somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক লক্ষ টাকা বাজেট। উইন্ডোজ নাকি ম্যাকবুক?

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিঃ রবিউল একজন ৩০ বছর বয়সী যুবক। সে দৈনিক ১০ টা - ৫ টা অফিস করে এবং সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে এসে ১ - ২ ঘন্টা ফ্রিল্যান্সিং করে, রাতে ঘুমানোর আগে নেট সার্ফিং করে, মুভি দেখে, পরের দিন কোনো মিটিং থাকলে প্রেজেন্টেশন রেডি করে। তার পুরাতন ল্যাপটপ টা অনেক দিনের হওয়ায় বেশ স্লো হয়ে গেছে। তাই একটা ল্যাপটপ কেনার বেশ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তার এক বন্ধুর থেকে সে সাজেশন চাইতে তার বন্ধু তাকে আলট্রাবুক কেনার পরামর্শ দিলো।
আমাদের মধ্যে অনেকের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাই হয়তো রবিউলের সাথে মিলে যাবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো হেভি কোনো ইউজার না, তেমন গেম টেম খেলেন না, অথবা গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেন না। কিন্তু দৈনন্দিন কাজগুলো বেশ অনায়াসে করার জন্য একটা ল্যাপটপ খুঁজছেন যেটা সহজে বহনযোগ্য হবে, পারফরমেন্স ভালো হবে, আবার দেখতেও বেশ প্রিমিয়াম এবং স্লিক লুকিং হবে। তাদের জন্য আলট্রাবুক একটা ভালো অপশন হতে পারে। এবং প্রিমিয়াম আলট্রাবুকের জন্য ১ লক্ষ টাকার আশেপাশের বাজেট অনেকের জন্যই একটা সুইট স্পট।

বর্তমানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহই বলা যায়। যার প্রভাব কম্পিউটার মার্কেটেও বেশ ভালোভাবেই পড়েছে। প্রতিটি পন্যের দামই বেড়েছে বেশ ভালো আকারেই। বাদ যায়নি কম্পিউটার মার্কেটও। বর্তমানে ল্যাপটপ/ আলট্রাবুকের অনেক সংকটের মধ্যেও ১ লক্ষ টাকার আশেপাশের বাজেটে কয়েকটি আলট্রাবুক এভেইলেবল আছে। প্রোসেসর এবং ম্যানুফ্যাকচারারের রূপভেদে আজকে আমরা ৩ টি আলট্রাবুক নিয়ে আলোচনা করব। রাইজেন প্রোসেসরের থেকে এইচপি এনভি এক্স-৩৬০ (রাইজেন ৫ ৪৫০০ইউ) , ইনটেল প্রোসেসর থেকে মাইক্রোসফট সারফেস ল্যাপটপ থ্রি (আই-৫ ১০৩৫জি৭) এবং ম্যাকবুক এয়ার এম-১ (এম-১ চিপ) কে নিয়ে আমরা আমাদের বিশ্লেষণ শুরু করতে যাচ্ছি।

প্রথমেই বলে নিয়েছি আলট্রাবুকের ব্যবহার তেমন হাই-এন্ড কাজের জন্য নয়। তাই, সেই কথা মাথায় রেখেই ম্যানুফ্যাকচারাররা বেশিরভাগ আলট্রাবুকে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড রাখে না। আলট্রাবুকের যেই ব্যবহারগুলো পূর্বে আলোকপাত করেছি, সেইগুলোর উপর ভিত্তি করে আজকের আলোচনাকে কয়েকটি অংশে ভাগ করছিঃ

১। পারফর্মেন্সঃ
কোনো কিছু কিনতে গেলে প্রথমেই আমাদের যেই দিকটি নিয়ে চিন্তা আসে, তা হল সেই জিনিসটির পারফর্মেন্স। সকলেই একটা পণ্যের জন্য মুল্য দিয়ে তার থেকে ভ্যালু ফর মানি পারফর্মেন্স আশা করে। আর সেই জিনিসটি যদি একটা প্রিমিয়াম সেগমেন্টের আলট্রাবুক হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। ভ্যালু ফর মানি আলট্রাবুকের সামান্য কিছু পারফর্মেন্স গেইন আপনার আলট্রাবুকের লংজিভিটিকে আরোও কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছর বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং, আল্ট্রাবুক যেহেতু গ্রাফিক্স কার্ড নেই, তাই আমাদের মেইন ফোকাস থাকবে প্রসেসর এর দিকে।

প্রথমেই যদি আমরা রাইজেন ৫ ৪৫০০ইউ নিয়ে কথা বলি, তাহলে বলতে হয় এইচপি এনভি এক্স-৩৬০ তে ব্যবহৃত হওয়া এটি একটি ৬ কোর ৬ থ্রেডের প্রসেসর। অত্যন্ত পাওয়ারফুল এই প্রসেসরটি অনায়াসে আপনার সকল ধরণের দৈনন্দিন কাজগুলো পারফর্ম করার জন্য যথেষ্ট। ৭ ন্যানোমিটার ফেব্রিকেশনে বিল্ড হওয়ায় এর থেকে বেশ কম পাওয়ার কঞ্জাম্পশন পাওয়া যায়। ফলে বেশ ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায় যা নিয়ে আমরা ব্যাটারি ব্যাকআপ সেকশনে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব।

