ্যস্বত্বভোগী আর ধনী কৃষকরা। সাধারণ কৃষকের কাছে সেটার সুফল পৌঁছায় সামান্যই। ভূমি সংস্কার বলতে কেবল অর্থমন্ত্রী বুঝেছেন কম্পিউটারে হিসেব করা, ভূমির গণমুখী ব্যবহার নয়। এসব আওয়ামী লীগের না জানার কথা নয়। তাদের দিন বদলের সনদের অন্যতম রচয়িতা অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের এ ব্যাপারে যে সব গবেষণাধর্মী কাজ আর পরামর্শ আছে, তার পরে আর কিছু বলার বাকি থাকে না। ‘বামপন্থী’ কৃষক নেতাদের কথা বাদই দিলাম। তার পরও তারা যখন ভর্তুকি কমায়, ভর্তুকির টাকা সঠিক ভাবে কৃষকের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয় না, তখন বোঝা যায়, এ সব কিছু তারা খুব সচেতনভাবে জেনে বুঝেই করেছে।
শিল্প খাতেও বরাদ্দ ৫৬ কোটি টাকা কমেছে। শিল্প সেক্টরে মজার সব ব্যাপার স্যাপার চলছে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আর কোন রাষ্ট্রীয় কারখানা বেসরকারিকরণ হবে না। দাতাদের উদ্বেগ বেড়ে ওঠে। সেটা শুনে অর্থমন্ত্রী আবার বলেন, ওটা শিল্পমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিমত। শিল্পমন্ত্রী জোর গলায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো সরকারি উদ্যোগে আবার চালু করা হবে। এদিকে বেসরকারিকরণ বোর্ড বলছে, না সেটা হওয়ার নয়। একদিকে বাজেট বক্তৃতায় বলা হচ্ছে, সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মুক্তবাজার বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের নামে দেশের বাজারকে আরও উন্মুক্ত আর নিয়ন্ত্রণহীন করে তোলা হচ্ছে। বিশ্ব মন্দার পরিস্থিতিতে আপাতত এক বছর বেসরকারিকরণ হবে না বলে বলা হল। কিন্তু আগের বেসরকারিকরণের ফল কি মূল্যায়ন জরুরী নয়? বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় চলা বেসরকারিকরণ কি আমাদের অর্তনীতিতে কোন সুফল আনতে পেরেছিল?
যাদের পরামর্শ ছাড়া চলাটাকে সরকারগুলো অসম্ভব বলে মনে করে সেই আমেরিকা এবার বিশ্ব মন্দায় যে ভূমিকা রেখেছে সেটা দেখে যদি ক্ষমতার দলগুলোর কোন বোধোদয় হয় কি না, দেখার বিষয়। মন্দায় পড়ে আমেরিকান জেনারেল মোটরসকে বাঁচাতে শত শত কোটি টাকা নিয়ে এগিয়ে এল সরকার। সরকার প্রধান বললেন, জেনারেল মোটরস আমেরিকার প্রতীক। একে ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না। এই আমেরিকাই বছর দুয়েক আগেও ডব্লিউ টি ও'র বৈঠকে বসে এ ধরণের ভর্তুকি নিষিদ্ধ করার দাবিতে গলা ফাটাচ্ছিল। জেনারেল মোটরস আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে সম্পূর্ণ নিজের দুর্নীতি আর মুনাফার কাঙ্গালিপনার কারণে, সরকারের এখানে কোন ভূমিকা ছিল না। অন্যদিকে আমাদের আদমজীর কথা ভাবুন। আদমজী পাটকল ছিল বাংলাদেশের প্রতীক। আর তার লোকসানের পেছনে ছিল মূলত সরকারেরই ভূমিকা। কিন্তু সেই পাটকল বাঁচাতে এক পাও এগিয়ে এল না সরকার। জাতীয় কারখানা বন্ধ করে দিয়ে পাটশিল্পের বারোটা বাজিয়ে বিদেশী বিনিয়োগের জায়গা ইপিজেড বানাল।