এরপর যার কথা না বললেই না, তা হল এপলের ম্যাকবুক এয়ার ফিচারিং এম-১ চিপ। ২০২০ এর নভেম্বর মাসে এপল ম্যাকবুক এয়ারের মাধ্যমে এই চিপটি বাজারে আনে। এর পর থেকেই চিপটি পুরো টেক ওয়ার্ল্ড কাপিয়ে দেয়। এটি একটি ৫ ন্যানোমিটার ফেব্রিকেশনে তৈরি চিপ যাতে ৮ টি কোর এবং ৮ টি থ্রেড আছে। এটিই এপলের তৈরি প্রথম নিজস্ব চিপ যা একমাত্র তাদের ম্যাকবুকেই পাওয়া সম্ভব। এটি আর্ম বেজড আর্কিটেকচারে তৈরি যার ফলে এতে খুব কম তাপ উৎপণ্য হয় এবং ব্যাটারি ব্যাকআপ বেশ ভালো পাওয়া যায়। অসম্ভব শক্তিশালী এই চিপটি আগামী ৪-৫ বছর অনায়াসে ম্যাকবুককে আপনার দৈনন্দিন সঙ্গী করে ফেলতে পারবে।

পারফর্মেন্সের দিক দিয়ে সব থেকে পিছিয়ে থাকা প্রতিনিধি বলা যায় মাইক্রোসফট সারফেস ল্যাপটপ থ্রি তে ব্যবহৃত ইন্টেল আই-৫ ১০৩৫জি৭ কে। এতে রয়েছে ৪ টি কোর এবং ৮ টি থ্রেড। ১০ ন্যানোমিটার ফেব্রিকেশনে তৈরি এই প্রসেসরটি থেকে হিটিং ইস্যু এবং পার্ফরমেন্স ড্রপ পাওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রাইস টু পারফর্মেন্স রেশিও তে বেশ পিছিয়েই থাকবে প্রসেসরটি।

২। ডিসপ্লেঃ
আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজের বেশিরভাগ সময় ডিসপ্লেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি। তাই ডিসপ্লে মনের মত না হলে ব্যবহার করে শান্তি পাওয়া যায় না।
এইচপি এনভি এক্স -৩৬০ তে রয়েছে ১৯২০*১০৮০ রেজুলিউশনের ফুল এইচডি ১৩.৩ ইঞ্চির টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে যা বেশ ভালোই বলা যায়। টাচ ফিচার থাকার ফলে দৈনন্দিন কাজে একটা এক্সট্রা বেনিফিট পাওয়া যাবে। অন্যদিকে ম্যাকবুক এয়ার এম-১ এ রয়েছে ২৫৬০*১৬০০ রেজুলিউশনের ১৩.৩ ইঞ্চি ডিসপ্লে যাকে আলট্রাবুক ইন্ডাস্ট্রির বেস্ট ডিসপ্লে বললেও ভুল বলা হয় না। প্রচুর ব্রাইট আর কালার একুরেট ডিসপ্লে এটি। সবশেষে মাইক্রোসফট সারফেস ল্যাপটপ ৩ তে ব্যবহৃত হয়েছে ১৩.৫ ইঞ্চির ২২৫৬*১৫০৪ রেজুলেশনের ডিসপ্লে যা টাচ সেনসিটিভ। এই ডিসপ্লেটিকেও ইন্ডাস্ট্রি বেস্ট না বলা গেলেও ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড বলা যেতেই পারে।

৩। ব্যাটারি লাইফঃ
ব্যাটারি লাইফ একটা আলট্রাবুকের চাহিদার সেন্ট্রার পয়েন্ট। যারা মেইনলি আলট্রাবুক ইউজার, তাদের দৈনন্দিন লাইফস্টাইল হিসাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা বাইরেই থাকে। তাই ব্যাটারি লাইফটা হওয়া উচিত এমন, যাতে সারা দিনের ব্যবহারের পরও ইমার্জেন্সি কেসে কিছু চার্জ বেঁচে থাকে।
এইচপি এনভি এক্স-৩৬০ তে রয়েছে ৫১ ওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি যা থেকে অনায়াসে ৯ -১০ ঘন্টা ব্যাকআপ পাওয়া সম্ভব। সারফেস ল্যাপটপ ৩ থেকেও পাওয়া সম্ভব ১১-১১.৫ ঘন্টা ব্যাকআপ যা একদিন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সবশেষে এপলের ম্যাকবুক এয়ার এম-১ এর কথা যদি বলি, এটি বাকি সব আলট্রাবুককে ব্যাটারি লাইফের যুদ্ধে হারিয়ে দেওয়ার জন্য অনন্য। এপলের ক্লেইম অনুযায়ী, ম্যাকবুক এয়ার এম-১ ১৮ ঘন্টা ব্যাকআপ দিতে পারে, যা কিনা এক চার্জে আপনাকে ২ দিন ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।

পরিশেষে বলা যেতে পারে, আপনি যদি একান্তই উইন্ডোজ ইউজ করতে চান, তাহলে রাইজেন বেজড আলট্রাবুক গুলো নিতে পারেন। আর যদি বাজেটের বেস্ট পারফর্মেন্স, ইন্ডাস্ট্রি বেস্ট ডিসপ্লে এবং অতুলনীয় ব্যাটারি ব্যাকআপ চান, বিশেষ করে আপনি যদি আগামী ৪-৫ বছর একটা স্টেবল পারফর্মিং আল্ট্রাবুক সঙ্গী চান, তাহলে বর্তমান সময়ে ম্যাকবুক এয়ার এম -১ বেস্ট ভ্যালু ফর মানি।

Reference:
MacBook Air vs. Surface Laptop 3 | Digital Trends
Apple M1 vs. AMD Ryzen 5 4500U - Benchmark and Specs (cpu-monkey.com)
M1 - Apple - WikiChip
MacBook Air - Apple
Apple M1 Is Faster Than Intel & AMD's (wccftech.com)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×