পিপিপি'র কথা বাজেটে প্রথম এলেও বিষয় হিসেবে এটি নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশে বহু আগে থেকেই এটি প্রচলিত আছে। ট্রেনে যারা চড়েন, তাদের অভিজ্ঞতায় এটি থাকার কথা। সরকারের তৈরি রেল লাইন আর স্টেশন ব্যবহার করে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে বেসরকারি কোম্পানি। এ ধরণের পরিকল্পনার অনেক প্রশস্তি গাওয়া হলেও সরকারি মতেই যে সব ঝুঁকির কথা আছে সেগুলো যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ঝুঁকিগুলো হল- সরকারি সম্পত্তি হারানোর ঝুঁকি, মূল্যস্ফীতি, সেবার মূল্য নির্ধারণে জনগণের সামর্থ্য থেকে মুনাফার বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়া এবং সরকারের কাছে মালিকানা হস্তান্তর হলে পরিচালনায় বিশৃঙ্ক্ষলা তৈরি হওয়া। পিপিপি তে বিনিয়োগের জন্য ন্যূনতম কর নির্ধারণসহ নানান আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছে। সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বলা হয়েছে জ্বালানি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের কথাও। তিনটি খাতই এমন খাত যেগুলো নিয়ে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করাটা চরম অনৈতিক। মুনাফাপ্রত্যাশীরা এ সব খাতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেলে কি ফল হবে সেটা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না।
সরকার বাজেট বক্তৃতায় স্বীকার করেছে, ভারত ফারাক্কা দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের সমস্যা হচ্ছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে জমির লবনাক্ততা বৃদ্ধিসহ সুন্দরবন এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ জন্য গঙ্গা ব্যারেজ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানানো হল। কিন্তু ভারতের সাথে এ নিয়ে কোন আলোচনা হচ্ছে কি না বা সা¤প্রতিক টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তাতে সরকার কি ভূমিকা রাখবেন সে নিয়ে কিন্তু নিশ্চুপ রইলেন। এমন তো নয় যে তিনি কেবল তার বক্তৃতায় অর্থনীতির আয় ব্যয়ের পরিসংখ্যানই কেবল দিয়ে গেছেন, তার বাইরেও কথা বলেছেন। কিন্তু এই জরুরী বিষয়ে সরকারের আর সব মহলের মতই তারও রহস্যজনক নীরবতা।
গ্রামীণ অবকাঠামো সম্প্রসারনের জন্য রাস্তা-কালভার্ট নির্মাণসহ হরেক রকম পরিকল্পনা বরাবরের মত এ বাজেটেও আছে। কিন্তু প্রতি বছরই যে এ বরাদ্দ নিয়ে লুটপাট চলে, সরকারি দলের মাস্তান বাহিনী, প্রশাসন, পুলিশ আর ঠিকাদারদের ভাগ বাটোয়ারায় কোন অবকাঠামোই যে দাঁড়ায় না তার কোন মূল্যায়ন হয় না। এসব বরাদ্দ হয়ে ওঠে দুর্নীতিবাজদের কর্মসংস্থান প্রকল্পের মত। এর ফল হাতে নাতে পাওয়া যায় পরে। নদী তীরবর্তী বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে, বৃষ্টিতে রাস্তা ধুয়ে মুছে যায়, ব্রিজ পড়ে থাকে মুখ থুবড়ে। কেবল প্রকল্পের টাকা খরচ হয়ে যায়, কিছু মানুষের সম্পদ বেড়ে উঠতে থাকে।
অর্থনীতি তো হওয়ার কথা অর্থ ব্যবস্থাপনার এমন নীতি যাতে মানুষের কল্যাণ হয়। যে অর্থনীতি মানুষ থেকে মুনাফাকে বড় করে দেখে, সেটা যত সময়ের হাল শব্দ আর কেতাবের জটিল তত্বের মোড়কে থাকুক না কেন, মানুষের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য। আর যে দলগুলো সে অর্থনৈতিক দর্শনকে অনুসরণ করবে তাদের নিজেদের মধ্যে যত বিরোধই থাকুক না কেন সেই একই নীতি পেশ করে যাবে, তাদের বাজেটেও থাকবে একই সুরের অনুরণন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




